Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
এখন গাড়ি কেনা হয়নি, তাই একটা ট্যাক্সি নিয়ে নিল কালী পাড়া যাওয়ার জন্য। ট্যাক্সিতে রুহি কোলে দানা আর পাশে মহুয়া। সারাটা সময়ে মহুয়ার প্রশ্ন বানে দানা জর্জরিত হয়ে যায়, "তোমার গুমটি কত বড়" "তোমার বাথরুমের চেয়ে ছোট।" "এমা থাকতে কি করে?" "(ম্লান হেসে)পাপড়ি অনেকেই এইভাবেই এই মহানগরে বুকে থাকে।" "আচ্ছা জিত, তুমি তো রান্না করতে না, তাহলে খেতে কোথায়?" "আগে রুমা নামে একটা মেয়ের খাবারের দোকান ছিল। ওর দোকান থেকে রুটি তরকারি কিনে খেতাম।" মহুয়া দানার ব্যাপারে সব জানে তাই জিজ্ঞেস করে, "ওই বিষ্টুর কি হল?" "জানি না, সোনা। এমন কি ময়না ও জানে না।" "আচ্ছা ওই দুলাল বুড়ো কেমন আছে?" "ভালো আছেন। ওর কাছ থেকে আর সিগারেট কেনা হয় না তাই যেদিন যেমন পারি সেদিন কিছু কিছু টাকা দিয়ে আসি।" "সুনিতা বৌদির সাথে দেখা করাবে না?" "হ্যাঁ করাবো।" "(জিব কেটে) ইসসস, রজনীর জন্য কিছু কেনা হলো না। একটু গাড়ি থামাবে।" এইবারে দানা রেগে যায়, "ধ্যাত, কেষ্টর বাচ্চা হলে তখন কিনে দিও।" "আচ্ছা বাবা, এই যে মদনার দোকানে যাচ্ছি ওদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে গেলে বড় ভালো হয়।" দানার মাথার চুল খাড়া হয়ে যায়, "দরজা খুলে নেমে সারা বাজার কিনে কালী পাড়া চলে এসো। আসার পরে যে কাউকে জিজ্ঞেস করবে মদনার দোকান কোথায় সবাই দেখিয়ে দেবে।" "(আদুরে কণ্ঠে ক্ষমা চেয়ে বলে) এই জিত, রেগে যাচ্ছ কেন? প্রথম বার যাচ্ছি তাই বললাম এই আর কি।" "আচ্ছা ওই পাল বাগান থেকে মদের বোতল কিনে নিও তাহলে হবে।" এই বারে মহুয়ার অভিমানের পালা, "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার সামনে মদ খেয়েছো কি মেরে ফেলবো!" মদনার চায়ের দোকান না আসা পর্যন্ত ওদের এই বাকবিতন্ড, প্রশ্ন উত্তরের খেলা চলতে থাকে।

মহুয়াকে ট্যাক্সি থেকে নামতে দেখে, মদনার চক্ষু চড়ক গাছ। মনা আর পিন্টুর সেদিনের ছুটি ছিল তাই ওরা মদনার দোকানেই বসে ছিল। রুহিকে কোলে নিয়ে মহুয়ার সাথে দানা দোকানে প্রবেশ করতেই, মদনা কি করবে কি না করবে ঠিক করে উঠতে পারে না। স্বপ্নেও ভাবেনি যে এক স্বর্গের রানী ওর এই সামান্য চায়ের দোকানে কোনোদিন আসতে পারে। রিমলেস সোনার চশমা চোখে মহুয়াকে অধভুত সুন্দরী দেখায়। একে ভীষণ সুন্দরী মহিলা তায় আবার শিক্ষিতা, মদনা কি ভাবে আপ্যায়ন করবে সেটা ভেবে কূলকিনারা পায় না। শুধু মাত্র দানা জানে, মহুয়া ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে। কিন্তু ওর রূপের ব্যাক্তিত্ব, চলনে বলনে সেই ছোঁয়া একদম নেই। পাচু, চুনি, সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরে। মহুয়া যতই বুঝাতে চায় ওদের ততই মদনা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ওঠে। কোন ক্রেতা আসলে তাকে এক প্রকার সবাই দুরদুর করে তাড়িয়ে দেয়, "আজ দোকান বন্দ, চা পাওয়া যাবে না।"

মদনা দানাকে এক কোনায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, "এই পাঁঠা, ম্যাডাম আসবে আগে বলিস নি কেন?"

দানা মুচকি হেসে বলে, "আমি নিজেই জানতাম না যে তোর ম্যাডাম আসবে।"

পিন্টু সারা বস্তি ঘুরে কার একজনের বাড়ির নতুন প্লাস্টিকের চেয়ার উঠিয়ে নিয়ে চলে আসে। রুহি জুলুজুলু চোখে দানার কোলে লুকিয়ে ওদের সবার দিকে তাকিয়ে থাকে। মহুয়া চেয়ারে বসে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে। মদনা, পিন্টু, মনা, শক্তি, বলাই, আকরাম নাসির এদের সবার নাম দানার মুখে শুনে শুনে চিনে গেছে মহুয়া। মদনা সবার সাথে মহুয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়।

মদনা মহুয়াকে কি ভাবে আপ্যায়ন করবে কিছুই ভেবে পায় না। মদনা শেষ পর্যন্ত মহুয়াকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, "আপনি চা খাবেন?"

মহুয়া হেসে ফেলে, "নিশ্চয়, এতে আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে?"

দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, "এই আমাকে চা খাওয়াবি না?"

মদনা ওর পেছনে একটা লাথি মারতে উদ্যত হয়, কিন্তু মহুয়াকে দেখে থেমে গিয়ে হেসে বলে, "তুই শালা ওই টুলে গিয়ে বসে থাক।"

ইতিমধ্যে শক্তি কোথা থেকে একটা বেলুন ওয়ালা কে ধরে নিয়ে এসে ওর কাছ থেকে সব কটা বেলুন কিনে রুহির হাতে ধরিয়ে দেয়। আকরাম, নাসির পিন্টু মনা এরা সবাই দানার চেয়ে ছোট, তাই দানাকে বেশ সম্ভ্রম করে। নাসির রুহিকে কোলে নিতে চায়, কিন্তু রুহি এতগুলো মানুষ দেখে ঘাবড়ে গিয়ে দানাকে আঁকড়ে ধরে থাকে।

ফারহানকে কোথাও না দেখতে পেয়ে মহুয়া দানাকে জিজ্ঞেস করে, "এই ফারহান কোথায়?"

ঠিক সেই সময়ে ফারহান নাচতে নাচতে অন্যপাশ থেকে দোকানে ঢুকে, দুই হাত ছুঁড়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "আরে বোকাচোদা আজকে চাঁদের হাট কেন বসেছে রে?"

হঠাৎ রুহি কোলে দানাকে দেখে ফারহান থমকে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে, কি ব্যাপার।

মহুয়া পেছন থেকে ওর কাঁধে হাত দিয়ে মিষ্টি করে বলে, "কি ব্যাপার ফারহান, এত খুশি কেন?"

মহুয়ার কণ্ঠস্বর শুনে ফারহান হকচকিয়ে যায়, "আপনি এইখানে?" দানাকে সঙ্গে সঙ্গে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, "এই শালা বানচোদ ছেলে, মহুয়া ম্যাডাম এইখানে কি করছে?"

দানা মিচকি হেসে মাথা নাড়ায়, "জেদ ধরেছে আসবে তাই অগত্যা নিয়ে আসতে হলো।"

ফারহান চোখ টিপে মাথা নাড়িয়ে বলে, "বানচোত উদগান্ডু বোকাচোদা ছেলে, তোকে সেদিন কত করে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডামের সাথে কিছু ইন্টুমিন্টু চলছে কি না। তুই হারামি গান্ডু ছেলে, বেশ কেটে মেরে দিলি। ম্যাডাম জম্পেশ....." বলেই জিব কেটে বলে, "না না ম্যাডামের নামে ওইসব একদম নয়।" রুহিকে কোলে নিতে যায়, কিন্তু রুহি কিছুতেই কারুর কোলে যাবে না।

মহুয়া ফারহানকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছো ফারহান?"

ফারহান লাজুক হেসে বলে, "ভালো আছি ম্যাডাম, আপনি কেমন আছেন?"

মহুয়ার আর দানার মাঝের গভীর রসায়ন কারুর চোখ এড়ায় না। সবার চোখে এক প্রশ্ন, সবাই রুহিকে দেখিয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "তোর মেয়ে তোকে ছাড়া আর কারুর কাছে যায়না তাই না?"

সবাই জানে এই উত্তরটা পেয়ে গেলেই আসল উত্তর পাওয়া যাবে। দানা মাথা চুলকে লাজুক হেসে ওদের রসায়নের আভাস দেয়। সবাই আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়, কিন্তু সেই ভাবব্যাক্তি মহুয়ার সামনে উজাগর করে না কেউই।

বেশ কিছুক্ষণ ওদের গল্প গুজব চলে। তারপরে মহুয়া নিজেদের ব্যাবসার বিষয়ে সবাইকে জানায়। কারুর মুখে কোন সারা শব্দ নেই, এত বড় পদক্ষেপ দানা নিতে চলেছে, এই ভেবেই সবাই অবাক হয়ে যায়। কালী পাড়ার বস্তির সামান্য এক ট্যাক্সি চালক একদিন এই এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করবে সেটা যেমন কেউ ভাবেনি ঠিক তেমনি সেই ছেলেটা একদিন একটা বিশাল ব্যাবসার কথা চিন্তা করতে পারবে সেটাও ওদের কাছে আশাতীত। ওইখানে কারুর অত বড় অভিজ্ঞতা নেই যে ওকে বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। তবে সবাই সমস্বরে এই টুকু জানিয়ে দেয়, দানা যে পথে চলবে সেই পথ ওকে অনুসরন করতে রাজি। নয়নার ব্যাপার ছাড়া আর কারুর বিষয়ে বাকিরা কিছুই জানে না, সুতরাং মহুয়া সেই অন্ধকার বিষয় গুলো অন্ধকারেই রেখে দেয়। একসাথে সব বাক্স একেবারে খুলে দেওয়া উচিত নয়।

আক্রাম খবর দেয়, যে নয়না এখন বাড়ি থেকে বের হয়নি। শক্তি আর বলাই, সেদিন আর ইন্দ্রাণীর কাছে যায়নি। তবে মহুয়া ওদের অনুরোধ করে যে ইন্দ্রাণী যতদিন না এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে ততদিন যেন ওকে আগলে রাখে।

বাপ্পা নস্করের ব্যাপারে এমন কিছু বিশেষ খবর নেই। ফারহানের মনে বাপ্পা নস্করের বিরেদ্ধে যেতে একটু দ্বিধা বোধ জেগে ওঠে, কারন অনেকদিন থেকেই বাপ্পা নস্করের গাড়ি চালিয়ে ওর বিশ্বাস ভাজন হয়ে গেছে। সেই বিশ্বাসে আঘাত হানতে ফারহানের একটু দ্বিরুক্তি। দানা সেটা বুঝে ওকে বিশেষ কিছু আর বলে না। তবে এলাকার বাকি ছেলেরা বাপ্পা নস্করের ওপরে ক্ষেপে, এই এলাকার উন্নয়নের জন্য দানাকে যে এক লাখ টাকা সরকারী খাতা থেকে সাহায্য দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা এখন পর্যন্ত দেয়নি। তবে খুনের পথে যেতে চায় না দানা।

রাত অনেক হয়ে যায়। রুহির জন্য মদনা দুধ বিস্কুট কাজু চকোলেট এনে দেয়। রুহিকে খাওয়ানোর পরেই মহুয়ার কোলে ঘেঁসে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত বেড়ে ওঠে ওদের এইবারে যাওয়া উচিত। মহুয়া বারেবারে দানাকে ইশারায় তৈরি হয়ে নিতে নির্দেশ দেয়, ওর গুমটি একবারের জন্য দেখতে চায়। কিন্তু দানা, মনেপ্রানে চাইছিল না যে মহুয়া ওই বস্তির মধ্যে ঢুকুক। তাই আড়ালে মনা আর পিন্টুকে ডেকে নিজের গুমটি থেকে জামা কাপড় আর দরকারি কাগজ পত্র আনিয়ে নেয়। নিজের জিনিস বলতে যা কিছু ছিল সেটা একটা ব্যাগেই এসে যায়। মহুয়া একটু মনঃক্ষুণ্ণ কিন্তু রুহি ঘুমিয়ে পরার ফলে কিছু করার থাকে না।

বিদায়ের আগে মহুয়া ওদের সামনে হাতজোড় করে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, "আপনাদের সত্যি কি বলে ধন্যবাদ জানাবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার সময়েও আপনারা ওকে খুব সাহায্য করেছিলেন এখন করছেন।"

মদনা, শঙ্কর সমস্বরে বলে, "কিসের ধন্যবাদ ম্যাডাম? দানা আমাদের জন্য যা করেছে তার ঋণ শোধ করা দুঃসাধ্য।"
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 27-08-2020, 06:37 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)