Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট (সমাপ্ত)
#19
Heart 
[[৭]]


ওয়াও!!স্যার আপনাদের শুরুটা কিন্তু দারুণ ছিলো।সারা উৎচ্ছাসিত ভাবে বললো।কিন্তু ম্যাডামের সাথে একটা ব্যাপারে আমি একমত!!আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালাম সারার দিকে!!!
কি বলতে চায় মেয়েটা,আর অরুর সাথে কিসে ও একমত!! আমার অমন দৃষ্টি আর হাভা মার্কা মুখ দেখে,হাসতে হাসতে সারা বললো আপনি সত্যি একটা ভীতুর ডিম!!আমি কিঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে বললাম ও তাই না যাও আর গল্পই বলবো না।
-এমা না না স্যার!!রাগ করছেন কেন?আমি তো মজা করছিলাম!!কিন্তু একটু পরে স্যার সেই কখন থেকে চেপে রেখেছি রিলিস করতে হবে,না হলে পেট ফেটে যাচ্ছে।আমি ওর কথায় হেসে বললাম ওকে যাও। সারা বাথরুমের দিকে দৌড় দিলো।আমি ও প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে নিলাম।একটু পর সারা এলো,ওহফ বাঁচা গেল,জানেন স্যার বাথরুম করার মত শান্তি দুনিয়াতে আর কোন কিছুতেই নেই।এবার শুরু করুন স্যার।
আরে একটু ওয়েট করো,আমিও তো সেই কখন থেকে বকে চলেছি,আমাকেউ একটু রিলিফ দাও।

তারপর থেকে শুরু হলো দুজনের পথ চলা।রোজ সকালে ওর ফোনে আমার ঘুম ভাংতো,তারপর কিছু সময় কথা বলে শুরু হতো আমাদের প্রতিদিনের পথ চলা।আর রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আমাদের ফোনে কথা শুরু হতো,এমনো হয়েছে কথা বলতে বলতে ভোর হয়ে গেছে,তবুও আমাদের কথা শেষ হয়নি।অরুর সাথে কথা বলে ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে পারলাম,ওর বাড়িতে মা বাবা আর একটা ছোট বোন,ওদের কোন ভাই নাই,ওই বড় আর বোনটা ছোট,আন্টি বাড়িতেই থাকেন,আর আঙ্কেল মানে ওর বাবা ডিফেন্সের এক উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা,তাই ওদের খুব সব কিছু মেনে চলতে হয়।একটু এদিক ওদিক হলেই সেই আর্মির মেজাজ।

তাই আমাদের খুব বেশি দেখা করার সুযোগ নেই,কারণ কলেজ ফাঁকি দিয়ে দেখা করার ইচ্ছা আমাদের কারো নেই।সব ভেবে ঠিক করলাম প্রতি শুক্রবার ওর গানের ক্লাস,আর গানের ক্লাস শেষে আমরা দুজনে দেখা করবো।আমরা রাতে যতোই কথা বলি,আমরা নিজেদের পড়াশোনার ব্যাপারে দুজনেই সচেতন।কারণ প্রেমের বিয়ে বেশিরভাগ পরিবারেই সমস্যা সৃষ্টি করে।তাই আমাদের নিজেদের কে এমন একটা পজিশনে নিয়ে যেতে হবে,যেন অন্তত কথা বলার একটা সুযোগ থাকে,আর সেটার জন্য ভালো পড়াশোনাটা ভীষন ভাবে জরুরি।

এভাবেই চলে যাচ্ছিলো আমাদের দিন,সপ্তাহে একদিন মাএ দেখা করা,আর তার জন্য আমরা দুজনেই অধীর আগ্রহে দিন গুনতাম।পরে যখন গানের ক্লাস শেষে দেখা করে দুজনে কোথাও যেয়ে বসতাম,আমাদের তেমন কোন কথা থাকতো না,শুধু দুজন দুজনকে দেখে যেতাম।কারণ কথা তো আমরা ফোনেও বলতে পারি,তাই আমরা শুধু দেখতাম,আমরা কথা বলার সময় আমাদের ঠোট কেমন নড়ে,আমরা হাতটা কিভাবে নাঁড়াই,হাসলে আমাদের দেখতে কেমন লাগে,এক কথায় আমাদের বডি ল্যাংগুয়েজ কেমন হয়।পাঠকরা হয়ত ভাববেন ডেটিং এ গিয়ে কেউ কি এমন করে,নিশ্চয় আমি গুল মারছি কিন্তু এটাই সত্য!!

দেখতে দেখতে আমার ফাইনাল বর্ষে উঠার পরীক্ষা আর অরুর ২য় বর্ষের পরীক্ষা এসে গেল,কয়েকটা দিন আমাদের রাতের কথা বলা একটু কমে গেল,দুজনেই ব্যস্ত।কিন্তু শুক্রবার দেখা করাটা আমরা বন্ধ করিনি।অবশেষে পরীক্ষা শেষ হলো।কাল আবার শুক্রবার,দেখা করার দিন সকালে অরুকে কল দিলাম ও ধরলো না,হয়ত ব্যস্ত থাকতে পারে,আমি সময় মতো ওর গানের কলেজের ওখানে চলে গেলাম,কিন্তু অরুর দেখা নাই,কলেজ ছুটি হয়ে গেল সবাই চলে যাচ্ছে কিন্তু তাদের ভিতর অরুকে দেখলাম না।খুব চিন্তা হচ্ছে কি করি এখন!!বার বার কল করছি কিন্তু এখন ফোন বন্ধ বলছে।অগ্রহ বাসায় ফিরে এলাম,কিছুই ভালো লাগছেনা,সপ্তাহে এই একটা দিনই আমাদের দেখা হয়।

তখন রাত আটটা কি নয়টা বাজে দেখলাম অরু কল করেছে,আমি সাথে সাথে রিসিভ করে বললাম কি হয়েছে তোমার??তুমি ঠিক আছো তো??
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় বললো হা গো আমি ঠিক আছি।
-তাহলে আজ আসো নি কেন??
-আসলে সকাল থেকে শরীরটা ভালো ছিলো না।এখন ভালো আছি তাই তোমাকে কল করলাম।সরি সোনা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
-না না সরি বলার কিছু নাই।কি হয়েছিলো সেটা বলো আগে?!আমি অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম!
-কি বলবো আসলে,আমার মাঝে মাঝে এমন হয়,খুব দুর্বল লাগে,মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,আবার ঠিকও হয়ে যাই।
-বলো কি!!ডাঃ দেখাও নি??
-হুম অনেক দেখিয়েছি,কিন্তু ওনারা বলে কোন সমস্যা নাই। বেশি বেশি খেতে বলে।তুমিই বলো বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবো না।বলেই হাসতে লাগলো পাগলের মত।কিছুক্ষণ পর হাসি থামিয়ে বললো,জানো তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছা করছে!! বলেই কাঁদতে শুরু করলো!!
-অরু সোনা প্লিজ কেঁদোনা!!আমার ও তো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে,কিন্তু উপায় কোথায়।

আমি ওকে সান্তনা দিবো কি আমিও কেঁদে চলেছি ওর সাথে,সেই রাতে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কোন রকমে নিজেদের কে বুঝ দিয়ে ঘুমাতে গেলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠলাম,পরীক্ষা শেষ তাই কলেজ কিছুদিন অফ আছে। নাস্তা করে বসে আছি,এমন সময় মোবাইলে একটা কল এলো,অচেনা নম্বর!কে হতে পারে এসব ভাবতে ভাবতে কলটা ধরে কানে দিলাম। হ্যালো!!!ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠ,শুভ দা বলছো!!
-হা বলছি!আপনি কে ??
-আমি অনামিকা! 
অনামিকা!অনামিকা কে হতে পারে!!আমি স্মৃতিচারণ করতে লাগলাম,না মনে পরছেনা!!
-কি গো চিন্তে পারলে না।কি করে চিনবে বলো।তুমি তো একটা ফল নিয়েই পরে আছো,পাশে যে আরো ফল আছে সেদিকে কি তোমার খেয়াল আছে।।
এতো ভারি মুশকিলে পরলাম!!কে হতে পারে!!আবার ওপাশ থেকে বললো থাক বাবা বেশি টেনশন দিলে আবার আমার দিদিই কষ্ট পাবে।
আমি তোমার একমাএ শালী! এবার চিনছো??

এতোক্ষণে বুঝলাম ও অরুর ছোট বোন!বাবা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।সরি তোমায় চিনতে পারিনি।থাক আর বেশি চিনে কাজ নেই।নাও দিদির সাথে কথা বলো।আর একটা কথা তোমাকে তুমি করে বলেছি বলে মাইন্ড করো না,আমি এভাবেই বলবো,একমাএ শালী বলে কথা।বলেই হাসতে হাসতে অরুর কাছে ফোনটা দিয়ে দিলো।

-কি মিষ্টার শালীর কাছে ঘোল খেয়ে গেলে??
-সে কি আমার দোষ!!তুমিও তো ওর নাম বলেছিলে ছুটকি!
-ধুর তুমিও না,আরে বাবা ওটাতো আমি ওকে আদর করে ডাকি।যাই হোক শোন তুমি এখন একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবে??
-তোমাদের বাসায়!!বলির পাঠা হতে!!?
-আরে শোন আগে,তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে,তাই কম্পিউটারের সি ড্রাইভের সব ফাইল ডিলিট করে দিয়েছি,এখন আর ওটা ঠিক ভাবে কাজ করছে না।ওদিকে ছুটকি পিসি অন করতে পারছেনা তাই,চিল্লাচ্ছে তখন আমি ওকে আর মা কে বলেছি,আমার পরিচিত একজন আছে কুয়েটে পড়ে,বললে তাকে ডেকে ঠিক করে নিতে পারি।সো নো মোর লেট,প্লিজ বেবি,কামন ফার্স্ট!!হা হা রাখছি বাই।আমি ঠিকানা টেক্স করে দিচ্ছি।বলে ফোন রেখে দিলো।

উফ কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা,যাক এমন হলে ভবিষ্যতে আমারই লাভ।একটু পরেই মেসেজ আসলো অরুর ফোন থেকে।আমিও দেরি না করে বেড়িয়ে পরলাম।ওদের বাসায় যেতে ১৫ মিনিট লাগলো।ওদের বাসায় যেয়ে বেল বাজাতে দরজা খুললো একটা ১৬ কি ১৭ বছরের মেয়ে,চেহারায় অরুর মুখের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে দেরি হলো না আমার যে এটাই আমার দুষ্ট শালী,আমাকে দেখেই বললো শুভদা!?আমি মাথা নাড়ালাম!অরু নেই? থাকবে না কেন!সবাই আছে, উম্মহ যেন তর সইছেনা!!আমি আর কোন বাক্য ব্যয় করলাম না।দু বোন দু রকম একটা চুপচাপ আর একটা যেন ধানি লঙ্কা,বাড়ি মোটামুটি বিশাল, ছিমছাম গোছানো।আমাকে সোজা নিয়ে গেল ওদের বেড রুমে যেখানে কম্পিউটার থাকে,রুমে ঢুকে দেখি অরু বসে আছে,আমাকে দেখেই ছুটে আসতে গেল পরক্ষনে ছুটকিকে দেখে থেমে গেল।শালীও আমার কম যায়না শুভদা তোমরা বরং কথা বলো,নতুন জামাই বলে কথা আমি একটু জল মিষ্টি নিয়ে আসি।আমি ধরা খেয়ে গেছি তাই ঢোক গিললাম,অরুও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে,ছুটকি এবার অরুকে উদ্দেশ্য করে বললো,তোর আবার কি হলো রে দিদি,আসতে যেয়ে ওমন ব্রেক মারলি,আমি সবই বুঝি ওতো লজ্জা পেতে হবেনা,এখন তোরটা ম্যানেজ করে দিচ্ছি,পরে আমার যখন হবে তুই আমারটা একটু দেখিস।তবে রে দুষ্টু খুব পেঁকেছিস তাই না,দাঁড়া বলে অরু ছুটকিকে ধরতে গেল,কিন্তু ছুটকি ততক্ষণে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে।এখন রুমে শুধু আমি আর অরু,ছুটকি চলে যেতেই অরু আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো,জানো আমার কি কষ্ট হচ্ছিলো তোমাকে দেখতে না পেরে।((পাঠকগন এটা সেই সময়ের কথা যখন মোবাইলের ভিডিও কলিংটা আমাদের দেশে এতো এভেইলেবল ছিলো না)) 
কবে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে শুভ,আমি যে তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারিনা। বলেই অরু ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো ,ওর কান্না দেখে আমারও কান্না পাবার মত অবস্থা কিন্তু এই পরিস্তিতিতে সেটা করলে অঘটন ঘটে যাবে,বাসায় এখনো কে কে আছে সেটাই জানিনা!

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শূন্য খাঁচা / কলির কেষ্ট - by Kolir kesto - 05-09-2020, 04:07 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)