30-08-2020, 11:54 PM
প্রমাদ গোনে দানা কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। সাহস নিয়ে সমুদ্রের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, "কেন রে, নয়নার গুদে আবার চুলকানি উঠেছে নাকি?"
ওই কথা শুনে ভুরু কুঁচকে দানাকে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সত্যি হারামির বাচ্চা। সেই যে গেলি আর দেখা পর্যন্ত করলি না বাড়া।"
হেসে ফেলে দানা, বুঝতে পারে যে ওর এই প্রমোটারির বিষয়ে নয়না অবগত নয় আর সেটা লুকাতেও চায় না, তাই সমুদ্রকে বলে, "আমি বিল্ডার প্রমোটারির ব্যাবসা শুরু করেছি, বুঝলি। কাজে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি রে।"
সেই শুনে সমুদ্র অবাক হয়ে যায়, "তাই নাকি, কোথায় করছিস? তোর এলাকায়, বাপ্পা নস্কর জানে?"
দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ রে ভাই, বাপ্পা নস্কর জানে এবং ভালো ভাবেই জানে।"
সমুদ্র খানিকক্ষণ ভেবে ওকে বলে, "যাই হোক নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়। কবে তোর সময় হবে?"
দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন দেখা করতে চায় নয়না?"
সমুদ্র চোরা হেসে ঠোঁট উল্টে উত্তর দেয়, "ওই জানে কেন দেখা করতে চায়।"
দানা হেসে ফেলে, "শালা আমাকে গরু পেয়েছিস নাকি? তুই জানিস না এটা হতেই পারে না রে।"
সমুদ্র মিচকি হেসে বলে, "আরে না না সেই সব কিছু নয়, তোর মাইনে বাকি পরে আছে সেটাই হয়তো দেবে। যাই হোক একদিন বাড়িতে আসিস।"
দানার ধারনা এখন নয়না, মহুয়া আর রুহির বিষয়ে জানে না। তাও নয়নার বাড়িতে গিয়ে দেখা করা ঠিক মনে হয় না। হয়ত দানাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন করতে পারে, কিম্বা অন্যদিক থেকে আঘাত হানতে পারে। দানা সমুদ্রকে জানিয়ে দেয়, "ব্যাস্ত রে খুব তবে বাড়িতে নয় অন্য কোথাও দেখা করতে চাইলে করতে পারি।"
দানা আর দাঁড়ায় না, হলুদ ফুলের স্তবক নিয়ে সোজা নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। নিজের গাড়িতে ওঠার আগে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে। দানাকে একটা বিশাল কালো বি.এম.ডাবলুতে উঠতে দেখে, সমুদ্র বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা ওর দিকে একটা বাঁকা হাসি ছুঁড়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।
আজ কপালে দুঃখ আছে। মদনার দোকান থেকেই বের হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল, তার ওপরে আবার এইখানে সমুদ্রের সাথে দেখা হয়ে আরো দেরি হয়ে গেল। ফোন করলে ঝেড়ে কাপড় খুলে দেবে "পাপড়ি"। নেশা কেটে মাথার মধ্যে টানটান উত্তেজনা, নয়না কি কারনে দেখা করতে চায়। যদি রুহি আর মহুয়ার কিছু হয় তাহলে এই মহানগর জ্বালিয়ে দেবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই আরও একবার মহুয়াকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু অভিমানী মহুয়া ওর ফোন উঠায় না।
কলিং বেল বাজানোর আগে শ্বাস চেপে উত্তেজনা প্রশমিত করে নেয়। দেরি করলে ফিরলে যা হয়। যথারীতি কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।
দানা এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর ম্যাডাম কোথায়?"
কাজের মেয়ে, মণি ওকে বলে, "দিদিমনি আর রুহি শোয়ার ঘরে।"
মহুয়ার গম্ভির কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় দানা, "মদনের দোকান থেকে’ত দশ’টা নাগাদ বেড়িয়েছিলে তাই না। এখন বারোটা বাজে আবার কার কাছে গিয়েছিলে?"
হিমশীতল কণ্ঠে বাঘিনী প্রশ্ন করেছে, দানার বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে এইবারে বেশ আয়েশ করে কেটে কুটে, তেলে ঝালে নুন লঙ্কা দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাবে ওর বাঘিনী। দানা ফুলের স্তবক নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানায় আধা শোয়া মহুয়া, চশমার ওপর দিয়ে এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রেয়সী। রুহি অনেক আগেই ঘুমিয়ে কাদা। দানার হাতে হলুদ ফুলের স্তবক দেখে আরো রেগে যায়। ভেবে পায় না এতরাতে কোথা থেকে ওই সুন্দর ফুলের স্তবক যোগাড় করে এনেছে।
অপরাধীর মতন কাঁচুমাচু মুখ করে মহুয়ার দিকে ফুলের স্তবক এগিয়ে দিয়ে বলে, "সরি পাপড়ি, দেরি হয়ে গেল।"
বুকের ওপরে হাতজোড়া ভাঁজ করে গম্ভির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "রাস্তায় কার সাথে দেখা হয়েছিল আবার? নয়না না ময়না?"
দানা চুকচুক করে হেসে ওঠে, "আরে শোন এক কান্ড।" তারপরে ওর পাশে এসে বসে বলে, "ফুলের দোকান থেকে বেড়িয়েই সমুদ্রের সাথে দেখা হয়েছিল।"
সেই শুনে ক্রোধ ভুলে আঁতকে ওঠে মহুয়া, "হঠাৎ কি ব্যাপার? ওরা কি আমাদের অনুসরন করছে।"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, তাও মহুয়াকে প্রবোধ দিয়ে বলে, "জানিনা পাপড়ি।"
ঘুমন্ত রুহির গায়ে লেপটা আরও টেনে দিয়ে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কি কথা হল ওর সাথে?"
দানা সব কিছু খুলে বলার পরে, দুইজনের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। নয়নার সাথে কি দেখা করা উচিত না অনুচিত, এই নিয়ে কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ চলে। যদিও সমুদ্রের ব্যাবহার বলছে নয়না ওর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, তবুও সাবধানের মার নেই। মহুয়া ওকে পরামর্শ দেয় একবার দেখা করার জন্য, কি বলতে চায় নয়না। সেই সাথে এটাও বলে, যদি নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে দানা যেন মাথা গরম না করে। চুপচাপ যেন নয়নার কথা মেনে নেয়। পরে বিষদে আলোচনা করা যাবে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মহুয়ার উপদেশ দানার মনে ধরে যায়। বড় বুদ্ধিমতী, মহুয়া পাশে না থাকলে দানার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠত না।
বুদ্ধিমতী মহুয়া ওর কান টেনে বলে, "মাঝে মাঝে একটু বৌদের কথা শুনতে হয় বুঝলে।"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "শোব কোথায়?"
মহুয়া, মেয়ের অন্যপাশে দেখিয়ে দেয়। দেরি করার শাস্তি। এমনিতে মহুয়া মাঝখানে শোয়, তবে যেদিন রাগারাগি হয় সেদিন শোয়ার জায়গা বদলে যায়। সেদিন রুহিকে ঢাল করে দানাকে অন্যপাশে ঠেলে দেওয়া হয়।
পরের দিন সকালে দানা, সমুদ্রকে ফোন করে জানিয়ে দেয় দেখা করার কথা। সেই শুনে সমুদ্র বলে, নয়না ওর সাথে বিমানের দেওয়া ফাঁকা বাড়িতে দেখা করতে চায়। দানা নারাজ, একাকী কোন জায়গায় দেখা করতে চায় না দানা। সমুদ্র একটু অবাক হয়ে যায়। সুচতুর দানা বলে ওই বাড়িতে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেললে দুইজনেই সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সমুদ্রকে বলে গাড়ি নিয়ে সোজা মোহনার দিকের বড় রাস্তা যেন ধরে। রাস্তার মাঝে কোথাও একটা জায়গায় ওরা দেখা করবে। মহুয়ার চোখে চাপা উত্তেজনা, বুকে চরম উৎকণ্ঠা, কি হবে কি হবে। দুই খানা পিস্তল কোমরে গুঁজে গাড়ি নিয়ে আর নাসির আকরামের সাথে বেড়িয়ে পড়ে দানা।
বড় রাস্তায় পড়তেই বেশ কিছু দুর গিয়ে সামনে নয়নার গাড়ি দেখতে পায়। সমুদ্র ওর গাড়ি গতরাতেই দেখেছে সুতরাং চিনতে ভুল হয় না পেছনের কালো গাড়ি টাকে। ফোন করে জানতে চায় কোথায় দেখা করতে চায় দানা, উত্তরে ওকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। সবে মাত্র শহর ছাড়িয়েছে, আশেপাশে এখন জন বসতি। একদম নির্জনে দেখা করতে চায়। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পরে দুই পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে দানা ওদের গাড়ি থামাতে নির্দেশ দেয়। দুইজনে গাড়ি ওই ফাঁকা মাঠের মধ্যে নামিয়ে দেয়। দুটো গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুটো পিস্তলের স্লাইড টেনে চেম্বারে গুলি ভরে নেয়। পেছনের সিটে বসে আকরাম আর নাসির আগে গাড়ি থেকে নামে। উলটো দিকের গাড়ি থেকে, সমুদ্র, গাড়ির ড্রাইভার আর ওর দেহরক্ষী নেমে পড়ে।
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, সমুদ্র ফোন করে দানাকে, "কি রে কতক্ষণ আর গাড়িতে বসে থাকবি?"
দানা গাড়ি থেকে নেমে বাঁকা হেসে বলে, "আমি নেমে গেছি কিন্তু যে দেখা করবে সে কোথায়?"
ওইদিকে শুধু মাত্র ওর দেহরক্ষীর হাতেই একটা বন্দুক, এদিকে তিনজনের হাতেই পিস্তল কিন্তু লুক্কায়িত। চোখের ইশারায় আকরাম আর নাসিরকে তৈরি থাকতে বলে। দানা এগিয়ে যায় নয়নার গাড়ির দিকে। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে, পেছনের দরজা খুলে নয়না বেড়িয়ে আসে। হাসিহাসি চেহারা, চোখে ছলনার লুকোচুরি। জ্যাকেট খানা গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায় নয়না। দানাও একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। নয়নার ঠোঁটে মিচকি ধূর্ত হাসি যেন ওকে জিজ্ঞেস করছে, "কি দেখছ এত?" দানা উত্তরে চোখ পাকায়, "পেছনে লেগ না তাহলে খুলি উড়িয়ে দেব!" সমুদ্রের কানেকানে কিছু একটা বলে দানার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসে নয়না। দানা চোয়াল শক্ত করে সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়। তীক্ষ্ণ চোখে নয়নার পদক্ষেপ জরিপ করে বুঝতে চেষ্টা করে কি চায়।
নয়না ওর দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে বলে, "কেমন আছো?"
দানাও মৃদু হেসে ওর সাথে হাত মিলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছি। তোমার শরীর ঠিক আছে?"
নয়না হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, তুমি যা অবস্থা করে গেছিলে তাতে সাতদিন আর উঠতে পারিনি।"
মাথা চুলকিয়ে হেসে ফেলে দানা, "ওই স্যাডোম্যাচোকিজম নিজেই চেয়েছিলে তাই না।"
বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে নয়নার লাল ঠোঁটে, "তাই বলে ওইখানে একদম পিস্তল গুঁজে দেবে কে জানতো, বলো?"
দুইজনেই হেসে ফেলে। দানার বুকে টানটান উত্তেজনা, এত ভালো করে কথা বলছে নয়না এই শান্তশিষ্ট ব্যাবহার কোন ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুতেই ধরতে পারছে না দানা। আসলে নয়না ওর কাছ থেকে কি চায়। নিজের প্রতি ;.,ের প্রতিশোধ না অন্য কিছু। কিন্তু যার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে থাকবে সে কেন এত মিষ্টি করে ওর সাথে কথাবার্তা বলতে আসবে। তবে নয়না প্রচণ্ড ধূর্ত মহিলা, হাসিহাসি মুখেই খুনের পরিকল্পনা করতে পারে। দানা সজাগ হয়ে যায়।
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে মৃদু হেসে নয়না ওকে বলে, "তুমি ডুবে ডুবে অনেক জল খাও তাই না?"
পেছন ঘুরে কালো বি.এম.ডাবলু. দেখে বলে, "কি বলে ডাকা যায় বলত তোমাকে? নোনাঝিলের মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, না কালী পাড়ার দানা। এক লাফে অনেক ওপরে উঠে গেছ। লটারি পেয়েছো? তোমার সঠিক পরিচয় কি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল?"
সজাগ দানা নয়নার চাল বুঝতে চেষ্টা করে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে, "কি বলতে চাও নয়না।"
নয়না ওকে বলে, "দেখ দানা, তুমি যেমন আমার দুর্বলতা জানো, ঠিক তেমনি আমি তোমার দুর্বলতা জানি।"
উৎসুক দানার মাথা ঝনঝন করে ওঠে, "আমার বিষয়ে তুমি কি জানো?"
বুকের মধ্যে গরম রক্ত এলোপাথাড়ি ছুটে বেড়ায়। টানটান উত্তেজনায় শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।
নয়না বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমেথেমে বলে, "দেখো দানা, আমাকেও একটু গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি আমার আর বিমানের সম্বন্ধে জানো ঠিক তেমনি আমিও জানি তোমার একটা সুন্দরী স্ত্রী আর একটা নিষ্পাপ কন্যে আছে।"
ওই কথা শুনে ভুরু কুঁচকে দানাকে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "তুই শালা সত্যি হারামির বাচ্চা। সেই যে গেলি আর দেখা পর্যন্ত করলি না বাড়া।"
হেসে ফেলে দানা, বুঝতে পারে যে ওর এই প্রমোটারির বিষয়ে নয়না অবগত নয় আর সেটা লুকাতেও চায় না, তাই সমুদ্রকে বলে, "আমি বিল্ডার প্রমোটারির ব্যাবসা শুরু করেছি, বুঝলি। কাজে খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি রে।"
সেই শুনে সমুদ্র অবাক হয়ে যায়, "তাই নাকি, কোথায় করছিস? তোর এলাকায়, বাপ্পা নস্কর জানে?"
দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ রে ভাই, বাপ্পা নস্কর জানে এবং ভালো ভাবেই জানে।"
সমুদ্র খানিকক্ষণ ভেবে ওকে বলে, "যাই হোক নয়না একবার তোর সাথে দেখা করতে চায়। কবে তোর সময় হবে?"
দানা পাল্টা প্রশ্ন করে, "কেন দেখা করতে চায় নয়না?"
সমুদ্র চোরা হেসে ঠোঁট উল্টে উত্তর দেয়, "ওই জানে কেন দেখা করতে চায়।"
দানা হেসে ফেলে, "শালা আমাকে গরু পেয়েছিস নাকি? তুই জানিস না এটা হতেই পারে না রে।"
সমুদ্র মিচকি হেসে বলে, "আরে না না সেই সব কিছু নয়, তোর মাইনে বাকি পরে আছে সেটাই হয়তো দেবে। যাই হোক একদিন বাড়িতে আসিস।"
দানার ধারনা এখন নয়না, মহুয়া আর রুহির বিষয়ে জানে না। তাও নয়নার বাড়িতে গিয়ে দেখা করা ঠিক মনে হয় না। হয়ত দানাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুন করতে পারে, কিম্বা অন্যদিক থেকে আঘাত হানতে পারে। দানা সমুদ্রকে জানিয়ে দেয়, "ব্যাস্ত রে খুব তবে বাড়িতে নয় অন্য কোথাও দেখা করতে চাইলে করতে পারি।"
দানা আর দাঁড়ায় না, হলুদ ফুলের স্তবক নিয়ে সোজা নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। নিজের গাড়িতে ওঠার আগে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে। দানাকে একটা বিশাল কালো বি.এম.ডাবলুতে উঠতে দেখে, সমুদ্র বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা ওর দিকে একটা বাঁকা হাসি ছুঁড়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।
আজ কপালে দুঃখ আছে। মদনার দোকান থেকেই বের হতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল, তার ওপরে আবার এইখানে সমুদ্রের সাথে দেখা হয়ে আরো দেরি হয়ে গেল। ফোন করলে ঝেড়ে কাপড় খুলে দেবে "পাপড়ি"। নেশা কেটে মাথার মধ্যে টানটান উত্তেজনা, নয়না কি কারনে দেখা করতে চায়। যদি রুহি আর মহুয়ার কিছু হয় তাহলে এই মহানগর জ্বালিয়ে দেবে। গাড়ি চালাতে চালাতেই আরও একবার মহুয়াকে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু অভিমানী মহুয়া ওর ফোন উঠায় না।
কলিং বেল বাজানোর আগে শ্বাস চেপে উত্তেজনা প্রশমিত করে নেয়। দেরি করলে ফিরলে যা হয়। যথারীতি কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।
দানা এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর ম্যাডাম কোথায়?"
কাজের মেয়ে, মণি ওকে বলে, "দিদিমনি আর রুহি শোয়ার ঘরে।"
মহুয়ার গম্ভির কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় দানা, "মদনের দোকান থেকে’ত দশ’টা নাগাদ বেড়িয়েছিলে তাই না। এখন বারোটা বাজে আবার কার কাছে গিয়েছিলে?"
হিমশীতল কণ্ঠে বাঘিনী প্রশ্ন করেছে, দানার বুঝতে বাকি থাকে না যে ওকে এইবারে বেশ আয়েশ করে কেটে কুটে, তেলে ঝালে নুন লঙ্কা দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাবে ওর বাঘিনী। দানা ফুলের স্তবক নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানায় আধা শোয়া মহুয়া, চশমার ওপর দিয়ে এক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রেয়সী। রুহি অনেক আগেই ঘুমিয়ে কাদা। দানার হাতে হলুদ ফুলের স্তবক দেখে আরো রেগে যায়। ভেবে পায় না এতরাতে কোথা থেকে ওই সুন্দর ফুলের স্তবক যোগাড় করে এনেছে।
অপরাধীর মতন কাঁচুমাচু মুখ করে মহুয়ার দিকে ফুলের স্তবক এগিয়ে দিয়ে বলে, "সরি পাপড়ি, দেরি হয়ে গেল।"
বুকের ওপরে হাতজোড়া ভাঁজ করে গম্ভির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "রাস্তায় কার সাথে দেখা হয়েছিল আবার? নয়না না ময়না?"
দানা চুকচুক করে হেসে ওঠে, "আরে শোন এক কান্ড।" তারপরে ওর পাশে এসে বসে বলে, "ফুলের দোকান থেকে বেড়িয়েই সমুদ্রের সাথে দেখা হয়েছিল।"
সেই শুনে ক্রোধ ভুলে আঁতকে ওঠে মহুয়া, "হঠাৎ কি ব্যাপার? ওরা কি আমাদের অনুসরন করছে।"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, তাও মহুয়াকে প্রবোধ দিয়ে বলে, "জানিনা পাপড়ি।"
ঘুমন্ত রুহির গায়ে লেপটা আরও টেনে দিয়ে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কি কথা হল ওর সাথে?"
দানা সব কিছু খুলে বলার পরে, দুইজনের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়। নয়নার সাথে কি দেখা করা উচিত না অনুচিত, এই নিয়ে কিছুক্ষণ শলা পরামর্শ চলে। যদিও সমুদ্রের ব্যাবহার বলছে নয়না ওর বিরুদ্ধাচরণ করবে না, তবুও সাবধানের মার নেই। মহুয়া ওকে পরামর্শ দেয় একবার দেখা করার জন্য, কি বলতে চায় নয়না। সেই সাথে এটাও বলে, যদি নয়না ওদের বিষয়ে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে দানা যেন মাথা গরম না করে। চুপচাপ যেন নয়নার কথা মেনে নেয়। পরে বিষদে আলোচনা করা যাবে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। মহুয়ার উপদেশ দানার মনে ধরে যায়। বড় বুদ্ধিমতী, মহুয়া পাশে না থাকলে দানার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়ে উঠত না।
বুদ্ধিমতী মহুয়া ওর কান টেনে বলে, "মাঝে মাঝে একটু বৌদের কথা শুনতে হয় বুঝলে।"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "শোব কোথায়?"
মহুয়া, মেয়ের অন্যপাশে দেখিয়ে দেয়। দেরি করার শাস্তি। এমনিতে মহুয়া মাঝখানে শোয়, তবে যেদিন রাগারাগি হয় সেদিন শোয়ার জায়গা বদলে যায়। সেদিন রুহিকে ঢাল করে দানাকে অন্যপাশে ঠেলে দেওয়া হয়।
পরের দিন সকালে দানা, সমুদ্রকে ফোন করে জানিয়ে দেয় দেখা করার কথা। সেই শুনে সমুদ্র বলে, নয়না ওর সাথে বিমানের দেওয়া ফাঁকা বাড়িতে দেখা করতে চায়। দানা নারাজ, একাকী কোন জায়গায় দেখা করতে চায় না দানা। সমুদ্র একটু অবাক হয়ে যায়। সুচতুর দানা বলে ওই বাড়িতে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেললে দুইজনেই সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সমুদ্রকে বলে গাড়ি নিয়ে সোজা মোহনার দিকের বড় রাস্তা যেন ধরে। রাস্তার মাঝে কোথাও একটা জায়গায় ওরা দেখা করবে। মহুয়ার চোখে চাপা উত্তেজনা, বুকে চরম উৎকণ্ঠা, কি হবে কি হবে। দুই খানা পিস্তল কোমরে গুঁজে গাড়ি নিয়ে আর নাসির আকরামের সাথে বেড়িয়ে পড়ে দানা।
বড় রাস্তায় পড়তেই বেশ কিছু দুর গিয়ে সামনে নয়নার গাড়ি দেখতে পায়। সমুদ্র ওর গাড়ি গতরাতেই দেখেছে সুতরাং চিনতে ভুল হয় না পেছনের কালো গাড়ি টাকে। ফোন করে জানতে চায় কোথায় দেখা করতে চায় দানা, উত্তরে ওকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। সবে মাত্র শহর ছাড়িয়েছে, আশেপাশে এখন জন বসতি। একদম নির্জনে দেখা করতে চায়। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পরে দুই পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে দানা ওদের গাড়ি থামাতে নির্দেশ দেয়। দুইজনে গাড়ি ওই ফাঁকা মাঠের মধ্যে নামিয়ে দেয়। দুটো গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুটো পিস্তলের স্লাইড টেনে চেম্বারে গুলি ভরে নেয়। পেছনের সিটে বসে আকরাম আর নাসির আগে গাড়ি থেকে নামে। উলটো দিকের গাড়ি থেকে, সমুদ্র, গাড়ির ড্রাইভার আর ওর দেহরক্ষী নেমে পড়ে।
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, সমুদ্র ফোন করে দানাকে, "কি রে কতক্ষণ আর গাড়িতে বসে থাকবি?"
দানা গাড়ি থেকে নেমে বাঁকা হেসে বলে, "আমি নেমে গেছি কিন্তু যে দেখা করবে সে কোথায়?"
ওইদিকে শুধু মাত্র ওর দেহরক্ষীর হাতেই একটা বন্দুক, এদিকে তিনজনের হাতেই পিস্তল কিন্তু লুক্কায়িত। চোখের ইশারায় আকরাম আর নাসিরকে তৈরি থাকতে বলে। দানা এগিয়ে যায় নয়নার গাড়ির দিকে। ওকে এগিয়ে আসতে দেখে, পেছনের দরজা খুলে নয়না বেড়িয়ে আসে। হাসিহাসি চেহারা, চোখে ছলনার লুকোচুরি। জ্যাকেট খানা গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায় নয়না। দানাও একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। নয়নার ঠোঁটে মিচকি ধূর্ত হাসি যেন ওকে জিজ্ঞেস করছে, "কি দেখছ এত?" দানা উত্তরে চোখ পাকায়, "পেছনে লেগ না তাহলে খুলি উড়িয়ে দেব!" সমুদ্রের কানেকানে কিছু একটা বলে দানার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসে নয়না। দানা চোয়াল শক্ত করে সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়। তীক্ষ্ণ চোখে নয়নার পদক্ষেপ জরিপ করে বুঝতে চেষ্টা করে কি চায়।
নয়না ওর দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে বলে, "কেমন আছো?"
দানাও মৃদু হেসে ওর সাথে হাত মিলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছি। তোমার শরীর ঠিক আছে?"
নয়না হেসে মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, তুমি যা অবস্থা করে গেছিলে তাতে সাতদিন আর উঠতে পারিনি।"
মাথা চুলকিয়ে হেসে ফেলে দানা, "ওই স্যাডোম্যাচোকিজম নিজেই চেয়েছিলে তাই না।"
বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে নয়নার লাল ঠোঁটে, "তাই বলে ওইখানে একদম পিস্তল গুঁজে দেবে কে জানতো, বলো?"
দুইজনেই হেসে ফেলে। দানার বুকে টানটান উত্তেজনা, এত ভালো করে কথা বলছে নয়না এই শান্তশিষ্ট ব্যাবহার কোন ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুতেই ধরতে পারছে না দানা। আসলে নয়না ওর কাছ থেকে কি চায়। নিজের প্রতি ;.,ের প্রতিশোধ না অন্য কিছু। কিন্তু যার ভেতরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে থাকবে সে কেন এত মিষ্টি করে ওর সাথে কথাবার্তা বলতে আসবে। তবে নয়না প্রচণ্ড ধূর্ত মহিলা, হাসিহাসি মুখেই খুনের পরিকল্পনা করতে পারে। দানা সজাগ হয়ে যায়।
সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে মৃদু হেসে নয়না ওকে বলে, "তুমি ডুবে ডুবে অনেক জল খাও তাই না?"
পেছন ঘুরে কালো বি.এম.ডাবলু. দেখে বলে, "কি বলে ডাকা যায় বলত তোমাকে? নোনাঝিলের মিস্টার বিশ্বজিৎ মন্ডল, না কালী পাড়ার দানা। এক লাফে অনেক ওপরে উঠে গেছ। লটারি পেয়েছো? তোমার সঠিক পরিচয় কি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল?"
সজাগ দানা নয়নার চাল বুঝতে চেষ্টা করে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে, "কি বলতে চাও নয়না।"
নয়না ওকে বলে, "দেখ দানা, তুমি যেমন আমার দুর্বলতা জানো, ঠিক তেমনি আমি তোমার দুর্বলতা জানি।"
উৎসুক দানার মাথা ঝনঝন করে ওঠে, "আমার বিষয়ে তুমি কি জানো?"
বুকের মধ্যে গরম রক্ত এলোপাথাড়ি ছুটে বেড়ায়। টানটান উত্তেজনায় শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।
নয়না বুক ভরে শ্বাস নিয়ে একটু থেমেথেমে বলে, "দেখো দানা, আমাকেও একটু গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। তুমি আমার আর বিমানের সম্বন্ধে জানো ঠিক তেমনি আমিও জানি তোমার একটা সুন্দরী স্ত্রী আর একটা নিষ্পাপ কন্যে আছে।"