Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে পড়াশুনা শিকেয় ওঠে রুহির। এইবারে "ডাডা" ওকে ছেড়ে দেবে আর রুহি মজাসে "কারতুন" দেখতে পারবে। স্টাডি থেকে মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে দেখে ফারহান। অনেকদিন পরে দেখা, ইদানিং বাপ্পা নস্করের কাছে আসা যাওয়া কমে গেছে তাই দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছে। মদনার দোকানে আর সেই আড্ডা আলোচনা সভা আর বসে না, শক্তি বলাই নিজের কাজে ফিরে গেছে, তবে নাসির আকরাম এখন নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে। কখন কি ঘটে প্রত্যকে মিনিটের খবর দানার কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।

ফারহান ওকে দেখে হেসে বলে, "কি রে শালা" বলেই রুহিকে দেখে থেমে যায়।

এতদিনে "ডাডা"র বন্ধুরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। রুহি দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে নালিশ করে, "ডাডা কারতুন দেত্তে দিত্তে না।"

ফারহান ওকে কোলে নিয়ে বলে, "আচ্ছা ডাডাকে বকে দেব।" তারপরে হেসে দানাকে বলে, "বেশ মেয়ে নিয়ে পড়াশুনা করছিস। ম্যাডাম কোথায় রে?"

মহুয়া ওর গলা শুনে বসার ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করে, "কি ব্যাপার বিয়ে শাদি কবে তোমার?"

ফারহান হেসে উত্তর দেয়, "এই দুই সপ্তাহ পরে। আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে।"

মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, ওকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে?"

ফারহান মহুয়াকে বলে, "এই একটু কেনাকাটা করতে সাহায্য করতে হবে আপনাকে। মানে আম্মি আর ভাবীজান ঠিক পেরে উঠবে না।"

মহুয়া হেসে বলে, "সে আর বলতে। আচ্ছা এখন বসো। কাল থেকে জারিনাকে নিয়ে তোমার বিয়ের বাজারে বেড়িয়ে পড়বো।"

মহুয়া কাজের মেয়েটাকে পানীয় আর খাদ্য নিয়ে আসতে বলে। ওরা বিয়ের গল্পে, জারিনার গল্পে মেতে ওঠে। বেশ কিছু পরে ফারহান দানাকে একপাশে ডেকে বলে, "এই একটু কথা ছিল রে তোর সাথে।"

দানা প্রশ্ন করে, "বল না কি হয়েছে?"

ফারহান এদিক ওদিক তাকায়, মনের মধ্যে বিশাল দ্বিধা বোধ। দানা ওর কাঁধ চাপড়ে অভয় দিয়ে মনের দ্বিধা কাটাতে অনুরোধ করে। ফারহান গলা নামিয়ে বলে, "কিছু টাকা ধার দিতে পারবি, মানে এই এক লাখের মতন। টাকা একটু কম পড়ছে রে।"

দানা হেসে ফেলে। ঠিক পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে ছিল আর ওদের কথা শুনে ফেলে। মহুয়া হেসে ওকে বলে, "না গো ফারহান আমরা বড় গরীব মানুষ। আমাদের কাছে তোমাকে ধার দেওয়ার মতন টাকা সত্যি নেই।"

ফারহান কাঁচুমাচু মুখ করে একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া হেসে উত্তর দেয়, "তোমার বিয়ের খরচ পাতি আন্দাজ কত লাগবে?"

ফারহান নির্বাক হয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি হটাত ঝাপসা হয়ে আসে। আমতা আমতা করে মহুয়াকে বলে, "না ম্যাডাম, এ কথা নয়, মানে।"

দানা ওর পিঠে কষে এক চাঁটি কষিয়ে বলে, "বোকাচোদ এই কথা বলতে তোর এত দেরি লাগে। শালা বের হ বাড়ি থেকে, কুত্তা এমন ঝ্যাঁটা পেটা করব বাল জারিনার....."

বাক্য শেষ করলো না, কারন পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে। না হলে বলে দিত জারিনার যোনির মধ্যে ঢুকে পড়তে।

মহুয়া ওকে বলে, "আমি আরো একটা কথা ভেবেছিলাম।"

দানা আর ফারহান দুইজনেই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই বিষয়ে দানার সাথে এতদিন কোন আলোচনা করেনি মহুয়া। মহুয়া হেসে বলে, "হানিমুনে মরিশাস যাবে না ব্যাঙ্কক যাবে?"

ফারহানের চোখ জোড়া উপচে আসে, "না না ম্যাডাম এটা আমি নিতে পারব না।"

মহুয়া হেসে বলে, "তুমি নাকি এক কালে জিতকে দুই হাজার টাকা ধার দিয়েছিলে? ভেবে নাও এই টাকা সেই ধারের সুদ।"

দানা স্মিত হেসে বলে, "ভাই তুই আমাকে যদি ধরে না আনতিস তাহলে এতদিনে আমি হারিয়ে যেতাম রে।"

মহুয়া সমস্বরে বলে, "স্টেসান থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলে বলে আমি ওকে খুঁজে পেয়েছি ফারহান। প্লিস না করো না।"

ফারহান না করতে পারে না। মহুয়া একটা দুই লাখ টাকার চেক কেটে ফারহানের হাতে ধরিয়ে দেয়, ফারহান কি করবে বুঝতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ওদের জোরাজুরিতে চেক পকেটে নিয়ে নেয়।

পরেরদিন সকালেই গাড়ি নিয়ে রুহিকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। ফারহান আগে থেকেই জারিনাকে বলে দিয়েছিল মহুয়ার সম্বন্ধে তাই মুখ ফসকে কিছু বলে না, যদিও মহুয়া সব বিষয়ে জানে। দানা নিজের কাজে খুব ব্যাস্ত, কুড়ি খানা ছোট আবাসন প্রকল্পের কাজ একসাথে চলছে, সেই সাথে দুটো বড় আবাসনের কাজ আর একটা বড় পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণ। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই ওর কাছে। মাঝে মাঝে মহেশ বাবুর কাছে যায়। মোহনের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়। তবে সেদিনের পরে সিমোনের সাথে দেখা হয় না আর। সিমোনের কাছে দানার পুরানো ফোন নাম্বার ছিল, তাই আর ফোন করতে পারে না। আর দানাও আগ বাড়িয়ে সিমোনেকে ফোন করেনি। পাছে ওদের মেলামেশা কারুর চোখে পড়ে যায়। তবে এখন বুক ঠুকে চলতে দ্বিধা বোধ নেই, যদি সিমোনের সাথে দেখা করার থাকে তাহলে ফোন করে নেবে। একে বারে মোহনের সামনেই দেখা করার সুযোগ শুধু মাত্র একটু গা বাঁচিয়ে চলা এই আর কি।

হোটেলের কাজের সাইটে দানা গিয়ে দেখে যে সিমোন উপস্থিত। কি ব্যাপার এইখানে কি করছে সিমোন? দানাকে দেখে অমায়িক হেসে এগিয়ে আসে। পাশেই স্বামী মোহন তাই দানা সংযত হয়ে যায়।

মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে হেসে বলে, "কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট, না আরো কিছু করব?"

মোহন হেসে উত্তর দেয়, "না না এই দুই সপ্তাহে অনেকখানি হয়ে গেছে দেখছি।"

দানা চারদিক দেখে মাথা নাড়ায়, ভিত আগে থেকেই তৈরি ছিল, পিলার তোলা শুরু হয়ে গেছে। মোহন গলা নামিয়ে বলে, "একবার আপনার সাথে একটু অন্য বিষয়ে আলচনা করার ছিল। কাল বিকেলে একটু সময় করে একবার আমাদের বাগান বাড়িতে আসবেন। শুধু আমি আপনি আর বিমান।"

দানা বুঝে যায় কোন দুরাভিসন্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে মোহন। কাজ কর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি ঢুকে দেখে এক মেলা বসেছে। ফারহান, নাফিসা, নাফিসার স্বামী তাবিশ, সবাই বাড়িতে উপস্থিত। বসার ঘরে মনা পিন্টু সেই সাথে শক্তি বলাই। ঘরের মাঝে টাল করে জামা কাপড়, নাফিসার জন্য তুঁতে রঙের দামী একটা শাড়ি, ফারহানের জন্য দামী সাদা রঙের শেরওয়ানি। দেখে মনে হল মহানগরের দোকান খালি করে দানার বসার ঘরে উপস্থিত। বিয়ের আনন্দে সবাই মেতে। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনা অনেকগুলো বেলুন ফুলিয়ে ঘর ভর্তি করে দিয়েছে আর রুহি সেকি খেলা সেই বেলুন নিয়ে। এই ভিড়ে দানার চোখ খুঁজে বেড়ায়, কোথায় মহুয়া।

তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন মুখ খানি করে ফারহানকে জিজ্ঞেস করে, "তোরা কখন এলি রে?"

হেহে করে হেসে ফেলে ফারহান, "অনেক ক্ষণ এসেছি রে। তোকে দেখে না ঝড়োকাকের মতন মনে হচ্ছে।"

রুহিকে জিজ্ঞেস করে দানা, "মাম্মা কোথায়?"

রুহির কানে কি আর সেই কথা যায়? বেলুন নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত, ডাডা তখন কে চেনে। শুধু মাত্র রাতে ডাডাকে আর মাম্মাকে পাশে না পেলে মনে পরে তা ছাড়া সারাদিন মনা আর পিন্টু।

রুহির হয়ে নাফিস উত্তর দেয়, "জারিনার লেহেঙ্গা পছন্দ হচ্ছে না তাই এখন ঘুরছে। একটু আগে ফোন করেছিলাম, হয়তো এখুনি চলে আসবে।"

ফারহান ওকে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে দুই হাত ধরে বলে, "বাড়া তোকে কি বলে ধন্যবাদ জানবো ভেবে পাচ্ছি না রে। ম্যাডাম পারলে সারা বাজার কিনে আনে।"

দানা বসার ঘর দেখে সেটা বুঝে গেছিল। মন ছটফট করছে মহুয়াকে দেখার জন্য। বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছে, একটা ভুয়ো চক্রান্ত ভাবতে হবে, না হলে কাল কি বলবে ওদের সামনে। মহুয়া না আসা পর্যন্ত বুকের মাঝে চাপা উত্তেজনা বজায় থাকে। এক ঘন্টা পরে, বাজার মাথায় করে জারিনা আর মহুয়া ঘরে ফেরে। ওদের হাতেও কাপড় জামার ব্যাগ। জারিনা নিজের পছন্দ মতন লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনে বেশ খুশি।

ঘরে ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, "আপনি সত্যি পারেন বটে।"

দানা অদুরে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখে যায়। নিয়মিত শরীর পরিচর্যা করার ফলে দিনে দিনে ওর যৌবনের ডালি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা নধর দেহ পল্লব ওকে কাছে ডাকে। দুই চোখের ভাষা, "কি হলো তোমার?" দানা মাথা দোলায়, "কিছু না। পরে বলবো।"

কেনা কাটা বাজার বিয়ের মাতামাতি অনেকক্ষণ চলে। এতজন লোকের খাওয়া দাওয়া, নাফিসা আর জারিনা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। জানে মহুয়া নিরামিষাশী তাই রান্না নিরামিষ হয়।

রাতের খাওয়া পরে সবাই চলে যাওয়ার পরে দানা আর মহুয়া বসার ঘরে বসে। দানা জানায় বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছিল। আগামী কাল মোহনের বাগান বাড়িতে যেতে হবে। দানার বিশ্বাস মোহন আর বিমানের সাথে বাপ্পা নস্করকে খুনের চক্রান্ত করা হবে। দানার ভুমিকা এইখানে অনেক বড়, নয়নার বিশ্বাসভাজন ব্যাক্তি দানা। ওকে একটা ভুয়ো নিখুঁত চক্রান্ত তৈরি করতে হবে যাতে ওদের সন্দেহ না হয়। তবে আসল দিনের আগেই বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে যাতে বাপ্পা নস্কর সেই জায়গা থেকে সরে যায়। তারপরে এই চক্রান্তের খবর বাপ্পা নস্করের কানে দিয়ে দেবে। ব্যাস, খেলা শুরু। বিমান, মোহন, সিমোন, নয়না একে একে সবাই ফাঁদে পড়ে যাবে। পারলে রমলার সাহায্যে এই চক্রান্তের খবর টিভিতে, খবরের কাগজের শিরোনাম করে দেবে।

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "এই গেল পরের কথা, কিন্তু কাল কি বলবে ওদের সামনে?"

দানা জানে না কি করবে তাই উত্তর দেয়, "কাল বিকেলে যেতে যেতে ভাবা যাবে।"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 04-09-2020, 12:08 AM



Users browsing this thread: