27-08-2020, 03:00 PM
(#০২)
রিচমন্ডে পৌঁছে দু দিন আমরা একটা হোটেলে থাকলাম, শহর থেকে কিছু প্রয়োজনীর জিনিষপত্র কিনে তৃতীয় দিন সকালে একটা দুই ঘোড়ার গাড়ীতে চেপে মিস ডীন, মার্থা আর আমি হ্যাম্পটনের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম, গাড়ীর চালক একজন কালো মানুষ। ছবির মত সুন্দর গ্রামাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে এক দীর্ঘ সফরের পর আমরা হ্যাম্পটন পৌছলাম, এবং একটু পরেই চালক আমাদের পৌঁছে দিল যে বাড়ীটা আমরা ভাড়া নিয়েছি সেখানে। মিস ডীনের এজেন্ট দু’টি অল্পবয়সী কালো ছেলের সাথে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, উনি ছেলেগুলোকে আমাদের মালপত্র তুলে রাখতে বললেন, আর আমাদের বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলেন।
বাড়ীটি সাদামাটা হলেও বেশ খোলামেলা আর সুন্দর ভাবে সাজানো। এজেন্ট মহাশয় দেখলাম ভালই মেরামত করিয়েছেন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনেছেন, এমনকি রান্নার জন্য কাঠও কাটিয়ে রেখেছেন। বাড়ীটি টাউনের এক প্রান্তে, নিরিবিলি একটি জায়গায়। বড় রাস্তা থেকে প্রায় সিকি মাইল ভেতরে কাঠের তৈরী দোতলা বাড়ীটির সামনে পেছনে দু’টি বারান্দা। উপর নীচ মিলিয়ে চারটে শোওয়ার ঘর, একটি বৈঠকখানা, আর রান্নাঘর, বাড়ীর পেছন দিকে একটি বড় আস্তাবল, আস্তাবলের কাছে দুটো হিকোরি বাদামের গাছ, বাড়ীর সামনে কাঠের বেড়া দিয়ে ঘেরা বিশাল বাগান।
বাড়ীটা ঘুরে দেখা হয়ে গেলে এজেন্ট কালো ছেলে দুটোকে নিয়ে চলে গেলেন, মার্থা রান্নাঘরে খাওয়ার জোগাড় করতে লাগল, মিস ডীন আর আমি দোতলায় নিজের নিজের শোওয়ার ঘরে ট্রাঙ্ক খুলে জিনিষপত্র গোছাতে শুরু করলাম। অল্পক্ষন পরেই মার্থা চা খেতে ডাকল, চায়ের সাথে খাবার জন্যে সে এরই মধ্যে চিকেন ফ্রাই, ডিম সিদ্ধ, আর কেকের আয়োজন করেছে।
একতলায় বৈঠকখানার এক পাশে খাওয়ার জায়গা, বৈঠকখানাটি কাঠের কড়ি বরগা দেওয়া নীচূ ছাদওয়ালা একটি বিশাল ঘর। দুই পাশে দুটো বড় বড় কাঁচের জানলা, জানলার কাছে সুগন্ধী ফুলের টব। ঘরের এক পাশে একটি বিরাট মেহগনি কাঠের আলমারি, অন্য পাশে ঘর গরম করার চুল্লি, ম্যান্টলপিসের ওপর একট কালো কাঠের ফ্রেম দেওয়া গোল আয়না। আলমারি আর আয়নাটা মনে হল এই বাড়ীতে যারা আগে থাকতেন তারা ফেলে গেছেন, কারন বাকী সব আসবাব আর মেঝেতে পাতা লাল কার্পেটের সাথে ঐ দুটি মানাচ্ছিল না।
চা খাওয়া হলে মিস ডীন তার বন্ধুদের চিঠি লিখতে বসলেন। আমাদের বাড়ীর দক্ষিনে তিরিশ মাইল দূরে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন, আর কুড়ি মাইল উত্তরে আর একটি। এই দুই স্টেশন যারা চালান তাদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে, দক্ষিনের স্টেশন থেকে পলাতক দাসেরা এসে আমাদের এখানে উঠবে, আমরা তাদের খাইয়ে দাইয়ে আবার উত্তরের স্টেশনে পাঠিয়ে দেব, এই রকম ব্যবস্থা হয়েছে।
মিস ডীনের চিঠি লেখা হলে, আমরা শুতে গেলাম, সারাদিনের দীর্ঘ যাত্রার পর দুজনেই ক্লান্ত ছিলাম, ঘুম আসতে দেরী হল না।
পর দিন আমার ঘুম ভাঙল খুব সকাল সকাল। শহর থেকে দূরে এই গ্রাম্য পরিবেশে এসে আমার খুবই তরতাজা লাগছিল, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে আমি মিস ডীনের ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম উনি তখনও ঘুমোচ্ছেন। ওনাকে না জাগিয়ে আমি নীচে নেমে এলাম, ভাবলাম বাড়ীর চারপাশটা একটু ঘুরে দেখি। আমাদের বাড়ির থেকে সরু রাস্তা গিয়ে বড় রাস্তায় মিশেছে, রাস্তার দুপাশে সুন্দর ফুলের ঝাড়, অনেক ফুলেরই নাম জানিনা, কয়েকটা বড় বড় গাছও আছে, ঘন্টা খানেক এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালাম, কোনো সাদা মানুষের দেখা পেলাম না, যদিও বেশ কয়েকজন কালো মেয়ে আর পুরুষ দেখতে পেলাম। আমাকে তারা চেনে না, তাই অবাক চোখে আমাকে দেখছিল।
বাড়ী ফিরে দেখি মিস ডীন বৈঠকখানায় আমার জন্য অপেক্ষা করছেন, মার্থা ব্রেকফাস্ট নিয়ে এল, এতটা হেঁটে আমার বেশ খিদে পেয়েছিল, খুব তৃপ্তির সাথে খেলাম।
অল্পদিনের মধ্যেই আমরা নতুন জীবনে অভ্যস্ত হলাম, আমাদের কাজটা বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু ঠিক কি ধরনের বিপদ আসতে পারে সে সম্পর্কে কোনো পরিস্কার ধারনা ছিল না। মিস ডীনকে দেখে অবশ্য বোঝাই যেত না যে বিপদের আশঙ্কা আছে, উনি সব সময়ই হাসিখুশী থাকতেন, ওঁর দেখাদেখি আমিও আনন্দের সাথেই আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন চালাবার কাজে মন দিলাম। আমাদের বাড়ীতে একটা মাটির নীচে ঘর ছিল, যাকে সেলার বলে। সেখানে আমরা নানান রকম খাদ্য আর পানীয় রাখলাম, আস্তাবলে কয়েকটি বিছানাও রাখা হল, যে কোনদিন দক্ষিনের স্টেশন থেকে পলাতক দাসেরা এসে পৌছতে পারে।
আমাদের বাড়ীটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন চালাবার জন্য খুবই উপযুক্ত ছিল। আশেপাশে কোনো বাড়ী নেই, নিকটতম প্রতিবেশীর বাড়ী মাইল তিনেক দূরে, হ্যাম্পটন টাউন যেখানে থেকে রোজকার বাজার আসত সেটাও প্রায় সমান দূরত্বে। দক্ষিনে গরম একটু বেশী, কিন্তু আমার তাতে কোনো অসুবিধা হত না, সুতীর পোষাক পরে আর মাথায় একটা বড় টুপি দিয়ে আমি এদিক ওদিক ঘুরতে যেতাম। অল্পদিনের মধ্যেই বেশ কয়েকজন খামারে কাজ করা দাসের সাথে আমার আলাপ হল, আমি তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতাম, তারাও উৎসাহিত হয়ে আমার সাথে কথা বলত, আমার জন্য জংলী জানোয়ারের এর মাংস আনত, দাসেরা এই মাংস খুবই পছন্দ করত কিন্তু আমার বা মিস ডীনের ভাল লাগত না। আমি প্রায়ই দাসেরা যে এলাকায় থাকে সেখানে যেতাম, তারা খুবই খুশী হয়ে আপ্যায়ন করত। বলাই বাহুল্য, ঐ সব জায়গায় খুবই গোপনে যেতে হত, কারন দাসেদের মালিকরা অথবা আমাদের সাদা প্রতিবেশীরা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হত। যে সব কালো মানুষদের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল তারা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি, কিন্তু আমার ধারনা ওরা জানত আমরা ওখানে কি উদ্দেশ্যে থাকি।
প্রথম দুই মাস আমাদের স্টেশনের কাজ বেশ সুষ্ঠভাবেই চলল, কখনো এক সপ্তাহে দু তিনটে পলাতক দাস এসে পৌঁছত, আবার কখনো বেশ কয়েকদিন কেটে যেত, কেউই আসত না। পলাতকরা সব সময় রাতের অন্ধকারেই আসত, বাড়ীর পেছন দিকের দরজায় টোকা মারত, মিস ডীন আর আমি প্রথমেই ওদের জন্য পেট ভরে খাওয়ার বন্দোবস্ত করতাম, রাতে ওরা আস্তাবলে শুত, পরের সারাটা দিন খেয়ে দেয়ে আর বিশ্রাম করে রাতের অন্ধকারে ওরা আবার পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ত, পথের জন্য আমরা খাওয়ার বেঁধে দিতাম, ওরা সারা রাত হাঁটত আর দিনের বেলায় ঝোপে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত। কখনো এমনও হয়েছে যে দাসেরা, বিশেষ করে মেয়েরা পথ হেঁটে খুবই ক্লান্ত হয়ে আমাদের বাড়ী পৌছেছে আর আমরা ওদের এক দিনের বদলে বেশ কয়েকদিন আমাদের কাছে রেখেছি। মেয়ে পুরুষ, বুড়ো বাচ্চা সব বয়সের দাসেরাই আসত, কোলে ছোট বাচ্চা এমন মহিলাও এসেছে। অনেকের শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভাল, পরিস্কার জামা কাপড় পরা, অনেকের আবার খুবই খারাপ অবস্থা, দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে অসুস্থ, জামা কাপড়ের অবস্থাও খারাপ, কয়েকজন তো দক্ষিনের প্রান্ত রাজ্য ফ্লোরিডা থেকে এসেছিল, বেশীর ভাগের শরীরেই চাবুকের দাগ, অনেকের শরীরে গরম লোহার ছ্যাকার দাগ, কাউকে হয়তো এত মারা হয়েছে যে শরীরের ঘা এখনো শুকোয়নি, সেই অবস্থায়ই পালিয়ে এসেছে। অসুস্থদের আমরা বিশেষভাবে সেবা শুষ্রুসা করতাম, যতদিন না সুস্থ হয় ততদিন আমাদের কাছেই রাখতাম। সুস্থ বা অসুস্থ, জোয়ান বা বুড়ো, যারাই আমাদের স্টেশনে এসেছে, আমাদের সেবাযত্নে অভিভূত হয়ে কৃতজ্ঞতা জানাত, ওদের কস্টের গল্প শোনাত। বেশীর ভাগ গল্পই হৃদয়বিদারক, এইসব গল্প বলে আমি আপনাকে কষ্ট দেব না, আমি শুধু একটি মেয়ের কথা বলব।
একদিন রাতে খাওয়ার পর মিস ডীন আর আমি বৈঠকখানায় বসে গল্প করছি, মিস ডীন সেলাই করছেন, ঘরে গ্যাসের বাতি জ্বালানো হয়েছে, জানলার পর্দা টেনে দেওয়া হয়েছে, মিস ডীন বললেন, "ডলি, আজ মনে হচ্ছে, আর কেউ আসবে না"। ঠিক সেই সময় পেছনের বারান্দায় খস খস আওয়াজ। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম, একটা মেয়ে কোনোরকমে বারান্দায় উঠে আমার পায়ের কাছে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ল। চিৎকার করে মিস ডীনকে ডাকলাম, উনি আর মার্থা দৌড়ে এলেন, আমরা তিনজনে মিলে মেয়েটাকে ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সোফার ওপরে শুইয়ে দিলাম। শ্যামলা রঙের মেয়েটি দেখতে ভারী সুন্দর, মাথা ভর্তি লম্বা কোকড়ানো চুল, বয়স আঠারো-উনিশ, কিন্তু ভরাট স্বাস্থ্য, পাতলা জামার ভেতর থেকে উঁচু উঁচু বুকদুটো দেখা যাচ্ছে (বর্ণসংকর এই মেয়েরা খুব অল্প বয়সেই বেড়ে ওঠে), দেখে মনে হয় না খামারে কাজ করত, কারন ওর হাত এখনো বেশ নরম, ভাল কাপড়ের ফ্রক পরেছে, যদিও সেটা বেশ কয়েকদিন ধোওয়া কাঁচা হয়নি, ওর জুতো আর মোজায় কাদা লাগা, সারা শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পস্ট।
একটু পরেই মেয়েটার জ্ঞান ফিরল, ডাগর চোখ খুলে ও আমাদের দিকে তাকাল, চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ভয় পেয়েছে, এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন ওকে কেউ তাড়া করেছে, আমরা আশ্বাস দিলাম যে এখানে ওকে কেউ কিছু করবে না। মার্থা ওকে এক বাটি স্যুপ দিল, সাথে রুটি আর মাংস। মেয়েটা চব্বিশ ঘন্টা কিছু খায় নি, স্যুপের বাটির ওপর হামলে পড়ল, চেটে পুটে রুটি মাংস খেল। মেয়েটা এতই দুর্বল ছিল যে শোওয়ার জন্য ওকে আস্তাবলে পাঠালাম না, খাওয়া শেষ হতে ওকে দোতলার একটি খালি ঘরে নিয়ে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়তে বললাম। প্রথমে আমার সামনে কাপড় ছাড়তে লজ্জা পাচ্ছিল, কয়েক বার বলাতে ফ্রক আর পেটিকোট খুলল। লক্ষ্য করলাম ও তলায় শুধু সেমিজ পরেছে, ড্রয়ার্স পরেনি আর সেমিজের পিছন দিকে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কাছে গিয়ে ওর সেমিজটি তুলে ধরতেই দেখি পাছা ভর্তি চাবকানোর দাগ, জায়গায় জায়গায় কেটে গিয়েছে, সব ঘা এখনো শুকোয় নি।
জানতে চাইলাম কি হয়েছিল, কেন ওকে এইরকম বীভৎসভাবে মারা হয়েছে? সেই একই গল্প। ও যে খামারটায় কাজ করত সেটা এখান থেকে পচিশ মাইল দক্ষিনে। মালিক বিবাহিত, তার অল্পবয়সী কয়েকটি বাচ্চাও আছে, মেয়েটি মালিকপত্নীর দাসীর কাজ করত। মেয়েটি দেখতে ভাল, তাই সহজেই মালিকের নজরে পড়ল, একদিন মালিক ওকে বলল সন্ধ্যাবেলায় সাজ ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করতে। কুমারী মেয়েটি মালিকের এই আদেশ অমান্য করল আর তারপরে যা হবার তাই হল। পর দিন মালিক ওকে ওভরসিয়রের কাছে পাঠাল শাস্তির জন্য। খামারে দাসেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একটা আলাদা ঘর ছিল, সেখানে মেয়েটিকে একটা বেঞ্চির ওপরে উপুড় করে শোয়ানো হল। দুজন পুরুষ দাস ওর হাত আর পা চেপে ধরল, ওভারসিয়ার ওর পাছার কাপড় তুলে বেত দিয়ে মারল যতক্ষন না চামড়া ফেটে রক্ত বেরোয়। শাস্তি শেষে ওভারসিয়ার বলল এর পরে যদি ও মালিকের আদেশ অমান্য করে তাহলে বেত না, চাবুক ব্যবহার করা হবে। মেয়েটি সাহসী ছিল, কিছুতেই নিজের কুমারীত্ব মালিকের কাছে বিসর্জন দেবে না, সেই রাতেই ও খামার ছেড়ে পালাল।
দিনের বেলায় ঝোপে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে আর রাতে হেঁটে মেয়েটি আমাদের বাসায় পৌছছে, আমাদের বাড়ীর কথা ও অন্য দাসেদের কাছে শুনেছিল। ওকে সাতদিন আমাদের কাছে রাখলাম, খাইয়ে পরিয়ে সুস্থ করলাম, ইতিমধ্যে আর একটি পুরুষ দাস আমাদের স্টেশনে এসে পৌছেছে, আমরা তার সাথে মেয়েটিকে পরবর্তী স্টেশনে পাঠিয়ে দিলাম।
এইভাবেই আমাদের দিন কাটছিল, স্টেশন চালানোর কাজে মিস ডীনের উৎসাহের অন্ত নেই, সব সময় চিন্তা করেন কি ভাবে আরো বেশি দাসেদের পালাবার ব্যবস্থা করা যাবে, আমার কিন্তু আর ভাল লাগছিল না, রোজ রোজ এই অত্যাচারের কথা শুনে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। বড়ই এক ঘেয়ে জীবন, এখানে আমার কোন সমবয়সী সাথীও ছিল না যার সাথে একটু হাসি ঠাট্টা করা যায়। মিস ডীন আমাকে খুবই ভালবাসতেন, আমার সাথে ভাল ব্যবহার করতেন, কিন্তু ওর সাথে হাসিঠাট্টা করা যেত না। তাছাড়া প্রায়ই আমার ভয় হত, এই হয়তো আমরা ধরা পড়ে গেলাম, দাসেদের ওপর অত্যাচারের চেহারা দেখে আগের সেই সাহস আর ছিল না। ধরা পড়ে গেলে কি হবে, জেলে যেতে হবে, আমার চুল ছেঁটে দেবে, এই সব ভেবে আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেত। তখন পর্যন্ত অবশ্য তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি, আশে পাশে যে সব সাদা মানুষেরা ছিল তাদের সাথেও আমাদের আলাপ পরিচয় হয়েছে, তারা কেউই জানত না আমরা একটি বেআইনী কাজে জড়িয়ে আছি। গোটা দক্ষিনে আর কোন মহিলা পরিচালিত আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন ছিল না, দুজন মহিলা যে এই রকম একটি স্টেশন চালাতে পারে এ কথা তারা ভাবতেও পারে নি। সাধারন সাদা মানুষ, আমি তাদের কথা বলছি যারা দাসের মালিক ছিল না, আমাদের সাথে ভালই ব্যবহার করত। তাদের মধ্যে কিছু খারাপ লোক ছিল, আবার সাদাসিধে খেটে খাওয়া মানুষও ছিল যারা স্ত্রী সন্তান আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকত। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার, এই সাধারন মানুষরাও দাসপ্রথার গোড়া সমর্থক ছিল। ওদের কাছ থেকে আমরা প্রায়ই তাজা হরিনের মাংস, বন্য মুরগী বা সদ্য ধরা মাছ কিনতাম যা সাধারনতঃ বাজারে পাওয়া যেত না।
রিচমন্ডে পৌঁছে দু দিন আমরা একটা হোটেলে থাকলাম, শহর থেকে কিছু প্রয়োজনীর জিনিষপত্র কিনে তৃতীয় দিন সকালে একটা দুই ঘোড়ার গাড়ীতে চেপে মিস ডীন, মার্থা আর আমি হ্যাম্পটনের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম, গাড়ীর চালক একজন কালো মানুষ। ছবির মত সুন্দর গ্রামাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে এক দীর্ঘ সফরের পর আমরা হ্যাম্পটন পৌছলাম, এবং একটু পরেই চালক আমাদের পৌঁছে দিল যে বাড়ীটা আমরা ভাড়া নিয়েছি সেখানে। মিস ডীনের এজেন্ট দু’টি অল্পবয়সী কালো ছেলের সাথে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, উনি ছেলেগুলোকে আমাদের মালপত্র তুলে রাখতে বললেন, আর আমাদের বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলেন।
বাড়ীটি সাদামাটা হলেও বেশ খোলামেলা আর সুন্দর ভাবে সাজানো। এজেন্ট মহাশয় দেখলাম ভালই মেরামত করিয়েছেন, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনেছেন, এমনকি রান্নার জন্য কাঠও কাটিয়ে রেখেছেন। বাড়ীটি টাউনের এক প্রান্তে, নিরিবিলি একটি জায়গায়। বড় রাস্তা থেকে প্রায় সিকি মাইল ভেতরে কাঠের তৈরী দোতলা বাড়ীটির সামনে পেছনে দু’টি বারান্দা। উপর নীচ মিলিয়ে চারটে শোওয়ার ঘর, একটি বৈঠকখানা, আর রান্নাঘর, বাড়ীর পেছন দিকে একটি বড় আস্তাবল, আস্তাবলের কাছে দুটো হিকোরি বাদামের গাছ, বাড়ীর সামনে কাঠের বেড়া দিয়ে ঘেরা বিশাল বাগান।
বাড়ীটা ঘুরে দেখা হয়ে গেলে এজেন্ট কালো ছেলে দুটোকে নিয়ে চলে গেলেন, মার্থা রান্নাঘরে খাওয়ার জোগাড় করতে লাগল, মিস ডীন আর আমি দোতলায় নিজের নিজের শোওয়ার ঘরে ট্রাঙ্ক খুলে জিনিষপত্র গোছাতে শুরু করলাম। অল্পক্ষন পরেই মার্থা চা খেতে ডাকল, চায়ের সাথে খাবার জন্যে সে এরই মধ্যে চিকেন ফ্রাই, ডিম সিদ্ধ, আর কেকের আয়োজন করেছে।
একতলায় বৈঠকখানার এক পাশে খাওয়ার জায়গা, বৈঠকখানাটি কাঠের কড়ি বরগা দেওয়া নীচূ ছাদওয়ালা একটি বিশাল ঘর। দুই পাশে দুটো বড় বড় কাঁচের জানলা, জানলার কাছে সুগন্ধী ফুলের টব। ঘরের এক পাশে একটি বিরাট মেহগনি কাঠের আলমারি, অন্য পাশে ঘর গরম করার চুল্লি, ম্যান্টলপিসের ওপর একট কালো কাঠের ফ্রেম দেওয়া গোল আয়না। আলমারি আর আয়নাটা মনে হল এই বাড়ীতে যারা আগে থাকতেন তারা ফেলে গেছেন, কারন বাকী সব আসবাব আর মেঝেতে পাতা লাল কার্পেটের সাথে ঐ দুটি মানাচ্ছিল না।
চা খাওয়া হলে মিস ডীন তার বন্ধুদের চিঠি লিখতে বসলেন। আমাদের বাড়ীর দক্ষিনে তিরিশ মাইল দূরে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন, আর কুড়ি মাইল উত্তরে আর একটি। এই দুই স্টেশন যারা চালান তাদের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে, দক্ষিনের স্টেশন থেকে পলাতক দাসেরা এসে আমাদের এখানে উঠবে, আমরা তাদের খাইয়ে দাইয়ে আবার উত্তরের স্টেশনে পাঠিয়ে দেব, এই রকম ব্যবস্থা হয়েছে।
মিস ডীনের চিঠি লেখা হলে, আমরা শুতে গেলাম, সারাদিনের দীর্ঘ যাত্রার পর দুজনেই ক্লান্ত ছিলাম, ঘুম আসতে দেরী হল না।
পর দিন আমার ঘুম ভাঙল খুব সকাল সকাল। শহর থেকে দূরে এই গ্রাম্য পরিবেশে এসে আমার খুবই তরতাজা লাগছিল, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে আমি মিস ডীনের ঘরে উঁকি মেরে দেখলাম উনি তখনও ঘুমোচ্ছেন। ওনাকে না জাগিয়ে আমি নীচে নেমে এলাম, ভাবলাম বাড়ীর চারপাশটা একটু ঘুরে দেখি। আমাদের বাড়ির থেকে সরু রাস্তা গিয়ে বড় রাস্তায় মিশেছে, রাস্তার দুপাশে সুন্দর ফুলের ঝাড়, অনেক ফুলেরই নাম জানিনা, কয়েকটা বড় বড় গাছও আছে, ঘন্টা খানেক এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ালাম, কোনো সাদা মানুষের দেখা পেলাম না, যদিও বেশ কয়েকজন কালো মেয়ে আর পুরুষ দেখতে পেলাম। আমাকে তারা চেনে না, তাই অবাক চোখে আমাকে দেখছিল।
বাড়ী ফিরে দেখি মিস ডীন বৈঠকখানায় আমার জন্য অপেক্ষা করছেন, মার্থা ব্রেকফাস্ট নিয়ে এল, এতটা হেঁটে আমার বেশ খিদে পেয়েছিল, খুব তৃপ্তির সাথে খেলাম।
অল্পদিনের মধ্যেই আমরা নতুন জীবনে অভ্যস্ত হলাম, আমাদের কাজটা বিপজ্জনক ছিল, কিন্তু ঠিক কি ধরনের বিপদ আসতে পারে সে সম্পর্কে কোনো পরিস্কার ধারনা ছিল না। মিস ডীনকে দেখে অবশ্য বোঝাই যেত না যে বিপদের আশঙ্কা আছে, উনি সব সময়ই হাসিখুশী থাকতেন, ওঁর দেখাদেখি আমিও আনন্দের সাথেই আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন চালাবার কাজে মন দিলাম। আমাদের বাড়ীতে একটা মাটির নীচে ঘর ছিল, যাকে সেলার বলে। সেখানে আমরা নানান রকম খাদ্য আর পানীয় রাখলাম, আস্তাবলে কয়েকটি বিছানাও রাখা হল, যে কোনদিন দক্ষিনের স্টেশন থেকে পলাতক দাসেরা এসে পৌছতে পারে।
আমাদের বাড়ীটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন চালাবার জন্য খুবই উপযুক্ত ছিল। আশেপাশে কোনো বাড়ী নেই, নিকটতম প্রতিবেশীর বাড়ী মাইল তিনেক দূরে, হ্যাম্পটন টাউন যেখানে থেকে রোজকার বাজার আসত সেটাও প্রায় সমান দূরত্বে। দক্ষিনে গরম একটু বেশী, কিন্তু আমার তাতে কোনো অসুবিধা হত না, সুতীর পোষাক পরে আর মাথায় একটা বড় টুপি দিয়ে আমি এদিক ওদিক ঘুরতে যেতাম। অল্পদিনের মধ্যেই বেশ কয়েকজন খামারে কাজ করা দাসের সাথে আমার আলাপ হল, আমি তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতাম, তারাও উৎসাহিত হয়ে আমার সাথে কথা বলত, আমার জন্য জংলী জানোয়ারের এর মাংস আনত, দাসেরা এই মাংস খুবই পছন্দ করত কিন্তু আমার বা মিস ডীনের ভাল লাগত না। আমি প্রায়ই দাসেরা যে এলাকায় থাকে সেখানে যেতাম, তারা খুবই খুশী হয়ে আপ্যায়ন করত। বলাই বাহুল্য, ঐ সব জায়গায় খুবই গোপনে যেতে হত, কারন দাসেদের মালিকরা অথবা আমাদের সাদা প্রতিবেশীরা জানতে পারলে কেলেঙ্কারি হত। যে সব কালো মানুষদের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল তারা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি, কিন্তু আমার ধারনা ওরা জানত আমরা ওখানে কি উদ্দেশ্যে থাকি।
প্রথম দুই মাস আমাদের স্টেশনের কাজ বেশ সুষ্ঠভাবেই চলল, কখনো এক সপ্তাহে দু তিনটে পলাতক দাস এসে পৌঁছত, আবার কখনো বেশ কয়েকদিন কেটে যেত, কেউই আসত না। পলাতকরা সব সময় রাতের অন্ধকারেই আসত, বাড়ীর পেছন দিকের দরজায় টোকা মারত, মিস ডীন আর আমি প্রথমেই ওদের জন্য পেট ভরে খাওয়ার বন্দোবস্ত করতাম, রাতে ওরা আস্তাবলে শুত, পরের সারাটা দিন খেয়ে দেয়ে আর বিশ্রাম করে রাতের অন্ধকারে ওরা আবার পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ত, পথের জন্য আমরা খাওয়ার বেঁধে দিতাম, ওরা সারা রাত হাঁটত আর দিনের বেলায় ঝোপে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকত। কখনো এমনও হয়েছে যে দাসেরা, বিশেষ করে মেয়েরা পথ হেঁটে খুবই ক্লান্ত হয়ে আমাদের বাড়ী পৌছেছে আর আমরা ওদের এক দিনের বদলে বেশ কয়েকদিন আমাদের কাছে রেখেছি। মেয়ে পুরুষ, বুড়ো বাচ্চা সব বয়সের দাসেরাই আসত, কোলে ছোট বাচ্চা এমন মহিলাও এসেছে। অনেকের শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভাল, পরিস্কার জামা কাপড় পরা, অনেকের আবার খুবই খারাপ অবস্থা, দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে অসুস্থ, জামা কাপড়ের অবস্থাও খারাপ, কয়েকজন তো দক্ষিনের প্রান্ত রাজ্য ফ্লোরিডা থেকে এসেছিল, বেশীর ভাগের শরীরেই চাবুকের দাগ, অনেকের শরীরে গরম লোহার ছ্যাকার দাগ, কাউকে হয়তো এত মারা হয়েছে যে শরীরের ঘা এখনো শুকোয়নি, সেই অবস্থায়ই পালিয়ে এসেছে। অসুস্থদের আমরা বিশেষভাবে সেবা শুষ্রুসা করতাম, যতদিন না সুস্থ হয় ততদিন আমাদের কাছেই রাখতাম। সুস্থ বা অসুস্থ, জোয়ান বা বুড়ো, যারাই আমাদের স্টেশনে এসেছে, আমাদের সেবাযত্নে অভিভূত হয়ে কৃতজ্ঞতা জানাত, ওদের কস্টের গল্প শোনাত। বেশীর ভাগ গল্পই হৃদয়বিদারক, এইসব গল্প বলে আমি আপনাকে কষ্ট দেব না, আমি শুধু একটি মেয়ের কথা বলব।
একদিন রাতে খাওয়ার পর মিস ডীন আর আমি বৈঠকখানায় বসে গল্প করছি, মিস ডীন সেলাই করছেন, ঘরে গ্যাসের বাতি জ্বালানো হয়েছে, জানলার পর্দা টেনে দেওয়া হয়েছে, মিস ডীন বললেন, "ডলি, আজ মনে হচ্ছে, আর কেউ আসবে না"। ঠিক সেই সময় পেছনের বারান্দায় খস খস আওয়াজ। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম, একটা মেয়ে কোনোরকমে বারান্দায় উঠে আমার পায়ের কাছে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ল। চিৎকার করে মিস ডীনকে ডাকলাম, উনি আর মার্থা দৌড়ে এলেন, আমরা তিনজনে মিলে মেয়েটাকে ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সোফার ওপরে শুইয়ে দিলাম। শ্যামলা রঙের মেয়েটি দেখতে ভারী সুন্দর, মাথা ভর্তি লম্বা কোকড়ানো চুল, বয়স আঠারো-উনিশ, কিন্তু ভরাট স্বাস্থ্য, পাতলা জামার ভেতর থেকে উঁচু উঁচু বুকদুটো দেখা যাচ্ছে (বর্ণসংকর এই মেয়েরা খুব অল্প বয়সেই বেড়ে ওঠে), দেখে মনে হয় না খামারে কাজ করত, কারন ওর হাত এখনো বেশ নরম, ভাল কাপড়ের ফ্রক পরেছে, যদিও সেটা বেশ কয়েকদিন ধোওয়া কাঁচা হয়নি, ওর জুতো আর মোজায় কাদা লাগা, সারা শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পস্ট।
একটু পরেই মেয়েটার জ্ঞান ফিরল, ডাগর চোখ খুলে ও আমাদের দিকে তাকাল, চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ভয় পেয়েছে, এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন ওকে কেউ তাড়া করেছে, আমরা আশ্বাস দিলাম যে এখানে ওকে কেউ কিছু করবে না। মার্থা ওকে এক বাটি স্যুপ দিল, সাথে রুটি আর মাংস। মেয়েটা চব্বিশ ঘন্টা কিছু খায় নি, স্যুপের বাটির ওপর হামলে পড়ল, চেটে পুটে রুটি মাংস খেল। মেয়েটা এতই দুর্বল ছিল যে শোওয়ার জন্য ওকে আস্তাবলে পাঠালাম না, খাওয়া শেষ হতে ওকে দোতলার একটি খালি ঘরে নিয়ে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়তে বললাম। প্রথমে আমার সামনে কাপড় ছাড়তে লজ্জা পাচ্ছিল, কয়েক বার বলাতে ফ্রক আর পেটিকোট খুলল। লক্ষ্য করলাম ও তলায় শুধু সেমিজ পরেছে, ড্রয়ার্স পরেনি আর সেমিজের পিছন দিকে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কাছে গিয়ে ওর সেমিজটি তুলে ধরতেই দেখি পাছা ভর্তি চাবকানোর দাগ, জায়গায় জায়গায় কেটে গিয়েছে, সব ঘা এখনো শুকোয় নি।
জানতে চাইলাম কি হয়েছিল, কেন ওকে এইরকম বীভৎসভাবে মারা হয়েছে? সেই একই গল্প। ও যে খামারটায় কাজ করত সেটা এখান থেকে পচিশ মাইল দক্ষিনে। মালিক বিবাহিত, তার অল্পবয়সী কয়েকটি বাচ্চাও আছে, মেয়েটি মালিকপত্নীর দাসীর কাজ করত। মেয়েটি দেখতে ভাল, তাই সহজেই মালিকের নজরে পড়ল, একদিন মালিক ওকে বলল সন্ধ্যাবেলায় সাজ ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করতে। কুমারী মেয়েটি মালিকের এই আদেশ অমান্য করল আর তারপরে যা হবার তাই হল। পর দিন মালিক ওকে ওভরসিয়রের কাছে পাঠাল শাস্তির জন্য। খামারে দাসেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একটা আলাদা ঘর ছিল, সেখানে মেয়েটিকে একটা বেঞ্চির ওপরে উপুড় করে শোয়ানো হল। দুজন পুরুষ দাস ওর হাত আর পা চেপে ধরল, ওভারসিয়ার ওর পাছার কাপড় তুলে বেত দিয়ে মারল যতক্ষন না চামড়া ফেটে রক্ত বেরোয়। শাস্তি শেষে ওভারসিয়ার বলল এর পরে যদি ও মালিকের আদেশ অমান্য করে তাহলে বেত না, চাবুক ব্যবহার করা হবে। মেয়েটি সাহসী ছিল, কিছুতেই নিজের কুমারীত্ব মালিকের কাছে বিসর্জন দেবে না, সেই রাতেই ও খামার ছেড়ে পালাল।
দিনের বেলায় ঝোপে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে আর রাতে হেঁটে মেয়েটি আমাদের বাসায় পৌছছে, আমাদের বাড়ীর কথা ও অন্য দাসেদের কাছে শুনেছিল। ওকে সাতদিন আমাদের কাছে রাখলাম, খাইয়ে পরিয়ে সুস্থ করলাম, ইতিমধ্যে আর একটি পুরুষ দাস আমাদের স্টেশনে এসে পৌছেছে, আমরা তার সাথে মেয়েটিকে পরবর্তী স্টেশনে পাঠিয়ে দিলাম।
এইভাবেই আমাদের দিন কাটছিল, স্টেশন চালানোর কাজে মিস ডীনের উৎসাহের অন্ত নেই, সব সময় চিন্তা করেন কি ভাবে আরো বেশি দাসেদের পালাবার ব্যবস্থা করা যাবে, আমার কিন্তু আর ভাল লাগছিল না, রোজ রোজ এই অত্যাচারের কথা শুনে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। বড়ই এক ঘেয়ে জীবন, এখানে আমার কোন সমবয়সী সাথীও ছিল না যার সাথে একটু হাসি ঠাট্টা করা যায়। মিস ডীন আমাকে খুবই ভালবাসতেন, আমার সাথে ভাল ব্যবহার করতেন, কিন্তু ওর সাথে হাসিঠাট্টা করা যেত না। তাছাড়া প্রায়ই আমার ভয় হত, এই হয়তো আমরা ধরা পড়ে গেলাম, দাসেদের ওপর অত্যাচারের চেহারা দেখে আগের সেই সাহস আর ছিল না। ধরা পড়ে গেলে কি হবে, জেলে যেতে হবে, আমার চুল ছেঁটে দেবে, এই সব ভেবে আমার গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেত। তখন পর্যন্ত অবশ্য তেমন কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি, আশে পাশে যে সব সাদা মানুষেরা ছিল তাদের সাথেও আমাদের আলাপ পরিচয় হয়েছে, তারা কেউই জানত না আমরা একটি বেআইনী কাজে জড়িয়ে আছি। গোটা দক্ষিনে আর কোন মহিলা পরিচালিত আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন ছিল না, দুজন মহিলা যে এই রকম একটি স্টেশন চালাতে পারে এ কথা তারা ভাবতেও পারে নি। সাধারন সাদা মানুষ, আমি তাদের কথা বলছি যারা দাসের মালিক ছিল না, আমাদের সাথে ভালই ব্যবহার করত। তাদের মধ্যে কিছু খারাপ লোক ছিল, আবার সাদাসিধে খেটে খাওয়া মানুষও ছিল যারা স্ত্রী সন্তান আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকত। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার, এই সাধারন মানুষরাও দাসপ্রথার গোড়া সমর্থক ছিল। ওদের কাছ থেকে আমরা প্রায়ই তাজা হরিনের মাংস, বন্য মুরগী বা সদ্য ধরা মাছ কিনতাম যা সাধারনতঃ বাজারে পাওয়া যেত না।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!