01-09-2020, 11:31 AM
রুহির জন্মদিন, দিন দুয়েক আগে থেকেই আজমের থেকে মহুয়ার বাবা মা এসে গিয়েছিলেন। মহুয়ার বাবা মাকে দেখে দানা বেশ বিবৃত বোধ করে, জানে মহুয়ার বাবা মা রক্ষণশীল রাজস্থানি পরিবার। বিধবা মেয়ে আবার একটা প্রেম করছে আর বিয়ে ছাড়াই ওর সাথে আছে সেটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। লোকেশের খাঁচা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে আর দানার সাহচর্যে এই কয়দিনে মহুয়া অনেক বদলে গেছে। আজমেরের সেই ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে থাকা মেয়ে আর নেই সেই স্থানে দৃঢ় এক নারী দাঁড়িয়ে। মহুয়া পরিস্কার নিজের বাবা মাকে দানার বিষয়ে জানিয়ে দেয়, ওর রুহির "ডাডা"কে যেন এই নিয়ে যেন বিশেষ প্রশ্ন ওদের না করা হয়।
সকাল থেকেই বাড়িতে লোকজন, লোকজন বন্ধুবান্ধব মানে সবাই দানার লোক, কালী পাড়ার মানুষ। মদনা, বলাই, মনা পিন্টু বাজারে ব্যাস্ত। বিকেলে মহেন্দ্র বাবু আসবেন, সাথে শঙ্কর আর রমিজ সপরিবারে আসবে। বাকি ছেলেরা ঘর সাজাতে ব্যাস্ত। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির পেছনে লাগতে ব্যাস্ত। কেষ্ট, রজনী আর সদ্যজাত পুত্রকে ওদের বাড়িতে রেখে দিয়ে ট্যাক্সি চালাতে বেরিয়ে যায়। অনেকদিন পরে সবাইকে একসাথে দেখে দানা বেশ খুশি। মহুয়ার কোন বন্ধু বান্ধবী নেই এই শহরে, বিয়ের পর থেকে একরকম গৃহ বন্দী হিসাবেই জীবন যাপন করে গেছে। দানার সঙ্গ পাওয়ার পরেই মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেছে। তাই ওর বন্ধু বান্ধবীরাই মহুয়ার কাছের লোক। ওকে বাঁচানোর সময়ে এরাই দানাকে সাহায্য করেছিল। ছোট ছোট পায়ে সারা ঘর মাতিয়ে রুহি নেচে বেড়ায়। জিজ্ঞেস করলেই উত্তর দেয়, "মাই হ্যাপি বার্ডে, মাই হ্যাপি বার্ডে।" বলে একটু নেচে নেয়।
সন্ধ্যের পরেই ঘর ভর্তি হয়ে যায় লোকজনে। মনা আর পিন্টু বসার ঘর, বেলুন, ফিতে আর ফুল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। মদনা মনে হয় শহরের কেকের দোকানে হত্যে দিয়ে বসে ছিল, চার থাক ওয়ালা একটা বিশাল সাদা ক্রিম কেক নিয়ে ঘরে ঢোকে। কেকের আকার রুহির অর্ধেক, কেক দেখে রুহিকে আর থামানো যায় না, এখুনি কেক খাবে বলে বায়না। বরুন, সুনিতা বৌদি আর ওদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে কেষ্ট বিকেল বেলা দানার বাড়ি পৌঁছে যায়। মহেন্দ্র বাবুর জন্য সবাই অপেক্ষা করে। বেশ কিছু পরে শঙ্কর আর রামিজের পরিবারের সাথে মহেন্দ্র বাবু এসে যান।
কেক কেটে খাওয়ার চেয়ে বেশি মাখামাখি হয়, রুহি একটু খানি খেয়ে নিজেই মেখে সাদা পুতুল হয়ে বসে পরে। সেই নিয়ে খুব হাসা হাসি। মহেন্দ্র বাবু, দানা আর মহুয়াকে একসাথে দেখে বেশ খুশি।
মহুয়ার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে একটা দামী সুন্দর সোনার হার উপহার দেন আর বলেন, "এইবারে সোজা বিয়ে খেতে চাই বৌমা, পরেরবার যেন ওই সিঁথিতে সিন্দুর দেখি।"
মহুয়া লাজুক হেসে মহেন্দ্রবাবুকে বলে, "আপনার ছেলে দেরি করলে আমি কি করতে পারি বলুন।"
দানা মাথা চুলকায় এইবারে বিয়েটা সেরে ফেলতে হয়। চোখ পাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জানিয়ে দেয় রাতে ওকে আর আস্ত রাখবে না একদম ফুঁড়ে বেড়িয়ে যাবে। দুষ্টুমি ভরা চোখের চাহনি দেখে মহুয়ার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
শঙ্কর আর রমিজ ওকে একদিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে, "হ্যাঁ রে ফারহান কই?"
সত্যিই তো, এতক্ষণ ফারহানের কথা মনে ছিল না কারুর। সঙ্গে সঙ্গে দানা, ফারহানকে ফোন করে, "এই বানচোদ, গান্ডুচোদা কোথায় গাঁড় মারাচ্ছিস বে? এখুনি বাড়ি পৌঁছা না হলে তোর গাঁড় ফুটিফাটা করে দেব।"
ফারহান ঠিক দরজায় ছিল, পাশে জারিনা। ফোন ছেড়ে চেঁচিয়ে বলে, "কুত্তার বাচ্চা একটু আস্তে চিল্লা শালা।"
জারিনা আসবে এটা সবার আশাতীত, দানার মুখে জারিনার নাম শুনেছে শুধু, এইবারে চাক্ষুষ দেখে মহুয়া বেশ খুশি। যদিও ওদের দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে সব জানে তবে এটাও জানে সেই সব শুধু কামের বশে দানা লিপ্ত হয়েছিল। ওর সঙ্গে থাকার পরে দানা অন্য কোন নারীর দেহ স্পর্শ করেনি।
জারিনা মহুয়াকে দেখে বলে, "তুমি সত্যি মিষ্টি দেখতে, তাই দানা আর আমার কাছে আসে না।"
দানা ছাড়া অন্য কারুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শুনতে মহুয়া একদম অভ্যস্ত নয়। সঙ্গমের বার্তালাপ শুধু মাত্র প্রেমিকের মুখেই মানায় তাই জারিনার কথায় বেশ বিবৃত বোধ করে। সঙ্গে সঙ্গে ফারহান অবস্থার সামাল দেয়, "আরে না না, আজকাল দানা খুব ব্যাস্ত তাই দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে গেছে।" জারিনার কান টেনে ফিসফিস করে বলে, "কোথায় কি বলতে হয় তাও কি শিখিয়ে দিতে হবে?"
জারিনা বুঝে যায় তাই জিব কাটে। ফারহান সবাইকে জানায় দুই মাস পরে ওদের নিকাহ। রুহির জন্মদিনেই সবাইকে নিমন্ত্রন জানিয়ে যাচ্ছে তবে পরে কার্ড দেবে সবাইকে। হাসি হইচই হট্টগোল মিলিয়ে মেলা বসেছে বাড়িতে। এত খেলনা আর পুতুল পেয়ে রুহি কি করবে ভেবে পায় না। জারিনা আর ফারহান ওর জন্যে একটা জোড়া সোনার বালা উপহার দেয়। দানা মানা করা স্বত্তেও ফারহান জোর করে রুহিকে ওই বালা পড়িয়ে দেয়।
এই হই হট্টগোলের মাঝে আবার শঙ্কর আর রমিজ দানাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়।
দানা কারন জিজ্ঞেস করলে রমিজ ওকে বলে, "শোন, সঙ্গীতার সম্বন্ধে তোর সাথে জরুরি কথাবার্তা আছে।"
উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার রমিজ ভাই?"
শঙ্কর ওকে বলে, "সঙ্গীতার মুখ থেকে সব কিছু শোনার পরে আমরা রমলা বিশ্বাসের ওপরে নজর রেখেছিলাম। সব কিছু তথ্য প্রমান হাতে আসার পরেই তোকে জানাবো ভেবেছিলাম। রমলা বিশ্বাসের একটা ছেলে আছে।"
দানা প্রশ্ন করে, "তাতে অসুবিধে কোথায়?"
শঙ্কর গলা নামিয়ে ওকে বলে, "ওই ছেলে রমলার কানীন পুত্র। বর্তমান রাজনেতা দুলাল মিত্রের ঔরসে ওই ছেলের জন্ম। রমলা যখন কলেজে পড়ত তখন দুলাল মিত্রকে ভালবাসত, সেই সময়ে ওই ছেলের জন্ম হয়। কিছু পারিবারিক কারনে দুইজনের আর বিয়ে হয় না কিন্তু রমলা ওই সন্তানের জন্ম দেয়। দুলাল মিত্র তখন সবে রাজনীতিতে ঢুকেছে, এই কালিমা ঢাকার জন্য ওরা ওই সদ্যজাত শিশুকে একটা অনাথালয়ে দিয়ে দেয়। দুলাল মিত্র পরে বিয়ে করে ওর বাবার চেনাশোনা একজনের সাথে আর রমলার বিয়ে হয়ে গেল অন্য একজনের সাথে। তবে ওরা দুইজনে ওই ছেলের ওপরে নজর রেখেছিল। বর্তমানে বেলপাহাড়ির এক আবাসিক কলেজে থেকে সেই ছেলে পড়াশুনা করে। এই ব্যাপার কাক পক্ষীতেও জানে না, না দুলালের স্ত্রী জানে না রমলার স্বামী জানে। ওই ছেলের পড়াশুনার খরচ খরচা সব কিছু দুলাল মিত্র দেয়। মাঝে মাঝে রমলা আর দুলাল ওই কলেজে গিয়ে ছেলের সাথে দেখা করে আসে তবে ছেলে এখন পর্যন্ত বাবা মায়ের আসল পরিচয় জানে না। যে অনাথালয়ে ছেলেটা বড় হয়েছিল সেইখানের অধ্যাপিকা শুধু এদের আসল পরিচয় জানে।"
দানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা এত গোপন খবর জানলে কি করে?"
রামিজ বলে, "অনেকদিন থেকেই ওকে অনুসরন করছিলাম। একদিন দেখলাম রমলা, পরিবার ছাড়াই গাড়ি নিয়ে শহরের বাইরে ঘুরতে গেল। সন্দেহ হল আর আমরা পিছু নিলাম। মহানগর ছাড়িয়ে অনেকদুরে একটা হোটেলে দেখালাম রমলা বিশ্বাসের সাথে দুলাল মিত্র দেখা করলো। গভীর চক্রান্তের গন্ধ পেলাম, আর পেছন ছাড়লাম না। দুইজনে ওই অনাথালয়ে গেল সেই ছেলেটার সাথে দেখা করতে। বেশ বড় ছেলে, একদম মায়ের মতন দেখতে। ওকে দেখেই সবকিছু আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।"
দানা বুক ভরে শ্বাস নেয়, তাহলে এই সেই দুর্বলতা যার কথা নয়না ওকে বলেছিল। এইবারে রমলাকে কোণঠাসা করা সহজ হয়ে যাবে। এইবারে মৈনাকের খুনির ব্যাপারে জানা যাবে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নেওয়া যাবে।
সকাল থেকেই বাড়িতে লোকজন, লোকজন বন্ধুবান্ধব মানে সবাই দানার লোক, কালী পাড়ার মানুষ। মদনা, বলাই, মনা পিন্টু বাজারে ব্যাস্ত। বিকেলে মহেন্দ্র বাবু আসবেন, সাথে শঙ্কর আর রমিজ সপরিবারে আসবে। বাকি ছেলেরা ঘর সাজাতে ব্যাস্ত। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির পেছনে লাগতে ব্যাস্ত। কেষ্ট, রজনী আর সদ্যজাত পুত্রকে ওদের বাড়িতে রেখে দিয়ে ট্যাক্সি চালাতে বেরিয়ে যায়। অনেকদিন পরে সবাইকে একসাথে দেখে দানা বেশ খুশি। মহুয়ার কোন বন্ধু বান্ধবী নেই এই শহরে, বিয়ের পর থেকে একরকম গৃহ বন্দী হিসাবেই জীবন যাপন করে গেছে। দানার সঙ্গ পাওয়ার পরেই মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেছে। তাই ওর বন্ধু বান্ধবীরাই মহুয়ার কাছের লোক। ওকে বাঁচানোর সময়ে এরাই দানাকে সাহায্য করেছিল। ছোট ছোট পায়ে সারা ঘর মাতিয়ে রুহি নেচে বেড়ায়। জিজ্ঞেস করলেই উত্তর দেয়, "মাই হ্যাপি বার্ডে, মাই হ্যাপি বার্ডে।" বলে একটু নেচে নেয়।
সন্ধ্যের পরেই ঘর ভর্তি হয়ে যায় লোকজনে। মনা আর পিন্টু বসার ঘর, বেলুন, ফিতে আর ফুল দিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। মদনা মনে হয় শহরের কেকের দোকানে হত্যে দিয়ে বসে ছিল, চার থাক ওয়ালা একটা বিশাল সাদা ক্রিম কেক নিয়ে ঘরে ঢোকে। কেকের আকার রুহির অর্ধেক, কেক দেখে রুহিকে আর থামানো যায় না, এখুনি কেক খাবে বলে বায়না। বরুন, সুনিতা বৌদি আর ওদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে কেষ্ট বিকেল বেলা দানার বাড়ি পৌঁছে যায়। মহেন্দ্র বাবুর জন্য সবাই অপেক্ষা করে। বেশ কিছু পরে শঙ্কর আর রামিজের পরিবারের সাথে মহেন্দ্র বাবু এসে যান।
কেক কেটে খাওয়ার চেয়ে বেশি মাখামাখি হয়, রুহি একটু খানি খেয়ে নিজেই মেখে সাদা পুতুল হয়ে বসে পরে। সেই নিয়ে খুব হাসা হাসি। মহেন্দ্র বাবু, দানা আর মহুয়াকে একসাথে দেখে বেশ খুশি।
মহুয়ার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে একটা দামী সুন্দর সোনার হার উপহার দেন আর বলেন, "এইবারে সোজা বিয়ে খেতে চাই বৌমা, পরেরবার যেন ওই সিঁথিতে সিন্দুর দেখি।"
মহুয়া লাজুক হেসে মহেন্দ্রবাবুকে বলে, "আপনার ছেলে দেরি করলে আমি কি করতে পারি বলুন।"
দানা মাথা চুলকায় এইবারে বিয়েটা সেরে ফেলতে হয়। চোখ পাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জানিয়ে দেয় রাতে ওকে আর আস্ত রাখবে না একদম ফুঁড়ে বেড়িয়ে যাবে। দুষ্টুমি ভরা চোখের চাহনি দেখে মহুয়ার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
শঙ্কর আর রমিজ ওকে একদিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে, "হ্যাঁ রে ফারহান কই?"
সত্যিই তো, এতক্ষণ ফারহানের কথা মনে ছিল না কারুর। সঙ্গে সঙ্গে দানা, ফারহানকে ফোন করে, "এই বানচোদ, গান্ডুচোদা কোথায় গাঁড় মারাচ্ছিস বে? এখুনি বাড়ি পৌঁছা না হলে তোর গাঁড় ফুটিফাটা করে দেব।"
ফারহান ঠিক দরজায় ছিল, পাশে জারিনা। ফোন ছেড়ে চেঁচিয়ে বলে, "কুত্তার বাচ্চা একটু আস্তে চিল্লা শালা।"
জারিনা আসবে এটা সবার আশাতীত, দানার মুখে জারিনার নাম শুনেছে শুধু, এইবারে চাক্ষুষ দেখে মহুয়া বেশ খুশি। যদিও ওদের দৈহিক সম্পর্কের ব্যাপারে সব জানে তবে এটাও জানে সেই সব শুধু কামের বশে দানা লিপ্ত হয়েছিল। ওর সঙ্গে থাকার পরে দানা অন্য কোন নারীর দেহ স্পর্শ করেনি।
জারিনা মহুয়াকে দেখে বলে, "তুমি সত্যি মিষ্টি দেখতে, তাই দানা আর আমার কাছে আসে না।"
দানা ছাড়া অন্য কারুর মুখে এই ধরনের কথাবার্তা শুনতে মহুয়া একদম অভ্যস্ত নয়। সঙ্গমের বার্তালাপ শুধু মাত্র প্রেমিকের মুখেই মানায় তাই জারিনার কথায় বেশ বিবৃত বোধ করে। সঙ্গে সঙ্গে ফারহান অবস্থার সামাল দেয়, "আরে না না, আজকাল দানা খুব ব্যাস্ত তাই দেখা সাক্ষাৎ একটু কমে গেছে।" জারিনার কান টেনে ফিসফিস করে বলে, "কোথায় কি বলতে হয় তাও কি শিখিয়ে দিতে হবে?"
জারিনা বুঝে যায় তাই জিব কাটে। ফারহান সবাইকে জানায় দুই মাস পরে ওদের নিকাহ। রুহির জন্মদিনেই সবাইকে নিমন্ত্রন জানিয়ে যাচ্ছে তবে পরে কার্ড দেবে সবাইকে। হাসি হইচই হট্টগোল মিলিয়ে মেলা বসেছে বাড়িতে। এত খেলনা আর পুতুল পেয়ে রুহি কি করবে ভেবে পায় না। জারিনা আর ফারহান ওর জন্যে একটা জোড়া সোনার বালা উপহার দেয়। দানা মানা করা স্বত্তেও ফারহান জোর করে রুহিকে ওই বালা পড়িয়ে দেয়।
এই হই হট্টগোলের মাঝে আবার শঙ্কর আর রমিজ দানাকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়।
দানা কারন জিজ্ঞেস করলে রমিজ ওকে বলে, "শোন, সঙ্গীতার সম্বন্ধে তোর সাথে জরুরি কথাবার্তা আছে।"
উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার রমিজ ভাই?"
শঙ্কর ওকে বলে, "সঙ্গীতার মুখ থেকে সব কিছু শোনার পরে আমরা রমলা বিশ্বাসের ওপরে নজর রেখেছিলাম। সব কিছু তথ্য প্রমান হাতে আসার পরেই তোকে জানাবো ভেবেছিলাম। রমলা বিশ্বাসের একটা ছেলে আছে।"
দানা প্রশ্ন করে, "তাতে অসুবিধে কোথায়?"
শঙ্কর গলা নামিয়ে ওকে বলে, "ওই ছেলে রমলার কানীন পুত্র। বর্তমান রাজনেতা দুলাল মিত্রের ঔরসে ওই ছেলের জন্ম। রমলা যখন কলেজে পড়ত তখন দুলাল মিত্রকে ভালবাসত, সেই সময়ে ওই ছেলের জন্ম হয়। কিছু পারিবারিক কারনে দুইজনের আর বিয়ে হয় না কিন্তু রমলা ওই সন্তানের জন্ম দেয়। দুলাল মিত্র তখন সবে রাজনীতিতে ঢুকেছে, এই কালিমা ঢাকার জন্য ওরা ওই সদ্যজাত শিশুকে একটা অনাথালয়ে দিয়ে দেয়। দুলাল মিত্র পরে বিয়ে করে ওর বাবার চেনাশোনা একজনের সাথে আর রমলার বিয়ে হয়ে গেল অন্য একজনের সাথে। তবে ওরা দুইজনে ওই ছেলের ওপরে নজর রেখেছিল। বর্তমানে বেলপাহাড়ির এক আবাসিক কলেজে থেকে সেই ছেলে পড়াশুনা করে। এই ব্যাপার কাক পক্ষীতেও জানে না, না দুলালের স্ত্রী জানে না রমলার স্বামী জানে। ওই ছেলের পড়াশুনার খরচ খরচা সব কিছু দুলাল মিত্র দেয়। মাঝে মাঝে রমলা আর দুলাল ওই কলেজে গিয়ে ছেলের সাথে দেখা করে আসে তবে ছেলে এখন পর্যন্ত বাবা মায়ের আসল পরিচয় জানে না। যে অনাথালয়ে ছেলেটা বড় হয়েছিল সেইখানের অধ্যাপিকা শুধু এদের আসল পরিচয় জানে।"
দানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোমরা এত গোপন খবর জানলে কি করে?"
রামিজ বলে, "অনেকদিন থেকেই ওকে অনুসরন করছিলাম। একদিন দেখলাম রমলা, পরিবার ছাড়াই গাড়ি নিয়ে শহরের বাইরে ঘুরতে গেল। সন্দেহ হল আর আমরা পিছু নিলাম। মহানগর ছাড়িয়ে অনেকদুরে একটা হোটেলে দেখালাম রমলা বিশ্বাসের সাথে দুলাল মিত্র দেখা করলো। গভীর চক্রান্তের গন্ধ পেলাম, আর পেছন ছাড়লাম না। দুইজনে ওই অনাথালয়ে গেল সেই ছেলেটার সাথে দেখা করতে। বেশ বড় ছেলে, একদম মায়ের মতন দেখতে। ওকে দেখেই সবকিছু আমার সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।"
দানা বুক ভরে শ্বাস নেয়, তাহলে এই সেই দুর্বলতা যার কথা নয়না ওকে বলেছিল। এইবারে রমলাকে কোণঠাসা করা সহজ হয়ে যাবে। এইবারে মৈনাকের খুনির ব্যাপারে জানা যাবে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নেওয়া যাবে।