Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
মদ খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে বাড়ি ফিরে আসে দানা। বাড়িতে মহুয়া রুদ্ধশ্বাসে দানার অপেক্ষায়। মোহনের বাগান বাড়ি থেকে বেড়িয়েই দানা ফোন করে মহুয়াকে জানিয়ে দেয় সব ঠিক আছে। সেই শুনে মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়। বারেবারে এই রকম জালে পা দেয়, যদি কোনোদিন কোনোভাবে কারুর সন্দেহ হয়ে যায় তাহলে ওর রক্ষে নেই। ফিরে এসে রাতের খাওয়ার সময়ে মাহুয়াকে সব খুলে বলে। মহুয়া জিজ্ঞেস করে আসলে দানা কি করতে চায় সত্যি কি বাপ্পা নস্করের ওপরে হামলা করবে না শুধু মাত্র একটা নাটক রচনা করবে? দানা জানায়, বাপ্পা নস্করের ওপরে একটা নাটকীয় ভুয়ো হামলা করবে যাতে বিমানের সন্দেহের বাইরে থাকে। তবে আগে থেকে ফারহানের মাধ্যমে বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে। সত্যি কারের নয় মিথ্যে গুলি চলবে আর সেটা অন্য কাউকে লাগবে। আর একবার এই হইচই শুরু হয়ে গেলে, বাপ্পা নস্করের কাছে চলে যাবে দানা, নয়নার আর বিমানের ছবি নিয়ে। খেপা বাপ্পা নিশ্চয় বিমান আর নয়নাকে শেষ করে দিতে উদ্যত হবে। তবে শুধু মাত্র বিমানের মৃত্যু হলে ভালো হয়। নয়নাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ওকে দিয়ে মোহন আর সিমোনকে মারতে পারবে।

সকাল থেকে মেঘলা, বর্ষার ফলে আবাসনের কাজ বেশ ধীরে চলছে। ফারহানের বিয়ের প্রস্তুতি জোর কদমে। মহুয়া আজকাল অফিসে কম আর বাজারে বেশি যায়। রুহিকে কোলে নিয়ে জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত। বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে ফারহান ছুটি নেবে।

সেদিন দানা খুব ব্যাস্ত ছিল একটা আবাসনের কাজে। ওই মেঘলা আকাশ আর মাথায় বৃষ্টি নিয়েই প্রতিদিনের মতন জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে মহুয়া বেড়িয়ে পড়েছে বিয়ের কেনাকাটা সারতে। সেদিন আবার জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের প্রথম নির্বাচনী পথ সভা। বাপ্পা নস্কর অবশ্য আগের দিন দানাকে ফোনে জানিয়েছিল ওর সাথে থাকার জন্য, কিন্তু নিজের নাম কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত করতে চায় না। আসলে বিমানকে এখুনি খেপাতে চায় না দানা তাই কাজের আছিলায় আর যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, চার ট্রাক ইট আসার কথা ছিল, এখন এলনা। ওইদিকে আগামী কাল শ্রমিকের মাইনের তারিখ, সি.এ. কে মহুয়া কি চেক কেটে দিয়েছে? প্রথমে সি.এ. কে ফোন করে জেনে নেয় দানা, মহুয়া সকালেই কেনাকাটা করতে বের হবার আগে চেক কেটে দিয়ে গেছে। একটু শান্তি পায়, কিন্তু ইটের ট্রাকের কি হল? সুপারভাইজারকে ডেকে একটু ধমক ধামক দিতে হবে না হলে চলছে না। মোহনের কাজ না হয় পরে করা যাবে কিন্তু বাকিদের কাজ গুলো ফেলে রাখলে চলবে কি করে?

ঠিক সেই সময়ে মহুয়ার ফোন। চাপা আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠে ওইপাশ থেকে, "জিত তুমি কোথায়? এখুনি হস্পিটালে এস।"

দানা ভয় পেয়ে যায়, বুক কেঁপে ওঠে, কার কি হলো? চাপা উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞেস করে, "রুহি ঠিক আছে? কার কি হয়েছে?"

মহুয়ার কণ্ঠস্বর থরথর করে কাঁপছে, "ফারহানের গুলি লেগেছে তুমি এখুনি হসপিটালে এসো।"

ওই কথা শুনে দানার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কেষ্টর পরে ওর প্রিয় বন্ধু ফারহান। কে গুলি মারল ওকে? আজকে বাপ্পা নস্করের সাথেই ছিল ওই পথ সভায়। গাড়ি তীর বেগে হসপিটালে ছুটিয়ে দেয় দানা।

দৌড়াতে দৌড়াতে ওপরে উঠে সবাইকে খোঁজে। মনা আর পিন্টুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট রুহি, মনাকে আঁকড়ে ধরে একরকম বুকের মধ্যে লুকিয়ে। চারপাশে এত লোক দেখে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেছে রুহি। দানাকে দেখেই "ডাডা ডাডা" বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনোরকমে মেয়েকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে চারপাশ তাকিয়ে দেখে। পুলিস মানুষে লোকে লোকারণ্য। একপাশে ইন্দ্রনীল এবং বাপ্পা নস্করের দলের বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জারিনা মহুয়ার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দানা মহুয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। মহুয়ার চেহারা লাল হয়ে গেছে, চোখ জোড়া ছলছল কিন্তু জল ফেলতে পারছে না কেননা কোলে অজ্ঞান জারিনা। বেদনায় নাফিসার চোখের জল উপচে পড়ছে।

মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কি ভাবে ওরা খবর পেল। মহুয়া জানায়, জারিনাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিল। দুপুরের পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করার সময়ে জারিনার কাছে ইন্দ্রনীলের ফোন আসে। সেই শুনেই ওরা দৌড়ে আসে হসপিটালে আর তারপরে দানাকে মহুয়া ফোন করে জানায়।

দানা ইন্দ্রনীলের কাছে যায়, "ফারহানের কি করে গুলি লেগেছে?"

ইন্দ্রনীল বলে, "ফারহানের বুকে আর কাঁধে গুলি লেগেছে।"

ইন্দ্রনীল পুরো ঘটনা খুলে বলে দানাকে। জঙ্গিঘাটে পথ সভা ছিল বাপ্পা নস্করের, ফারহান বাপ্পা নস্করের অনেকদিনের ড্রাইভার, বিশ্বাসী লোক। ওর সাথে সাথেই থাকে। অন্যদিন নিতাই সামনে বসে আর বাপ্পা নস্কর ইন্দ্রনীলের সাথে গাড়ির পেছনে বসে। তবে সেদিন পথ সভার জন্য সামনেই বসেছিল বাপ্পা নস্কর। গাড়ি মঞ্চের বেশ কিছুদূরে এসে থামে। গাড়ি থামতেই সামনে থেকে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দুটো গুলি এসে লাগে ফারহানের বুকে আর কাঁধে। ইন্দ্রনীল হলফ করে বলতে পারে ওই গুলি বাপ্পা নস্করকে খুন করার জন্য মারা হয়েছিল কিন্তু ফারহান বসে থাকায় ওই গুলি ফারহানের গায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাড়ি করে ফারহান কে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়।

হাত মুঠি হয়ে যায় দানার। মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। প্রচন্ড বেদনায় শরীর কুঁকড়ে যায়, কেউ যেন ওকে একের পর এক চাবুকের আঘাত করে চলেছে। চক্রান্তের দিন আজকে নয় আর সেটা দানা করবে, বিমানের করার কথা ছিল না। বিমান নিজে থেকে চাল চালতে গেল কেন? ওর পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। একবার বিমানকে হাতে পেলে খুন করে ফেলবে। এটা নিশ্চয় নয়নার চাল। দানার পরিকল্পনার সুত্রপাত নয়নার হাত ধরেই। সেদিন রাতে এই রকমের একটা পরিকল্পনা নয়না ওকে জানিয়েছিল।

দানা জিজ্ঞেস করে, "ফারহান এখন কোথায় আছে?"

ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, "অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে, জানি না কি হবে।"

চাপা কণ্ঠে দানা গর্জে ওঠে, "ফারহানের কিছু হবে না। ওর কিছু হলে এই মহানগর আমি জ্বালিয়ে দেব।"

দানা জানতে চায় বাপ্পা নস্কর কোথায়? ইন্দ্রনীল জানায়, ওই পথ সভা কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হবে তবে ইতিমধ্যে টিভি মিডিয়াতে বাপ্পা নস্কর তার বিরোধী পক্ষদের সাবধান করে দিয়েছে। চরম অস্বস্তিতে এদিক ওদিক পায়চারি করে দানা কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পায় না। ওর গায়ে কেউ যেন গরম ছ্যাঁকা দিয়ে চলেছে। মহুয়ার অবস্থা সঙ্গিন, একদিকে দানার রক্ত চক্ষু মাথা গরম কখন কি করে বসে তার নেই ঠিক। ওইদিকে জারিনা কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরেই বিয়ে আর তার আগেই এই ঘটনায় জারিনা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। সঙ্গীতার সাথে যা হয়েছিল সেটা জারিনার সাথে হতে দিতে পারে না। এর প্রতিশোধ নিতে হবেই আর আজ রাতেই নেবে। যা হবার হবে কিন্তু একটা একটা করে পিস্তলের সব গুলি নয়না আর বিমানের বুকে মাথায় নামিয়ে দেবে।

জারিনার জ্ঞান ফেরে, দানাকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে, "একি হলো আমার? ফারহান..... ফারহান....." বলে বার দুই আঁতকে উঠে আবার মহুয়ার কোলে ঢলে পড়ে।

দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে দানা। মহুয়া ওই চোখের ভাষা পড়ে ফেলে। দানার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। চারদিকে চাপা উত্তেজনা, সবাই শ্বাস আটকে অপারেশান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে। রুহিকে কোলে নিয়ে নেয় দানা।

রুহি দানার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, "আন্তেলের কি হয়েছে, ডাডা?"
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 04-09-2020, 09:10 PM



Users browsing this thread: