Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
এই নিষ্পাপ শিশুকে কি উত্তর দেবে দানা। মনা আর পিন্টুকে বলে, রুহিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে। ততক্ষণে মদনা বলাই শক্তি আকরাম এরা সবাই খবর পেয়ে হস্পিটালে এসে যায়। শঙ্কর আর রমিজ, ফারহানের আম্মি আর দাদা তাবিশকে নিয়ে পৌঁছে যায়। আরও একবার কান্নার রোল ওঠে। জারিনা আর ফারহানের আম্মিজানের চোখের জল বাঁধ মানে না কিছুতেই।

রুহিকে নিয়ে মনা আর পিন্টু বেরিয়ে যায়। হাতের ঘড়ির কাঁটা আর চলে না। দুই ঘন্টা পরে অপারেশান থিয়েটারের দরজা খুলে যায়। আতঙ্কে আর বেদনায় সবাই উন্মুখ হয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে।

দানা সবার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছে ফারহান?"

ডাক্তার উত্তর দেয়, "দুটো গুলি বের করে ফেলা হয়েছে তবে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে। আগামী বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছুই বলা মুশকিল।"

দানা চাপা গর্জন করে ওঠে, "বলা মুশকিল মানে? ফারহানকে বাঁচাতে হবে ডাক্তার, না হলে এই হসপিটাল এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না।"

ওর ওই বেদনা যুক্ত, তীব্র হুঙ্কার শুনে সবাই কেঁপে ওঠে। শঙ্কর দেখে এ যে মহা মুশকিল, দানাকে শান্ত না করতে পারলে এখুনি ওই ডাক্তারের টুঁটি চিপে ধরবে। মহুয়া দৌড়ে এসে ওকে টেনে ধরে, "কি হয়েছে, পাগল হয়ে গেছ নাকি তুমি? ডাক্তার বাবু গুলি বের করে দিয়েছেন। বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না।"

নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ জ্বলে ওঠে, প্রচন্ড বেদনায় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, "বলা যাবে না মানে? বলতে হবে যে ফারহান উঠে দাঁড়াবে।"

মহুয়া ওকে জড়িয়ে ধরতেই দানা ভেঙ্গে পড়ে, "আমি জানি ফারহান তোমার কাছে কি। ওপর ওয়ালার ওপরে ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।"

কিছুক্ষণ পরে চোখ মুছে দাঁতে দাঁত পিষে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে দানা। কাকে বিশ্বাস করা উচিত আর কাকে নয়, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। নয়না আর বিমানের কোন দুরাভিসন্ধি নয়ত। জারিনা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফারহানের আম্মিজানের কাঁধে মাথা দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। পাশে নাফিসা, তাবিশকে জড়িয়ে ধরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। শঙ্কর রমিজ সবার চোখে উৎকণ্ঠা। মহুয়ার চোখ জোড়া টলটল করছে, একটু টোকা দিলেই উপচে পরবে।

কোমরে গোঁজা পিস্তলে হাত চলে যায় দানার। দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার কানে কানে বলে, "আমি একটু আসছি। ফারহানকে আই.সি.ইউ. তে নিয়ে যাওয়ার পরে তুমি বাড়ি চলে যেও।"

ওই রক্তচক্ষু দেখে মহুয়া বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যায়। হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখান থেকে একপা নড়বে না।"

দানা জোরে জোরে মাথা নাড়ায়, "আমার হাতে বাহাত্তর ঘন্টা নেই পাপড়ি। আজ রাতেই ওদের শেষ করে দেব।"

বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি, তাও সেই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দানা বেড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতি যেমন তান্ডবে মেতেছে, দানার মাথার রক্ত আজ তান্ডবে মেতেছে। মহুয়ার কাতর প্রার্থনা উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পরে নয়না আর বিমানকে খুন করতে। ওর মাথায় খুনের নেশা, আজ রাতে নয়না বোস, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের রক্ত পান না করা পর্যন্ত এই তান্ডবের নেশা থামবে না।

গাড়িতে উঠতে যাবে কি তখনি এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে। ওইপাশের অজানা ব্যাক্তি ওকে প্রথমে জিজ্ঞেস করে, "তুই দানা?"

দানা গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ।"

অচেনা কণ্ঠস্বর ওকে বলে, "আমি জানি ফারহানকে কে খুন করেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জ ডকে একা চলে আয়।"

দানা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে যায়। বারেবারে ওই নাম্বারে ফোন করে কিন্তু ওইপাশ থেকে কোন সারা শব্দ আসে না। এটা ঠিক কি হল ওর সাথে? বিমান আর নয়না আবার নতুন কোন চাল খেলছে? একা আসতে বলেছে মানে ওকে এইবারে ওকে মারার চক্রান্ত। পিস্তল দুটি ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেয়, চার খানা গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন পকেটে। একবার ভাবে বাকিদের জানিয়ে দেবে, কিন্তু একাই মোকাবিলা করতে চায় সবার সাথে।




********** পর্ব তেরো সমাপ্ত **********
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 05-09-2020, 03:37 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)