Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম, ফারহানের জ্ঞান ফেরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফারহান তখন পর্যন্ত অজ্ঞান। ডাক্তারেরা বেশ চিন্তিত, হৃদপিণ্ড চলছে কিন্তু খুব ধীরে। জারিনা ওর হাত ছাড়বে না কিছুতেই। গতকাল থেকে সেই যে হাতখানি ধরে ছিল আর সেটা ছাড়ানো যাচ্ছে না। ভয়, যদি হাত ছেড়ে দিলে ফারহান চিরদিনের মতন পালিয়ে যায়। ওর অবস্থা দেখে বাকিদের আশঙ্কা আরো বেড়ে যায়। মহুয়া আর ফারহানের মায়ের প্রচেষ্টা বিফল। ফারহানের সাথেই খাবার খাবে, জেদ ধরেছে মেয়েটা। মেয়েটার না কিছু হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। এক রাতের মধ্যে জারিনা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। উন্মাদনার শেষ সীমানায় দানা, জারিনার ওই ফোলা ফোলা লাল চোখ দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারে না কিছুতেই।

দুপুরে একবার নয়নার ফোন এসেছিল, ফারহানের শারীরিক উন্নতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। দানা জানিয়ে দেয় এখন ওর চোখ খোলেনি খুব পীড়নের মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে ওদের। নয়নার বাড়ি থেকে পাহারা উঠিয়ে পালা করে এক এক জনে নারসিং হোম পাহারা দিয়ে চলেছে। অচেনা কাউকে দেখলেই আকরাম, নাসির, বলাই শক্তিরা হামলে পড়ে। আই.সি.ইউ তে অচেনা কাউকে ঢুকতেই দিচ্ছে না ওরা। নার্সিং হোম আর নার্সিং হোম নেই, এক দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিনত হয়ে গেছে। দুপুরের পরে ফারহানের মা আর নাফিসা বাড়িতে ফিরে যান। মহেন্দ্র বাবু, ফারহানের পরিবারকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয়।

আগের দিনের মতন সেই বক্তৃতার ছড়াছড়ি আর টিভিতে নেই। সারাদিন বাপ্পা নস্কর এক প্রকার গৃহ বন্দী হয়ে থাকে। কোন সাংবাদিক ওর সাথে সারাদিনে কথা বলতে পারে না। মহুয়া আর দানা ভালো ভাবে বুঝে যায় যে ওদের বিরুদ্ধে বাপ্পা নস্কর ষড়যন্ত্র রচে চলেছে।

রাত দুটো বাজে। রুহি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে কাদা। দানা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু মহুয়া তখন জেগে। ঘুমন্ত দানার হাতখানি বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে চিন্তা মগ্ন, কিন্তু মাথা একদম খালি।

ঠিক সেই সময়ে কলিং বেল বেজে ওঠে। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসে দানা আর মহুয়া। চোখে মুখে ছাপিয়ে ওঠে উৎসুক উত্তেজনা, এত রাতে কে এলো? কান পেতে শোনে আওয়াজ। এইবারে কলিং বেল নয়, খুব ধীরে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। মহুয়া ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, "কে এলো?" দানা উঠে দাঁড়িয়ে পায়জামা গলিয়ে ওকে অভয় প্রদান করে। বিছানার পাশের ক্যাবিনেট থেকে পিস্তল বের করে হাতে তুলে নেয়। মহুয়া সঙ্গে সঙ্গে একটা মোটা গাউন চড়িয়ে নেয়। চরম উৎকণ্ঠায় ওর বাজু খামচে ধরে। বুকের মধ্যে উত্তেজনার হাতুরি পিটতে শুরু করে মহুয়ার। রুদ্ধশ্বাসে দানা বসার ঘরের দিকে খোলা পিস্তল হাতে এগিয়ে যায়। সদর দরজার ওপরে একটা ছোট সার্ভিলেন্স ক্যামেরা লাগানো আছে। দরজার পাশেই তার ছোট স্ক্রিন। স্ক্রিনে আগন্তকের ছবি দেখে দানা হতভম্ব হয়ে যায়। সহস্র প্রশ্ন মাথার মধ্যে কিলবিল করে ওঠে। এত রাতে, একা, হঠাৎ, কেন?







রক্তের খেলা (#০৪)

মহুয়া ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে, "কে এসেছে?" হতবাক দানা ফিসফিস করে উত্তর দেয়, "ইন্দ্রনীল।" "একা?" "হ্যাঁ।" "কি চায়?" "আমি কি জানি। তুমি ভেতরে গিয়ে একটা কিছু পর আমি দেখছি।"

দরজা না খুলেই দানা জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার এতরাতে কেন?"

দরজার কাছে মাথা এনে ফিসফিস করে উত্তর দেয় ইন্দ্রনীল, "দরজা খোল, কথা আছে।"

দানা গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "ফোনে বল।"

ইন্দ্রনীল বলে, "ফোনে বলা যাবে না, দানা। দরজা খোল।"

মহুয়া ততক্ষণে একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিয়ে তারপরে গাউন জড়িয়ে বসার ঘরে ঢুকে পড়ে। পিস্তল শক্ত করে ধরে দরজা খোলে দানা। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় এক ধাক্কা মেরে চোরের মতন ঘরে ঢুকে পড়ে ইন্দ্রনীল। দরাম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মহুয়া আর দানার দিকে তাকায়। দানার হাতে পিস্তল দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়।

মহুয়ার দিকে মাথা নুইয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে, "স্যরি ম্যাডাম এত রাতে এসেছি, তা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।"

দানা কঠিন কণ্ঠে বলে, "এদিক ওদিক না ঘুরে সোজা কথা বল, এতরাতে কেন এসেছিস?"

বাপ্পা নস্করের কোন লোকের ওপরে দানার একফোঁটা বিশ্বাস নেই।

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, "প্লিস দানা আমাকে ভুল বুঝিস না।" দানা আর মহুয়া মুখ চাওয়াচায়ি করে, কি বলতে চাইছে ইন্দ্রনীল? ইন্দ্রনীল বলে, "ফারহানের খুনের পেছনে বাপ্পা নস্করের হাত আছে। এটা খুব বড় একটা চাল, আসন্ন নির্বাচনে ভোট পাওয়ার জন্য এই জঘন্য খেলা খেলেছে বাপ্পা নস্কর। ফারহানের গুলি লাগার পর থেকেই আমি আর আমার পরিবার খুব ভয়ে ভয়ে আছি।"

দানা হিমশীতল কণ্ঠে বলে, "আমার সাথে ছলনার খেলা খেলতে চেষ্টা করিস না ইন্দ্রনীল। আমি জানি বাপ্পা নস্কর ফারহানকে খুন করার চেষ্টা করেছে। তুই এতরাতে কেন এসেছিস? আমাদের ওপরে চর গিরি করতে তোকে পাঠিয়েছে?"

পিস্তল খানা তখন পর্যন্ত ওর হাতে।

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, "না না না, আমি ওর চরগিরি করতে তোর এখানে আসিনি। শুধু তোকে সাবধান করতে এসেছি। বাপ্পা নস্কর কিন্তু তোদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তোর বাড়ির ওপরে নজর রেখেছে। ম্যাডাম আর মেয়েকে কোথাও সরিয়ে দে।"

দানা ঠাণ্ডা মাথায় ওকে বলে, "তোকে বিশ্বাস করার কোন কারন আমি খুঁজে পাচ্ছি না ইন্দ্রনীল। তোর বাপ্পা নস্করকে জানিয়ে দিস, আমার পরিবারের দিকে তাকালে ওর গলা নামিয়ে দেব আমি।"

ইন্দ্রনীল মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "ম্যাডাম আপনি বলুন, আমি যদি বাপ্পা নস্করের দলের হব তাহলে কেন রাত দুটোতে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে আপনার বাড়িতে আসব? আমি সত্যি বলছি ম্যাডাম, ফারহানের ঘটনার পরে আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। নিজেকে বাঁচাতে আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই। এতদিনের পুরানো ড্রাইভারকে যদি বাপ্পা নস্কর নিজের স্বার্থে এমন ভাবে মারতে পারে তাহলে নিজের স্বার্থে আমাকেও একদিন মেরে ফেলতে কুণ্ঠা বোধ করবে না।"

দানা ক্রুর হেসে বলে, "তোর সাহায্য আমি চাই না, তোকে কোথায় পাঠাবে সেই নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। আমার অনেক লোক আছে এমনকি পুলিসের ডেপুটি কমিশনার সাত্যকি চ্যাটার্জি আমার চেনা। সুতরাং আমার টিকি ছোঁয়ার আগে তোর বাপ্পা নস্কর দশ বার ভাববে।"

ইন্দ্রনীল ম্লান হেসে বলে, "আজকেই দেখেছি তোর আসল ক্ষমতা। তুই ওকে যমের বাড়ি পাঠা আর যেখানে খুশি ইচ্ছে পাঠা আমার তাতে কোন ক্ষতি নেই। আমি শুধু তোকে সাবধান করতে এলাম ব্যাস।" মহুয়ার দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে, "ম্যাডাম, প্লিস আমার কথা একটু বিশ্বাস করুন।"

মহুয়া ওকে একটা সোফায় বসতে বলে দানাকে অনুরোধ করে ওর কথা শোনার জন্য। ইন্দ্রনীলের চোখে মুখে চাপা উত্তেজনার ছাপ, সেটা মেকি না সত্যি বলা মুশকিল। মহুয়া ওর উলটো দিকের সোফায় বসে ফারহানকে খুনের পেছনের আসল উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করে। ইন্দ্রনীলের কথা শুনে দানার শরীর জ্বলে ওঠে।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 07-09-2020, 08:08 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)