09-03-2019, 12:21 AM
(This post was last modified: 22-03-2019, 12:49 PM by অনঙ্গপাল. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
মন্দাকিনী-উপাখ্যান
(মৌলিক নয়, লিটইরোটিকার একটি গল্প থেকে অনুপ্রাণিত।)
|| ১ ||
আরেকটা শনিবারের রাত, আরও একদিন ঘরে বসে বোর হওয়ার যন্ত্রণা। ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিজের মত হাপু গাইছি! অন্তর্মুখী হওয়ার এই এক জ্বালা। জয়ন্ত অবশ্য অনেক করে বলেছিল ওর সাথে নাইটক্লাবে যেতে। পোষায়নি। ওসব লোকজন, ভিড়ভাট্টা কোনওকালেই আমার তেমন বরদাস্ত হয় না। জয়ন্ত সবই জানে, তাও আজ একটু বেশিরকম ঝোলাঝুলি করছিল। কারণটা সহজেই অনুমেয়। দিনকয়েক আগে নাকি কোন এক পরমাসুন্দরীকে পটিয়েছে... আজ আমায় সশরীরে দেখিয়ে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করতে চায়। ছোকরার এই এক দুর্বলতা, শো-অফ করার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারে না। যাহোক এটা-সেটা বলে কাটাতে হল। একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে মনে হয়, আপাদমস্তক মাঞ্জা মেরে চুপচাপ বেরিয়ে গেল। আমিও সেই থেকে কচ্ছপের মত সোফায় পড়ে আছি। মাঝে মাঝে রিমোট টিপে চ্যানেল পাল্টানো, এটুকুই আপাতত আমার জঙ্গমতার নিদর্শন।
কতক্ষণ এভাবে কাটিয়েছি খেয়াল নেই, বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে চোখটাও কখন যেন লেগে এসেছিল। চটকাটা ভাঙল জলতরঙ্গের আওয়াজে। জয়ন্ত ফিরে এসেছে। বলাই বাহুল্য, যুগলে।
ঘড়ির দিকে আপনা থেকে চোখ চলে গেল। এই নিশুতিতে নিশ্চয় নবাগতা ফেরত যাবেন না! তার মানে রাতের অতিথির রাত্রিবাস একরকম নিশ্চিত। চমৎকার! ব্যাপার-স্যাপার এত তাড়াতাড়ি জমে উঠবে সেটা বোধহয় জয়ন্তও ভাবতে পারেনি, নয়তো একটু আভাস অন্তত দিয়ে যেত। যাকগে আমার কি যায় আসে। অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত!
ঘাড়টা যতটা সম্ভব পারা যায় ঘুরিয়ে বাবুর অবস্থাটা একবার দেখার চেষ্টা করলাম। ঘরের ভিতর জমাট অন্ধকার, কেবল টিভির ক্ষয়াটে নীলচে আভায় যেটুকু দৃষ্টিগোচর হয় তাতেই বোঝা গেল জয়ন্তর মুখে বোকাটে ক্যাবলা হাসি ঝুলছে। বাঃ! এরইমধ্যে শরাহত! কৌতূহলের বশে ওর কাঁধের ওপারে চোখ চলে গেল। আলোর অভাবে প্রায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু অন্তরালবর্তিনীর অবয়বের একটা ধারণা... রীতিমত আকর্ষণীয়া!
ঘড়ির দিকে আপনা থেকে চোখ চলে গেল। এই নিশুতিতে নিশ্চয় নবাগতা ফেরত যাবেন না! তার মানে রাতের অতিথির রাত্রিবাস একরকম নিশ্চিত। চমৎকার! ব্যাপার-স্যাপার এত তাড়াতাড়ি জমে উঠবে সেটা বোধহয় জয়ন্তও ভাবতে পারেনি, নয়তো একটু আভাস অন্তত দিয়ে যেত। যাকগে আমার কি যায় আসে। অন্ধের কিবা দিন কিবা রাত!
ঘাড়টা যতটা সম্ভব পারা যায় ঘুরিয়ে বাবুর অবস্থাটা একবার দেখার চেষ্টা করলাম। ঘরের ভিতর জমাট অন্ধকার, কেবল টিভির ক্ষয়াটে নীলচে আভায় যেটুকু দৃষ্টিগোচর হয় তাতেই বোঝা গেল জয়ন্তর মুখে বোকাটে ক্যাবলা হাসি ঝুলছে। বাঃ! এরইমধ্যে শরাহত! কৌতূহলের বশে ওর কাঁধের ওপারে চোখ চলে গেল। আলোর অভাবে প্রায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু অন্তরালবর্তিনীর অবয়বের একটা ধারণা... রীতিমত আকর্ষণীয়া!
‘কি রে এখনও জেগে আছিস?’
চোখে চোখ পড়তে জয়ন্তের জিজ্ঞাসা। গলার স্বর বেশ জড়ানো। তরল মদিরার প্রভাব নাকি পার্শ্বচরীর? মাথাটা হেলালাম একবার, যার অনেকরকম অর্থ হতে পারে। অবশ্য ও উত্তর পাওয়ার আশায় প্রশ্ন করেনি। অন্যদিক থেকে খিলখিল হাসির সাথে ওর মাথাটা প্রায় একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল। নিম্নস্বরে কিসব কথা হল, দু’-একটা অর্ধস্ফুট চুমুর আওয়াজও ভেসে এল কি? মেরুদণ্ডে হালকা শিরশিরানি জাগলেও ওদিকে তাকিয়ে যে অনুসন্ধান করব সে সাহস নেই। সোফার উপর একভাবে নিস্পন্দ পড়ে থাকি।
‘চলি রে, গুডনাইট’
প্রতিসম্ভাষণের তোয়াক্কা না করেই দু’জনে জয়ন্তের ঘরে সেঁধিয়ে গেল। পরমুহূর্তেই সজোরে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ। কোটরের ভিতর থেকে কপোত-কপোতীর অনবরত বকবকম অবশ্য দিব্যি ড্রয়িংরুমে ভেসে আসছে।
‘চলি রে, গুডনাইট’
প্রতিসম্ভাষণের তোয়াক্কা না করেই দু’জনে জয়ন্তের ঘরে সেঁধিয়ে গেল। পরমুহূর্তেই সজোরে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ। কোটরের ভিতর থেকে কপোত-কপোতীর অনবরত বকবকম অবশ্য দিব্যি ড্রয়িংরুমে ভেসে আসছে।
আপনা থেকেই বুক চিরে একটা দীর্ঘঃশ্বাস বেরিয়ে এল। অন্যের বাগানের থোকা-থোকা আঙুরফলের দিকে সতৃষ্ণ চেয়ে থাকা শেয়ালের যা হয়। চুপচাপ বোকাবাক্সের দিকে তাকিয়ে থাকি। পর্দায় যা ঘটছে মগজে তার ভগ্নাংশও ঢুকছে না যদিও। মনটা কেমন অসাড় হয়ে গেছে।
বেশিক্ষণ অবশ্য বসে থাকতে পারলাম না। পাশের ঘরে শীৎকারের অনুরণন যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে কারওর পক্ষেই ওখানে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব নয়।
টানতে টানতে শরীরটাকে কোনওমতে নিজের খাটে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেললাম। মাথার ভিতরের শিরাগুলো দপদপ করছে, চুল থেকে পায়ের নখ অবধি পুড়ে যাচ্ছে অসহ্য তাপমাত্রায়।
কিন্তু তাতেই কি নিস্তার আছে?
এখানেও ক্ষীণভাবে এসে পৌঁছচ্ছে ওদের নির্লজ্জ রমণ-উল্লাস!
আচ্ছা ওরা কি বুঝতে পারছে আমি সব শুনতে পাচ্ছি? নাকি... শুনতে পেলেও তাতে কিছু যায় আসে না?
নিজেকে কেমন অকিঞ্চিৎকর মনে হয়।
অক্ষম এক রাগের দহনে জ্বলতে জ্বলতে ঘুমের ব্যর্থ অনুসন্ধান করি।
বেশিক্ষণ অবশ্য বসে থাকতে পারলাম না। পাশের ঘরে শীৎকারের অনুরণন যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে কারওর পক্ষেই ওখানে চুপচাপ বসে থাকা সম্ভব নয়।
টানতে টানতে শরীরটাকে কোনওমতে নিজের খাটে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেললাম। মাথার ভিতরের শিরাগুলো দপদপ করছে, চুল থেকে পায়ের নখ অবধি পুড়ে যাচ্ছে অসহ্য তাপমাত্রায়।
কিন্তু তাতেই কি নিস্তার আছে?
এখানেও ক্ষীণভাবে এসে পৌঁছচ্ছে ওদের নির্লজ্জ রমণ-উল্লাস!
আচ্ছা ওরা কি বুঝতে পারছে আমি সব শুনতে পাচ্ছি? নাকি... শুনতে পেলেও তাতে কিছু যায় আসে না?
নিজেকে কেমন অকিঞ্চিৎকর মনে হয়।
অক্ষম এক রাগের দহনে জ্বলতে জ্বলতে ঘুমের ব্যর্থ অনুসন্ধান করি।