Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
দানা ওর মাথা চেপে প্রবোধ দেয়, "চোখের জল মোছো, হানিমুনে যাবে না? এই চেহারা নিয়ে হানিমুনে গেলে ফারহান আর ভালবাসবে না তোমাকে!"

হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না জারিনা, কিন্তু বিয়ের কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠে। দানা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ফারহানকে দেখে আই.সি.ইউ থেকে বেড়িয়ে আসে। কেউ নেই আসেপাশে কার কাছে সাহায্য চাইবে? এই অবস্থায় ফারহানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়? ডক্টর মানস সোমের কথা মনে পরে যায়। মহুয়াকে লোকেশের হাত থেকে বাঁচানোর সময়ে সাহায্য করেছিল। সব থেকে আগে, বাকি ছেলেদের আবার ডাক দেয়। জানিয়ে দেয় রাতের মধ্যে ফারহানকে এই হস্পিটাল থেকে সরিয়ে কোথাও নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে যেখানে বাপ্পা নস্কর হাত বাড়াতে পারবে না। তারপরে ডক্টর মানস সোমকে ফোন করে দানা।

সব কিছু শোনার পরে খুব চিন্তায় পরে যায় ডক্টর মানস সোম। দানাকে জিজ্ঞেস করে ফারহানের চিকিতসকের নাম, কারন অত সহজে একটা হসপিটাল থেকে কোন অসুস্থ ব্যাক্তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়, তার ওপরে এটা পুলিস কেস। দানার সাথে সাথে ফারহানের আম্মা, ভাই সবাই সমস্যায় পড়ে যাবে। নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাক্তারের নাম জেনে নেই দানা, তারপরে ডক্টর মানস সোমকে জানায়। তিনি জানিয়ে দেন, নিজের যে নার্সিং হোম আছে বটে, কিন্তু সেই খানে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম নেই, তবে ওর চেনাজানা একটা বড় নার্সিং হোমে এই সুবিধা আছে। এক ঘন্টার মধ্যে সব ব্যাবস্থা করে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

হাতে আবার পিস্তল নিয়ে নেয় দানা। ছেলেরা চলে আসে ততক্ষণে। আই.সি.ইউ.র সামনে জটলা দেখে নিরাপত্তা রক্ষী ওদের চুপ থাকতে অনুরোধ করে, কিন্তু দানার আর ছেলেদের চেহারা দেখে মাথার মধ্যে সব কিছু গুলিয়ে যায়। ডক্টর মানস সোম এবং সাথে আরো দুইজন ডাক্তার এসে পৌঁছে যায় হসপিটালে। ডক্টর মানস সোমের হাত ধরে কাতর প্রার্থনা করে দানা। সাথে চিকিৎসা রত ডাক্তার অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম আই.সি.ইউ. তে ঢুকে একবার ফারহানকে পরীক্ষা করে দেখে।

ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম অনেকক্ষণ আলোচনা করার পরে দানাকে বলে, "দেখুন নিয়ে যেতে দিতে পারি তবে খুব সাবধান। ফারহানের অবস্থা খুব খারাপ, এমত অবস্থায় নড়াচড়া করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে ওর প্রাণহানির আশঙ্কা শুনে ওকে বাঁচাতে সব প্রচেষ্টা করবো।"

সেই রাতেই হসপিটালের সব লোক ডেকে ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া বুঝিয়ে দিলেন, যে ফারহান নামে কোন ব্যাক্তি ওদের হসপিটালে কোনোদিন কোন চিকিৎসা করতে আসেনি। হসপিটালের কম্পিউটার, খাতা, এমনকি সার্ভিলেন্স ক্যামেরা থেকে সব কিছু মুছে দেওয়া হয়। দুই ডাক্তারের হাত ধরে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানায় দানা। জারিনা, নাফিসা, ফারহানের দাদা আর মা কে একটা গাড়ি করে আগে থেকে ওই নার্সিং হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নার্সেরা ফারহানের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বদলে দেয়। অ্যাম্বুলেন্স করে রাতারাতি হসপিটাল থেকে সরিয়ে অন্য নার্সিং হোমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় ফারহানের। সবকিছু সারতে সারতে সকাল হয়ে যায়।

সারা রাত ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারেনি মহুয়া, ভোরের আলো পুব দিকে উঁকি মারতেই দানাকে ফোন করে, "কি খবর গো? ফারহান কেমন আছে।"

সারা রাতে ফারহানকে স্থানান্তরিত করার ঝামেলায় মহুয়াকে আর ফোন করা হয়নি, তাই মহুয়াকে সব কিছু খুলে বলে। মহুয়া ওকে বলে "শোন জিত, সকাল হলেই বাপ্পা নস্কর কিন্তু লোকজন, সাংবাদিক পুলিশ ইত্যাদি নিয়ে নিশ্চয় হসপিটালে মেকি কান্না কাঁদতে আসবে। তার আগে তুমি বাড়িতে ঢুকে যাও। ফারহানের পরিবারকে মহেন্দ্র বাবুর বাড়িতে লুকিয়ে ফেল, না হলে বাপ্পা নস্করের পরবর্তী আঘাত ওর পরিবারের ওপরে হবে। জিত, যুদ্ধ এইবারে সামনা সামনি এসে পড়েছে, জাল গুটানোর সময় এসে গেছে।"

দানাও সেই কথায় সায় দেয়, যুদ্ধ এইবারে একদম বাড়ির দোরগোড়ায়। সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু ছেলেকে ওই নার্সিং হোমে পাহারায় রেখে বাড়ি ফিরে আসে। বিধস্ত দানাকে দেখে মহুয়া খুব বিচলিত হয়ে যায়। এইবারে বাপ্পা নস্কর একদম সামনে থেকে ওর ওপরে আঘাত হানবে, কি করে সেই হামলা থেকে নিজেকে বাঁচানো যায় সেই চিন্তা। গতকাল সকাল থেকে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, প্রথমে কাজের সাইট, তারপরে হসপিটাল আর ঝামেলা। দানার শরীর আর চলছে না। কোনোরকমে স্নান সেরে দুটো মুখে গুঁজে শুয়ে পড়ে দানা। মনা আর পিন্টু যথারীতি সকালেই বাড়িতে পৌঁছে খোলা পিস্তল হাতে নিয়ে বসার ঘরে তৈরি। ওইদিকে নার্সিং হোমে শক্তি আর বলাই। বাপ্পা নস্করের ওপরে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে ভুপেন।

কিছুপরে ভুপেন ফোন করে জানায় যে বাপ্পা নস্কর হসপিটালের জন্য বেড়িয়েছে, সাথে ইন্দ্রনীল, নিতাই আর বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্ম কর্তা, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আর টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ম্যান। ভুপেনকে দলের সাথে গা বাঁচিয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়, ভুপেন সেই মতন কাজ করে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে ভুপেন জানায় যে বাপ্পা নস্কর ওর বাড়িতে আসছে। মহুয়ার বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা, রুহিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। একবার ভাবে মহেন্দ্র বাবুকে ফোন করে জানাবে। না একাই মোকাবিলা করবে বাপ্পা নস্করের সাথে। বাড়িতেই না একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটে। মনা আর পিন্টুর মাথায় রক্ত চড়ে যায়। সব থেকে আগে রুহিকে বাড়ি থেকে সরানো দরকার। মনা আর পিন্টু ওকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। মহুয়া কিছুতেই দানার পাশ ছাড়বে না, কি করা যায়, নাছোড়বান্দা। বুকের মধ্যে ঝড়ের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি। দানার মাথায় টগবগ করে রক্ত ফুটছে, সাদা মার্বেলের মেঝে রক্তে না লাল হয়ে ওঠে। দানাকে বারেবারে শান্ত হয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে, কারন বাপ্পা নস্কর নিশ্চয় পুলিস লোকজন নিয়েই ওর বাড়িতে আসবে। বাড়িতে শুধু দানা আর মহুয়া বুকের মধ্যে চাপা উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ে বসার ঘরে বসে। রুদ্ধশ্বাসে দুইজনে কলিং বেল বাজার অপেক্ষা করে।

ভুপেন প্রতি মিনিটের খবর দানার কাছে পৌঁছে দেয়, বাপ্পা নস্কর ওর বাড়ির সিঁড়ি চড়ছে। দরজা খুলে রাখে দানা। কোমরের পেছনে পিস্তল গুঁজে তৈরি, সোফায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে শান্ত মনে ঝড়ের অপেক্ষা করে।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 06-09-2020, 09:00 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)