Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, হাত মুঠি করে নিজের চরম ক্রোধ গিলে নেয়। চোখের সামনে রুহি আর মহুয়ার ছবি ভেসে ওঠে, এটাই ভয় পেয়েছিল দানা। যেমন নয়নার ওপরে নজর রেখেছিল ঠিক তেমনি নয়না ওর ওপরে নজর রেখেছে। দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "আমার পেছনে চর লাগিয়েছো তাহলে।"

নয়না ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে বলে, "কি করব বলো, তুমি আমার অনেক কিছু জেনে ফেলেছো। নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঢাল খুঁজতে আমাকে হতই তাই না? দেখো দানা, তোমাকে এখন খুব বিশ্বাস করি। এখন পর্যন্ত তুমি বাপ্পা নস্করকে আমার গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে লাগিয়ে দাওনি। বিশ্বাস করোন আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না।"

লাল ঠোঁটে কামুকী হাসি দিয়ে, "কারন তুমি আমাকে সেই রাতে প্রচন্ড সুখের যন্ত্রণা দিয়েছিলে। উম্মম্ম এত সুখ পেয়েছিলাম যে শেষ পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।"

দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়, ধর্ষকামে নয়না আনন্দ পেয়েছে, সত্যি না মিথ্যে। তবে ওর চেহারা কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে নয়না ওর ওপরে ক্ষেপে নেই, ওকে এখন আগের মতন বিশ্বাস করে। তবুও সাবধান থাকতে হবে এই ধূর্ত চটুল নারীর থেকে। নয়না যেমন ওকে ব্যাবহার করতে চায় ঠিক তেমনি দানাও ওকে ব্যাবহার করতে চায়। দানা জানে, নয়না বাপ্পা নস্করকে খুন করতে চায়। কিন্তু বাপ্পা নস্করকে এখুনি সরাতে চায় না দানা।

বাপ্পা নস্কর ওর কোন ক্ষতি করেনি তাই নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি?"

নয়না এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলে, "আমি কি চাই সেটা তুমি ভালো ভাবে জানো। তুমি এখন পর্যন্ত কিছু একটা ভেবেই বাপ্পা নস্করের কাছে মুখ খোলোনি। তাই না? এইবারে তুমি কি চাও সেটা আমি জানতে চাই।"

দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, মোহন খৈতানের বিশাল বাজেটের অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো হাতে পেলে বাপ্পা নস্কর খুশি হয়ে যাবে। সেই সাথে বিমানের কাছে আসা যাবে। যতদূর ওর ধারনা, মৈনাককে নয়না খুন করেনি। হয়ত বিমান চন্দ নয় রমলা বিশ্বাস খুন করিয়েছে। সঙ্গীতার ভাঙ্গা হৃদয়ের প্রতিশোধ নিতে চায় দানা। কিন্তু খুব মেপে চাল চালতে হবে দানাকে। কারন বিরোধী পক্ষ সবাই ধূর্ত কুটিল মানুষ।

তাও দানা একবার জানতে চায়, "তুমি কি সঙ্গীতার প্রেমিককে খুন করেছ?"

বিস্ফোরিত চোখে নয়না আঁতকে ওঠে, "কি বলছো? না না, আমি কাউকে খুন করাইনি দানা। তুমি ওকে ;., করে ছেড়ে দিলে তারপরে আমি আর কোন খবর পাইনি। সঙ্গীতা কোথায় আছে আমি জানি না। বিশ্বাস করো দানা, আমি বুবাইয়ের নামে শপথ করে বলছি। সঙ্গীতাকে আমি একবার শুধু আঘাত করেছি আর করিনি কারন ও কারুর কাছে মুখ খোলেনি।"

দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "তুমি সঙ্গীতার ব্যাপারে আর কাকে জানিয়েছ? সত্যি বলো নয়না।"

বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নয়না বলে, "ও হ্যাঁ, একবার কথায় কথায় বিমানকে বলেছিলাম ব্যাস আর কাউকে জানাইনি। বিশ্বাস করো দানা।"

মৈনাকের খুন দুইজনে করতে পারে, এক বিমান চন্দ দ্বিতীয় রমলা বিশ্বাস। বেশ কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে দানা বলে, "আমি ব্যাবসা করতে নেমেছি নয়না। মোহন খৈতানের বড় বাজেটের বেশ কয়েকটা অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প এলাকায় পরে রয়েছে। সেই গুলো চাই আমার।"

নয়না আকাশ থেকে পরে, "কি বলছো তুমি? আরে বাবা, আমি কি করে মোহন খৈতানের ওই প্রকল্প গুলো তোমাকে দেবো? তুমি টাকা চাও আমি দিতে পারি। এক কোটি দুই কোটি পাঁচ কোটি বল আমি যোগাড় করে দেব। কিন্তু....."

দানা হেসে ফেলে, "নয়না, এক কোটি টাকা পকেটে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই। তুমি যদি বাপ্পা নস্করকে সরাতে চাও তাহলে মোহন খৈতানের ওই প্রকল্প গুলো আমার চাই।"

নয়না মাথা নাড়ায়, "সম্ভব নয় দানা, কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি মোহন খৈতানকে ঠিক তেমন ভাবে চিনি না।"

দানা মিচকি হাসে, "মিথ্যে কথা কেন বলছো। মোহন খৈতান, বিমান চন্দের বাল্যবন্ধু সেটা আশা করি ভালো ভাবে জানো।"

নয়না মাথা দোলায় "হ্যাঁ সেটা আমি জানি, কিন্তু....."

দানা নিজের পরিকল্পনা নয়নাকে জানায়, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোন। আমি এখন এই এলাকার বেশির ভাগ অর্ধ সমাপ্ত প্রোজেক্ট গুলো কিনে কাজ শুরু করেছি। তুমি বিমান চন্দকে বল, যদি মোহন খৈতান আমার নামে ওই অর্ধ সমাপ্ত প্রোজেক্ট গুলো করে দেয় তাহলে আবার কাজ শুরু করতে পারা যাবে। আমি আর মোহন খৈতান একসাথে মিলে কাজ করবো। এতদিনে মোহন খৈতানের অনেক টাকা লোকসান হয়ে গেছে, এরপরের নির্বাচনে যদি বাপ্পা নস্কর আবার চলে আসে তাহলে বুঝতেই পারছো আশা করি। তুমি একবার বিমানের কানে এই কথা উঠাও দেখো ও কি বলে। আমি হলফ করে বলছি, পরের দিন আমার সাথে দেখা করতে চাইবে।"

নয়না অবাক হয়ে যায় দানার পরিকল্পনা শুনে। ওর আসল উদ্দেশ্য ঠিক ধরতে পারে না তবে এই টুকু বুঝে যায় দানা গভীর জলের মাছ। এর গায়ে হাত দেওয়া যে সে কাজ নয়।

নয়না মিচকি হেসে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার মেয়ে ভারী মিষ্টি, কি নাম?"

দানা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, "রুহি।"

নয়না ওর সাথে হাত মিলিয়ে বলে, "এখুনি কথা দিতে পারছি না তবে আমাকে কয়েকদিন সময় দাও। আমি বিমান চন্দের সাথে আলোচনা করে তোমাকে জানাচ্ছি।"

গাড়িতে উঠেই দানা কপালে করাঘাত করে। দানা যেমন নয়নার ওপরে নজর রেখেছিল ঠিক তেমনি নয়না খুঁজে খুঁজে ওর দুর্বলতা জেনে ফেলেছে। রুহি আর মহুয়াকে আঘাত করলে দানা পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু মহুয়াকে কি করে বুঝানো যায় এই কথা? দানার লাল চোখ দেখে আক্রাম আর নাসির কিছু জিজ্ঞেস করতে ভয় পায়। তীর বেগে গাড়ি চালিয়ে সোজা বাড়িতে পৌঁছায় দানা। ঘরে ঢুকে আগে রুহিকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ থম মেরে বসে থাকে। মহুয়া যত জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে দানা নিরুত্তর। ওর ছলছল রক্তমাখা চোখের চাহনি দেখে মহুয়ার বুঝতে দেরি হয় না যে নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গেছে।

দানা ওকে বলে, "প্লিস পাপড়ি আমার কথা শোন, তুমি মেয়েকে নিয়ে আজমের চলে যাও।"

দানার পাশ থেকে চলে যেতে হবে শুনেই মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে। জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, "না না, আমি কোথাও যাবো না।" ওর কোল থেকে রুহিকে নিয়ে আঁকড়ে ধরে বলে, "তুমি ছাড়া আমাদের দেখার কেউ নেই। তুমি না থাকলে আমরা বেঁচে কি করব, জিত।"
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 31-08-2020, 10:25 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)