Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
পরের সারাদিন চাপা উৎকণ্ঠায় কেটে যায়। ইন্দ্রনীল ফোনে জানিয়ে দেয় যে পাগলা কুকুরের মতন ক্ষেপে উঠেছে বাপ্পা নস্কর। নয়নাকে ফোনে ধমকি দিতে পারছে না কিছুতেই, কারন দানার হাতের নাগাল ওর থেকেও ওপর মহলে পৌঁছে গেছে। এতদিন দানাকে সামান্য একজন গাড়ির ড্রাইভার ভেবে এসেছিল, কিন্তু ওর হাতে নিজের বিরুদ্ধে এতো বেশি তথ্য প্রমান চলে গেছে জেনে বাপ্পা নস্কর ল্যাংড়া কুকুরের মতন গতকাল থেকে ঘেউঘেউ করে বেড়াচ্ছে। ভুপেন জানায় যে, নিতাইয়ের লোক দানার বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে।

পরেরদিন দুপুরের পরেই পরিকল্পনা মাফিক, দানা ছাড়া বাকি সবাই দুরের গ্রামের বিমান চন্দের বাগান বাড়িতে পৌঁছে যায়। দানার পরিকল্পনা মতন সবাই নিজের নিজের জায়গা নিয়ে রাতের অন্ধকারের অপেক্ষা করে। তাড়াতাড়ি আসার একটাই কারন, যাতে ওরা বিমান অথবা বাপ্পা নস্করের চোখে না পরে। নিজেদের গাড়ি পাতার আড়ালে, খড়ের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে। গ্রাম থেকে বেশ দূরে বাগান বাড়ি তাই ওদের বেশ সুবিধা হয়।

মহুয়ার বুকে চাপা উৎকণ্ঠা, একেবারে সাপের গর্তের মধ্যে পা রাখতে চলেছে দানা। একপাশে বিমান নয়না অন্য পাশে বাপ্পা নস্কর নিতাই। ওর চারপাশে শত্রু, একপা একটু ওদিক হলেই প্রানহানীর আশঙ্কা প্রবল। চোখ জোড়া সকাল থেকেই ছলছল, বুক দুরুদুরু করে ওঠে বারেবারে। সকাল থেকেই রুহিকে আঁকড়ে ধরে থাকে দানা, নিজেও জানে কত বড় ঝুঁকি নিতে চলেছে। সন্ধ্যের পরে বের হওয়ার আগে মহুয়া আর রুহিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে।

রুহি ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, "ডাডা ডিনার?"

আদো আদো মিষ্টি গলা শুনে দানার চোখ ফেটে জল চলে আসে, তাও হেসে মেয়েকে চুমু খেয়ে বলে, "ডিনার একসাথে করব মা। ঘুমিয়ে পড়িস না।"

মহুয়ার কপালে ঠোঁট চেপে ধরতেই প্রায় ভেঙ্গে পড়ে। তাও বুক চেপে স্মিত হেসে ওকে বিদায় জানায়। বুকের মধ্যে চাপা আশঙ্কা, আগামী কাল সকাল কেমন হবে জানে না, রক্তিম রক্ত মাখা ভোর না সুন্দর মিষ্টি সকাল।

বের হওয়ার আগে নয়নাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, দুই ঘন্টার মধ্যে ওই বাগান বাড়িতে পৌঁছে যাবে। নয়না বাকিদের নিয়ে ওর আগেই পৌঁছে যাবে বলে কথা দেয়। পকেটে একটা পিস্তল, দ্বিতীয় পিস্তল পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে দানা। দুরু দুরু বুক, শ্বাস মাঝে মাঝেই বুকের মধ্যে থেমে যায়। চোখের সামনে শুধু মাত্র মহুয়ার ছলছল চোখ জোড়া আর রুহির মিষ্টি আবেদন, রাতের খাবার একসাথে খেতে চায়। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, ফারহানের আততায়ীকে মারতেই হবে, মৈনাকের খুনিকে শাস্তি দিতেই হবে। ওর পরিকল্পনা যদি সফল হয় তাহলে এই রাতে বেশির ভাগ শত্রু নির্মূল হয়ে যাবে আর যদি সফল না হয় তাহলে ওর কপালে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই। মহুয়া আর রুহির জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। শুধু মাত্র নিজের জেদের বশে এই শহরে থেকে গেল মহুয়া, কিছুতেই দানার পাশ ছেড়ে যাবে না মেয়েটা।

নিজের ফোন না নিয়ে অন্য একটা ফোন নিয়ে যায় যাতে ভুপেন ওকে বাপ্পার খবর জানাতে পারে। ফোন খানা প্যান্টের চোরা পকেটে লুকিয়ে রাখে। আসার পথে একটা গাড়ি ওকে অনেকক্ষণ থেকেই অনুসরন করছিল, সেটা দেখেই বুঝে যায় নিতাইয়ের লোক ওকে অনুসরন করছে। দুই ঘন্টা টানা গাড়ি চালিয়ে, গ্রামে পৌঁছে যায় দানা। বাগান বাড়ির বেশ কিছু দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একবার ভালো ভাবে বাড়ির দিকে দেখে। বিমানের গাড়ি উপস্থিত, দেবুকে দেখতে পায়, একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার গাড়ির ড্রাইভারের সাথে গল্প করছে। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, অতল জলে ডুব দেওয়ার আগের প্রস্তুতি নেয়, অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে প্রানপনে। বিচলিত চিত্তে এগোলে একদম কাজে দেবে না। গাড়ি থেকে নেমে পকেটের পিস্তল আর পায়ের পিস্তল হাতিয়ে দেখে নেয় শেষ বারের জন্য। এই দুটো নিজে হাতে কাজে লাগাতে চায় না, চায় সুমিতা অথবা সমুদ্রের হাতে তুলে দিতে। হয়ত বিমান চন্দের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে কিন্তু সমুদ্র সুমিতার কাছে থাকবে না। একটু খানি আড়ামোড়া ভেঙ্গে মন শান্ত করে সোজা হয়ে হেঁটে যায় বাড়ির দিকে। ভুপেন একটা মেসেজ করে জানিয়ে দেয় যে নিতাইয়ের লোক নিতাইকে ওর খবর পৌঁছে দিয়েছে আর সেই খবর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে যাবে। দানা ওকে নিতাইয়ের ওপরে কড়া নজর রাখতে নির্দেশ দেয়। দানাকে ওই ভাবে আসতে দেখে দেবু আর নয়নার ড্রাইভার সতর্ক হয়ে যায়। অন্ধকারে প্রথমে ঠিক ঠাহর করতে পারে না, কিন্তু পাশে আসার পরে যখন দানাকে দেখে তখন দেবু হেসে ফেলে। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে বাড়িতে কে কে এসেছে।

দেবু চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, "শালা তোকে দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত তুই কালী পাড়ার বস্তিতে থাকতিস। যা যা তোর নয়না ম্যাডাম আজকে নিজের সেক্রেটারি আর ম্যানেজারকে নিয়ে এসেছে। যা চোদনা মদ গিলে মস্তি কর। আমরা শালা এইখানে বিড়ি খাই আর হাত মারি ততক্ষণে।"

দানা মিচকি হেসে ভুরু নাচিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে, "কাকে লাগাতে চাস? নয়নাকে না সুমিতাকে?"

দেবু হেসে ফেলে, "না রে বাল অত উঁচু স্বপ্ন আমি দেখিনা। মিনতি বৌদির গুমটির আলো, সিমি, পিঙ্কি জিন্দাবাদ।"

সিগারেটে কয়েকটা টান মেরে আশেপাশে দেখে নেয় দানা, একবার নিজের ঘড়ির দিকে দেখে। দূরে একটা কুকুরের ঘেউঘেউ আওয়াজ শোনা যায়, সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে একটা বেড়াল মিউ মিউ করে ওঠে। ওই ডাক শুনে মনে হয় কয়েকটা পাখী ডেকে ওঠে বাড়ির পেছন থেকে। দানা চোয়াল চেপে চোরা হাসি দেয়, সবাই নিজের নিজের জায়গায় পৌঁছে গেছে তাহলে। এইবারে বাড়ির মধ্যে ঢোকা উচিত। আরো একবার ফোন বেজে ওঠে। ভুপেনের সংবাদ আসে, বাপ্পা নস্কর আর নিতাই, দুইজন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে। বাপ্পা নস্কর আর নিতাইয়ের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, যাকে পাবে হাতের সামনে তাকে কুটিকুটি করে কেটে ফেলবে। দানা চোখ বুজে মহুয়া আর রুহির চেহারা স্মরন করে। হাত মুঠি করে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে টানটান উত্তেজনা দমিয়ে নেয়। তারপরে দরজায় করা নেড়ে অপেক্ষা করে। কিছু পরে সমুদ্র একটা কোমরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে এসে দরজা খুলে একগাল হেসে ওকে বাড়ির মধ্যে ডাকে।

দানা ওকে দেখে মেকি হাসি দিয়ে বলে, "কি রে দারুন মস্তি করছিস, তাই না?"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 10-09-2020, 02:03 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)