Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.25 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পাতাল সুন্দরী Written By Lekhak (লেখক)
#5
।। পাঁচ ।।


টালীগঞ্জ থেকে ধর্মতলা। পাতাল রেলে কুড়ি মিনিট ধরে আমরা সুখপ্রদ যাত্রা করে এসেছি। আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে দেবিকার সাথে ভালবাসার খেলা খেলছিলাম, বাকী জীবনটায় ওকে নিয়ে বাঁচবো বলে শপথ করলাম, অথচ ও কেন এমন দূঃখ ভরা কথা বলছে, বোধগম্য হল না। জীবনের কোন বেদনাদায়ক স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে দেবিকা, আমার মনে হল, আমি যদি ওর এই দূঃখ কষ্টকে ভুলিয়ে দিতে না পারি, তাহলে বোধহয়, আমি ওর প্রেমিক হবার যোগ্যই নই।

মূহূর্তে দেবিকা পরিস্থিতিটা ভাল থেকে খারাপ করে আবার নিজেই ভাল করার চেষ্টা করতে লাগল। আমাকে খোঁচা দিয়ে বলল, "যাবে নাকি আমার বাড়ীতে? কেউ নেই ওখানে। শুধু তুমি আর আমি।"

দেবিকাকে বললাম, "বাড়ীতে তুমি একা থাকো? কেউ নেই? তোমার বাবা মা? তারা নেই?"

দেবিকা বলল, "মা তো মারা গেছেন, এই দুমাস হল। বাবা অনেকদিন আগেই। তাই আমি এখন একাই থাকি, আর কেউ নেই।"

আমার হাতটা ধরে টানছিল দেবিকা, যেন আমাকে ওর বাড়ীতে নিয়ে যাবেই। পথে ঘাটে এখন কত কি হয়, নারী ফাঁসায় পুরুষকে, পুরুষ ফাসায় নারীকে। উদ্দেশ্য কখনও ভালো আবার কখনও খারাপও হতে পারে। তবু কেন জানি না আমার মনে হল, দেবিকার মত সুন্দরী মেয়ে কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে, এভাবে আমাকে ওর বাড়ীতে টেনে নিয়ে যেতে পারে না।

একটু হেসে বলল, "কি মিষ্টার? ট্রেনে তো খুব বীরত্ব দেখাচ্ছিলে, আর এখন আমার বাড়ীতে যেতে তোমার ভয় করছে?"

আমি বললাম, "না না, ভয় কেন? তুমি যখন চাইছ, তখন তোমার বাড়ীতেই তাহলে যাওয়া যাক। আমার এতে কোন আপত্তি নেই।"

ধর্মতলা থেকে পায়ে হেঁটে পনেরো মিনিট ওর বাড়ী। জায়গাটার নাম ওয়েলিংটন। লেলিন সরণীর ওপরে কিছুদূর গিয়ে বাঁক নেওয়া ডানদিক একটা সরু গলি। গলিটার মুখে একটা ছোট্ট স্টেশনারী দোকান। কিছুদূর গিয়ে একটা মোবাইল শপ। তার পাশেই আর একটা ছোট গলি। দোতলায় ওঠার জন্য কাঠের সিঁড়ি। ওপরে উঠে চওড়া একটা ফটক। ফটকে ঝুলছে তালা। যেন অনেক পুরোন বাড়ী। দেবিকারা অনেক দিন ধরে রয়েছে এ বাড়ীতে।

কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওকে বললাম, "তাহলে টালীগঞ্জে রোজ রোজ তুমি কি কারনে যাও? আমি যে রোজ দেখি তোমাকে ওখানে সকালে?"

দেবিকা নিরুত্তর। দরজা খুলে আমাকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ও যেন সত্যি কথাটা বলতে চাইছিল না। আমাকে বলল, "কি হবে জেনে? ধরো আমি রোজ যাই, প্রতিদিনই যাই, যদি সেই মানুষটাকে কোনদিন খুঁজে পাই। জানি হয়তো পাব না। তবুও....."

সাত সকালে উঠে রোজই ও টালীগঞ্জে যায়? কার জন্য যায় দেবিকা? আমারো তো জানতে ইচ্ছে করে। কাউকে কি ও ভালবাসে? ভালবাসার পুরুষ আমি ছাড়াও এ পৃথিবীতে আছে হয়তো দেবিকার। ওকে একটু চাপ দিয়েই বললাম, "আমাকে যদি না সত্যি কথাটা না বলো, তাহলে ভাববো, তুমি হয়তো এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারোনি আমাকে। "

আমার মাথায় হাত রেখে দেবিকা বলল, "তিন সত্যি করে তোমায় বলছি, বিশ্বাস করো, তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই এখন ভালবাসি না আমি। কিন্তু জীবনে এক সময়ে একজনকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম। তাকে মন প্রাণ দিয়ে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলাম। আমার এই শরীরটা, এই দেহটা তাকে পুরোপুরি সমর্পণ করেও মন পাইনি তার। সে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আমার ভালবাসার প্রতিদানে সে আমায় কিছুই দিতে পারেনি। জীবনটা নিয়ে শুধু খেলতে চেয়েছিল। তাকে বিশ্বাস করে আমি তুমুল মেলামেশা শুরু করলাম। এই শহরে যেকটা নিরিবিলি জায়গা আছে, সব জায়গাতেই তার সাথে ঘুরেছি, হাতে হাত রেখে। প্রেমের জোয়ারে ভেসে চাকরিটাও ছেড়ে দিলাম। আমার মাকেও আমি দুমুঠো অন্ন জুগিয়েছি চাকরিটা করে। ও বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করব। কি হবে তোমার চাকরি করে। একবারও সেই সময় মায়ের কথাটাও মনে হয় নি আমার। আমি চাকরি না করলে মায়ের কি দূর্দশা হবে। মাকে ছেড়ে কদিন ওর কাছে গিয়েও রইলাম। কিন্তু কিছুতেই ওর আসল রূপকে আমি ধরতে পারিনি। শয়তান, নারীলোভী একটা মানুষের সঙ্গে সংসার বাধতে গিয়েছিলাম। যখন ওর আসল চেহারাটা আমার সামনে আসলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।"

দেবিকা কে এই মূহূর্তে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। পুরোনো স্মৃতিকে মন থেকে অত সহজে ভোলা যায় না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু ভাবছিলাম, আমিও তো এক পুরুষ। এই কদিনে দেবিকাকে প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে আমারো ওর প্রতি লোভের জন্ম নিয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমি তো ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। আমি যে ওকে ভীষন ভাবে ভালবাসি।

দেবিকা বলল, "মা এই কষ্টতেই মারা গেল। বাবাকে ছোটবেলায় হারিয়েছি, মা ও চলে গেল, আমি ভীষন একা। আমার এই পৃথিবীতে এখন কেউ নেই। নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছি। যদি তুমি এবার আমাকে বাঁচার আলো দেখাতে পারো।"

দেবিকার মতো সুন্দরী মেয়ের পুরুষমানুষের কখনও অভাব হবে না। তবুও আমার মনে হল, পুরোনো বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়তো ওকে কিছুটা হলেও কুঁকড়ে দিয়েছে। প্রথম প্রেমিকের পর, দ্বিতীয় প্রেমিক হিসেবে আমি সেই ভাগ্যবান পুরুষ, যার এতদিনের মনোবাসনা আজ পূরণ হয়েছে। দেবিকার আমাকে ভাল লেগে গেছে। আমারো ভাল লেগে গেছে দেবিকাকে।

দেবিকা বলল, "ও টালীগঞ্জে যে বাড়ীটায় থাকতো, সে বাড়ীতে থাকে না এখন। আমি অনেক বার ওকে গিয়ে খুঁজেছি। পুরো টালীগঞ্জ চষে বেরিয়েছি, যদি কোনদিন ওকে দেখতে পাই। তাহলে শোধ নেব। উশুল করে নেব, আমার জীবনের অপূরনীয় ক্ষতি। কিন্তু পাই নি কোনদিন, যখন তোমাকে রোজ দেখতাম, ভাল লাগত আমার। কিন্তু মনে একটা ভয় ছিল, শঙ্কা ছিল। তুমিও যদি আবার ওর মতোই হয়ে যাও দেব। তাহলে?"

মূহূর্তে দেবিকাকে জড়িয়ে ওকে আবার কাছে টেনে নিলাম। আমার বুকে মুখটা রেখে ফুঁপিয়ে উঠে দেবিকা বলল, "মাঝে মাঝে আমার মনে হত, মেট্রো স্টেশনে চলন্ত কোন ট্রেন আসার আগেই যদি এই দেহটা নিয়ে ঝাঁপ দিই। শেষ করে দিই এই জীবনটাকে। আমার বেঁচে থাকার যেন কোনো মানে হয় না।"

ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, "কেন শেষ করে দেবে এই জীবন? জীবন কি এতই সস্তা? ভাঙাগড়া এই জীবনেরও তো একটা মূল্য আছে। পুরোনো স্মৃতিকে মনে করে নিজেকে এত কষ্ট দিয়ে দূঃখ পেও না দেবিকা। আজ থেকে আমি দেখব তোমাকে। তোমার বাকী জীবনের সুখকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিলাম আজ থেকে। এই দেব বলে ছেলেটা যতদিন বাঁচবে, শুধু তোমার জন্যই বাঁচবে আজ থেকে।"

বুঝতে পারছিলাম ও কোন জাদু দিয়ে নয়। সত্যি কথাটা সরল ভাবে বলে আমার মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ট্রেনের মধ্যে না বুঝেই আমি একটু অতিরিক্ত কামনা মেটানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই দেবিকা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। ওকে আগে শুধু ভালবাসব, শরীর দেওয়া নেওয়ার খেলা তো পরেও চলতে পারে।

দেবিকা তবু আমার বুকে মুখটা রেখে বলল, সত্যি বললে তো দেব। তুমি তাহলে কথার খেলাপ করবে না। আমাকে ঠকাবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না বলো....."

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাতাল সুন্দরী Written By Lekhak (লেখক) - by Kolir kesto - 06-09-2020, 06:40 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)