Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
চৌষট্টি ছক (#৫)

মহুয়াকে সব কিছু খুলে জানাতে, মহুয়া ওকে সাবধান করে দেয়। রমলা বিশ্বাস আগে সাংবাদিক ছিল, বর্তমানে নয়নার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিজের একটা পত্রিকার সম্পাদিকা হয়েছে। মিডিয়া জগতে অনেক চেনাজানা, সেটা ইন্দ্রাণীর সাথে ওই পার্টিতে গিয়ে দানা বুঝেছিল। এর সাথেও বেশ মেপে চলতে হবে দানাকে। সারা রাত ধরে দুইজনে অঙ্ক কষে যায়, কি ভাবে রমলাকে বাগে আনা যায়। এই রমলা, নয়নাকে ইন্দ্রাণী আর দানার সম্পর্কের ব্যাপারে জানিয়েছিল তাই নয়না ওকে হুমকি দেওয়ার সাহস পেয়েছিল। তবে এই কানীন পুত্রের সংবাদ খুব গোপন, একবার এই খবর উজাগর হলে দুলাল মিত্রের নামে আর রমলার নামে কলঙ্ক রটে যাবে। এই খবর নিশ্চয় নয়না জানে আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই রমলাকে চেপে ধরে সঙ্গীতার খবর পায়। এই জারজ সন্তানকে ঢাল করেই রমলাকে ফাঁদে ফেলতে হবে। একবার এই ছেলেটার সাথে দেখা করা যাক।

ভোরের বেলায় দানা, রমিজকে ফোন করে বাড়িতে ডাকে, আর সেই আবাসিক কলেজে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যাক্ত করে। মহুয়ার বুক চাপা উত্তেজনায় ভরে ওঠে, এক এক করে চারপাশে ফাঁদ পেতে চলেছে কিন্তু কখন কোনদিক থেকে ওদের ওপরে আঘাত আসবে সেটা এখন বুঝে উঠতে পারছে না। নয়না আঘাত করবেই, বিমানের কাজ শেষ হলেই নিশ্চয় দানাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। এইবারে রমলাকে আঘাত করলে রমলা নিশ্চয় চুপচাপ বসে থাকবে না পাল্টা আঘাত করবেই।

গাড়ি নিয়ে রামিজ আর শঙ্করকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে। মহানগর থেকে ওই পাহাড়ি আবাসিক কলেজ অনেকদুর। রাস্তায় দানা নিজের পরিকল্পনার সম্বন্ধে রমিজ আর শঙ্করের সাথে শলা পরামর্শ করে। রামিজ আর শঙ্কর উঁচিয়ে, হাতে পেলে যে কারুর মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দেবে। কিন্তু দানা নিজেদের হাতে রক্ত মাখাতে নারাজ। ওইখানে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যাবে। পথে যেতে যেতে নয়নাকে ফোন করে রমলার ফোন নাম্বার জেনে নেয় দানা। প্রথমে নয়না কারন জিজ্ঞেস করলে, দানা বলে যেহেতু নয়নাকে ওর আর ইন্দ্রাণীর সম্পর্কে জানিয়েছিল তাই একবার রমলার সাথে কথা বলতে চায়।

সারাটা পথ তিনজনে পালা করে গাড়ি চালিয়ে বিকেল নাগাদ দুর পাহাড়ি কলেজে পৌঁছে যায়। রাতে আবাসিক কলেজ বন্ধ থাকায় কারুর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা হয়ে ওঠে না। সকালেই তিনজনে কলেজে গিয়ে ছেলেটার বিষয়ে জানতে চায়। অধ্যাপিকা কিছুতেই অনুমতি ব্যাতিত ছেলেটার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাতে নারাজ। দানা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, সঙ্গে সঙ্গে রমলাকে ফোন করে। অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে রমলা আগন্তুকের পরিচয় জিজ্ঞেস করে।

দানা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, "আমি বিশ্বজিৎ মন্ডল ওরফে দানা, আশা করি এইবারে চিনতে পারছেন।"

রমলা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। তুমি নয়নার....."

দানা বলে, "হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। আমি এক সময়ে নয়নার গাড়ি চালাতাম।"

রমলা প্রশ্ন করে, "হঠাৎ কি মনে করে ফোন করা হল? ইসস তুমি না, ইন্দ্রাণীর কি খবর?"

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে বাকি থাকেনা এই মহিলাই নয়নাকে ইন্দ্রাণীর বিষয়ে জানিয়েছে। দানা কঠিন কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে? সত্যি সত্যি উত্তর দাও।"

সরাসরি প্রশ্ন করাতে রমলা ঘাবড়ে যায়, কিন্তু সেই অনুভুতি লুকিয়ে কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আমি কাকে কি বলেছি তাতে তোমার কি দরকার। তুমি সামান্য একজন গাড়ির চালক, নিজের চরকায় তেল দাও।"

দানা পাল্টা আক্রমন করে রমলাকে, "দেখো রমলা, তুমি নয়নাকে সঙ্গীতার খবর দিয়েছিলে তাই আজ মৈনাক মারা গেছে। তুমি সঙ্গীতাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে ঠিক কি না বলো?"

রমলা দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "কি যা তা বলছ তুমি? আমি কেন সঙ্গীতাকে মারার চেষ্টা করব? আমি মৈনাককে চিনিনা আমি কাউকে মারিনি।"

দানা ক্রুর হাসি দিয়ে বলে, "তুমি সঙ্গীতার সব খবর জানো রমলা, সোজা কথায় মানবে না তাহলে। জানো আমি এখন কোথায়?"

রমলা জিজ্ঞেস করে, "কোথায়?"

দানা জানায়, "আমি বেলপাহাড়ির আবাসিক কলেজে। তোমার ছেলে বেশ বড় হয়ে গেছে রমলা। শেষ কবে এসেছিলে দেখা করতে? আমি অনেক চকোলেট আর একটা ভিডিও গেম এনেছি ওর জন্যে। বলো তো ওর হাতে দেব না তোমার জন্য অপেক্ষা করবো?"

ওইপাশে রমলার শরীর রক্ত শুন্য হয়ে যায়, তাও দানাকে বলে, "কি যা তা বলছো তুমি, আমার কোন ছেলে নেই আমার শুধু দুই মেয়ে।"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে তাহলে অধ্যাপিকার সাথে একবার কথা বলে নাও যাতে আমি একটু ছেলের সাথে দেখা করতে পারি।" বলে সামনে বসা অধ্যাপিকার হাতে ফোন ধরিয়ে দিতে যায়।

সঙ্গে সঙ্গে রমলা ওইদিক থেকে আঁতকে ওঠে, "না দানা প্লিস, আমি সব বলছি কিন্তু প্লিস ছেলের সামনে আমাকে ছোট করে দিও না দানা, আমি তোমার পায়ে পড়ি।"

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "আমি আগামী কাল বিকেল পর্যন্ত এইখানে থাকব, এর মধ্যে যদি এইখানে এসে দেখা করে যাও তাহলে ভালো না হয় যাওয়ার আগে তোমার ছেলের আসল পরিচয় বিশ্বের কাছে উজাগর করে দেব। একজন বড় সম্পাদিকার নামে কলঙ্ক। সামনে নির্বাচন সেই সাথে রাজনৈতিক দল নেতা দুলাল মিত্রের নামে কলঙ্ক।"

রমলা চাপা কণ্ঠে বলে, "তুমি ওইখানে অপেক্ষা করো দানা, আমি এখুনি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছি। রাতের মধ্যে আমি পৌঁছে যাবো প্লিস আমার ছেলেকে এর মধ্যে জড়িও না দানা আমি তোমার পায়ে পড়ি।"

দানা বাঁকা হেসে বলে, "ঠিক আছে, চলে এসো। আমি অপেক্ষা করে থাকবো।"

আঘাতটা একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে। মৈনাকের খুনিকে হাতের সামনে পাওয়া যাবে। দানা এটাও জানে এতক্ষণে দুলাল মিত্রকে রমলা সব ঘটনা খুলে বলে দেবে আর নয়নাকে এই সব জানাবে। রমলার সব ক্রোধ নিশ্চয় নয়নার ওপরে পরবে কারন এই দুর্বলতার ফলে রমলা ওকে সঙ্গীতার খবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু নয়নাকে বেশি চাপ দিলেই ফেটে পড়তে পারে তাই রমলাকে সাবধান করে দেয়, "আর একটা কথা, নয়নাকে এই বিষয়ে কিছু জানাবে না, কারন নয়না আমাকে কিছুই বলেনি। আমি জানি তুমি নয়নার ওপরে সন্দেহ করেছ কিন্তু নয়না আমাকে তোমার ছেলের ব্যাপারে কোন খবর দেয়নি।"

রমলা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "না না আমি কাউকে কিছু জানাবো না। তুমি ওইখানে অপেক্ষা কর আমি আসছি। তোমার সাথে আরও অনেক কথা আছে দানা। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত এই শহর ছেড়ে চলে গেছ, কিন্তু সেদিন নয়নার পার্টিতে তোমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম।"

ঠিক কি বলতে চায় রমলা? ওর সাথে আর কি কথা থাকতে পারে প্রাক্তন সাংবাদিক, বর্তমান সম্পাদিকা রমলা বিশ্বাসের? রমলা কি মৈনাকের খুনের বিষয়ে কিছু আলকপাত করতে সক্ষম হবে? হতে পারে, সাংবাদিক মানুষ অনেক খবরা খবর রাখে রমলা। তবে নয়না কম যায় না, গুপ্তচর লাগিয়ে অনেক খবর বের করতে ওস্তাদ।

সন্ধ্যে নাগাদ রমলা বেলপাহাড়ি পৌঁছে যায়। রমলা একাই এসেছে, দানা নিজের হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দেয়। রমলা সেই হোটেলে একটা ঘর নেয় রাতের জন্য। রাতের খাওয়ার পরে দানা রমলাকে নিজের কামরায় ডাকে কথাবার্তা বলার জন্য। দানা চুপচাপ রমলার অপেক্ষায়, ওর কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে, মৈনাকের খুনির সঠিক খবর এর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। রমিজ আর শঙ্করকে ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবকিছু ক্যামেরা বন্দী করতে পরামর্শ দেয়। সেই মতন ঘরের এক কোনায় একটা ছোট ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়।

এই একদিনেই রমলা অনেক শুকিয়ে গেছে, ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। একদিকে রামিজ বসে অন্যপাশে শঙ্কর বসে মাঝ খানে দানা। দানা একটা সোফায় রমলাকে বসতে অনুরোধ করে।

রমলা এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি?"

কঠিন গম্ভির কণ্ঠে দানা প্রশ্ন করে, "প্রশ্ন আমি করবো, তুমি উত্তর দেবে। প্রথমে এটা বলো, কেন তুমি সঙ্গীতার সম্বন্ধে নয়নাকে জানিয়েছিলে? জানো তারপরে সঙ্গীতার সাথে কি হয়েছে? নয়নার বাড়িতে সঙ্গীতাকে বেঁধে ;., করা হয়েছে। ওর প্রেমিক মৈনাকের খুন হয়েছে। এইসব শুধু তোমার জন্য হয়েছে রমলা।"

রমলা আক্ষেপ করে মাথা দোলায়, "সত্যি বলছি দানা, সঙ্গীতার জন্য আমার সত্যি দুঃখ হচ্ছে। আমি আমার ছেলের নামে শপথ করে বলছি ওর ক্ষতি হোক সেটা কোনোদিন চাইনি আমি।"

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "আমি জানি না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে কার কাছ থেকে শুনেছো, কিন্তু নয়নাও এই গোপন খবর জানে।"

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে রমলাকে বলে, "নয়নাকে এইসব থেকে দূরে রাখো রমলা। নয়না আমাকে কিছুই বলেনি, বিশ্বাস না করলে এখুনি ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারো।"

ওই হিমশীতল কণ্ঠস্বর শুনে রমলা কেঁপে ওঠে, "নয়না আমাকে কলঙ্কের হুমকি দিয়ে সঙ্গীতার খবর জানতে চায়। আমার কিছু করার ছিল না দানা, আমি ওকে দিতে বাধ্য হই। আমি সত্যি জানতাম না যে নয়না ওকে ;., করাবে। জানলে কোনদিন সঙ্গীতার খবর ওকে দিতাম না। বিশ্বাস করো দানা, অনেকদিন পর্যন্ত ওকে আমি ওকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি সঙ্গীতার খারাপ কোনোদিন চাইনি।"

ওর পার্টির কথা দানার মনে পরে যায়, রমলা মুখ খোলেনি নয়নার কাছে। তবে কে খুন করতে পারে মৈনাককে? ওকে অবাক করে রমলা বলে, "তবে আমি মনে হয় জানি মৈনাককে কে খুন করতে পারে।"

সঙ্গে সঙ্গে দানার রমিজ আর শঙ্করের দিকে তাকায়। দানা উৎসুক হয়ে ওঠে, "কে খুন করতে পারে। কি জানো তুমি?"

রমলা ওকে বলে, "সত্যি বলতে কি জানো। আমি কিছু গোপন খবর পেয়েছিলাম আর তার থেকেই অনেক কিছু জেনেছি।"

চাপা উত্তেজনায় দানার শ্বাস আটকে যায়। রমলা কণ্ঠস্বর নিচু করে বলে, "মিসেস কঙ্কনা দেবনাথ নামে ইন্দ্রাণীর এক বান্ধবী আমাকে একটা সিডি দিয়েছিল।"

কঙ্কনার নাম শুনতেই দানার শরীরের সকল ধমনী চাপা উত্তেজনায় টানটান হয়ে যায়। কঙ্কনা কি ভাবে রমলাকে চেনে?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 01-09-2020, 09:55 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)