08-09-2020, 12:39 AM
ইন্দ্রনীল বলে, "নিতাই, বাইরে থেকে একটা ভাড়া করা গুন্ডা এনে ফারহানকে খুন করিয়েছে। আসল উদ্দেশ্য বিরোধী পক্ষকে আক্রমন করা। তোরা গত কালের বক্তৃতা শুনিস নি? কেমন ভাবে নেচে কুঁদে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল।"
দানা মহুয়া গতকাল ফারহানের জন্য চিন্তিত ছিল ওরা টিভিতে বাপ্পা নস্করের জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেখার সময় পায়নি। ইন্দ্রনীল মোবাইলে তোলা গতকালের বক্তৃতার ভিডিও দেখায়। ফারহানের গুলি লাগার কিছুক্ষণ পরেই বাপ্পা নস্কর মঞ্চে উঠে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়। "বিরোধী পক্ষ চায় না এই রাজ্যে ধার্মিক শান্তি বজায় থাকুক, বিরোধী পক্ষ চায় অরাজকতা, ধর্মের নামে মার দাঙ্গা। আমরা শাসক দল সেটা কিছুতেই হতে দেব না। আজকে আমার চার বছর পুরানো অতি বিশ্বস্ত ড্রাইভার ভাই, ফারহানকে গুলি করা হয়েছে। কালকে ফারহানের ভাই বন্ধুদের গুলি করে মারা হবে। এটা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। বিমান চন্দ, দুলাল মিত্র জঘন্য রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণ আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ, সব ধর্মের মানুষকে আমরা সমান চোখে দেখি। তবে আমার ভাই সমান ফারহানকে কেন গুলি করতে গেল? আমাকে গুলি মারতে পারত ওরা। আমি এই দেশের স্বার্থে এই জনগনের স্বার্থে বুকে গুলি খেতাম। না, ওদের লক্ষ্য আমার ভাই সমান ফারহান ছিল। বন্ধুগণ, মায়েরা, বোনেরা, ভাইয়েরা, এই খুনের প্রতিকার আমাদের চাই। আসল খুনি ধরা পড়ুক এটাই আমরা চাই। ......" ইত্যাদি ইত্যাদি.....
দানার কান গরম হয়ে যায়, সেই সাথে মহুয়া চোখ বুজে নেয়। ক্ষোভে বিতৃষ্ণায় ঘৃণায় ওর চোখে জল চলে আসে। সত্যি এত নীচ এই রাজনীতি, থুড়ি দুর্নীতি। দানার হাত মুঠি হয়ে, ফারহানকে গুলি মারার আসল কারন ওর সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে দানা, চোয়াল চেপে নিজের কপালে করাঘাত করে।
ওদের দিকে স্মিত হেসে ইন্দ্রনীল বলে, "সাত্যকি চ্যাটার্জিকে তোর বাড়িতে দেখে বাপ্পা নস্কর একদিনে গর্তে ঢুকে গেছে মাইরি। শালার হাত পা থরথর করে কাঁপছে, শালা কারুর সাথে কথা বলা দুরের কথা, দেখা পর্যন্ত করছে না।"
মহুয়া আর দানা তখন পর্যন্ত ওকে বিশ্বাস করে না। হতে পারে এটা বাপ্পা নস্করের একটা চাল তাই বাঁকা হাসি হেসে বলে, "দ্যাখ ইন্দ্রনীল, তুই এতরাতে একা এসেছিস বলেই যে তোকে বিশ্বাস করে নেবো এমন গরু আমরা নই।"
ইন্দ্রনীল ম্লান হেসে বলে, "সেটা তোদের ওপরে দানা। তবে ফারহানের এই ঘটনার পরে সত্যি আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে আমার মা আমার স্ত্রী খুব ভয় পেয়ে গেছে।"
দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "আচ্ছা, এতদিন যখন এত লোককে খুন করছিল তখন এইসব মাথায় আসেনি তোর? এখন যেহেতু ফারহান আহত হয়েছে তখন টনক নড়েছে? তুই এতদিন ওর সাথে থেকে কাজ করেছিস। ওর নাড়ি নক্ষত্রের সম্বন্ধে সব কিছু জানিস। তাহলে সেটাই কাজে লাগা ওর বিরুদ্ধে ব্যাস।"
ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, "করতে চাইলেই করা যায় না। নিতাই আসলে ওর খুড়তুতো ভাই, তাই ছায়ার মতন ওর পাশে ঘোরাফেরা করে।"
বলে এক এক করে সব কিছু বলতে শুরু করে ইন্দ্রনীল। ঠিক যা যা, সঙ্গীতা তদন্ত করে উজাগর করেছে সব কিছু ইন্দ্রনীলের মুখে শোনে। দানা হেসে উত্তর দেয় এই সবকিছু আগে থেকেই জানে। সেই শুনে ইন্দ্রনীল আরো বিস্মিত হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে তাহলে এতদিন ওকে কেন কোণঠাসা করেনি? উত্তরে দানা জানায় সময়ে অপেক্ষায় ছিল আর বাপ্পা নস্কর যেহেতু ওকে সরাসরি কোন আঘাত হানেনি তাই ওকে এতদিন ওর বিরুদ্ধাচরণ করেনি। তবে এইবারে ঘা একদম হৃদয়ে লেগেছে তাই দানা এর প্রতিশোধ নেবে। দানাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইন্দ্রনীল, কিন্তু অত সহজে ভোলার মানুষ মহুয়া আর দানা নয় তাই জানিয়ে দেয় সময় হলে ওর সাহায্য নেবে।
ইন্দ্রনীল চলে যাওয়ার পরে মহুয়া আর দানা অনেকক্ষণ বসার ঘরে বসে থাকে, ভাবে এইবারে জাল উঠিয়ে নেওয়া উচিত। এতদিন যাদের ওপরে নজর রেখছিল তারা কখন কোন দিক থেকে আঘাত হানবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাপ্পা নস্কর বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গেছে সুতরাং খুব শীঘ্র একে সরাতে হবে। নয়না আর বিমান ওদের সম্পর্কে সব কিছু জেনে গেছে, সুতরাং আশঙ্কায় বুক দুরুদুরু করে ওঠে। এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে অনেকে একসাথে শেষ হয়ে যায়।
মহুয়ার বেশ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে, "বিমান আর বাপ্পাকে সামনা সামনি দাঁড় করিয়ে দাও, তাহলে দুইজনা দুইজনকে মেরে ফেলবে। ওইদিকে নয়নাকে একা মারলে চলবে না। সুমিতা আর সমুদ্র ওর খুব কাছের লোক। ওদেরকে কিছু করে সরাতে হবে না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ওপরে হামলা করতে পারে। বিমান মরে গেলেই সিমোন আর মোহন ক্ষেপে উঠবে তখন কিছু একটা করে ওদের সরাতে হবে। সেটা পরে ভাবা যাবে তবে আগে বাপ্পাকে সরানো খুব দরকার।"
দানা বাঁকা হেসে বলে, "তুমি এমন ভাবে বলছ যেন আমি ওদের বলব আর ওরা একে ওপরের সামনে চলে আসবে। ছেলের হাতে মোয়া আর কি তাই না?" তারপরে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বলে, "তুমি শুতে যাও আর আমাকে একটু চিন্তা করতে দাও।"
মহুয়া হেসে ওকে জড়িয়ে বলে, "রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। সিগারেট শেষ করে আমার সাথে শুতে চলো।"
সিগারেট টানতে টানতে দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, মহুয়াকে বিস্তারে নিজের পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলে। সব থেকে আগে নয়না আর বিমান চন্দের গোপন সম্পর্কের বিষয়টা বাপ্পার কানে তুলতে হবে আর সেটা নিতাইকে দিয়ে করাতে হবে। নিতাই নিশ্চয় মাঝে মাঝে মদ খায়, অথবা পান বিড়ি খায়। সেইখানে দানার ছেলেরা জটলা পাকিয়ে গল্পে গল্পে নয়না আর বিমানের গোপন সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করবে। সেই কথা নিতাইয়ের কানে গেলেই বাপ্পার কাছেও পৌঁছে যাবে। বাপ্পা নস্কর নিশ্চয় নিতাইকে বলবে নয়নার ওপরে নজর রাখতে। সেই সময়ে দানা একটু সাবধান করে দেবে নয়নাকে। কিছুদিন পরে দানা, নিজেই নয়নাকে বিমানের সাথে দেখা করার জন্য উস্কিয়ে দেবে, বলবে বাপ্পা নস্করকে হুমকি দিয়েছে তাই এত শান্ত হয়ে গেছে। বিমান চন্দ, নয়না দুইজনে বেশ খুশি এই ফাঁকে ওদের ওই বাগান বাড়িতে দেখা করার কথা উঠাবে দানা, আর যাতে সঙ্গে সমুদ্র আর সুমিতা থাকে সেই কথাও বলবে। ও বলবে সবাই মিলে একরাত চুটিয়ে মজা করতে চায়। নয়না এই ফাঁদে নিশ্চয় পা দেবে সেই সাথে বিমান চন্দ পা দেবে। ওইদিকে নিতাই যেহেতু নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে সুতরাং যেই নয়না ওই দুর বাগান বাড়িতে পৌঁছাবে সঙ্গে সঙ্গে ওই খবর বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে যাবে। একাকী নির্জন নিরালা বাগান বাড়িতে বিমান চন্দ আর নয়নাকে একসাথে খুন করার লোভ বাপ্পা নস্কর ছাড়তে পারবে না। নিতাই আর বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত ছেলে নিয়ে বাগান বাড়িতে গিয়ে খুনোখুনি করবে। সবাই শেষ, বাকি যারা বেঁচে থাকবে তাদের দানার ছেলেরা শেষ করে দিয়ে বেড়িয়ে চলে আসবে। সবাই ভাববে গোষ্ঠী দ্বন্দে দুই রাজনেতা, অভিনেত্রী প্রান হারিয়েছে আর বাকিরা প্রান হারিয়েছে।
মহুয়া সব শুনে মুচকি হেসে বলে, "বউয়ের কথা মাঝে মাঝে শুনতে হয় বুঝলে। এইবারে কাল সকালে যা করার কোরোখানে।"
বলে এক প্রকার কোলের ওপরে ঢলে পরে। সকাল পাঁচটা বাজতে যায় তখন।
ঘুম থেকেই উঠতে দেরি হয়ে যায় দানার। ফারহানের অবস্থার এখন কোন পরিবর্তন নেই, অফিসে যাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ভুপেন খবর দিয়েছে, নিতাইয়ের একজন ছেলে নাকি ওর বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। ভুপেন আরো জানায় বাপ্পা নস্কর গতদিন আর বাড়ি থেকেই বের হয়নি। ইন্দ্রনীল নিতাই আর কয়েকজন বিশ্বস্ত কর্মী ছাড়া আর কারুর সাথে দেখা পর্যন্ত করেনি। দানা চিন্তায় পরে যায়, ইন্দ্রনীলকে বিশ্বাস করা উচিত না অনুচিত। জল্পনা করে কি ভাবে নিতাইয়ের কানে নয়না আর বিমানের গোপন সম্পর্কের বিষয় তোলা যায়, সেই সাথে নয়না আর বিমানকে কিভাবে বাকিদের সাথে ওই দূর গ্রামের বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেলা যায়।
দানা বিকেলের দিকে ডাক্তারদের ফোন করে আর বাকিদের ফোন করে ফারহানের শরীর স্বাস্থের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্তত ফারহান চোখ না খোলা পর্যন্ত স্বস্তি নেই, জারিনা সকালের দিকে একটুখানি নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল ওই পায়ের কাছে মাথা দিয়ে। যাক মেয়েটা দুইদিন পরে একটু ঘুমিয়েছে তাহলে। চারপাশে সব কিছু এঁটে বসে গেছে।
এমন সময়ে নয়নার ফোন, "কি ব্যাপার তোমার? গতকাল থেকে বাপ্পা নস্কর একদম ঘুম মেরে গেছে?" হেসে জিজ্ঞেস করে, "একদম আছোলা বাঁশ ঢুকিয়েছ দিয়েছ নাকি ওর পোঁদে?"
দানা বাঁকা হেসে বলে, "হ্যাঁ সেই রকম। তা বিমান আর মোহন কেমন আছে?"