10-09-2020, 12:38 AM
নয়নার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে হঠাৎ করে তড়বড়িয়ে ওঠে দানা, "কি কি হয়েছে? রুহির জ্বর? একটা মেয়েকে ঠিক ভাবে দেখতে পারো না? সারাদিন জল নিয়ে খেলা করবে আর তুমি বাড়িতে থাকো কর কি? আচ্ছা আমি আসছি। কোন ওষুধ খাইয়েছ? তুমি না মাঝে মাঝে কি যে কর না, মাথা খারাপ হয়ে যায়। একটু ক্রোসিন দিতে পারতে। হ্যাঁ হ্যাঁ, জানা আছে, বাচ্চাদের ক্রোসিন কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিলেই পারতে। যাই হোক আমি এখুনি আসছি....."
ওইপাশে ওই ভাবে দানাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখে মহুয়া প্রথমে ঘাবড়ে যায়, তবে বুদ্ধিমতী প্রেয়সীর বুঝতে ক্ষণিকের সময় লাগে না যে কবল থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এই নাটক করছে। তাই মিচকি হেসে বলে, "বাড়িতে এসো তারপরে কেমন তোমার ধোলাই করি দেখ?"
দানা চোখ বড় বড় করে আঁতকে ওঠে, "কি বল? একশো তিন উঠে গেছে? আমি আসছি এখুনি আসছি।" ফোন রেখে মুখ কাঁচুমাচু করে নয়নার গালে ঠোঁটে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, "প্লিস কিছু মনে করো না। মেয়ের হঠাৎ জ্বর এসেছে তাই যেতে হবে।"
নয়না ক্ষুণ্ণ মনে ওর দিকে ম্লান হেসে বলে, "না না, মেয়ের জ্বর যাও। কিছু মনে করার নেই দানা, আগে মেয়ে তাই না? যাও যাও।"
পোশাক পরে কার্যসিদ্ধি করে নয়নার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে দানা। মনের মধ্যে জয়ের হাসি যে কাজ করতে গেছিল খুব সহজে সেটা হয়ে গেছে। রাত বেশ গভীর, আশে পাশে বেশ কয়েক জন লোক, কাউকে কি চেনা যায়? হ্যাঁ, অদুরে একজনকে দেখে দানা চিনতে পারে। নিতাইয়ের দলে একজন, ওর ওপরেই নজর রেখেছিল আর ওকে অনুসরন করতে করতে নয়নার বাড়িতে এসেছে। তাহলে ওর চাল কিছুটা কাজ করেছে।
রক্তের খেলা (#০৬)
দানা ওইদিকে না দেখার ভান করে, গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বাড়িতে ঢুকেই মহুয়া ওর ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "কেন বাড়িতে এলে কেন? ওইখানে ওই নয়না আর কিছু খেতে দেয়নি।"
মহুয়াকে ক্ষেপানোর জন্য ওকে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ রাতে ডিনার করার কথা ছিল আমাদের আর তারপরে হোটেলের রুমে।"
মহুয়ার মুখ ভার করে টিভির আওয়াজ জোর করে দেয়। দানা দেখে প্রেয়সী একদম চরম খাপ্পা, একে শান্ত না করলে উপায় নেই। জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে প্রেয়সীকে। শেষ পর্যন্ত চোখে অভিমানের জল আর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে ওকে মারতে মারতে বলে, "তুমি না....."
দানা, ওর নাকের ওপরে নাকের ডগা ঘষে বলে, "জানি সোনা আমি একটা মস্ত বড় শয়তান।"
মহুয়া ওর গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, "শয়তান বলে ভয় নয় গো, ভয় এই আশেপাশের লোকেদের নিয়ে। কখন কোথায় কি হবে সেটাই ভয় করে।"
মহুয়াকে সান্ত্বনা দেয় দানা, "আমাদের কিছু হবে না। আজ রাতেই ইন্দ্রনীলের মাধ্যমে বাপ্পার কানে কথা উঠিয়ে দেবো।"
রাতের খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে ইন্দ্রনীলকে ফোন করে দানা বাড়িতে ডাকে। যথারীতি রাত দুটো নাগাদ ইন্দ্রনীল ওর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। ইন্দ্রনীল জানায় দানার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে রাজি। দানা ওকে নয়নার আর নিজের বেশ কয়েকটা অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে বলে এই খবর বাপ্পা নস্করের কানে তুলে দিতে। ইন্দ্রনীল অবাক হয়ে যায়, কেউ কি এই ভাবে নিজের পায়ে কুড়ুল মারে নাকি? দানা মুচকি হেসে জানিয়ে দেয় এটা ওর চক্রান্তের একটা অঙ্গ। যদি ইন্দ্রনীল করতে পারে তবে ভালো, না হলে অন্য রাস্তা দেখবে। ইন্দ্রনীল ওর কাছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানতে চাইলে দানা স্মিত হেসে জানিয়ে দেয় আগে ওর কাজ হয়ে যাক তারপরে নিজেদের দলে শামিল করবে। নিজেকে দানার বিশ্বাসভাজন প্রতিত করার জন্য ইন্দ্রনীল জানিয়ে দেয় এই ছবি আর এই খবর বাপ্পা নস্করের কানে কাল সকালেই উঠিয়ে দেবে। দানা ওকে আরো বলে, বাপ্পা নস্কর এই ছবির উৎস সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে ইন্দ্রনীল যেন বলে নয়নার বাড়ির কাজের লোক কে হাত করে এই ছবি তুলিয়েছে। ব্যাস তাহলেই বাপ্পা নস্কর আরো ক্ষেপে যাবে ওর আর নয়নার ওপরে। সেই সাথে দানা আরো একটা ছবি দেখায় ইন্দ্রনীলকে। বিমান আর নয়নার একান্ত ছবি। সেই দেখে ইন্দ্রনীল আরো বিস্মিত হয়ে যায়। দানা ওকে বলে, এই ছবি ওকে কাল দুপুরে পাঠাবে, আগে এই ছবি আর খবর বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে দিক সেই সাথে যেন আগাম আভাস দেয় যে নয়নার সাথে বিমান চন্দের গোপন সম্পর্ক আছে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরেরদিন দুপুর নাগাদ ইন্দ্রনীল ফোন করে ওকে জানায় যে বাপ্পা নস্কর এই দুই খবর শুনে রাগে জ্বলে উঠেছে। লোহা একদম গরম, এইবারে হাতুড়ি না মারলেই নয়। বাপ্পা নস্কর বিস্তারে ইন্দ্রনীলকে এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দিয়েছে। নয়না আর বিমানের একত্র একটা ছবি ইন্দ্রনীলের মোবাইলে পাঠিয়ে ওকে নির্দেশ দেয় রাতের দিকে এই ছবি যেন বাপ্পা নস্করকে দেখায়। ইন্দ্রনীল যতই ওর পরিকল্পনা জানতে চায় দানা তত পিছিয়ে যায়। এত সহজে ইন্দ্রনীলকে বিশ্বাস করা অনুচিত।
বিকেল বেলা নয়নাকে ফোন করে দানা, "সরি ডারলিং, কাল ঠিক ভাবে তোমার সাথে মস্তি করা গেল না।"
নয়না মৃদু হেসে বলে, "রুহির জ্বর কেমন আছে?"
মহুয়া মিচকি হেসে পাশ থেকে উত্তর দেয়, "রুহি এখন আগের থেকে ভালো আছে।"
মহুয়ার কণ্ঠ স্বর শুনেই নয়না চমকে ওঠে, "এই কি গো, মিসেস পাশে নাকি?"
দানা অল্প মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, এই মেয়ে শুয়ে ওর মাথার কাছেই বসে আছি তাই।"
নয়না মিচকি হেসে বলে, "আচ্ছা তাহলে পরে কথা বলবো কি বলো।"
দানা এইবারে নয়না আর নয়নার সঙ্গী সাথীদের আর বিমানকে ওই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে ফেলতে চায়। দানাকে অনুসরন করে নিতাই নিশ্চয় ওইখানে পৌঁছে যাবে। একবার বাপ্পা নস্করের কানে এই খবর পৌঁছে গেলেই ওর পরিকল্পনা সফল হয়ে যাবে। দানা গলা নামিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানতে চায়, "কি গো কিছু বলতে হবে?"
মহুয়া চোখ পাকিয়ে কপট অভিমান করে ঠোঁট উল্টে বলে, "যাও যাও ওই নয়নার কাছেই বাসা বাঁধো। আমার দিকে ওই ভাবে চেয়ে কি হবে?" তারপরে হাত নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, "বলো, আরো অপেক্ষা করছো কেন?"
দানা গলা নিচু করে নয়নাকে ফোনে বলে, "শোন না, পরশুদিন ওই বাগান বাড়িতে একটা আসরের আয়োজন কর। সুমিতা, সমুদ্র, তুমি আমি আর বিমান চন্দ। দারুন হবে। বিমানের বাড়া সুমিতার গুদে আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা রাত পরে থাকব। মিসেস কে কিছু ভাবে ম্যানেজ করে নেব চিন্তা নেই।"
নয়না মুচকি হেসে জানিয়ে দেয় বিমানকে হাত করে নেবে। হাতে আর একটা দিন সময় নিখুঁত পরিকল্পনা করার। ফোন ছেড়েই মহুয়াকে বলে বেড়িয়ে পড়ে হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে বসে এই পরিকল্পনা করতে গেলে অনেক সমস্যা, কারন ওর বাড়ির ওপরে বাপ্পা নস্করের লোক নজর রেখে চলেছে, হয়ত ইন্দ্রনীল ও নজর রেখে চলেছে।
মহেন্দ্র বাবুর বাড়িতে আলোচনা সভা বসে। বিমানের বাড়ির ছবি এঁকে সবাইকে বুঝিয়ে দেয় কাকে কি কি করতে হবে। সবাই যেন নিজেদের মোবাইল বাড়িতে রেখে যায়। পুলিস আজকাল মোবাইলের অবস্থান খুঁজে বের করে আততায়ীকে ধরে। সব থেকে ভালো, মোবাইল গুলো একটা নৌকায় করে দূরে নিয়ে যেতে তাহলে বেশ কিছুক্ষণ পরেই মোবাইল সীমানার বাইরে চলে যাবে। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে আর হাতের ইশারায় সবাই কাজ করবে। বাগান বাড়ির পেছনে একটা পুকুর আছে আর পুকুরের পেছনে আম জাম কাঁঠাল ইত্যাদির বড় বড় গাছপালা। সেই গাছের আড়ালে চারজন লুকিয়ে থাকবে। সামনের দিকে বেশ কিছু ঝোপ ঝাড় আছে সেখানে দুই জন লুকিয়ে থাকবে। বড় রাস্তায় বাপ্পা নস্করের গাড়ি দেখার জন্য একজন দাঁড়িয়ে থাকবে। গাড়ি দেখতে পেলেই শিস দিয়ে বাগান বাড়িতে জানিয়ে দেবে। দানার ইশারা না পেলে কেউ নিজেদের জায়গা ছেড়ে একদম বের হবে না। সবাই পিস্তল নিয়ে তৈরি থাকবে কিন্তু খুব দরকার না পড়লে কেউ যেন গুলি না করে। পরিস্থিতি বুঝে কাজ যদি শেষ পর্যন্ত হাসিল না হয় তাহলেই যেন গুলি চালায় না হলে সবাই লুকিয়ে থাকবে। দানা আগে বাড়িতে ঢুকবে, যদি নয়নার সাথে সুমিতা আর সমুদ্র থাকে তাহলে দানা একটা সিগারেট জ্বালাবে না হলে একাই ঢুকবে।