Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
রমলা ওকে বলে, "কঙ্কনা আমাকে যে সিডি দিয়েছিল তাতে প্রচুর গোপন কথোপকথন ছিল। কি ভাবে কঙ্কনা ওই সব কথাবার্তা রেকর্ড করেছিল সেটা আমার জানা নেই। তবে ওই সিডিতে আমি সিমোনের কথাবার্তা শুনেছি। কোন একজনকে ফোনে সঙ্গীতাকে খোঁজার আর তারপরে ওকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। আমি বুক ঠুকে বলতে পারি ফোনের ওইপাশের মানুষ বিমান চন্দ ছাড়া আর কেউ নয়। কারন সিমোনে, অত প্রান খুলে একমাত্র ওর স্বামীর বন্ধু বিমান চন্দের সাথেই কথা বলে, আর কারুর সাথে নয়।"

দানার মাথায় বিজলীর ঝিলিক খেলে যায়। মনে পরে যায়, ওর সাথে যেদিন সিমোনের প্রথম দেখা হয় সেদিন ফোনে কোন একজনকে ওই সাংবাদিককে খোঁজার আর মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছিল। দানা জিজ্ঞেস করে, "ওই সিডিতে আর কার কার কথাবার্তা ছিল একটু বলতে পারো?"

রমলা ওর হাতে একটা সিডি ধরিয়ে বলে, "অনেক বিত্তশালী ক্ষমতাশালী মহিলাদের কথাবার্তা এতে রেকর্ড করা আছে। সিমোন খৈতান, রাগিণী ভৌমিক, নীলাঞ্জনা সেন, সুমিত্রা মল্লিক, কেতকী দাসগুপ্ত এমন অনেকের কথোপকথন আছে ওই সিডিতে।"

দানা বুঝতে পেরে যায় ওকে খুনের কারন কি হতে পারে, এটাও বুঝতে পারে কঙ্কনা ওকে জানায়নি কি ভাবে এই সব তথ্য যোগাড় করেছিল না হলে দানাকে হয়ত উল্টে চেপে ধরত রমলা। যে যে মহিলাদের নাম নিয়েছে রমলা, একসময়ে সবার সাথে সহবাস করেছে দানা। কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে ব্যাবহার করে ওই বিত্তশালী ক্ষমতাশালী নারীদের অন্দর মহলে ঢুকে গেছিল। সাধারনত এই বড় লোকেরা, ড্রাইভার মালী চাকর পুরুষ বেশ্যা এদের মানুষ বলে গন্য করে না। এদের সামনেই অনেক সময়ে অনেক গোপন আলোচনা করে ফেলে, ভাবে এরা কাকে কি বলবে। সেই সুযোগ নিয়ে দানাকে ওই দুই নারী ব্যাবহার করে।

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে প্রশ্ন করে, "তুমি এই কথোপকথন নিয়ে কি করলে?"

রমলা উত্তরে বলে, "আমি খবর বেচা কেনা করি দানা। এই রেকর্ড করা কথোপকথন খবর যোগাড় করতে আমার খুব কাজে আসে। মানে আমি কাউকে সরাসরি ব্ল্যাকমেইল করিনি, তবে মাঝে মাঝে ভেতরের খবর হাসিল করার জন্য এই সব লাগে।"

এতক্ষণ এতসব জটিলতা শুনে দানার মাথা ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করে দেয়। শঙ্কর আর রমিজ সিগারেট খাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ওদের মাথায় এই সব কথাবার্তার কিছুই ঢোকেনা। তবে দানার সামনে সব অঙ্ক মিলে যায়। কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল। কি কারনে বিমান চন্দ, সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল। সঙ্গীতা মারা যায়নি, তবে ওর প্রেমিক মৈনাক ওই দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছে।

দানা পিস্তল বের করে গর্জে ওঠে, "তোমার জন্য মৈনাক আজকে এই পৃথিবীতে নেই।"

ওর গর্জন শুনে শঙ্কর আর রমিজ খোলা পিস্তল হাতে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখে যে রমলা আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছে আর দানা খোলা পিস্তল হাতে ওর দিকে উঁচিয়ে।

রমলা কাঁপা ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, "দেখো আমি যা যা জানি সব তোমাকে বলেছি প্লিস আমাকে প্রানে মের না। দেখ দানা, আমার কিছু হলে দুলাল মিত্র কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দেবে না।"

দানা চোয়াল চেপে চেঁচিয়ে ওঠে, "শালী রেন্ডী কুত্তি, সঙ্গীতার চোখের জলের মাশুল কে দেবে? কোন দুলাল মিত্রকে আমি চিনি না বুঝলে রমলা। আমার গায়ে আঁচড় লাগলে আমি সবকিছু নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে চলে যাবো। এই সংবাদ মাধ্যমের দুনিয়ায় নিশ্চয় তুমি একা নও রমলা। তোমার বিপক্ষে অনেক সাংবাদিক সংস্থা নিশ্চয় মুখিয়ে আছে তোমাকে দমানোর জন্য। তাদেরকে খুঁজে বের করতে আমার সময় লাগবে না, মিসেস রমলা বিশ্বাস।"

রমলা হাত জোর করে প্রার্থনা করে, "তুমি যা বলবে আমি করতে রাজি আছি।"

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রাগ প্রশমিত করে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন? কঙ্কনা কোথায় তুমি জানো?"

এতক্ষণ কথা বলার পরে রমলার গলা শুকিয়ে আসে, বোতল থেকে জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করে, "আমি আগে থেকে কঙ্কনাকে চিনতাম না। তবে ওই পার্টিতে কঙ্কনা নিজেকে ইন্দ্রাণীর বান্ধবী হিসাবে আমাকে পরিচয় দেয়। আমিও ইন্দ্রাণীর সাথে ওর মেলামেশা দেখে বিশ্বাস করে নিলাম যে ওর বান্ধবী হয়ত ওর সাথেই এসেছে। সেই পার্টির প্রায় আড়াই তিন মাস পরে কঙ্কনা আর নাসরিন আমার কাছে একটা সিডি নিয়ে আসে। এসে আমাকে বলে যে ওর কাছে অনেক গোপন তথ্য আছে যা আমি খবরের জগতে কাজে লাগাতে পারি। তবে তার জন্য অনেক মোটা অঙ্কের টাকা চায়, পাঁচ কোটি টাকা। সবে নয়নার কাছ থেকে এক কোটি টাকা নিয়ে আমি পত্রিকা শুরু করেছিলাম। আমার হাতে অত টাকা ছিল না তাই অগত্যা ওদের আমার পত্রিকার শেয়ার দিয়ে দিলাম। ওই দুইজন আমার পত্রিকার কুড়ি শতাংশের অংশীদার।"

এইবারে কঙ্কনার ঠিকানা পাওয়া যাবে। এতদিন কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা ছিল না, ফোনে ফোন করে পায়নি, ওদের ছবি পর্যন্ত দানার কাছে ছিল না। এই নিয়ে ইন্দ্রাণীর সাথে কোনোদিন কথা হয়নি তাই জানতে পারেনি। ভেবেছিল একদিন কোন ভাবে খুঁজবে, তবে সেটা রমলার হাত ধরেই ওর কোলে এসে পড়বে সেটা আশাতীত। ওকে খুন করতে চেয়েছিল ওই দুই ধূর্ত মহিলা, খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

রমলাকে কঙ্কনা ও নাসরিনের ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে রমলা ওকে জানায়, "কঙ্কনা আর নাসরিন এই শহর ছেড়ে চলে গেছে।"

শুনে দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, তাহলে প্রতিশোধ কি ভাবে নেবে? রমলা ওকে বলে, "অন্য শহরের ঠিকানা ফোন নাম্বার সবকিছু আমি জানি। কিন্তু তুমি কঙ্কনাকে কি ভাবে চেন?"

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে সত্য গোপন করে বলে, "ইন্দ্রাণীর বান্ধবী অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই তাই জিজ্ঞেস করলাম। একসময়ে বেশ জানাশুনা ছিল কঙ্কনা আর নাসরিনের সাথে। যাই হোক ওর ঠিকানা আর ফোন নাম্বার আমাকে দাও।"

রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের ঠিকানা আর ফোন নাম্বার দেয়। দুর পশ্চিমের শহরে চলে গেছে দুইজনেই, হয়ত ওদের স্বামী বদলি হয়ে গেছে তাই এই শহর ছেড়ে চলে গেছে। অতদুরে গিয়ে সরাসরি কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুন করতে হবে ভেবেই দানা একটু চিন্তিত হয়ে যায়।

রমলা ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বলে, "কঙ্কনা আর নাসরিন দুই মাস পরে আমাদের পত্রিকার বার্ষিক সম্মেলনে আসবে। তুমি চাইলে আমি দেখা করিয়ে দিতে পারি। ওই সময়ে ওদের নাকি আরো কিছু কাজ আছে, তাই প্রায় এক মাস মহানগরে থাকবে।"

ওই এক মাসেই যা করার করে ফেলতে হবে দানাকে। তবে সরাসরি খুনের দায়ে জেলে যেতে চায় না দানা। ঘরে সুন্দরী প্রেমিকা মহুয়া আর কচি শিশু রুহির কথা মনে পড়ে যায়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, বড় কঠিন পরিস্থিতি বড় জটিল সবকিছু, তবে প্রতিশোধ দানা নেবেই। ওর ভালোবাসার খুনের প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 02-09-2020, 12:44 AM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)