Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
দানা চুপচাপ অনেকক্ষণ বসে থাকে। মহুয়া ওকে নয়নার সাথে কি আলোচনা হয়েছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দানা ওকে সব কিছু বিস্তারে জানিয়ে দেয়। মহুয়া ওকে বলে, "ঠিক আছে জিত। তুমি এইবারে চাল দিয়ে এসেছ দেখা যাক নয়না কি করে। তবে মনে রেখো ওই নয়না হচ্ছে আমাদের তুরুপের তাস।" ওর হাতখানি চেপে ধরে বলে, "শেষ দেখা দেখেই যাবো জিত।"


দানা দুইজন কে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট রুহি কিছুই বুঝতে পারে না, কেন মায়ের চোখে ডাডার চোখে জল। তাই কচি হাত দিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে চুমু খায়।

ছোট অফিস কিন্তু এই কয়দিনে মহুয়া বেশ সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিয়েছে। একটা বড় কাঁচের দরজা দেওয়া কেবিনে মহুয়ার আর দানার বসার ব্যাবস্থা, যদিও বেশির ভাগ দিন মহুয়াকে একাই ওই কেবিনে কাটাতে হয়। কাজের মেয়ে মণিকে নিয়েই মহুয়া আফিসে আসে কেননা রুহি সাথে থাকে। এখন রুহিকে কলেজে ভর্তি করা হয়নি। তবে সকালে একটা প্লে কলেজে যায়, যেদিন ইচ্ছে হয় যায় যেদিন ইচ্ছে হয় যায় না। মহেশ বাবু ওদের অনেক সাহায্য করেছেন এই অফিসের ব্যাপারে, দানার সাথে ঘুরে ঘুরে অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলোতে গিয়ে দেখাশুনা করার বিষয়ে আর কেনা বেচার বিষয়ে। মহেশ বাবুকে দানা নিজের কোম্পানিতে অংশীদার হতে অনুরোধ করেছিল কিন্তু মহেশ বাবু বেশি কতক ব্যবসায় আর মাথা গলাতে চান না।

বেশ অনেক গুলো অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প হাতে চলে আসে দানার। সবকটা প্রকল্পে অংশীদার হিসাবে কাজ শুরু করে দেয়। বাপ্পা নস্করকে জানিয়ে দেয় যে একবার এই প্রকল্প গুলো সম্পূর্ণ হলে, ওর নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা দেবে। ইতিমধ্যে ইন্দ্রনীলের কাছ থেকে বাপ্পা নস্কর সব শুনেছে তাই দানার কথায় বিশ্বাস করে নেয়।

মহানগরের বুকে ঠাণ্ডা কমে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ পরে রুহির জন্মদিন। মহেন্দ্র বাবুকে আমন্ত্রন জানিয়েছে, সেই সাথে সবাইকে। কেষ্টর ছেলে হয়েছে, দানা দেখা করতে গিয়েছিল। মহুয়ার খুব যাওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেই কালী পাড়ার বস্তি বলে দানা আর নিয়ে যায়নি। ওর গুমটিতে এখন তালা মারা, সেখানে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। বস্তির আর এলাকার খবরা খবর ঠিক পেয়ে যায় মদনা না হয় বলাইয়ের কাছ থেকে। ইন্দ্রাণী চলে যাওয়ার পরে শক্তি আর বলাইকে নিজের ব্যাবসায় লাগিয়ে দেয়।

সেদিন বিকেলে মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে একটা বড় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিল দানা। মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে এই রেস্টুরেন্টে আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে। বড় লোকেদের রেস্টুরেন্ট, উর্দি পরা দারোয়ান, উর্দি পরা বেয়ারা। খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই নয়নার সাথে মুখোমুখি। রুহি কোলে দানার পাশে মহুয়াকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে নয়না। নয়নাকে এগিয়ে আসতে দেখেই মহুয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। প্রমাদ গোনে মহুয়া, এই মহিলা আবার কি চাল চালবে? বুকের মধ্যে টানটান উত্তেজনা নিয়ে সেটা বোঝার অপেক্ষায় মহুয়া। তপ্ত শ্বাসে দানার বাজু আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে চশমার পেছন থেকে আপাদমস্তক জরিপ করে নয়নাকে। নয়নার বেশ পেছনে সুমিতা আর সমুদ্র দাঁড়িয়ে পড়ে।

নয়না মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় মহুয়ার দিকে, "কেমন আছেন মিসেস মন্ডল?"

চোয়াল চেপে ঠোঁটে মেকি হাসি টেনে আলতো হাত মিলিয়ে মহুয়া উত্তর দেয়, "ভালো আছি।"

নয়না ওদের দিকে দেখে দানাকে বলে, "তোমার সাথে একটু কথা ছিল। হাতে কি সময় আছে?"

ওর সামনে দাঁড়াতে একটুকু ইচ্ছে নেই তাই দানা উত্তর দেয়, "এখুনি ডিনার সেরে উঠেছি, ফোনে কথা হবে কেমন?"

মহুয়ার তীক্ষ্ণ চোখ নয়নাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নয়না ওই আগুনে চাহনি দেখে বেশ বিবৃত বোধ করে। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারে না দানার স্ত্রী ওকে এমন তীক্ষ্ণ চোখে কেন জরিপ করে চলেছে। নয়নাকে হাতের সামনে পেয়ে একটু নাচিয়ে নেওয়ার ইচ্ছেটা দমাতে পারল না দুষ্টু মিষ্টি মহুয়া।

নয়নার বিবৃত বোধ কাটিয়ে আর দানাকে অবাক করে মহুয়া বলে, "তবে ডেসার্ট আরো একবার খেতে আপত্তি নেই।"

এতক্ষণ একটা চাপা শ্বাস বুকের মধ্যে আটকে রেখেছিল নয়না। মহুয়ার নিমন্ত্রনে সেই শ্বাস ছেড়ে বলে, "খুব ভালো কথা, মিসেস মন্ডল। এইখানে আইসক্রিম খুব ভালো পাওয়া যায়।"

রেস্টুরেন্টে ঢুকতে ঢুকতে নয়নাকে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "আপনি কি বিমানের বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছেন?"

নয়না অবাক হয়ে যায়, এত তাড়াতাড়ি মহুয়া ওকে প্রশ্ন করবে সেটা ভাবতে পারেনি। নয়না একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। তারপরে মৃদু মাথা দুলিয়ে বলে, "হ্যাঁ, কিন্তু মানে আপনি....."

মহুয়া মৃদু হেসে বলে, "আগে একটা আইসক্রিম খাই তারপরে শুনবো আপনার কথা।"

মহুয়ার মিষ্টি অথচ তীক্ষ্ণ কথাবার্তা দানাকে অবাক করে দেয়। এ নারী যেন মিছরির ছুরি। মহুয়া চোরা হাসি দিয়ে দানাকে চুপ করে থাকতে অনুরোধ করে। টেবিলে বসে রুহি আইসক্রিম খাওয়ার চেয়ে মাখতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। সেই দেখে ওদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলে। ওদের অদুরে একটা টেবিলে সমুদ্র আর সুমিতা বসে অপেক্ষা করে।

নয়না ওদের বলে, "আমি বিমান চন্দের সাথে আলোচনা করেছি। বিমান একবার দানার সাথে দেখা করতে চায়।"

নয়নাকে জানতে দেওয়া যাবে না যে মহুয়া ওর সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানে তাই চোরা হেসে জিজ্ঞেস করে, "বিশ্বজিতের বিষয়ে কি বলেছেন আপনি বিমানকে? সবকিছু পরিস্কার না হলে বিশ্বজিৎ ফাঁদে পা দেবে না।"

"ফাঁদ" কথাটা একটু জোর দিয়েই বলে মহুয়া।

নয়না অবাক, কে এই নারী? খেলা যেন সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। ঠোঁটে মেকি হাসি টেনে বলে, "না না, বিশ্বাস করুন মিসেস মন্ডল। এইখানে কোন ফাঁদ নেই।"

মহুয়া মৃদু হেসে নয়নার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, "বিমান চন্দ আশা করি ভালো ভাবেই জানে, বিশ্বজিৎ বাপ্পা নস্করের বিশ্বাসভাজন লোক। তাহলে এত সহজে কেন ওর সাথে দেখা করতে চাইবে? কিছু একটা আপনি বলেছেন। সেটা কি?"

ওই তীক্ষ্ণ চাহনি দেখে নয়না একটু দমে যায় কিন্তু পাল্টা হেসে জবাব দেয়, "আপনি সত্যি অনেক কিছু জানেন তাহলে।"

মহুয়া মাথা দোলায় "হ্যাঁ।"

নয়না বুঝে যায় এই মহিলার সামনে মিথ্যে বলে বেশি ক্ষণ লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই বলতে শুরু করে, "দেখুন মিসেস মন্ডল, আমি বিমানকে বলেছি যে দানা বাপ্পা নস্করের লোক হলেও আমার খুব বিশ্বাসী।" মহুয়া ঠোঁট টিপে হাসে ওই কথা শুনে। নয়না ওকে বলে, "আমি ওকে বুঝিয়ে বলেছি দানা আমাদের কথা মতন কাজ করবে। কারন জানতে চাইল ওকে বললাম মোহন খৈতানের প্রকল্পের বিষয়ে। মোহনের সাথে বিষদে আলোচনা করেছে বিমান। বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মের ফলে ওর প্রকল্প গুলো অনেকদিন থেকেই বন্ধ পড়ে আছে।" দানা সেই সম্পর্কে অবগত। নয়না আরো বলে, "বিমানের কথা মোহন ফেলবে না, তবে আগে দানার সাথে দেখা করতে চায় বিমান তারপরে মোহনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করিয়ে দেবে।"

সবকিছু শোনার পরে মহুয়া মেকি কাতর কণ্ঠে ওকে অনুরোধ করে, "মিস বোস, আপনি আমার একটা কাজ করবেন, প্লিস।"

নয়না ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, "কি?"

মহুয়া চাপা হেসে বলে, "আমি ওদের আলোচনার রেকর্ডিং চাই আর সেটা আপনার পক্ষেই সম্ভবপর।"

নয়না বিস্ফোরিত নয়নে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, মহিলা বলে কি? একেবারে জালে জড়িয়ে ফেলতে চায় নাকি? তাও মহুয়ার চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে নয়না বলে, "আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না তাই তো। ঠিক আছে দেখি কি করতে পারি আমি।"

অতি সুচতুর চাল দিয়েছে মহুয়া, এক বারের জন্য নয়নাকে সন্দেহ করতে দেয়নি যে ওরা ওর বিরুদ্ধে জাল ফাঁদছে। নয়নার সাথে হাত মিলিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, "আইসক্রিমের জন্য অনেক ধন্যবাদ, মিস বোস।" রুহিকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দানাকে বলে, "চল জিত, অনেক রাত হয়ে গেছে।"
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 31-08-2020, 06:56 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)