Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট (সমাপ্ত)
#21
[[৯]]

বাসায় এসে একটা কথাই বার বার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে কি করা যায়?!রিক্সায় যাতায়াত করলে অনেকটা বেশি খরচ হবে,আর আমার বাসা থেকে কলেজ পায়ে হেটে যেতে ৫০ মিনিট মত লাগবে।সব ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিলাম,অরুকে রিক্সায় যাতায়াত করাবো,আর আমি কিছুদিন পায়ে হেঁটে কলেজ যাবো,যতো দিননা আর একটা টিউশনি পায়।রাতে ফোনে অরুকে এসব কিছু বললাম না শুধু বললাম তোমার কাছে তো যাতায়াত ভাড়া থাকে কিছু আর আমি কিছু দিবো সেটা দিয়ে তুমি রিক্সা করে কলেজ যাবে।

অরুর একটু না না করলেও আমার জেদের কাছে হার মেনে রাজি হলো।পরদিন থেকে শুরু হলো আমার ৫০ মিনিট পায়ে হেঁটে কলেজ যাওয়া,আর টিউশনি খোঁজা,আগেই বলেছি রিক্সা করে গেলে অরুকে আমার বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়,তাই কখনো দুজনের কলেজ যাবার সময় মিলে গেলে,অরু আমাকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিতো,তারপর আমাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে ও চলে যেত ওর কলেজে।এভাবেই চলছিলো তারপর পরের সপ্তাহে অরুর জন্মদিন!কি দেওয়া যায় ওকে ভাবতে ভাবতে নেপাল থেকে আনা চাদরের কথা মনে পরলো।সত্যি তো অরুর থেকে স্পেশাল আর কেউ থাকতে পারেনা আমার জন্য।হা হয়ত ওর জন্যই এতোদিন রেখে দিয়েছি,ওটাই দিবো ওকে।

অরুর জন্মদিনের দিনটা ছিলো সোমবার যথারীতি আমাদের দেখা করাটা একটু সমস্যার তাই এই প্রথম আমরা ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি অরুর জন্য ছোট্ট একটা কেক আর একটা লাল গোলাপ নিয়ে গেছিলাম,আর আমার পছন্দের নীল চাদরটা।মোটামুটি শীত শীত পরছে যদিও পুরোপুরি ভাবে শীত আসেনি।সমস্যা কি পরে পরবে এটা।
সোমবার সকাল বেলা অরু আমাকে বাসার সামনে থেকে রিক্সায় তুলে নিলো,তারপর দুজনে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম সোজা নদীর পাড় যেটা আমার কাছে সব সময়ের জন্য স্পেশাল জায়গা।সকাল বেলা তেমন কোন মানুষজন নেই।বিকাল থেকে লোকে ভরে যায় জায়গাটা।

দুজনে বেঞ্চ বাদ দিয়ে সবুজ ঘাসের উপর বসলাম,সকালের সূর্যের আলো নদীর বুকে পরতেই জল যেন চিকচিক করছে,কখনো বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে আমারই ভালবাসার হাসির ন্যায়।দুরে রুপসা ব্রীজটা ছোট লাগছে,তারনিচে হাজারো নারিকেল গাছের মেলা সব মিলিয়ে অপূর্ব লাগছে।আসলে সত্যি বলতে ভালবাসার মানুষটা সাথে থাকলে সব কিছুই ভালো লাগে।

-জানো খুব ভালো লাগছে!কতো দিন এভাবে কোথাও বসিনি!! হঠাৎই অরু বললো।
-হুম আমারও কিন্তু আরো বেশি ভালো লাগছে তুমি সাথে আছো তাই।
আমি ওর জন্য আনা গোলাপটা ওর হাতে দিয়ে বললাম শুভ জন্মদিন ময়নাপাখি!!
-ওয়াও থ্যাংকু!!সোনা,আর ওটায় কি?
বলে আমার হাতের প্যাকগুলার দিকে ইশারা করলো।
-এটা ছোট একটা কেক! আসলে রাতে তো আর আমরা এক হতে পারবো না তাই এই সকালেই নদীর পাড়ে আমরা কেক কাটবো।চলো চলো শুরু করো। 

সেদিন সকাল বেলা আমরা নদীর পাড়ে কেক কেটে অরুর জন্মদিন পালন করি।কেক কাটার পর আমি ওর জন্য আনা চাদরটা দিই।চাদরটা দেখেই ও খুশিতে নেচে এঠে,উফ কি দারুন দেখতে আর সফট।
-থ্যাংকু সোনা।কবে কিনলে গো? 
আমাদের সম্পর্ক শুরুর আগে আমি নেপাল গেছিলাম ওখান থেকে এনেছিলাম,তারপর আমি তখন চাদর কেন্দ্রীক সব ঘটনা বললাম,অরু সব শুনে আরো খুশি।এই একটু উঠে দাঁড়াও তো!
-কেন???
আরে বাবা বলছি তো দাড়াও!আমি দাঁড়াতেই অরু নিচু হয়ে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো,ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো আমি প্রথমে কিছুই বলতে পারিনি। 

-কি করলে এটা?
-ওমা কেন!তোমায় প্রনাম করলাম।
-সেটাই তো বলছি কেন?
-ও মা!!স্বামীতে প্রথম কিছু দিচ্ছে আমাকে,আর আমি তাকে প্রণাম করবো না!!!
-এখনো তো হয়নি!!
-সেটা তুমি ভাবতে পারো আমি না বুঝেছো,বাকি তো আছে সাত পাক আর সিঁদুর দেওয়াটা।
-যাক এযুগেও তাহলে এসব ভাবা যায়।আমি মজা করে বললাম। 
-দেখো এযু্গ সেযুগ না ভালবাসা সব যুগেই এক।পার্থক্য শুধু ভালবাসার পাত্রের,আর মনের চাহিদার।

গল্প করতে করতে কখন দুপুর গরিয়ে গেছে খেয়াল করিনি, এবার উঠতে হবে।সেদিন বাসায় আসতে আসতে অরু বললো আমরা কবে বিয়ে করছি??
-কেন!সেদিন না ঠিক করলাম আট মাস পর!!
-না আট মাস না সাত মাস পর,আমরা বিয়ে করবো!!
-দেখো সোনা সেটা তো আমিও চাই,কিন্তু এভাবে দিন কমালে,আমি সব কিছু ম্যানেজ করবো কি করে।
-অরুর ছোট উত্তর "" জানি না""!!!


দুদিন পর বাসায় বসে আছি মা রান্না করছে,না অন্তত মাকে জানিয়ে রাখা ভালো,তাই মায়ের কাছে গিয়ে বললাম কি রান্না করো?
সেতো টেবিলেই দেখতে পাবা।এমনিতে তোমরা বাপ বেটায় কতো খোঁজ রাখো আমার,তা কি মতলব সেটা বলো।মায়ের কন্ঠে অভিমানের সুর।আসলেই তো সেই একঘেয়েমী জীবন মায়ের,বাবা সারা দিন ব্যবসা আর আমি ও কলেজ আর বাইরে ঘোরাঘুরি।

আসলে মা একটা কথা বলার ছিলো,কিন্তু কিভাবে যে বলি। অতো সংকোচ থাকলে বলতে এলি কেন?না মানে আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি!!এক নিঃশ্বাসে কথাটা বলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু মায়ের দিকে কান খাঁড়া করে দাড়িয়ে আছি কি বলে শোনার জন্য। 
-সে আমি জানি!! 
-মা কি করে জানলো!!আমি বিড়বিড় করে বলছি হয়তো বা সেটা মা বুঝে ফেলছে তাই বললো।
-আমার ছেলে আমি জানবো না, ড্রয়ারে চাদর নেই,যে ছেলে ফোনই হাতে নিতো না সে এখন রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন কানে রাখছে,এগুলা তো আর এমনি এমনি না। 
-তুমি যখন জেনেই গেছো তাহলে তোমার কি মতামত??
-আমি তাকে দেখলামই না,তো কি করে মত দিবো।কিন্তু একটা কথা শুনে রাখ আমার কোন মেয়ে নেই তাই তুই এমন কাউকে আমার সামনে আনিসনা যাকে আমি মেয়ে বলে মানতে পারবো না,এমনি সেও আমাকে মায়ের মত দেখতে পারবেনা।
-সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাকো। বলে আমি এক দৌড়ে আমার রুমে এসে অরুর একটা ছবি আমার কাছে ছিলো সেটা নিয়ে গিয়ে মা কে দেখালাম।মা কিছুক্ষণ ছবিটা ভালো করে দেখে বললো আমার ছেলে পছন্দ করেছে সে মেয়ে কি দেখতে খারাপ হবে!!কথাবার্তা ব্যবহার কেমন সেটাই দেখতে হবে।পরে একসময় আমার সাথে কথা বলিয়ে দিস,এখন যা রান্না করতে দে।আমিও কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলাম,একটাই স্বস্তি যে মায়ের মুখ দেখে যা বুঝলাম অরুকে মায়ের খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু প্রকাশ করছেনা আমার সামনে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট - by Kolir kesto - 05-09-2020, 07:28 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)