04-09-2020, 12:38 PM
চৌষট্টি ছক (#১০)
পরের দিন বিকেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। এখন পর্যন্ত কারুর সন্দেহের ঘেরে আসেনি দানা, তাই মহুয়া একটু নিশ্চিন্ত, তবুও ভয় লাগে ওর। রুহিকে রীতিমত কোলের মধ্যে আঁকড়ে রুদ্ধশ্বাসে ওকে বিদায় জানায়। মনা আর পিন্টু ওর সঙ্গ নিতে চায় কিন্তু দানা বারন করে দেয়। কারন এই চক্রান্ত শুধু মাত্র ওর একার, অন্য কাউকে নিয়ে গেলে ওদের সন্দেহ হয়ে যাবে।
চুপচাপ একা একা গাড়ি চালাতে চালাতে দানা নিজের ভুয়ো চক্রান্তের অঙ্ক কষে। ওদের এমন কিছু বলতে হবে যাতে ওরা সবাই দানার কথা বিশ্বাস করে নেয় আর নয়নাকে একটু মাথায় করে রাখতে হবে তাহলে ভবিষ্যতে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। নয়নাকে জালে একদম শেষে জড়াতে চায় দানা। নারী মাংসের লোভে অনেক কাজ হাসিল হয় পৃথিবীতে আর সেটাই দানা ওকে দিয়ে করাতে চায়।
বাগান বাড়িতে ঢুকতেই বাগানে বিমান চন্দ আর মোহন খৈতান কে দেখতে পায়। ওকে দেখেই দৌড়ে একটা দারোয়ান ওর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দানা দারোয়ানের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বাগানের মধ্যে হেঁটে এগিয়ে যায়। মোহন আর বিমানের সাথে হাত মেলায়। স্মিত হেসে কুশল আদান প্রদান, কাজের কথা ইত্যাদি চলে কিছুক্ষণ। দানার কাজে মোহন বেশ খুশি, এই কয়দিনে সুনিপুণ হস্তে কাজ এগিয়ে চলেছে। যদিও এর কৃতিত্ব, মহুয়া আর মহেশ বাবুর। ওরা পেছনে না থাকলে দানা কিছুই করতে পারত না। মহেশ বাবুর ব্যাবসায়িক বুদ্ধি আর মহুয়ার পরিচালনা। মেয়েরা একটা বাড়ি যেমন নষ্ট করতে পারে তেমনি এক পুরুষের জীবন তৈরি করতে পারে আর সেই মহামায়া রূপী নারী, মহুয়া।
মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বিমান ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা কি ভাবলে ওই ব্যাপারে?"
দানা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, "নয়না থাকলে একটু ভালো হত।"
বিমান আর মোহন হেসে ফেলে, "তুমি যে নয়না ছাড়া এক পা চল না দেখছি।"
দানা মুচকি হেসে বলে, "না না, সেটা নয় মানে ওর সাথে অনেকদিন আগে আলোচনা হয়েছিল তাই ও থাকলে একটু ভালো হত। যাই হোক নয়না যখন নেই তাহলে আর কি করা যাবে। আমার কাছে একটা পরিকল্পনা আছে একদম নিখুঁত। চারদিন পরে জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের একটা পথ সভা আছে, আর তার তিনদিন পরে মনোহরপুরে একটা মিটিং মিছিল আছে। বাপ্পা নস্করকে মারতে হলে আড়ালে আবডালে মারলে হবে না। আজকাল পুলিসের তদন্ত অনেক আধুনিক হয়ে গেছে, ঠিক শুঁকে শুঁকে খুঁজে বের করবে। তাই খুন একদম সামনা সামনি ভিড়ের সাহায্যে করতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলে ধরা অসম্ভব, কিন্তু একা একা কাউকে খুন করলে অনেক ছোট ছোট সুত্র অজান্তেই থেকে যায়। ভিড়ের আড়ালে সেই সুত্র হারিয়ে যাবে। ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে থাকবে। বাপ্পা নস্করের দলের পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে যাবে। যেই বাপ্পা নস্কর গাড়ি থেকে নামবে ঠিক তখনি ওকে ঘিরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেই ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে ওর বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ওইখান থেকে কেটে পরবে। চিন্তা নেই আওয়াজ হবে না, পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো থাকবে। যতক্ষণে বাপ্পা নস্করের জামা লাল হবে ততক্ষণে আমার ছেলে ওইখান থেকে পালিয়ে যাবে।"
বিমান আর মোহন মুখ চাওয়াচায়ি করে, "হুম খুব ভালো ষড়যন্ত্র ফেঁদেছে। তবে তোমার লোক তোমার বিশ্বাসী নাকি শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যাবে?"
দানা হেসে বলে, "না না, খুব বিশ্বাসী ছেলেকে দিয়ে আমি কাজ করাবো। কাজ শেষ হওয়ার পর মুহূর্তে ওই ছেলে শহর ছেড়ে চলে যাবে। তবে প্রথম মিছিলে এই কাজ করব না, ওই দিন সবকিছু জরিপ করব। দ্বিতীয় মিছিলে ওর ওপরে হামলা করা হবে।"
বিমান মাথা দোলায়, "হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক কথা। আগে থেকে ওর চাল চলন ভালো ভাবে জরিপ করে নিতে হবে।"
মোহন হেসে বলে, "তাহলে পরের সপ্তাহে একসাথে কাজ করা যাবে?"
দানা হেসে মাথা দোলায়, "সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের সপ্তাহ কেন, যেদিন ওর চিতা জ্বলবে সেদিন আমরা এইখানে আগুন জ্বালিয়ে আয়েশ করে মেয়েদের নাচ দেখতে দেখতে কাজের কথা সারবো।"
মোহন আর বিমান একসাথে হেসে ফেলে দানার কথা শুনে। মোহন চোখ টিপে মিচকি হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, "আপনি মিস্টার মন্ডল বড় রসিক মানুষ।"
দানা বাঁকা হাসে, হ্যাঁ অনেক রসিক, একসময়ে ওর বৌকে এই বাড়ির শোয়ার ঘরে অনেকবার সঙ্গম সম্ভোগ সুখ প্রদান করেছে আর সেই সাথে নয়নার সাথে কম বার সঙ্গম করেনি।
বিমানের কান একটু লাল হয়ে যায়, মোহনের কাঁধ চাপড়ে হেসে বলে, "তুই শালা হারামি। কাকে আনা যায় বলতো সেইদিন?"
দানা বলতে যাচ্ছিল নয়নাকে আনলে কেমন হয়? কিন্তু থেমে যায়। মোহন বলে, "দেখি একটা সুন্দরী মডেল আছে, বেশ ভালো নাচে মাইরি। বিশেষ করে ন্যাংটো নাচ বেশ ভালো ভাবেই করে।"
কাজ অনেকটাই হাসিল হয়ে গেছে, এইবারে আসল তথ্য জানতে হবে। কে আদেশ দিয়েছিল মৈনাককে খুন করতে, বিমান না সিমোন, আসল চক্রান্তকারী কে? দানা একটু চিন্তিত ভাব দেখায়। ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বিমান জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, কি এত ভাবছো?"
দানা মিচকি হেসে বলে, "না মানে, একদিন রাতে নয়নার বাড়িতে একটা চম্পাকলি মালকে খুব লাগিয়ে ছিলাম।"
বিমান কিছুক্ষণ চিন্তা করে হেসে বলে, "আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। ওই সাংবাদিক মেয়েটার কথা বলছ তাই তো।"
বিমান তাহলে সঙ্গীতাকে চেনে, সঙ্গে সঙ্গে দানার মাথা গরম হয়ে যায়। চোখের সামনে সঙ্গীতার জল ভরা চোখ ভেসে ওঠে। বিমান হাসতে হাসতে মোহনকে বলে, "তোর মনে আছে মনু, ঐ যে কি নাম বেশ। শালীকে মারতে গেলাম, কিন্তু ওর পেছনে বসা ছেলেটা শেষ পর্যন্ত মরে গেল।"
মোহন একটু ভেবে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সঙ্গীতার কথা বলছিস তাই তো?"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল চেপে ধরে। সারা শরীর দাউদাউ করে বিতৃষ্ণা আর ক্রোধে জ্বলে ওঠে, পারলে এইখানে ওদের খুন করে ফেলে। কোন রকমে মাথা ঠাণ্ডা করে জিজ্ঞেস করে, "কি রকম পরিকল্পনা করেছিলেন বিমান বাবু? আসল মানুষকেই মারতে পারলেন না।"
বিমান ওর দিকে তাকিয়ে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো, সিমোনের পরিকল্পনায় খুঁত ছিল না। শালা ওই লরির ড্রাইভার সব কেচিয়ে দিল। আমরা ভেবেছিলাম যে ওরা বাইকে থাকবে আর পেছনে সঙ্গীতা বসে থাকবে। কিন্তু সেদিন বাইকে নয় সঙ্গীতার স্কুটিতে ওরা বেরিয়েছিল। ধাক্কা ঠিক জায়গায় মারা হয়েছিল, কিন্তু ফলাফল উল্টে গেল।"
দানার মাথার শিরা ফেটে পড়ার যোগাড়, মাথায় রক্ত উঠে যায়। আরো এক গেলাস মদ আনিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। এই রক্ত চক্ষু যে ক্রোধের নয়, সুরার সেটা ওদের বুঝাতে হবে না হলে মুশকিল। চেহারায় মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে, "মাল টা কিন্তু জম্পেশ ছিল আর যাই বলেন। সেদিন সারা রাত ধরে চুদেছিলাম জানেন।"
বিমান আর মোহন একসাথে অবাক হয়ে ওকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? কোথায়?"
দানা হেসে বলে, "নয়নার বাড়িতে আবার কোথায়।"
মোহন ওর কাঁধ চাপড়ে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তাহলে সেই রাতে নয়নাকেও ডেকে নেওয়া যাবে কি বলেন মিস্টার মন্ডল। না না, অন্য কাউকে চাইলে বলে দেন, যোগাড় করে দেব।"