Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
এমন সময়ে সবাইকে অবাক করে মহেন্দ্র বাবু, পুলিসের ডেপুটি কমিশনার সাত্যকি চ্যাটার্জিকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। পেছন পেছন শক্তি বলাই নাড়ু কমল আর বেশ কয়েকজন পুলিস। সাত্যকি চ্যাটার্জিকে দেখে সবাই বিস্ময়ে একে ওপরের দিকে তাকায়। দানার হাতের থাবার মধ্যে বাপ্পা নস্কর থরথর করে কেঁপে ওঠে। পুলিস ইনস্পেক্টর ধীমান কি করবে কিছু ভেবে পায় না। বাপ্পাকে চোখের ইশারায় জানায় সে নিরুপায়। সাত্যকি চ্যাটার্জি আর মহেন্দ্র বাবুকে দেখে মহুয়া আর দানাও কম অবাক হয়নি। কে খবর দিয়েছে মহেন্দ্র বাবুকে? মনা আর পিন্টু নিশ্চয়। বাপ্পা নস্কর আর বাকি ছেলেদের উপেক্ষা করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে সাত্যকি চ্যাটার্জি একটু মাথা নুইয়ে অভিবাদন সারে। মহেন্দ্র বাবু একটা সোফায় বসে পড়েন।

সাত্যকি চ্যাটার্জি মহুয়াকে বলেন, "বৌমা সেই সকালে বেড়িয়েছি, ভালো করে চা খেতে পারিনি। এক কাপ চা দাও আগে।"

মহুয়া স্মিত হেসে মাথা নুইয়ে কাজের মেয়ে মণিকে চা বানানোর নির্দেশ দেয়।

সাত্যকি চ্যাটার্জি সবার দিকে একবার তাকিয়ে ধীমানকে কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, "কি ব্যাপার ধীমান, এইখানে এত সকালে? কার কি হয়েছে?"

ধীমানের পায়ের তলার মাটি সরে যায়। আমতা আমতা করে বলে, "না মানে এইখানে ওই কালকের কেসের সম্বন্ধে এসেছিলাম।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি জিজ্ঞেস করেন, "এই খানে কেন? দানার বাড়ি কি হসপিটাল?"

ধীমান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "না মানে মিস্টার বাপ্পা নস্করের অনুমান যে মিস্টার মন্ডল ফারহানকে হসপিটাল থেকে সরিয়ে দিয়েছে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন, "সরিয়ে দিয়েছে মানে? এত সংবেদনশীল একটা কেস আর রাতে তুমি হসপিটালে পাহারা রাখনি? কেন রাখোনি? আর বাপ্পা নস্কর কে? ওর অনুমান অনুযায়ী কি তুমি চলো?"

ধীমানের গলা শুকিয়ে আসে। বাপ্পা নস্করের কাঁধের ওপরে দানার হাতের থাবা আরো শক্ত হয়ে বসে যায়। নিতাইয়ের সঙ্গে আসা ছেলেগুলো চুপিসারে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়ে শক্তি আর আকরাম। ইন্দ্রনীল এক কোনায় দাঁড়িয়ে মিচকি মিচকি হেসে ঘরের চারদিকে দেখে। কিছু পরে কাজের মেয়ের সাথে মহুয়া একটা ট্রেতে চায়ের কাপ নিয়ে বসার ঘরে আসে। মহেন্দ্র বাবুর হাতে চায়ের কাপ দেওয়ার সময়ে তিনি ওর মাথায় হাত দিয়ে অভয় প্রদান করেন।

মহুয়ার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সাত্যকি চ্যাটার্জি ওকে জিজ্ঞেস করে, "বৌমা তোমাদের কি এরা হুমকি দিয়েছে?"

ওই কথা শুনে নিতাইয়ের গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বাপ্পা নস্কর দরদর করে ঘামতে শুরু করে দেয়। মহুয়া স্মিত হেসে দানার দিকে তাকায়। বাপ্পা নস্কর কাতর চাহনি নিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সবাই উন্মুখ মহুয়া কি বলে।

মহুয়া কে চুপ থাকতে দেখে সাত্যকি চ্যাটার্জি ধীমানকে কড়া কণ্ঠে বলেন, "কি এমন বলেছো যে বৌমা কথা বলতে পারছে না? হ্যাঁ?"

ওর ধ্যাতানি খেয়ে ধীমানের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সাত্যকি চ্যাটার্জি ওকে বলেন, "তোমার সামনে হুমকি দিয়েছে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে গেছ? এই সব লোকেদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিয়েছো? আইপিসি ধারা পাঁচশো তিন, বাড়িতে চড়াও হয়ে ধমকি দেওয়া, আইপিসি ধারা চারশো একচল্লিশ, চারশো বিয়াল্লিশ। কি ধীমান লেখো, না হলে এইবারে তোমার বিরুদ্ধে আমাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।"

ধীমানের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বাঘের মতন সাত্যকি চ্যাটার্জি এক এক করে সবাইকে বধ করছেন।

বাপ্পা নস্কর, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "না মানে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে ফারহানকে দানাই ওই হসপিটাল থেকে সরিয়েছে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি যেন হঠাৎ বাপ্পা নস্করকে দেখতে পায় এমন ভাব দেখায়। ওর দিকে ভীষণ চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলেন, "আপনি বাজারে যান?"

বাপ্পা নস্কর মাথা দোলায়, "হ্যাঁ"

সাত্যকি চ্যাটার্জি গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, "গিয়ে দেখলেন একটা দোকানের আলু ভালো নয়। আপনি কি ওই দোকান থেকে আলু কিনবেন না অন্য দোকানে যেখানে ভালো আলু পাওয়া যাবে সেখানে যাবেন?" দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি সত্যি সরিয়েছ ফারহানকে?"

দানা আলতো মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, স্যার।"

সাত্যকি চ্যাটারজি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন, "কেন সরিয়েছ? জানো না এটা বড় সংবেদনশীল মামলা।"

কি বলতে চাইছেন সাত্যকি চ্যাটার্জি? দানা একবার মহুয়ার দিকে তাকায় একবার মহেন্দ্র বাবুর দিকে তাকায়। দুইজনে মাথা নাড়িয়ে বলে কিছুই বুঝতে পারছে না। দানার মনে হয়, সাত্যকি ওর প্রশ্নের মাঝে উত্তর দিয়ে দিয়েছেন তাই সেই উত্তর হাতড়ে উত্তর দেয়, "ফারহান আমার খুব ভালো বন্ধু। ওই হসপিটালে ওর চিকিৎসা ঠিক মতন হবে না তাই ওকে সরাতে বাধ্য হয়ছি।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি স্মিত হেসে ধীমানের দিকে তাকিয়ে বলেন, "এবারে বুঝলে কেন সরানো হয়েছে। যাই হোক গতকাল তুমি ফারহানের স্টেটমেন্ট নিয়েছো?"

ধীমান মাথা নাড়ায়, "না স্যার, মানে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে বাহাত্তর ঘন্টার আগে ফারহানের জ্ঞান ফিরবে না।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি আবার একটা হুঙ্কার দেয়, "তাহলে এইখানে কি মেলা লেগেছে যে এইখানে এসেছো? যাও।"

ধীমান আর বাকি পুলিসেরা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। নিতাই আর বাকি ছেলেরা ওদের বাড়ি থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। ঘরে শুধু মাত্র ইন্দ্রনীল, মহুয়া আর দানার থাবার মধ্যে ছুঁচোর মতন বাঁধা পড়া বাপ্পা নস্কর, মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটার্জি। বাড়ি খালি হয়ে যাওয়ার পরে দানা বাপ্পা নস্করের ঘাড়ের ওপর থেকে হাতের বেড় হালকা করে। ছাড়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছটফটিয়ে ওঠে বাপ্পা নস্কর।

সাত্যকি চ্যাটারজি বাপ্পা নস্করের চোখে চোখ রেখে বলে, "একবার শুধু আপনার বিরুদ্ধে প্রমান যোগাড় করা বাকি। তাহলেই....."

বাপ্পা নস্কর আমতা আমতা করে বলে, "না মানে আমি....."

দানা, হিমশীতল কণ্ঠে বাপ্পা নস্করের চোখে চোখ রেখে শাসায়, "আমার পরিবারের দিকে চোখ তুলে তাকাতে চেষ্টা করবেন না একদম। চোখ উপড়ে হাতে ধরিয়ে দেব। রেল স্টেশানের পাশে আগে চোরাই চাল বিক্রি করতেন ঠিক সেইখানে বসে ভিক্ষে করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না কিন্তু বাপ্পা নস্কর।"

বাপ্পা নস্কর রাগে অপমানে গজগজ করতে করতে ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়। এতক্ষণ যেন একটা বিশাল ঝড় বয়ে গেছে ওদের বসার ঘরে। ওরা বেড়িয়ে যেতেই সাত্যকি চ্যাটার্জি আসল ঘটনা জানতে চান। দানা আর মহুয়া ওকে জানায় ওদের অনুমান বাপ্পা নস্কর, ফারহানের গুলি লাগার পেছনে দায়ী। ভুপেনের দেখান ছেলেটার সম্বন্ধে চেপে যায় দানা, কারন সেই ছেলেটা ইতিমধ্যে মাছেদের খাদ্য হয়ে গেছে। দানা জানায়, যদিও ওদের হাতে কোন প্রমাণ নেই তবে আজকের সকালের বাপ্পা নস্করের আহত রূপ দেখে ওদের বদ্ধমূল ধারনা প্রতিত হয়। মহেন্দ্র বাবুকে না জানানোর জন্য তিনি একটু বকাবকি করেন। মনা আর পিন্টু রুহিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। ওরা বাপ্পা নস্কর আর পুলিস দেখে বেশ ভয় পেয়ে মহেন্দ্র বাবুকে ফোন করেছিল। দানা জানিয়ে দেয় হাতে তথ্য প্রমান এলে সাত্যকি চ্যাটার্জির হাতে তুলে দেবে, নিজের হাতে আইন তুলে নেবে না। কথাটা বলেই দানা আর মহুয়া চোখের ইশারায় একটু হেসে নেয়।

মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটার্জি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই দানা আর মহুয়া হেসে ফেলে কিন্তু সেই সাথে জানে। ওদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। রক্তারক্তির খেলা ওদের জন্য নয়। সুচতুর বুদ্ধির জোরে একে একে সবাইকে মারতে চায় ওরা। তবে মাঝে মাঝে গায়ে যে আঁচড় কামড় লাগবে সেটার জন্য প্রস্তুত, ঠিক একটু আগেই যেমন একটা আঁচড় লেগে গেল, যদিও রক্তক্ষরণ হয়নি। ওরা বুঝতে পারে যে ওদের ওপরে এইবারে বাপ্পা নস্কর নজর রাখবে। খুব বেশিদিন এই খেলা আর খেলা উচিত নয়, এইবারে ওদের জাল গুটাতে হবে।

সারাদিন ঝড়ের বেগে কেটে যায়। দানা আর মহুয়া বেশ লুকিয়ে চুরিয়ে নার্সিং হোমে পৌঁছায়, জানে ওর পেছনে চর লেগে। তাই প্রথমে হিঙ্গলগঞ্জ, মহেন্দ্র বাবুর কাছে যায়। সেখানে ওরা ওইখানে বেশ ভুষা বদলে নকল চুল দাড়ি লাগিয়ে আর মহুয়া একটা বুরখা পরে অন্য গাড়ি করে নার্সিং হোমে যায়।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 07-09-2020, 02:59 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)