30-08-2020, 11:03 AM
তেরো
চৌষট্টি ছক (#০১)
ঘুম থেকে উঠতে সেদিন বেশ দেরি হয়ে যায়। অনেকদিন পরে নরম বিছানা আর প্রেমিকার ছোঁয়ায় দানার চোখ সকালে আর খুলতেই চায় না। গালের ওপরে নরম একটা চুম্বনের পরশে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখে রুহি কচি কচি দুই হাতে ওর গলা জড়িয়ে কর্কশ গালে নরম ঠোঁটের চুমু এঁকে দিয়েছে।
রুহি আদো আদো কণ্ঠে আবদার করে, "ডাডা ওতো না, কেলবে না?"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কাতুকুতু দিয়ে বলে, "হ্যাঁ মা, খেলবো। একটু চা খাই তারপরে।"
খাবার টেবিলে বসে সকালের চা জল খাবারের সময়ে মহুয়ার সাথে আগামী দিনের আলোচনা পরামর্শ করে দানা।
মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "আজকের প্ল্যান প্রোগ্রাম (পরিকল্পনা) কি?"
দানা একটু ভেবে বলে, "ভাবছি একবার মহেন্দ্র বাবুর কাছে যাবো। ওনার চেনাজানা একজন প্রমোটার আছেন তাঁর সাথে দেখা করব আর পরামর্শ নেব। তারপরে দেখি একবার বাপ্পা নস্করের কাছে যাবো। তুমি কি করছ আজকে?"
মহুয়া খেতে খেতে বলে, "কেনাকাটা করা। একটু পরেই রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো। ওই লুঙ্গি টুঙ্গি পরা ছাড়, আর দেখি এইবারে তোমার স্টাডিটা সাজাতে হবে।"
দানা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "স্টাডি নিয়ে আমি কি করব?"
মহুয়া হেসে বলে, "সুযোগ ছিল না বলে দশ বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি, কিন্তু পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিল তাই না?" দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ" মহুয়া বলে, "তাহলে, স্টাডি তোমার অফিস হবে।"
দানা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "পারলে একটা ছোট বার বানিয়ে দিও।"
মহুয়া চোখ পাকিয়ে দানার দিকে তাকায়, "বাড়িতে মদ একদম চলবে না। রুহি দেখতে পেলে কি হবে বলো তো? আজকে তুমি ওকে ভুলিয়ে বলবে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছো। একটু বড় হলে বলবে, ডাডা কোল্ড ড্রিঙ্কস খায় আমিও খাব। তখন কি হবে?"
দানা মাথা চুলকিয়ে ক্ষমা ভিক্ষে করে, "না না একদম নয়, অন্তত ওর সামনে একদম খাবো না।"
মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, "বারমুডা না পায়জামা, কি কিনবো তোমার জন্য?"
দানা ওর কানেকানে হেসে বলে, "আরে সোনা, লুঙ্গিতে বেশ হাওয়া খেলে। তোমাকে দেখলেই পেন্ডুলাম নড়তে শুরু করে, লুঙ্গি পড়লে খুলতে সুবিধা, হাওয়ায় ঠাণ্ডা হতেও সুবিধা।"
মহুয়া রেগে যায়, "সকাল সকাল উলটোপাল্টা কথাবার্তা শুরু করোনা তো। সবসময়ে শুনতে ভালো লাগে না বুঝলে। আর আমি যা বলবো তুমি তাই করবে।"
দানা মাথা নোয়ায়, "যে আজ্ঞে। আচ্ছা আমি কেষ্টকে বলে দিচ্ছি, ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসবে।"
মহুয়া ওকে মানা করে দেয়, "না না, কেষ্টকে নয়। ওর গাড়িতে চাপলে আবার ভাড়া নিতে চাইবে না।"
দানা হেসে ফেলে, "আচ্ছা বাবা, তবে মনা আর পিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে যেও।"
মহুয়া জানায়, মনা আর পিন্টুকে সাথে নিয়েই কেনাকাটা করতে যাবে। দানার জন্য অনেক কিছু কেনার আছে। একবার ব্যাঙ্কে যেতে হবে, টাকা তুলতে তারপরে মধ্যমহানগরে অথবা দক্ষিণ মহানগরে চলে যাবে।
এইবারে ওদের প্রস্তুতির শুরু, খুব সন্তর্পণে পা ফেলে এগোতে হবে, মেপে মেপে চাল খেলতে হবে। চারপাশে মাকড়শার জাল, কে কার সাথে জড়িত সেটা একটু একটু পরিস্কার হয়েছে। কাকে কার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে হবে তার জন্য সুচতুর পরিকল্পনা করতে হবে। যতটা পারা যায় এদের দুর্বল নাড়ি জানতে হবে। কুয়াশাচ্ছন্ন হয়েই একের পর এক আঘাত করতে হবে দানাকে। সবাই যে এক সুতোয় বাঁধা, শুধু মাত্র নয়নাকে পরাস্ত করলে চলবে না। মনা আর পিন্টুকে ভালো করে বুঝিয়ে বলে ওর বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য। মনা বাড়ির মধ্যে বসে থাকে আর পিন্টু নিচে, আসতে যেতে সবার ওপরে কড়া নজর। একটু কিছু সন্দেহ হলেই সেই লোকের পিছু নেয়, পারলে গায়ে পরে গল্প করে জিজ্ঞাসাবাদ সারে।
সকালেই দানা, বিল্ডার প্রমোটারি ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা আর পরামর্শ নেওয়ার জন্য মহেন্দ্র বাবুর কাছে চলে যায়। মহেন্দ্র বাবু দানার পরিকল্পনা শুনে বিস্মিতের সাথে খুশি হন। এত টাকা একসাথে নিয়ে ব্যাবসায় নামতে মানা করেন। কিন্তু দানার লক্ষ্য বাপ্পা নস্করের সুনজরে আসার আর সেই সাথে নয়নাকে ব্যাবহার করে বিমান চন্দের কাছে যাওয়ার। বিমান চন্দ মৈনাকের খুনি হতেও পারে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ চাই।
সব শুনে মহেন্দ্র বাবু ওকে বলেন, "খুব মেপে চলিস। শঙ্কর আর রমিজ সব সময়ে তোর সাথে থাকবে। বাড়ির কি খবর, মহুয়া কি বলছে?"
গত রাতেই শঙ্করের মুখে মহুয়া আর রুহির সম্বন্ধে শুনে মহেন্দ্র বাবু খুব খুশি। দানা একটু লজ্জায় পড়ে যায়। মহেন্দ্র বাবু ওর পিঠ থপথপিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত একটা কাজের কাজ করেছিস তুই। এতে লজ্জার কি আছে রে? ভালো কাজ করেছিস বুক ফুলিয়ে চল। এক নর পিশাচের হাত থেকে এক অবলা নারীকে মুক্তি দিয়েছিস। এক পিতৃ হারা কচি শিশু, পিতার স্নেহ পাবে। তোর নাম আজকে সত্যি সার্থক, বিশ্ব জয়ে বেড়িয়ে পড়।"
শঙ্কর আর রমিজ দুইজনেই দানার চেয়ে অনেক বড়, তাই ওদের সঙ্গে নিতে একটু দ্বিধা বোধ করে দানা। দানা জানিয়ে দেয়, দরকার পড়লে ডেকে নেবে, এমনিতে দুটো পিস্তল সবসময়ে কোমরে থাকে। জামা গুঁজে পরে না দানা, কেননা পিস্তল দুটো কোমরে গোঁজা।
সঙ্গীতার সাথে দেখা হয়। একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে তবে এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছে না। ওর বাবা ওকে ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যাবস্থা শুরু করে দিয়েছেন। সঙ্গীতা জানায়, ওর মাসতুতো বোন, অপরাজিতা, সে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশুনা করছে। এইখানে থাকলে ওদের সাহায্য করতে পারতো। তবে একবার অপরাজিতাকে বলে দেখবে, যদি ওর চেনাজানা কেউ এইখানে থাকে তাহলে দানার কাজে সাহায্য করতে পারবে।
সেখান থেকে দানাকে নিয়ে মহেন্দ্র বাবু তাঁর পরিচিত প্রমোটার, মহেশ সরকারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে অনেকক্ষণ এই ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলে। মহেশ বাবু দানাকে সব থেকে আগে একটা কোম্পানির নাম ঠিক করতে বলেন, তারপরে সেই কোম্পানির রেজিস্ট্রেসান, ট্যাক্স জমা, লেজার বুক ইত্যাদি তৈরি করার পরামর্শ দেন। মহেশ বাবু সবরকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় দানাকে।
তারপরে দানা, বাপ্পা নস্করের কাছে গিয়ে জানায় ও প্রমোটারি ব্যাবসায় নামতে চায়। বাপ্পা নস্কর প্রথমে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু দানা যখন ওর সামনে পঞ্চাশ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ রাখে তখন বাপ্পা নস্কর আশ্চর্য চকিত হয়ে যায়, জানতে চায় কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছে। বাপ্পা নস্কর জানতে চায়, হঠাৎ এই ব্যাবসায় কেন নামতে চায়। সুচতুর দানা, উত্তরে বলে এই এলাকায় প্রচুর অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসন রয়েছে। যাদের কাছ থেকে বাপ্পা নস্কর চাঁদা আদায় করতে পারছে না। বিরোধী দলের নেতা, বিমান চন্দের প্রিয় বন্ধু মোহন খৈতানের বেশ কিছু বড় প্রকল্প ওর দৌরাত্মের ফলে অর্ধ সমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। দানার ইচ্ছে সেই সব অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো কম দামে কিনে কাজ শুরু করতে। মোহন খৈতানের হাত থেকে কাজ নিতে পারলে বিমান চন্দ দমে যাবে, ওর হাতে আসন্ন নির্বাচনের জন্য টাকা আসবে না। দানার হাতে টাকা এলে বাপ্পা নস্করকে খুশি করে দেবে। আগাম পঞ্চাশ লাখ টাকা পেয়ে বাপ্পা নস্কর যারপরনাই আনন্দিত। দানার বুদ্ধি তারিফ করে বাপ্পা নস্কর, আসলে দানার পরিকল্পনা এর চাইতেও অনেক গভীর। নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে দানার গায়ে খুব লাগে কিন্তু নিরুপায়। তবে এই পঞ্চাশ লাখ টাকা সুদে আসলে বাপ্পা নস্করের কাছ থেকে আদায় করবে একদিন। বাপ্পা নস্কর সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রনীলকে আদেশ দেয় ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসনের মালিকদের সাথে দানার সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে।
চৌষট্টি ছক (#০১)
ঘুম থেকে উঠতে সেদিন বেশ দেরি হয়ে যায়। অনেকদিন পরে নরম বিছানা আর প্রেমিকার ছোঁয়ায় দানার চোখ সকালে আর খুলতেই চায় না। গালের ওপরে নরম একটা চুম্বনের পরশে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ খুলে দেখে রুহি কচি কচি দুই হাতে ওর গলা জড়িয়ে কর্কশ গালে নরম ঠোঁটের চুমু এঁকে দিয়েছে।
রুহি আদো আদো কণ্ঠে আবদার করে, "ডাডা ওতো না, কেলবে না?"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কাতুকুতু দিয়ে বলে, "হ্যাঁ মা, খেলবো। একটু চা খাই তারপরে।"
খাবার টেবিলে বসে সকালের চা জল খাবারের সময়ে মহুয়ার সাথে আগামী দিনের আলোচনা পরামর্শ করে দানা।
মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "আজকের প্ল্যান প্রোগ্রাম (পরিকল্পনা) কি?"
দানা একটু ভেবে বলে, "ভাবছি একবার মহেন্দ্র বাবুর কাছে যাবো। ওনার চেনাজানা একজন প্রমোটার আছেন তাঁর সাথে দেখা করব আর পরামর্শ নেব। তারপরে দেখি একবার বাপ্পা নস্করের কাছে যাবো। তুমি কি করছ আজকে?"
মহুয়া খেতে খেতে বলে, "কেনাকাটা করা। একটু পরেই রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবো। ওই লুঙ্গি টুঙ্গি পরা ছাড়, আর দেখি এইবারে তোমার স্টাডিটা সাজাতে হবে।"
দানা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, "স্টাডি নিয়ে আমি কি করব?"
মহুয়া হেসে বলে, "সুযোগ ছিল না বলে দশ বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি, কিন্তু পড়াশুনা করার ইচ্ছে ছিল তাই না?" দানা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ" মহুয়া বলে, "তাহলে, স্টাডি তোমার অফিস হবে।"
দানা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, "পারলে একটা ছোট বার বানিয়ে দিও।"
মহুয়া চোখ পাকিয়ে দানার দিকে তাকায়, "বাড়িতে মদ একদম চলবে না। রুহি দেখতে পেলে কি হবে বলো তো? আজকে তুমি ওকে ভুলিয়ে বলবে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাচ্ছো। একটু বড় হলে বলবে, ডাডা কোল্ড ড্রিঙ্কস খায় আমিও খাব। তখন কি হবে?"
দানা মাথা চুলকিয়ে ক্ষমা ভিক্ষে করে, "না না একদম নয়, অন্তত ওর সামনে একদম খাবো না।"
মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, "বারমুডা না পায়জামা, কি কিনবো তোমার জন্য?"
দানা ওর কানেকানে হেসে বলে, "আরে সোনা, লুঙ্গিতে বেশ হাওয়া খেলে। তোমাকে দেখলেই পেন্ডুলাম নড়তে শুরু করে, লুঙ্গি পড়লে খুলতে সুবিধা, হাওয়ায় ঠাণ্ডা হতেও সুবিধা।"
মহুয়া রেগে যায়, "সকাল সকাল উলটোপাল্টা কথাবার্তা শুরু করোনা তো। সবসময়ে শুনতে ভালো লাগে না বুঝলে। আর আমি যা বলবো তুমি তাই করবে।"
দানা মাথা নোয়ায়, "যে আজ্ঞে। আচ্ছা আমি কেষ্টকে বলে দিচ্ছি, ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসবে।"
মহুয়া ওকে মানা করে দেয়, "না না, কেষ্টকে নয়। ওর গাড়িতে চাপলে আবার ভাড়া নিতে চাইবে না।"
দানা হেসে ফেলে, "আচ্ছা বাবা, তবে মনা আর পিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে যেও।"
মহুয়া জানায়, মনা আর পিন্টুকে সাথে নিয়েই কেনাকাটা করতে যাবে। দানার জন্য অনেক কিছু কেনার আছে। একবার ব্যাঙ্কে যেতে হবে, টাকা তুলতে তারপরে মধ্যমহানগরে অথবা দক্ষিণ মহানগরে চলে যাবে।
এইবারে ওদের প্রস্তুতির শুরু, খুব সন্তর্পণে পা ফেলে এগোতে হবে, মেপে মেপে চাল খেলতে হবে। চারপাশে মাকড়শার জাল, কে কার সাথে জড়িত সেটা একটু একটু পরিস্কার হয়েছে। কাকে কার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে হবে তার জন্য সুচতুর পরিকল্পনা করতে হবে। যতটা পারা যায় এদের দুর্বল নাড়ি জানতে হবে। কুয়াশাচ্ছন্ন হয়েই একের পর এক আঘাত করতে হবে দানাকে। সবাই যে এক সুতোয় বাঁধা, শুধু মাত্র নয়নাকে পরাস্ত করলে চলবে না। মনা আর পিন্টুকে ভালো করে বুঝিয়ে বলে ওর বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য। মনা বাড়ির মধ্যে বসে থাকে আর পিন্টু নিচে, আসতে যেতে সবার ওপরে কড়া নজর। একটু কিছু সন্দেহ হলেই সেই লোকের পিছু নেয়, পারলে গায়ে পরে গল্প করে জিজ্ঞাসাবাদ সারে।
সকালেই দানা, বিল্ডার প্রমোটারি ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা আর পরামর্শ নেওয়ার জন্য মহেন্দ্র বাবুর কাছে চলে যায়। মহেন্দ্র বাবু দানার পরিকল্পনা শুনে বিস্মিতের সাথে খুশি হন। এত টাকা একসাথে নিয়ে ব্যাবসায় নামতে মানা করেন। কিন্তু দানার লক্ষ্য বাপ্পা নস্করের সুনজরে আসার আর সেই সাথে নয়নাকে ব্যাবহার করে বিমান চন্দের কাছে যাওয়ার। বিমান চন্দ মৈনাকের খুনি হতেও পারে, সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ চাই।
সব শুনে মহেন্দ্র বাবু ওকে বলেন, "খুব মেপে চলিস। শঙ্কর আর রমিজ সব সময়ে তোর সাথে থাকবে। বাড়ির কি খবর, মহুয়া কি বলছে?"
গত রাতেই শঙ্করের মুখে মহুয়া আর রুহির সম্বন্ধে শুনে মহেন্দ্র বাবু খুব খুশি। দানা একটু লজ্জায় পড়ে যায়। মহেন্দ্র বাবু ওর পিঠ থপথপিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত একটা কাজের কাজ করেছিস তুই। এতে লজ্জার কি আছে রে? ভালো কাজ করেছিস বুক ফুলিয়ে চল। এক নর পিশাচের হাত থেকে এক অবলা নারীকে মুক্তি দিয়েছিস। এক পিতৃ হারা কচি শিশু, পিতার স্নেহ পাবে। তোর নাম আজকে সত্যি সার্থক, বিশ্ব জয়ে বেড়িয়ে পড়।"
শঙ্কর আর রমিজ দুইজনেই দানার চেয়ে অনেক বড়, তাই ওদের সঙ্গে নিতে একটু দ্বিধা বোধ করে দানা। দানা জানিয়ে দেয়, দরকার পড়লে ডেকে নেবে, এমনিতে দুটো পিস্তল সবসময়ে কোমরে থাকে। জামা গুঁজে পরে না দানা, কেননা পিস্তল দুটো কোমরে গোঁজা।
সঙ্গীতার সাথে দেখা হয়। একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে তবে এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে হাঁটতে পারছে না। ওর বাবা ওকে ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যাবস্থা শুরু করে দিয়েছেন। সঙ্গীতা জানায়, ওর মাসতুতো বোন, অপরাজিতা, সে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশুনা করছে। এইখানে থাকলে ওদের সাহায্য করতে পারতো। তবে একবার অপরাজিতাকে বলে দেখবে, যদি ওর চেনাজানা কেউ এইখানে থাকে তাহলে দানার কাজে সাহায্য করতে পারবে।
সেখান থেকে দানাকে নিয়ে মহেন্দ্র বাবু তাঁর পরিচিত প্রমোটার, মহেশ সরকারের কাছে নিয়ে যান। সেখানে অনেকক্ষণ এই ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলে। মহেশ বাবু দানাকে সব থেকে আগে একটা কোম্পানির নাম ঠিক করতে বলেন, তারপরে সেই কোম্পানির রেজিস্ট্রেসান, ট্যাক্স জমা, লেজার বুক ইত্যাদি তৈরি করার পরামর্শ দেন। মহেশ বাবু সবরকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় দানাকে।
তারপরে দানা, বাপ্পা নস্করের কাছে গিয়ে জানায় ও প্রমোটারি ব্যাবসায় নামতে চায়। বাপ্পা নস্কর প্রথমে অবাক হয়ে যায়, কিন্তু দানা যখন ওর সামনে পঞ্চাশ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ রাখে তখন বাপ্পা নস্কর আশ্চর্য চকিত হয়ে যায়, জানতে চায় কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছে। বাপ্পা নস্কর জানতে চায়, হঠাৎ এই ব্যাবসায় কেন নামতে চায়। সুচতুর দানা, উত্তরে বলে এই এলাকায় প্রচুর অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসন রয়েছে। যাদের কাছ থেকে বাপ্পা নস্কর চাঁদা আদায় করতে পারছে না। বিরোধী দলের নেতা, বিমান চন্দের প্রিয় বন্ধু মোহন খৈতানের বেশ কিছু বড় প্রকল্প ওর দৌরাত্মের ফলে অর্ধ সমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। দানার ইচ্ছে সেই সব অর্ধ সমাপ্ত প্রকল্প গুলো কম দামে কিনে কাজ শুরু করতে। মোহন খৈতানের হাত থেকে কাজ নিতে পারলে বিমান চন্দ দমে যাবে, ওর হাতে আসন্ন নির্বাচনের জন্য টাকা আসবে না। দানার হাতে টাকা এলে বাপ্পা নস্করকে খুশি করে দেবে। আগাম পঞ্চাশ লাখ টাকা পেয়ে বাপ্পা নস্কর যারপরনাই আনন্দিত। দানার বুদ্ধি তারিফ করে বাপ্পা নস্কর, আসলে দানার পরিকল্পনা এর চাইতেও অনেক গভীর। নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে দানার গায়ে খুব লাগে কিন্তু নিরুপায়। তবে এই পঞ্চাশ লাখ টাকা সুদে আসলে বাপ্পা নস্করের কাছ থেকে আদায় করবে একদিন। বাপ্পা নস্কর সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রনীলকে আদেশ দেয় ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাট আবাসনের মালিকদের সাথে দানার সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে।