Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
চৌষট্টি ছক (#৭)


কি ব্যাপার এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মণি? কার ফোন? অনেকক্ষণ হয়ে গেছে মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেড়িয়েছে। কিছু হলো না তো? তাহলে এই মহানগরের আর রক্ষে নেই, খোলা পিস্তল হাতে রাস্তায় নেমে পড়বে দানা।

ফোন দেখে স্বস্তি পায় দানা, নয়না ফোন করেছে, কিন্তু হঠাৎ? "হ্যালো, কি খবর?" দানা প্রশ্ন করে।

উত্তর আসে নয়নার, "কি করছ? খালি আছো না মিসেসের সাথে কিছু চলছে।" বলেই ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

চোখের সামনে মহুয়ার শায়িত অর্ধনগ্ন দেহ পল্লব ওকে মাতাল করে তোলে। মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "কিছু না বলো, কি হয়েছে।"

নয়না ওকে বলে, "একটু পরে আমার বাড়িতে আসতে পারবে। সন্ধ্যের পরে দিকে মোহনের সাথে দেখা করার ছিল।"

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, নয়না যখন বাড়িতে ডেকেছে তাহলে ওর ওপরে নিশ্চয় সন্দেহ করেনি এখন। রমলা তাহলে নয়নাকে কিছুই বলেনি। কাউকে ওর অভিসন্ধির ব্যাপারে জানতে দেওয়া চলবে না। দানা উত্তর দেয়, "তুমি ঠিকানা বলো, আমি চলে যাবো।"

ফিকফিক করে হেসে নয়না বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি পাশে মিসেস আছে তাই না।"

দানা মিচকি হাসে, "তা আছে।"

নয়না বলে, "আরে না না সেরকম কিছু নয়। বুঝতেই পারছ এইসব আলোচনা শহরে থেকে করা যায় না। দূরে একটা গ্রামে, নদীর তীরে মোহনের একটা বাগান বাড়ি আছে সেখানে আলোচনা হবে। আমি বিমানকে বলে রেখেছি যে তুমি আমার সাথে আসবে।" গলা নামিয়ে কামুকী কণ্ঠে বলে, "আজ মিস্টার মন্ডলের গাড়িতে যেতে পারি কি?"

দানা বুঝতে পারে কোথায় ডাকা হয়েছে। যেখানে প্রতিবার সিমোনের সাথে সহবাস করত সেই দুর বাগান বাড়িতে ওদের আলোচনা সভা হবে। নয়না নিশ্চয় সিমোনের সম্বন্ধে অবগত নয় না হলে ওকে নিশ্চয় ইয়ার্কির ছলে কিছু একটা বলতো। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, "ঠিক আছে সন্ধ্যে নাগাদ আমি তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবো।"

মহুয়া ওদের কথোপকথন শুনে জিজ্ঞেস করে, "কে ফোন করেছিল গো?"

দানা উত্তরে জানায়, নয়না ফোন করেছিল, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের সাথে আলোচনা সভা আছে সন্ধ্যের পরে। ওর হয়তো আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মহুয়াকে অভয় দিয়ে বলে, নয়না হাতের মুঠির মধ্যে সুতরাং ভয়ের কোন কারন নেই, বিমান ওর টিকি ছুঁতে পারবে না। এখন পর্যন্ত নয়না ওদের অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেনি। ওর দেওয়া চাল মতন সবাই এগিয়ে চলেছে একপা একপা করে। চূড়ান্ত হামলা এখন বাকি। কাকে দিয়ে শুরু করা যায়? কঙ্কনা নাসরিনকে দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু ওদের আসার এখন অনেক দেরি। বিমান আর সিমোনকে দিয়েই খেলা শুরু করবে দানা। ধোপ দুরস্ত জামা কাপড় পরে তৈরি, মহুয়ার শখের দামী ছাই রঙের সুট পরে নেয়। কোমরে একটা পিস্তল গোঁজে অন্য পিস্তল পায়ের মোজাতে ছোট বেল্ট দিয়ে বেঁধে নেয়।

মহুয়া সাজ পরিচর্যা ছেড়ে খানিকের জন্য উঠে আসে। মুখে মাথায় তখন পর্যন্ত রঙ মাখানো। ছলছল চোখে ঠোঁট হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে বলে, "সাবধানে যাও জিত। বুকটা কেমন যেন করছে।" জড়িয়ে ধরতে যায় মহুয়াকে কিন্তু মানা করে দেয় প্রেয়সী, "না না, এই ফেস প্যাক আর রঙ তোমার সুটে লেগে যাবে।"

মহুয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে অভয় দিয়ে বলে, "কিছু হবে না, ওরা এখন পর্যন্ত কিছুই আঁচ পায়নি। আর হ্যাঁ আমি একবার মনা আর পিন্টুকে ফোন করে দিচ্ছি রুহিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে।"

দানা বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বের হওয়ার আগে মনা আর পিন্টুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয়। নির্দেশ দেয় যতক্ষণ ও বাড়িতে না ফিরছে ততক্ষণ যেন বাড়িতেই থাকে। মনা আর পিন্টু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যায়।

গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বুকের মাঝে চাপা টানটান উত্তেজনা, বিমান আর মোহনকে ওর চক্রান্তের বিষয়ে বেফাঁস কিছু বলা চলবে না, নয়নাকে ওর অভিসন্ধির সম্বন্ধে কিছু বুঝতে দেওয়া চলবে না।

অনেকদিন পরে এই বাড়িতে পা রাখতেই ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সুন্দরী লাস্যময়ী অভিনেত্রীর কবলে প্রায় পড়েই গেছিল যদি না নয়না একটা ভুল চাল চালতো, ওই ইন্দ্রাণীর নাম না নিলে হয়তো ওর কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করে দিত। তবে এখন ওর সামনে সব কিছু পরিস্কার, আগে মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ, তারপরে নিজের খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

কলিং বেল বাজাতেই কাজের মেয়ের স্থানে সুমিতা এসে দরজা খুলে দেয়। ছাই রঙের দামী সুট পরা দানাকে দেখে প্রায় চমকে ওঠে, একদম চেনা যাচ্ছে না যে এই দানা কয়েক মাস আগে ওদের গাড়ি চালাতো। দেখে মনে হয় বিশাল ক্ষমতাশালী এক ব্যাবসায়ী ওদের বাড়ির দরজায়। অদুরে নয়না বিস্ফোরিত নয়নে ওকে দেখে হেসে ফেলে। দানা বসার ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, বিশেষ কিছুই বদলায়নি বাড়ির।

দানা জিজ্ঞেস করে, "তৈরি, যেতে পারি?"

নয়না একটা সাদা জিন্স আর একটা টকটকে লাল রঙের শার্ট পরেছে, ওপরে দুধ সাদা দামী ব্লেজার, গলায় একটা স্কার্ফ। অভিনেত্রী তাই সাজের বাহার আলাদা। নধর দেহের গড়ন অনেকটাই উপচে ফুটে উঠেছে চাপা পোশাকের ভেতর থেকে। নরম ঠিকরে বেড়িয়ে আসা পাছার খাঁজ দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। কতবার ওই নরম নিটোল পাছার খাঁজে কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ ঘষে কামসুখ আস্বাদন করেছে দানা। উন্নত স্তন যুগল দেখে দুই হাত নিশপিশ করে, পারলে এখুনি স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে চটকে পিষে দেয়। দানা মনে মনে হাসে, একা নিভৃতে নির্জন রাস্তায় আবার যদি হঠাৎ করে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে সেই পুরানো দিনের মতন তাহলে গাড়ির অবস্থা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। নয়নার পোশাক আশাক আর দেহের লাস্যময়ী কামুকতা ওকে হাতছানি দিয়ে বারেবারে ডাক দেয়। যদিও ওই ফাঁদে প্রথমেই পা দিতে নারাজ দানা তাও দেখা যাক এই পরিণতি কি হয়। মহুয়াকে একটা মেসেজ লিখে জানিয়ে দেয় ওরা যাত্রা শুরু করেছে।

দানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত জড়িয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, "আজকে তোমাকে দেখে সত্যি তোমার পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করছে। তোমাকে কি বলে ডাকবো ভেবে পাচ্ছি না, দানা না মিস্টার মণ্ডল?"

মনে মনে হাসে দানা, এই পোশাক আশাক বাহ্যিক আড়ম্বর দেখেই মানুষ চেনে মানুষে। খোলসের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার প্রয়োজন কেউ মনে করে না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী আর মহুয়া ওর অন্দর মহলে উঁকি দিয়েছিল তা ছাড়া আজ পর্যন্ত যত নারীর সংস্পর্শে এসেছে সবাই ওকে একটা খেলার পুতুল বলেই ভেবেছে। যখন ওর পকেটে টাকা ছিল না, পোশাকের ঠিক ঠিকানা ছিল না, চরিত্র গত দোষ থাকা সত্ত্বেও মহুয়া বুক ভরে ভালোবাসা দিয়েছে ওকে।

মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, "আমি দুটোই।"

গাড়িতে উঠে নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা দানা, ষাট লাখ টাকার গাড়ি থাকতে, তুমি চল্লিশ লাখ টাকার গাড়ির ড্রাইভারি কেন করতে গেলে একবার বলতে পারো?"

দানা প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, "আজকে ভারী সুন্দর লাগছে তোমাকে।"

নয়না চোখ টিপে বলে, "কম হ্যান্ডসাম লাগছ না তুমি। সুটের রঙ কি মিসেসের পছন্দ?"

দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"

নয়না বলে, "তোমার মিসেস যেমন সুন্দরী তেমনি মার্জিত সুন্দর রুচিবোধ আছে।"

গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে মাঠের মাঝ দিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলে। চালকের আসনে দানা আর পাশে নয়না। অনেকক্ষণ দুইজনে পরস্পরকে শুধু মাত্র দেখে যায়, কিছু কথা নেই। দানা অঙ্ক কষতে ব্যাস্ত, কি ভাবছে নয়না? নিশ্চয় বাপ্পা নস্করকে খুন করার চক্রান্ত করছে। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়, নয়নাকে আর বিমানকে হাতের মুঠোর মধ্যে করার জন্য ওর হাতে কোন ভুয়ো চক্রান্ত থাকা দরকার।

নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কি এত ভাবছো দানা?"

দানা গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, "না তেমন কিছু না। মোহন রাজি হবে তো, সেটাই একটু শঙ্কায় আছি।"

ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, "আমি ঠিক করিয়ে দেব চিন্তা করো না, দানা।"

কি করিয়ে দেবে? নয়না কি মোহনের সাথেও সহবাস করেছে? নিজের কাজ হাসিলের জন্য, করতেও পারে এই ধূর্ত কামুকী নারী। সন্ধ্যে অনেক আগেই নেমে গেছে। বিমানকে নয়না ফোনে জানিয়ে দেয় ওদের আসার কথা। বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই উর্দি পরা একজন লোহার দরজা খুলে দেয়। বাগান বাড়ির সামনের বাগানে একটা টেবিলের চারপাশে পাঁচখানা চেয়ার রাখা। বাগান আলোয় আলোকিত। রাজনৈতিক দল নেতা বিমান চন্দ, শিল্পপতি মোহন খৈতান আর তার সুন্দরী লাস্যময়ী স্ত্রী সিমোন খৈতান বসে। দামী কালো বি.এম.ডাবলু ঢুকতে দেখে একটু চমক খেয়ে যায় ওরা। নয়নাকে সাথে নিয়ে দানা গাড়ি থেকে নামে। বিস্ফোরিত চোখে দানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় সিমোন। ক্ষণিকের জন্য চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে যায়, যেন ভুত দেখেছে সামনে। সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার সামাল দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে ওদের অভ্যর্থনা জানায়। এতদিন দানাকে খুব সাধারন মানুষ হিসাবেই গন্য করে এসেছিল সবাই, কিন্তু দামী সুট, কালো গাড়ি দেখে সেই সব কেটে যায়। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, সত্যি এই জগতে বাঁচতে হলে অর্থ চাই, না হলে ক্ষমতা প্রতিপত্তি আসেনা, মানুষ মানুষকে চেনে না। প্রথম যেদিন বিমান দানাকে দেখেছিল সেদিন সামান্য একটা ড্রাইভার হিসাবে দেখেছিল, দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ এক ব্যাবসায়ী অতি সাধারন পোশাক, আর আজকের দানা একদম ভিন্ন। মোহন ওকে কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পায় না। আময়িক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে।

নয়না ওদের চেহারার ভাব্ব্যাক্তি দেখে মনের কথা বুঝে বলে, "মিস্টার মন্ডলের সাথে কি এই বাগানে বসেই আলোচনা করা হবে?"

বিমান মৃদু হেসে মাথা দোলায়, "অসুবিধে থাকলে ভেতরে যাওয়া যেতে পারে।"

দানা অল্প হেসে বলে, "না না, এখানে বসতে আপত্তি নেই। নদীর হাওয়া বেশ ভালোই লাগছে।"

দানা এতক্ষণ সিমোনকে তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে যাচ্ছিল। এই ভাবে দানাকে দেখতে পাবে হয়তো আশা করেনি, না অন্য কিছু। রক্ত শুন্য চেহারায় কোনোরকমে হাসি টেনে আনে সিমোন। মোহন নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমোনের চোখে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে দেয় দানা। ওই কঠিন হাতের পরশ সিমোনের অজানা নয়, তাই হাত মেলাতে দ্বিধা বোধ করে সিমোন। হাত জোর করে ছোট্ট নমস্কার করে। দানা চোয়াল শক্ত করে মৃদু হাসে।

মোহন জিজ্ঞেস করে, "স্কচ নেবেন না ভদকা?"

দানা চেয়ারে বসে পাশের বেয়ারাকে বলে, "স্কচ অন রক্স।"

বেয়ারা মাংসের চপ কাটলেট আরও অনেক কিছু খাদ্য দ্রব্যের সাথে মদের গেলাস দিয়ে যায়। সিমোনের আশ্চর্য ভাব তখন ঠিক ভাবে কাটেনি আর সেটা নয়নার চোখ এড়ায় না। দানাকে একটু ঠেলে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। দানা মিচকি হেসে বলে ওর আশ্চর্য চকিত নয়নের ভাষার উৎস সম্পর্কে কোন ধারনা নেই
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 02-09-2020, 08:18 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)