Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
কাঁদতে কাঁদতে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কোথায় গেছিলে একা একা? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম বলো তো? তোমার মাথায় একটু বুদ্ধি সুদ্ধি নেই নাকি? আমাকে এইখানে একা ফেলে কোথায় গেছিলে।"

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ছলছল চোখে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, "কিছু হতে দিতাম না তোমাকে। কিছু হলে পৃথিবী জ্বালিয়ে দিতাম।"

মহুয়া চেঁচিয়ে ওঠে, "হয়ে যাওয়ার পরে না জ্বালাতে, ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার সেটা হয়েই যেত।"

দানা ওর মুখ আঁজলা করে ধরে বলে, "আমি কথা দিচ্ছি পাপড়ি, কারুর কিছু হবে না।"

তারপরে এক এক করে ভুপেন আর দানা মহুয়াকে সব খুলে বলে। এত কাছের লোক যে আঘাত হানবে সেটা আশাতীত। যত হোক ফারহান চোখ বুজে বাপ্পা নস্করের ওপরে ভরসা করত, ওর অন্নদাতা তাই চর গিরি করলেও বাপ্পাকে মারার পরিকল্পনা করলেই বাধা দিত। মহুয়া জানায় ফারহান এখন চোখ খোলেনি, জারিনা আর ওর আম্মিজান আই.সি.ইউ. তে বসে। লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ফারহানকে রাখা হয়েছে। হৃদয়ের খুব কাছে লেগেছে একটা গুলি, এক ইঞ্চি একটু এদিক ওদিক হলে বুক ফুঁড়ে বেড়িয়ে যেত আর অন্য গুলি ডান কাঁধে ঠিক গলার কাছে, শ্বাস নালী থেকে একটু দূরে। জারিনার অপার ভালোবাসা ওকে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে এনেছে।

মহুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, বলে একটু বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার আসতে। দানাকে ছেড়ে কিছুতেই যেতে চায় না কিন্তু ছোট মেয়ে বাড়িতে একা, এতক্ষণে কেঁদে কেঁদে সারা হয়ে গেছে। একজনের সাথে গাড়ি দিয়ে মহুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সবাইকে সতর্ক করে দেয় আর ভুপেনকে ওইখান থেকে চলে যেতে বলে। বাপ্পা নস্করের লোকজন যদি ভুপেনকে ওদের সাথে দেখে ফেলে তাহলে সব কিছু জেনে যাবে আর ওরাও সতর্ক হয়ে যাবে।

যাওয়ার আগে দানা ভুপেনকে বলে, "শোন, তুই আমার হয়ে একটা কাজ করবি?"

ভুপেন বলে, "একটা কেন রে, ফারহানের জন্য দশ খানা কাজ করব। বল কি করতে হবে।"

দানা ওকে বুঝিয়ে বলে, বাপ্পা নস্করের ওপরে কড়া নজর রাখতে হবে, নিতাইয়ের দলের মধ্যে একদম মিশে যেতে হবে। ওদের প্রতিটি পদক্ষেপের খবর যেন দানা পায়। ভুপেন মাথায় টুপি পরে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় ওর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে, চাইলে সবার খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে রাতের মধ্যেই শেষ করে দেবে। দানা মানা করে দেয়। ভুপেন চলে যাওয়ার পরে বাকি ছেলেদের চলে যেতে বলে।

একা একা দানা হসপিটালে ঢোকে, রাত দুটোতে হসপিটাল চত্তর খালি হয়ে গেছে। টিভিতে তখন বিকেলের খবর বড় বড় করে চলছে। বাপ্পা নস্করের হাত পা নাচিয়ে উত্তেজক বক্তৃতা, এই অরাজকতা বন্ধ করতে হবে, ওকে সরানোর চক্রান্ত করা হয়েছে, এলাকার উন্নয়ন চায় না বিরোধী পক্ষ, ওরা চায় খুনোখুনি। হাসিহাসি মুখে হাতজোড় করে লোকের হাততালি আর শুভেচ্ছা কুড়িয়ে নিচ্ছে নীচ, ধূর্ত খুনি বাপ্পা নস্কর। সেই ছবি দেখে দানার শরীর জ্বলে ওঠে। ডাক্তার ততক্ষণে চলে গেছে, নার্সেরা আছে হয়ত। উপরে উঠে আই.সি.ইউ.র সামনে গিয়ে তাবিশ আর নাফিসার দেখা পায়। ভাইয়ের এই মৃত্যু শয্যা দেখে বেদনায় তাবিশের চেহারা পাংশু হয়ে গেছে। ক্লান্ত নাফিসা একটা চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে, পাশের একটা চেয়ারে ওর আম্মিজান ভাসাভাসা চোখ নিয়ে দানার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ওকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে ফারহানের মা, "এই কয়দিন পরে বিয়ে..... আর এখনই কেন এমন হলো? ফারহান কারুর ক্ষতি করেনি।"

সত্যি ফারহান কারুর খারাপ দেখতে পারে না। দানাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল, এমন কিছু পরিচয় ছিল না যখন ওই রেল স্টেশান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। ভুপেনের মায়ের চিকিতসার জন্য টাকা দিয়েছিল। ভালো লোকেরাই মরে আর খারাপ মানুষেরা বরাবর জিতে যায়। মিথ্যের পরাজয় এটাই আজকের যুগের চরম সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঘ কোনোদিন বাঘের মাংস খায় না, কিন্তু মানুষ মানুষের রক্ত খেতে চায়। চিরটা কাল তাই হয়ে এসেছে।

দানা ফারহানের মায়ের হাতজোড়া ধরে পায়ের কাছে বসে প্রবোধ দেয়, "চাচী, ফারহানের কিছু হবে না। আমি ফারহানকে বাঁচিয়ে আনবো। জারিনা ফারহানের বিয়ে হবে, আপনার ঘর আলো করে আপনার ছোট বৌমা আসবে।"

ফারহানের মা ওর কথা শুনে কেঁদে ফেলে। দানা ওর মায়ের হাত ধরে বলে, "চাচী আপনি বাড়ি যান আমি এখানে আছি।"

ফারহানের মা কেঁদে ফেলে, "ছেলেকে একা ফেলে কি করে যাই বলো? মেয়েটা কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে গেছে।"

দানা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে আই.সি.ইউ. তে ঢুকে দেখে, বুকে গলায় সাদা ব্যান্ডেজে বাঁধা, অচৈতন্য ফারহান নিথর হয়ে চোখ বুজে পড়ে আছে। নাকের মধ্যে অক্সিজেনের নল, বুকে কপালে কত কিছু লাগানো। ওর হাত ধরে চুপচাপ ওর পাশে পাথরের মতন হয়ে বসে জারিনা। দানা জানে ওই হাত কিছুতেই ছাড়ানো যাবে না। আজ রাতেই ফারহানকে এইখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সকালে নিশ্চয় সাংবাদিক টিভি ক্যামেরার সাথে বাপ্পা নস্কর হামলে পরবে হসপিটালে। কিছুক্ষণ ঝরাবে ওর মেকি কুমীরের অশ্রু, তারপরে পান চিবোতে চিবোতে বেড়িয়ে যাবে শালা হারামির বাচ্চা বাপ্পা নস্কর। পা টিপে টিপে জারিনার মাথায় হাত রাখে। কেঁদে কেঁদে মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে গেছে। দানার দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে ফ্যাকাসে রক্তহীন ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 06-09-2020, 12:00 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)