27-08-2020, 11:49 AM
বারো
গোধূলি লগ্ন (#০৪)
সন্ধে নেমে আসে মহানগরের বুকে। রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে আসার পরে, ওরা বসার ঘরে বসে টিভি দেখার সময়ে দানা, মহুয়ার সাথে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করে। বিল্ডার প্রোমোটারি ব্যাবসায় নামার পরিকল্পনা ব্যাক্ত করে মহুয়ার কাছে। যদিও দানা এই ব্যাবসার বিষয়ে কিছুই জানে না, তবে মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকাকালীন প্রচুর বিল্ডার প্রোমোটারদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেছে। মহেশ সরকার, দানিস মহম্মদ এরা মহেন্দ্র বাবুর অতি পরিচিত ব্যাক্তি, এদের কাছে গেলে সাহায্য পাওয়া যাবে। নিজের পকেটের টাকা, বাপ্পা নস্করকে দিতে চায় না। প্রোমোটারি, বিল্ডার ব্যাবসায় কাঁচা টাকা প্রচুর। আসন্ন নির্বাচনের জন্য বাপ্পা নস্করের টাকার খুব দরকার, ওর কাছ থেকে টাকা পেলে বাপ্পা নস্করের দৌরাত্ম ওর ওপরে পড়বে না। ফারহান দানাকে খবর দিয়েছে, এই এলাকায় বাপ্পা নস্করের দৌরাত্মে প্রচুর নতুন বিল্ডার, নতুন কোম্পানি কাজে হাত দিয়েও থেমে গেছে। ওই জায়গার মালিকেরা কাজ করতে পারছে না, দিনের পর দিন কাজ ফেলে রাখার ফলে ওদের অনেক লোকসান হয়ে গেছে। দানা অতি সহজে ওই অর্ধ নির্মিত ফ্লাট, আবাসন, হোটেল গুলো কিনে নিতে পারবে। এক বার বাপ্পা নস্করকে পকেটে ঢুকাতে পারলে অনেকটা কাজ হাসিল হয়ে যাবে। বাপ্পা নস্করের রাজনৈতিক দল বর্তমানে এই রাজ্যের ক্ষমতায়, তাই আইনকে হাতে করা একটু সহজ হয়ে যাবে। শুধু মাত্র টাকা আয় করলেই হবে না, বাপ্পার কাঁধে বন্দুক রেখে ওর ক্ষমতাকে নিজের কাজে লাগানো যেতে পারে।
ওর লক্ষ্য শুধু মাত্র নয়না নয়। নয়নার সাহায্যে আসলে কঙ্কনা আর নাসরিনের খবর নেওয়া। তারপরে সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নেওয়া। কঙ্কনা আর নাসরিন কেন দানাকে খুন করতে চেয়েছিল সেটা জানার খুব দরকার। ওদের উচিত শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত দানা শান্তি পাবে না। রমলা বিশ্বাস, নয়নাকে সঙ্গীতার ব্যাপারে সব উজাগর করে দিয়েছিল তাই রমলা বিশ্বাস কেও শিক্ষা দিতে হবে। মৈনাক, মানে সঙ্গীতার প্রেমিককে কে মেরেছে সেটা জানা দরকার। পুলিস শুধু মাত্র এক্সিডেন্ট কেস বানিয়ে ওই ফাইল বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু দানার মন বলছে ওর পেছনে গূঢ় অভিসন্ধি আছে। নয়না জেনে গেছে, যে দানা ওর আর বিমানের ব্যাপারে সব জানে সুতরাং এইবারে নয়না, বাপ্পার চেয়ে বেশি বিমানের ওপরে ভরসা করবে। এইবারে একটু বিমান চন্দের ওপরেও নজর রাখতে হবে আর সেই জন্য ওর ড্রাইভার দেবুকে হাত করতে হবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি।
সব কিছু শোনার পরে মহুয়া ভাবনায় পড়ে যায়, একটু ভয় পেয়ে যায়। ভীষণ জটিল পরিস্থিতি। যদিও আগে থেকেই এর আভাস ছিল তবুও ভয়ে ওর বুক কেঁপে ওঠে।
চিন্তিত মহুয়া ওকে বলে, "তুমি ওই টেপ নিয়ে গিয়ে সোজা পুলিসের কাছে দিলেই হল। ওরা নয়নাকে একবার ধরতে পারলে ওর পেট থেকে অনেক কিছু বের হবে। বিমান চন্দ, বাপ্পা নস্কর দুইজনেই জেলে যাবে।"
দানা মাথা নাড়ায়, "না পাপড়ি, সব উত্তর গুলো না পাওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না। নয়না, মৈনাক কে মারেনি, ও মারলে আমি নিশ্চয় জানতে পারতাম। নয়না ধরা পরলে কঙ্কনা আর নাসরিনকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।"
বেশ কিছুক্ষণ মন দিয়ে শোনার বলে, "আচ্ছা জিত, এই বিল্ডার প্রোমোটারি ব্যাবসা খুব নোংরা ব্যাবসা। মারামারি খুনোখুনি এতে লেগেই আছে। এছাড়া অন্য কোন পথ নেই নাকি?"
দানা মাথা নাড়িয়ে বলে, "আছে পাপড়ি, তবে এই ব্যাবসায় প্রচুর কাঁচা টাকা ওড়ে। খুব সহজে আসবে আমাদের হাতে টাকা আসবে। সব থেকে বড় কথা, মোহন খৈতানের কাছা কাছি আসা যাবে।"
মহুয়া একটু রেগে গিয়ে বলে, "তোমার টাকার কমি কিসের গো? আমাদের কাছে যা আছে তাতে আমাদের কেন, রুহির নাতি পুতি খেয়ে শেষ করতে পারবে না।"
দানা ওকে কাছে টেনে বলে, "পাপড়ি, ভয় পেওনা। কাজে নামার আগে তোমাকে এইখান থেকে সরিয়ে দেব। তুমি কয়েকদিনের মধ্যে আজমের চলে যাবে।"
মহুয়া আঁতকে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে, "না না, আমি আর চোখের আড়াল করতে পারছি না।"
দানা মাথা দুলায়, "বুঝতে পারছ না পাপড়ি। আমি যেমন ওদের ওপরে নজর রেখেছি, ঠিক তেমনি নয়না নিশ্চয় আমার ওপরে নজর রেখেছে। রমলার কাছ থেকে ইন্দ্রাণীর খবর পেয়ে আমাকে এক প্রকার শাসিয়েছিল। এইবারে যদি তোমার কথা জেনে যায় তাহলে বড় সমস্যায় পড়ে যাবো।"
মহুয়া ছল ছল চোখে মাথা ঝাঁকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে, "আমি কিছু জানি না, আমি কোথাও যাবো না। আর তোমাকে হারাতে চাই না আমি। যা হবার দুইজনে এক সাথে দেখা যাবে।"
বুক ভরে ওর গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে দানা, ওই চোখে আর সেই ভয় নেই। এক দৃঢ় প্রত্যয়ের চমক দেখতে পায়। দানা শেষ পর্যন্ত ওর কথা মেনে বলে, "ঠিক আছে তাই হবে। তবে আমাদের খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে।"
মহুয়া উত্তরে বলে, "হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছো। আমরা যেমন নয়নার ওপরে, বাপ্পা নস্করের ওপরে নজর রেখেছি। ঠিক তেমনি নয়না নিশ্চয় এতক্ষণে আমাদের ওপরে নজর রাখছে। তোমাদের ওই এক জায়গায় প্রত্যেক দিন আলোচনা সভা বসানো চলবে না। কোনোদিন মদনার দোকানে কর, কোনোদিন নদীর বুকে নৌকায় চেপে, কখন কোন ফাঁকা মাঠে। জায়গা বদলাতে হবে রোজ দিন।"
কিছুক্ষণ পরে মহুয়া আব্দার করে, "আজকের আলোচনা সভায় আমাকে নিয়ে চল না, প্লিস।"
নাক কুঁচকে এমন ভাবে বললে কি আর মানা করে থাকা যায়!?
সেই শুনে দানা আকাশ থেকে পড়ে, "তুমি কোথায় যাবে? তোমার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?"
মহুয়া আদুরে কণ্ঠে বলে, "বাঃ রে তুমি কোথায় থাকতে, সেই জায়গা একবার দেখাবে না? আচ্ছা শোন না, ওদের কাউকে কিছু বলতে হবে না। আমি না কোনোদিন বস্তি দেখিনি সুতরাং একদম স্বাভাবিক বস্তির জীবন যাপন দেখতে চাই।"
দানা বড় দ্বিধায় পড়ে যায়, মহুয়ার মতন একজন সুন্দরীকে ওর বস্তিতে নিয়ে যাবে, সেটা কি ঠিক হবে। কিন্তু মহুয়া কিছুতেই মানতে নারাজ, ওর সঙ্গেই যাবে।
প্রেয়সীর কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল। মহুয়া আর রুহিকে সাথে নিয়েই বেড়িয়ে পড়লো। কালী পাড়ার পাশেই কবি ঝিল আর সেখানেই মদনার চায়ের দোকান। দানার একটুকু ইচ্ছে নেই ওই মদনার দোকানে মহুয়াকে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু কি করে, মেয়েটা যেমন জেদ ধরেছে। আবার সাথে রুহি।