Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট (সমাপ্ত)
#20
[[৮]]


আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম,দেখ সোনা এমন বাচ্চাদের মত কাঁদলে চলে, দেখো কষ্ট তো আমারও হয়,কিন্তু কি করবো বলো,পড়াশোনা শেষ করে জব করতে না পারলে তো,তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারিনা,দেখো আমার আর স্টাডি শেষ হতে মাস ছয়েক বাকি আছে,সো আজ থেকে আমাদের প্লান হলো আমরা আগামী এক বছরের ভিতর বিয়ে করবো,প্লিজ আমাকে এতোটুকু সময় দাও।আর এর ভিতর তোমারও পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে।
ঠিক আছে কিন্তু এই এক বছরের ভিতর যা করার করবে!!অরু ফুপাতে ফুপাতে বললো।আচ্ছা বাবা তাই হবে।

এই যে স্যার ম্যাডাম এমন জোড়া লেগে থাকলে হবে,মাএ মা জিজ্ঞাসা করলো কে আসতে চাইলো এসেছে কিনা?আমি বলে আসলাম এই মাএ এলো তাই নাস্তা নিয়ে যাচ্ছি,এখন যদি উনি এসে দেখেন তোমরা শঙ্খ লাগার মত জরিয়ে আছো,কি হবে সে খেয়াল আছে। অনামিকা কখন এসেছে আমরা কেউ খেয়াল করিনি,কথা গুলা ও ভুল বলেনি,ওর কথা শোনা মাএই অরু আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দুরে সরে গেছে।
না তোমাদের নিয়ে পারা যাবেনা দেখছি,শেষে আমাকেই কেস খাওয়াবে,নাও এখন এগুলো খাও আর কাজে লেগে পরো বাপু।পাঁক্কা ঠাকুমাদের মত করে ছুটকি বললো।আমি ও নাস্তা খেয়ে,পিসিটার কাছে বসলাম,কি সমস্যা আগে থেকেই জানা তাই বেশি সময় লাগলো না।

বের হতে যাবো তখন আন্টি ভিতরে আসলো,অরু উনার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো।ভদ্র মহিলা আমার মায়ের বয়সী আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম!বেঁচে থাকো বাবা।আজ কাল তো এসব উঠেই গেছে।আমাকে বসতে বলে অরু আর অনামিকা কে একটু বাইরে যেতে বললো,ওরা চলে যেতেই উনিও বসলেন,আমি ভিতরে ভিতরে টেনশনে ভুগছি শুনেছি মায়েদের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না উনি কি কিছু বুঝতে পেরেছেন!!এসব ভাবার মাঝেই উনি প্রশ্ন করলেন!
-তো বাবা কি করো তুমি??
-আমি মানে,,আমি পড়াশোনা করি কুয়েটে ফাইনাল সেমিষ্টার!
-ওহ খুব ভালো বাড়িতে কে কে আছে তোমার?
-আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর মা বাবা আর আমি!!
তোমার কি টেনশন লাগছে ভাবছো আন্টি খুব কড়া।বলে একটু হাসলেন সে হাসিতে এক পবিএতার ছাপ।দেখো বাবা মেয়ে যখন হয়েছে বিয়ে দিতেই হবে আজ অথবা কাল,অরুনিমা নিজে পছন্দ করবে এমনটা ভাবিনি,তবুও ওর পছন্দ যদি ভালো হয় সেখানে আমার কোন অমত নেই তারপরও ওর বাবা ডিফেন্সে আছে একটু কড়া মেজাজের তাই উনার উপর কথা বলার কোন প্রশ্ন ওঠে না, কিন্তু সেই সময় যদি মনে হয় তুমি যোগ্য তখন হয়ত আমি তাকে তোমার কথা বলতে পারি। কিন্তু এর বেশি কিছুনা,তোমাকে এখানে আসতে বলার সময় অরু এমন ভাবে তোমার কথা বলছিলো,তখনি আমি বুঝেছি,মায়ের চোখ তো।কিন্তু তুমি হয়ত জানো ও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরে এটাই চিন্তার বিষয়,কিছু খেতে চায় না,কি যে করি মেয়েটাকে নিয়ে। এতোটুকুই বলার ছিলো বাবা এর বেশি কিছু তোমাদের বলার নেই আমার।। 

আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছি,এখন কিছু একটা না বললে খারাপ দেখায়।আপনি ঠিকই ধরেছেন আন্টি।আর আমি যোগ্য হয়েই আপনার কাছে আসবো,তার আগে না। শুধু আপনি আজ যে সাহায্যের কথা বললেন সেটা আর আপনার আশির্বাদ আমাদের সাথে থাকলেই হবে।তারপর ওনাকে প্রনাম করে অরুর সাথে চোখাচোখি দুটো কথা বলে বেরিয়ে আসলাম। 

একদিকে ভালো লাগা,অন্য দিকে চিন্তা,ভালোলাগা এই যে অন্তত ওর পরিবারের একজনকে তো ব্যাপারটা জানানো হলো।আর চিন্তা হলো আমি যোগ্য হলেও আন্টি কতটুকু সাহায্য করতে পারবে।সেদিন রাতে অরুর সাথে কথা বলার সময় জানতে পারলাম পরে আন্টি ওকে আর তেমন কিছু বলেনি কিন্তু আমাকে আন্টির পছন্দ সেটা কিছুটা বুঝতে পারছে ও। 

এভাবেই কেঁটে যাচ্ছে আমাদের দিন,সপ্তাহে একদিন করে দেখা করা।কিন্তু এখন দেখা করতে গেলে আমি ওর জন্য গিফট হিসেবে অন্য কিছুনা খাবার নিয়ে যাই,এই ধরুন কখনো ফল,না হয় ভালো কোন খাবার যেটা শরীরের জন্য ভালো।দেখা করে গল্প করতে করতে আমি নিজে হাতে ওগুলো ওকে খাইয়ে দিই।ও নিজেও পরে অবাক হয় যে এতো গুলা খাবার ও এতো অল্প সময়ের ভিতর খেয়ে ফেলেছে।আসলে আন্টি সেদিন বলার পর থেকে আমি এই প্লানটা করেছিলাম,যেহেতু ডাঃ বলেছে শরীরে কোন রোগ নাই, শুধু বেশি বেশি খেতে ‌হবে তাই আমি সপ্তাহে এই সময় টুকু গল্পের ছলে ওকে খাইয়ে দিই।

মাস শেষে টিউশনির টাকা হাতে পেয়ে অরুকে না জানিয়েই একজন ভালো ডা. এর এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখলাম পরের শুক্রবারের জন্য,পরের শুক্রবার ওকে ঘুরতে নিয়ে যাবার নাম করে ডাঃ এর কাছে নিয়ে গেলাম,অরু তো অবাক আমার কান্ড কারখানা দেখে, একটু রাগও দেখালো,তখনকার মতো চুপ থাকতে বললাম যা বলার পরে বলো।ডাঃ এর কাছে ওর ব্যাপারে সব বলা হলো,ডাঃ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,ম্যাডাম উনি আপনার কে হন?অরু করুণ ভাবে আমার দিকে তাকালো।ওর করুন মুখ দেখে আমিই বললাম,আসলে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিছুদিন পরই বিয়ে,ওর একটু সমস্যা তাই নিয়ে আসলাম।ডাঃ কিছুক্ষণ দুজনের দিকেই তাকিয়ে থাকলো।তারপর বললো দেখুন এমনিতে আপনার কোন সমস্যা নাই।একটু শরীরচর্চা আর বেশি করে খেতে হবে।একবারে না পারেন অল্প অল্প করে খাবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।তাছাড়া ম্যাডাম ভাগ্য করে এমন স্বামী যখন পাচ্ছেন তখন আর আপনার চিন্তা কি!!?

ডাঃ এর ওখান থেকে বের হয়ে এলাম দুজন,নাও এবার কি শাস্তি দিবে দাও,আমি প্রস্তুত!!
ভালবাসি তোমায় শুভ,অন্নেক ভালবাসি!!!
এতো ভালবাসলে শাস্তি কোথায়?তোমায় শাস্তি দিলে যে আমার পাপ হবে,ডাঃ কি বললো শুনলে না,ভাগ্য করে পেয়েছি গো তোমায়!!
তাই হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দিবো না!!!বলতে বলতে অরুর চোখ দুটো ভিজে উঠলো।
আমিও অরুর চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললাম আমিও কখনো ছেড়ে যাবো না সোনা,প্লিজ আর কেঁদো না। 
শোন শুভ এক বছর না আমরা আট মাস পরে বিয়ে করবো! ঠিক আছে।আমি ও অবাক ওর কথা শুনে,এক সপ্তাহ আগে ঠিক করলাম এক বছর আর আজ বলছে আট মাস।কি কথা বলছো না কেন !??হুমম,আচ্ছা তাই হবে। 

আমার লক্ষী সোনা,এই জানো তো পরের সপ্তাহে আমার জন্ম দিন।কি বলো!!তাই?হুম তো সেদিন কি দিবে আমায়??তুমি কি চাও বলো??অরুর ছোট উত্তর তোমাকে!!!আর কিচ্ছুনা। তাই বললে হয় আমাদের সম্পর্কের ভিতর এই তোমার প্রথম জন্ম দিন বলে কথা!! আচ্ছা যা ইচ্ছা দিও।এখন চলো দেরি হলে আমার বাসায় সমস্যা হবে।আজ ডাঃ দেখানোর জন্য একটু দুরে আসতে হয়েছিলো,তাই বাসে উঠলাম, খুব ভীড় বাসে কিছুটা বাধ্য হয়ে উঠলাম,না হলে দেরি হয়ে যাবে কিন্তু বসার সিট পেলাম না,মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত সিট গুলাও পুরুষের দখলে।এখানে বলে কোন লাভ নেই।এটাই নিয়ম হয়ে গেছে।অরু ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে না,আমার চোখের সামনেই কেউ কেউ নেমে যাওয়া,সরে দাড়াবার ছলে ইচ্ছা করেই ওর নিতম্ব ছুঁয়ে যাচ্ছে।অথচ মনে হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত কিন্তু এই ভীড়ে সেটা বলার মত কোন অবস্থা নেই। নিজের বোন নেই,তাছাড়া কোন মেয়েকে নিয়ে বাসে উঠার অভ্যাস নেই।না ব্যাপারটা আমার চরম খারাপ লাগার জায়গায় চলে গেল।কিন্তু অরু শান্ত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,হয়ত ওর এটা রোজকার অভ্যাস। নিজেকে তথা পুরুষ সমাজকেই গালি দিতে ইচ্ছা করলো।বাস স্টপেজ আসতেই কোন মতে দুজনে নেমে পরলাম।তারপর দুজনে চুপচাপ হেটে চলেছি কারো মুখে কোন কথা নেই।

-কি ব্যাপার মুখ ভার করে আছো কেন?প্রথম প্রশ্ন অরুই করলো।
-তুমি আর কাল থেকে বাসে যাবে না কলেজে।
-কেন?? কি হয়েছে??
-সেটা আমি মুখে বলতে পারবো না!
-ওহ বুঝেছি ওই কিছু বাজে লোকের কথা বলছো তো?ওটা শুধু আমি না প্রায় সব মেয়েদের ওটা ফেস করতে হয়।আগে প্রতিবাদ করতাম কিন্তু কোন লাভ হয়না।এখন ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে গাঁয়ে মাখিনা।
-তবুও ও বাসে আর যাবে না।
-সবাই কে রিক্সায় পাঠাতে পারবা তুমি??পুরুষের মনের কালি দুর না হলে এটা হতেই থাকবে।

অরুর এই প্রশ্নের উত্তর সত্যি আমার কাছে নেই।আমি জানি সোনা সেটা আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।তবুও তুমি আর যাবে না।
কিন্তু তাহলে রিক্সাভাড়া তো ওনেক হয়ে যাবে,
হুম সেটা বাসায় যেয়ে ভেবে ঠিক করবো।এখন বাসায় যাও না হলে বেশি দেরি হয়ে যাবে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট - by Kolir kesto - 05-09-2020, 07:26 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)