Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
ভুপেন ওর হাত ধরে উল্টে গর্জে ওঠে, "আরে বাল তুই আগে মাথা ঠাণ্ডা করে ভাব। ফারহান আমার মায়ের চিকিতসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল আমি কেন ওর বিরুদ্ধাচরণ করবো রে। আমি জানি একমাত্র তোকে জানালে এই চরম আঘাতের প্রতিশোধ নেওয়া যাবে।"

বাপ্পা নস্কর, কিছুতেই দানা আর ভাবতে পারছে না। মাথা ধরে ভিজে মাটির ওপরে শুয়ে পড়ে। ভুপেন ওর পিস্তল তুলে ওর হাতে ধরিয়ে বলে, "আমি যদি মিথ্যে বলি এই তোর পিস্তল আর এই আমার মাথা। তুই সানন্দে আমার মাথায় গুলি মারিস আমি একটা শব্দ করবো না কথা দিলাম। তবে ওঠ দেখি, এখুনি যদি রেল স্টেশানে যাওয়া যায় তাহলে ওই ছেলেটাকে হয়ত ধরতে পারা যাবে।"

দানা সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে ওঠে, "বলছিস ধরতে পারা যাবে?"

ভুপেন বলে, "আশা করি হ্যাঁ। কারন নিতাই ওকে সরিয়ে নিয়ে কোথাও একটা লুকিয়ে রেখেছিল, এই একটু আগে ওকে রেল স্টেশানে ছেড়ে এসেছে নিতাইয়ের লোক তাই তোকে ফোন করলাম। তাড়াতাড়ি চল আর যদি তোর লোকজন থাকে তাহলে ডেকে নে। রেল স্টেশানে আশা করি ওকে একা পাওয়া যাবে।"

সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কর রমিজকে ফোনে বিস্তৃত খবর জানিয়ে দেয়। ফারহানের খবর জিজ্ঞেস করে জানতে পারে ওকে আই.সি.ইউ. তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মহুয়া এখন বাকি সবার সাথে হসপিটালে বসে। শঙ্কর মহুয়াকে ফোন ধরাতে যায় কিন্তু দানা মানা করে দেয়। জানে আবার মহুয়া খুব শঙ্কায় থাকবে। শঙ্কর আর রমিজকে মহুয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওইখান থেকে সোজা রেল স্টেশানে আসতে অনুরোধ করে।

ভুপেনের সাথে দানা কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেশানে পৌঁছে যায়। গভীর রাত, সব দুর পাল্লার যাত্রী। কিছুক্ষণের মধ্যে শঙ্কর আর রমিজ জনা দশেক ছেলে নিয়ে রেল স্টেশানে পৌঁছে যায়। সবার চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা, সবাই ফারহানের খুনিকে ধরতে উদ্যত। একটা ক্ষুধার্ত বাঘের দল খুঁজে বেড়াচ্ছে খাদ্য। রেল স্টেসান লোকে লোকারণ্য। এত লোকের মাঝে কোথায় খুঁজে পাবে ওই ছেলেটাকে? সারি দিয়ে প্রচুর প্লাটফর্ম সব কয়টা প্লাটফর্ম খোঁজা কয়েকজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ভুপেন ছাড়া আর কেউ ওই ছেলেটাকে চেনে না।

শঙ্কর দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি করে খুঁজবি রে দানা?"

দানা মাথা চুলকায়, "জানি না শঙ্করদা কিন্তু কি করা যাবে।"

ভুপেন বলে, "শালা ওই ছেলেটা চিনেদের মতন দেখতে, ছোট ছোট চোখ, নাক চ্যাপ্টা ফর্সা রঙ। বাংলা জানে সুতরাং মনে হয় উত্তর বঙ্গের দিকে থাকে। উত্তর বঙ্গের একটা ট্রেন এখন দশ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে। যদি আমার অনুমান ঠিক হয় তাহলে ওই প্লাটফর্মে ছেলেটাকে পাওয়া যাবে।"

সঙ্গে সঙ্গে সবাই দশ নাম্বার প্লাটফর্মের দিকে দৌড় লাগায়। লোক ভর্তি, ঠ্যালা ঠেলি, জন সমুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে ওরা এদিক ওদিকে চোখ রেখে এগিয়ে চলে। কিছুদুর যেতেই ভুপেন দানার জামা টেনে অদুরে একটা ছেলেকে দেখিয়ে দেয়। দানার সাথে সাথে শঙ্কর রমিজ আর বাকি ছেলেরা ওই ছেলেটাকে ঘিরে ধরে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দানা ওর কানের কাছে এসে চাপা গর্জে ওঠে, "চুপচাপ আমাদের সাথে চল না হলে এই ট্রেনের নিচে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব।"

ওর পেছনে ভুপেনকে দেখে ছেলেটার চেহারা, ভয়ে রক্ত শুন্য হয়ে যায়। বুঝতে দেরি হয় না কি কারনে ওকে ধরা হয়েছে। প্রথমে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাতজোড় করে কাতর প্রার্থনা জানায়, বলে ও কিছুই জানে না, কিছু করেনি। দানার হাতের এক বিরাশি সিক্কার থাবড়া খেয়ে মাথা ঝনঝন করে ওঠে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখে হাত ছাড়িয়ে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু রমিজ ওকে মাটি থেকে তুলে ধরে। চারপাশে ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জনা দশেক ষণ্ডা মার্কা ছেলে, পালানোর সব পথ বন্ধ। একপ্রকার ছেলেটাকে ঘিরে ধরে টানতে টানতে গাড়িতে এনে তোলা হয় আর সোজা হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় এনে ফেলা হয়। শঙ্কর রমিজ আর বাকি ছেলেরা ওই ছেলেটাকে মারতে মারতে নৌকায় তোলে তারপরে একটা খুঁটির সাথে বেঁধে উত্তমমধ্যম লাথি ঘুষি চলে ছেলেটার ওপরে।

দানা রাগে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ছেলেটার গলার ওপরে পা তুলে গর্জন করে ওঠে, "ফারহানকে গুলি করতে কে বলেছে তোকে?"

মার খেয়ে ছেলেটার মুখ ফেটে গেছে, কপাল গাল ঠোঁটের কষ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মুখের ওপরে জল ছিটিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে দানা, "এই মাদারচোদ বল কে বলেছে ফারহানকে গুলি করতে?"

ছেলেটা হাতজোড় করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "আমাকে ছেড়ে দিন, আপনাদের আসল দোষী অন্য কেউ, আমি শুধু গুলি চালিয়েছি মাত্র।"

শঙ্কর পিস্তল বের করে ওর কানের ওপরে ঠেকিয়ে গর্জে ওঠে, "কে কে কি করেছে সোজাসুজি বলে দে।"

কাঁপতে কাঁপতে ছেলেটা সব উগড়ে দেয়, "নিতাই নিতাই আমাকে বলেছিল ফারহানকে গুলি করতে। একটা গুলি বুকে একটা মাথায়, কিন্তু ধাক্কা ধাক্কির ফলে মাথার গুলি কাঁধে লাগে। আমি আর কিছু জানি না।"

ভুপেন রাগে কেঁপে ওঠে, "এই বানচোদ নিতাইকে একবার হাতের কাছে পেলে খুন করে দেব।"

দানা ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে আবার মারতে শুরু করে দেয়, "শালা যদি ফারহানের জানের কিছু হয় তাহলে তুই বাঁচবি না।"

ওর সারা শরীর রাগে ঠকঠক করে কাঁপছে, রক্ত গরম হয়ে টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। এখুনি ওকে খুন করে ফেলে।







রক্তের খেলা (#০২)

শঙ্কর আর কয়েকজন মিলে ওকে ধরে ফেলে বলে, "কয়েকজনকে নিয়ে তুই হসপিটাল ফিরে যা। ফারহান বেঁচে গেলে বাপ্পার কপালে দুঃখ আছে। শালা মাদারচোদ নিশ্চয় ওই হসপিটালে ওকে মারার মতলব করবে।"

কথাটা কানে যেতেই দানা ভেঙ্গে পরে, অস্ফুট চিৎকার করে ওঠে, "না, ফারহানের কিছু হতে পারে না।"

শঙ্কর আর রমিজ ওকে বুঝায়, হসপিটালে ফিরে যেতে বলে। মহুয়া একা, জারিনা, তাবিশ নাফিসা সবাই খুব বিপদে। ইন্দ্রনীল ঠিক কোন পক্ষের বোঝা যাচ্ছে না তবে নিতাই আর বাপ্পা নস্কর, দানার শত্রুদের তালিকায় নাম লিখিয়ে নিয়েছে। আগে বাপ্পা নস্কর আর নিতাইকে শেষ করতেই হবে। এতদিন ওকে বাঁচিয়ে রাখার জল্পনা পরিকল্পনা করছিল দানা, কিন্তু এহেন ধূর্ত ভয়ঙ্কর মানুষের স্থান এই পৃথিবীতে নেই, ওকে সরাতেই হবে।

রমিজ একটা বড় ছুড়ি বের করে, ছেলেটার গলা এক হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে অন্য হাতে ছুড়ি ধরে ওর গলার ওপরে ধরে। দানার দিকে তাকিয়ে বলে, "শোন দানা, তুই রক্তারক্তি তে যাস না। তোর মাথার বুদ্ধি যেমন সেই রকম বুদ্ধি আমাদের নেই। এতদিনে আমরা মারামারি কাটাকাটিতে নেমে পড়তাম কিন্তু তুই অনেক চতুর। তুই তোর বুদ্ধির জোরে ওদের বাজি মাত কর কিন্তু এই ছেলেটা আর কালকের সূর্য দেখতে পাবে না। অন্তত রুহি আর মহুয়ার জন্য, তুই ফিরে যা।"

দানা আর ভুপেন সঙ্গে কয়েকজন, নৌকা থেকে নেমে যায়। রমিজ চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে ছেলেটার গলায় ছুরি চেপে এক টান, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে যায়। নৌকার পাটাতন রক্তে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, ছেলেটা ছটফট ছটফট করতে থাকে। মুখের ওপরে পা তুলে মুখ বন্ধ করে আরেক টান, শ্বাস নালী হাঁ হয়ে যায় ছেলেটার। কাঁটা ছাগলের মতন কাঠের পাটাতনে পরে ছটফট ছটফট করতে করতে একসময়ে নিথর হয়ে যায় ছেলেটার প্রাণহীন দেহ। নৌকা ছেড়ে দেয়। শঙ্কর ওদের ফিরে যেতে বলে, জানিয়ে দেয় বিকেলে হসপিটালে দেখা হবে। এখন এই ছেলেটার মৃতদেহ কুচিকুচি করে কেটে মাছেদের খাদ্য বানিয়ে তবে ফিরবে।

দানা গাড়িতে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে যায়। রাগে কাঁপতে কাঁপতে ঘড়ি দেখে, রাত একটা বাজে। ভুপেন আর একজন ছেলে দানাকে এক বোতল জল খেতে দেয়। কিছু জল খেয়ে কিছু জল মাথার ওপরে ঢেলে চুপচাপ বসে থাকে। নাড়ু ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে। ভুপেন দানার হয়ে জানিয়ে দেয় হসপিটালে যেতে। গাড়ির পেছনে দানা থম মেরে বসে যায়, শেষ পর্যন্ত বাপ্পা নস্কর? নিজের বিশ্বাসী ড্রাইভারকে খুনের পরিকল্পনা? নিতাইকে ছাড়া চলবে না কিছুতেই, ইন্দ্রনীল কি ওদের দলে না বিপক্ষে? নাড়ু গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে ওদের। মহুয়াকে খবর দিতেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। গাড়ির মধ্যে দানার রক্তাক্ত চোখ আর বিধস্ত চেহারা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়। ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, বাকিরা সবাই ওদের ঘিরে আড়াল করে দেয়।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 06-09-2020, 12:20 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)