26-08-2020, 07:46 PM
।। সাত ।।
নিষিদ্ধপল্লীর নিষিদ্ধ স্বাদের টানেই আসে সবাই সোনাগাছিতে। কিন্তু এ আমি কি করলাম? কামিনী যে বাবুয়ারই পত্নী। আর আমি কিনা ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম? কামিনী আমার জীবনটাকে নিয়ে খেলা করল শুধু। যেটা কোনদিনই সম্ভব নয়, মানুষ সেটা নিয়ে শুধু আশার আলো দেখে জীবনে। একটা দূঃস্বপ্নের মত এতদিন দিনগুলো কাটছিল আমার। সোনাগাছির মায়া ত্যাগ করতে পারিনি শুধু কামিনীরই জন্য, আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল আগুন নিয়ে খেলা করছি আমি। এ খেলার শেষ পরিণতি যে এরকমই ভয়ঙ্কর হয়। সর্বনাশের খেলার আজই পরিসমাপ্তি ঘটেছে জীবনে, সুদীপ বসুকে এখন নতুন করে বাঁচতে হবে আবার সোনাগাছির মোহ কাটিয়ে।
জায়গাটা আমার একদমই ভাল লাগছে না। কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এলাম। রাখী আমাকে অনেকক্ষণ ধরে নজর করছিল, আমি আর তাকাইনি ঐ দিকে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছি। রাস্তায় দু একটা লোক আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমার জামা ছিড়ে গেছে, যেন মনে হচ্ছে কারুর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছি আমি।
বেশ কিছুটা আসার পর একটা ট্যাক্সি পেলাম। প্রথমে ট্যাক্সিওয়ালা আমার ঐ দূরবস্থা দেখে আমাকে গাড়ীতে তুলতে চাইছিল না। ওকে অনেক করে বুঝিয়ে সুজিয়ে আমি গাড়ীতে উঠলাম। বললাম, "আমি বাড়ী যাব, আমাকে তাড়াতাড়ি আপনি বাড়ি নিয়ে চলুন।"
ভগবানের কি যে ইচ্ছা, কি যে মতিগতি, আমি কিছুই জানি না। জীবনটা যেন নানা রঙে মোড়া। লেগে যাওয়া কালিগুলো আমি চাইছি তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে, অথচ কে আমার জীবনে আবার নতুন করে রঙ লাগতে চলেছে আমি নিজেই জানি না।
মোবাইল ফোনটা ভাগ্যিস পকেটেই ছিল, গাড়ীতে চলতে চলতেই দেখলাম ওটা বাজতে শুরু করেছে, হাতটাকে অনেক কষ্ট করে প্যান্টের পকেটের মধ্যে ঢোকালাম। ব্যাথায় ভীষন টনটন করছে হাতটা। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে দেখলাম, সোমনাথদা ফোন করেছে আমায়।
লোকটার ফোনটা কিছুতেই ধরতে ইচ্ছে করছে না আমার। কি ভাববে? কেমন নাকানি চোবানি খেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছি আমি। এটা আমার জীবনের চরমতম লজ্জ্বার ঘটনা। এ কথা কাউকে কষ্ট হলেও বলা যায় না। অথচ লোকটা আমার শুভাকাঙ্খির মতন বার বার ফোন করে যাচ্ছে আমাকে, আমি ফোনটা কিছুতেই রিসিভ করছি না।
অনেকক্ষণ ধরে ফোনে না পেয়ে সোমনাথদা একটা ম্যাসেজ পাঠালো আমাকে, "সুদীপ প্লীজ ফোনটা ধরো। আমি খুব চিন্তায় আছি তোমার জন্য।"
ম্যাসেজটা দেখতে পেয়ে আমি নিজেই ফোন করলাম, কি বলব বুঝতে পারছি না। এমন একটা পরিস্থিতি আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।
আমি বললাম, "হ্যালো।"
সোমনাথদা ফোন ধরে বললো, "সুদীপ তুমি এখন কোথায়? কি হয়েছে তোমার?"
আমি বললাম, "আমি?....."
সোমনাথদা বললো, "হ্যা কোথায় তুমি? রাখী এইমাত্র ফোন করল আমাকে। বলল, তোমার বন্ধুকে দেখলাম, এখানে, রাস্তায় বারবার পড়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে, তুমি শিঘ্রী ফোন করো ওকে।"
মনে মনে বললাম, "রাখী? আবার সেই পুরোনো গলি? এ গলদা আমার চেনা হয়ে গেছে সোমনাথদা, এখানে সব মেয়েই একরকম।"
সোমনাথদা আবার বললো, "কি হয়েছে তোমার সুদীপ? আমার কথার জবাব দাও। কেউ মারামারি করেছে তোমার সঙ্গে?"
আমি তবু জবাব দিচ্ছি না দেখে সোমনাথদা বলল, "রাখী বলল, তোমার জামা নাকি পুরো ছিঁড়ে গেছে, তুমি বারবার লাইটপোষ্ট ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলে। কি হয়েছে সুদীপ? বলো কে মেরেছে তোমাকে? এই মূহূর্তে তুমি এখন কোথায়? সুদীপ....."
আমি তবু চুপ করে থাকি। সোমনাথদা নরম গলায় বললো, "সুদীপ?"
আমার মনটা খুব নরম, আঘাত পেলে ভেতর থেকে যেন দলা পাকিয়ে যায়, কথা বলার শক্তিটা আমি হারিয়ে ফেলি। কেউ আমাকে কষ্ট দিলে ভীষন ব্যাথা পাই। সোমনাথদাকে আমি বাবুয়ার দুর্ব্যাবহারের কথা বলতে পারছি না, শুধু একটা অস্পষ্ট আওয়াজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। অনেক কষ্ট করে বললাম, "সোমনাথদা আমার খুব ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কোনদিন আসব না সোনাগাছিতে।"
গলাটা বেশ কয়েকবার কেঁপে গেল কথা বলতে বলতে, সোমনাথদা বলল, "সুদীপ এই অবস্থায় তুমি বাড়ী ফিরো না, মাসীমা কষ্ট পাবেন, তোমাকে দেখলে, উনি সন্দেহ করবেন।"
আমি যেন অতি অবুঝ। বললাম, "কষ্ট পেলে পাক, আমি আজ মাকে সব কথা বলে দেব।"
সোমনাথদা বললো, "পাগল হয়েছ তুমি? এমন কথা কেউ বলে? আমি আসছি তোমার কাছে, সব কথা শুনে তারপর যা করার করবো।"
সোমনাথদাকে বললাম, "আমি এখন ট্যাক্সিতে, বাড়ী ফিরছি, আমার মানিব্যাগ খোয়া গেছে, বাড়ী না ফিরলে আমি ট্যাক্সিভাড়া দিতে পারব না।"
সোমনাথদা বলল, "তুমি ট্যাক্সিটা নিয়ে চলে এসো উল্টোডাঙা ব্রীজের কাছে, আমি ঐখানেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এসেছিলাম এখানে একটা কাজে, এইমাত্র রাখী আমাকে ফোন করল। তবে দোহাই তোমার, বাড়ী কিন্তু এই অবস্থায় কিছুতেই যেও না। আমি তোমার ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে দেব।"
সোমনাথদার কথা শুনে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, "গাড়ী উল্টোডাঙায় নিয়ে চলুন, ওখানে একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"
ট্যাক্সি যথারীতি পৌঁছে গেল উল্টোডাঙাতে। ব্রীজের নীচটায় সোমনাথ দা দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে পেয়ে ট্যাক্সি দাঁড় করালাম। সোমনাথদা ট্যাক্সিতে আমার পাশে উঠেই বলল, "এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার! কে করল এমন?"
আমি কথা বলার শক্তিটা হারিয়ে ফেলেছি, তবুও অনেক যন্ত্রণা নিয়ে আসতে আসতে সব ঘটনাগুলো খুলে বললাম। সোমনাথদা আমাকে বলল, "তুমি চলো আমার বাড়ীতে। আজ রাত্রে মাসীমার ওখানে ফেরার দরকার নেই।"
গাড়ীতে যেতে যেতে সোমনাথদা বলল, "এরকম লোক বেশ্যাপট্টিতে প্রচুর আছে। স্ত্রীকে বেশ্যা বানিয়ে এরা আয়েশ ফুর্তী করে। বাবুয়া সেরকমই একজন। তোমাকে ঐজন্যই ও মেরেছে ওর ধান্দা চোপাট হয়ে যাবে বলে। সারাদিন এরা কোন কাজ করে না। বসে বসে খায়, মদ গেলে আর জুয়া খেলে। স্ত্রী শরীর বেচে অনেক পয়সা এনে দিচ্ছে ওদের আর কাজ করার দরকার কি? বেশ্যাপট্টিতে এদের কে বলে ভেড়ুয়া। সোনাগাছিতে এরকম ভেড়ুয়া অনেক আছে। অনেক সময় দেখা যায় দালালগুলোও বেশ্যাকে বিয়ে করে ফুর্তী লোটাচ্ছে, বেশ্যার হয়ে দালালগিরি করতে করতে ওরা বেশ্যাকেই বিয়ে সাধী করে নেয়। তোমার সেরকমই একজনের সাথে মোকাবিলা হয়েছে।"
সোমনাথদাকে বললাম, "কিন্তু কামিনী আমার সাথে এরকম কেন করল? ওর তো বোঝা উচিৎ ছিল।"
সোমনাথদা বলল, "বাবুয়াকে হয়তো ওর পছন্দ নয়। একে সুন্দরী, তার ওপর ভাল ছেলে দেখলে অনেকেই বন্দী খাঁচা থেকে উড়ে বেরোতে চায়। কামিনী হয়তো সেই কাজটাই করতে চেয়েছিল তোমাকে হাতিয়ার করে। বাবুয়া সব জেনে ফেলাতে, প্ল্যান সব ভেস্তে গেছে।"
সোমনাথদাকে বললাম, "খুব কষ্ট পেলাম সোমনাথদা, জীবনে এরকম ভুল আর কখনও করব না।"
সোমনাথদা বলল, "ভুল তো আমিই করেছি সুদীপ। এবার সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমি করতে চাই।"
কথাটার মানে আমি বুঝিনি। একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, "কি রকম?"
সোমনাথদা বলল, "ঘরে চলো সুদীপ, আসতে আসতে সবই তুমি জানতে পারবে।"
নিষিদ্ধপল্লীর নিষিদ্ধ স্বাদের টানেই আসে সবাই সোনাগাছিতে। কিন্তু এ আমি কি করলাম? কামিনী যে বাবুয়ারই পত্নী। আর আমি কিনা ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম? কামিনী আমার জীবনটাকে নিয়ে খেলা করল শুধু। যেটা কোনদিনই সম্ভব নয়, মানুষ সেটা নিয়ে শুধু আশার আলো দেখে জীবনে। একটা দূঃস্বপ্নের মত এতদিন দিনগুলো কাটছিল আমার। সোনাগাছির মায়া ত্যাগ করতে পারিনি শুধু কামিনীরই জন্য, আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল আগুন নিয়ে খেলা করছি আমি। এ খেলার শেষ পরিণতি যে এরকমই ভয়ঙ্কর হয়। সর্বনাশের খেলার আজই পরিসমাপ্তি ঘটেছে জীবনে, সুদীপ বসুকে এখন নতুন করে বাঁচতে হবে আবার সোনাগাছির মোহ কাটিয়ে।
জায়গাটা আমার একদমই ভাল লাগছে না। কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এলাম। রাখী আমাকে অনেকক্ষণ ধরে নজর করছিল, আমি আর তাকাইনি ঐ দিকে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছি। রাস্তায় দু একটা লোক আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমার জামা ছিড়ে গেছে, যেন মনে হচ্ছে কারুর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছি আমি।
বেশ কিছুটা আসার পর একটা ট্যাক্সি পেলাম। প্রথমে ট্যাক্সিওয়ালা আমার ঐ দূরবস্থা দেখে আমাকে গাড়ীতে তুলতে চাইছিল না। ওকে অনেক করে বুঝিয়ে সুজিয়ে আমি গাড়ীতে উঠলাম। বললাম, "আমি বাড়ী যাব, আমাকে তাড়াতাড়ি আপনি বাড়ি নিয়ে চলুন।"
ভগবানের কি যে ইচ্ছা, কি যে মতিগতি, আমি কিছুই জানি না। জীবনটা যেন নানা রঙে মোড়া। লেগে যাওয়া কালিগুলো আমি চাইছি তাড়াতাড়ি ধুয়ে ফেলতে, অথচ কে আমার জীবনে আবার নতুন করে রঙ লাগতে চলেছে আমি নিজেই জানি না।
মোবাইল ফোনটা ভাগ্যিস পকেটেই ছিল, গাড়ীতে চলতে চলতেই দেখলাম ওটা বাজতে শুরু করেছে, হাতটাকে অনেক কষ্ট করে প্যান্টের পকেটের মধ্যে ঢোকালাম। ব্যাথায় ভীষন টনটন করছে হাতটা। পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে দেখলাম, সোমনাথদা ফোন করেছে আমায়।
লোকটার ফোনটা কিছুতেই ধরতে ইচ্ছে করছে না আমার। কি ভাববে? কেমন নাকানি চোবানি খেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছি আমি। এটা আমার জীবনের চরমতম লজ্জ্বার ঘটনা। এ কথা কাউকে কষ্ট হলেও বলা যায় না। অথচ লোকটা আমার শুভাকাঙ্খির মতন বার বার ফোন করে যাচ্ছে আমাকে, আমি ফোনটা কিছুতেই রিসিভ করছি না।
অনেকক্ষণ ধরে ফোনে না পেয়ে সোমনাথদা একটা ম্যাসেজ পাঠালো আমাকে, "সুদীপ প্লীজ ফোনটা ধরো। আমি খুব চিন্তায় আছি তোমার জন্য।"
ম্যাসেজটা দেখতে পেয়ে আমি নিজেই ফোন করলাম, কি বলব বুঝতে পারছি না। এমন একটা পরিস্থিতি আমার নিজেরই খারাপ লাগছে।
আমি বললাম, "হ্যালো।"
সোমনাথদা ফোন ধরে বললো, "সুদীপ তুমি এখন কোথায়? কি হয়েছে তোমার?"
আমি বললাম, "আমি?....."
সোমনাথদা বললো, "হ্যা কোথায় তুমি? রাখী এইমাত্র ফোন করল আমাকে। বলল, তোমার বন্ধুকে দেখলাম, এখানে, রাস্তায় বারবার পড়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে, তুমি শিঘ্রী ফোন করো ওকে।"
মনে মনে বললাম, "রাখী? আবার সেই পুরোনো গলি? এ গলদা আমার চেনা হয়ে গেছে সোমনাথদা, এখানে সব মেয়েই একরকম।"
সোমনাথদা আবার বললো, "কি হয়েছে তোমার সুদীপ? আমার কথার জবাব দাও। কেউ মারামারি করেছে তোমার সঙ্গে?"
আমি তবু জবাব দিচ্ছি না দেখে সোমনাথদা বলল, "রাখী বলল, তোমার জামা নাকি পুরো ছিঁড়ে গেছে, তুমি বারবার লাইটপোষ্ট ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলে। কি হয়েছে সুদীপ? বলো কে মেরেছে তোমাকে? এই মূহূর্তে তুমি এখন কোথায়? সুদীপ....."
আমি তবু চুপ করে থাকি। সোমনাথদা নরম গলায় বললো, "সুদীপ?"
আমার মনটা খুব নরম, আঘাত পেলে ভেতর থেকে যেন দলা পাকিয়ে যায়, কথা বলার শক্তিটা আমি হারিয়ে ফেলি। কেউ আমাকে কষ্ট দিলে ভীষন ব্যাথা পাই। সোমনাথদাকে আমি বাবুয়ার দুর্ব্যাবহারের কথা বলতে পারছি না, শুধু একটা অস্পষ্ট আওয়াজ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। অনেক কষ্ট করে বললাম, "সোমনাথদা আমার খুব ভুল হয়ে গেছে, আমি আর কোনদিন আসব না সোনাগাছিতে।"
গলাটা বেশ কয়েকবার কেঁপে গেল কথা বলতে বলতে, সোমনাথদা বলল, "সুদীপ এই অবস্থায় তুমি বাড়ী ফিরো না, মাসীমা কষ্ট পাবেন, তোমাকে দেখলে, উনি সন্দেহ করবেন।"
আমি যেন অতি অবুঝ। বললাম, "কষ্ট পেলে পাক, আমি আজ মাকে সব কথা বলে দেব।"
সোমনাথদা বললো, "পাগল হয়েছ তুমি? এমন কথা কেউ বলে? আমি আসছি তোমার কাছে, সব কথা শুনে তারপর যা করার করবো।"
সোমনাথদাকে বললাম, "আমি এখন ট্যাক্সিতে, বাড়ী ফিরছি, আমার মানিব্যাগ খোয়া গেছে, বাড়ী না ফিরলে আমি ট্যাক্সিভাড়া দিতে পারব না।"
সোমনাথদা বলল, "তুমি ট্যাক্সিটা নিয়ে চলে এসো উল্টোডাঙা ব্রীজের কাছে, আমি ঐখানেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এসেছিলাম এখানে একটা কাজে, এইমাত্র রাখী আমাকে ফোন করল। তবে দোহাই তোমার, বাড়ী কিন্তু এই অবস্থায় কিছুতেই যেও না। আমি তোমার ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে দেব।"
সোমনাথদার কথা শুনে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, "গাড়ী উল্টোডাঙায় নিয়ে চলুন, ওখানে একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"
ট্যাক্সি যথারীতি পৌঁছে গেল উল্টোডাঙাতে। ব্রীজের নীচটায় সোমনাথ দা দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে পেয়ে ট্যাক্সি দাঁড় করালাম। সোমনাথদা ট্যাক্সিতে আমার পাশে উঠেই বলল, "এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার! কে করল এমন?"
আমি কথা বলার শক্তিটা হারিয়ে ফেলেছি, তবুও অনেক যন্ত্রণা নিয়ে আসতে আসতে সব ঘটনাগুলো খুলে বললাম। সোমনাথদা আমাকে বলল, "তুমি চলো আমার বাড়ীতে। আজ রাত্রে মাসীমার ওখানে ফেরার দরকার নেই।"
গাড়ীতে যেতে যেতে সোমনাথদা বলল, "এরকম লোক বেশ্যাপট্টিতে প্রচুর আছে। স্ত্রীকে বেশ্যা বানিয়ে এরা আয়েশ ফুর্তী করে। বাবুয়া সেরকমই একজন। তোমাকে ঐজন্যই ও মেরেছে ওর ধান্দা চোপাট হয়ে যাবে বলে। সারাদিন এরা কোন কাজ করে না। বসে বসে খায়, মদ গেলে আর জুয়া খেলে। স্ত্রী শরীর বেচে অনেক পয়সা এনে দিচ্ছে ওদের আর কাজ করার দরকার কি? বেশ্যাপট্টিতে এদের কে বলে ভেড়ুয়া। সোনাগাছিতে এরকম ভেড়ুয়া অনেক আছে। অনেক সময় দেখা যায় দালালগুলোও বেশ্যাকে বিয়ে করে ফুর্তী লোটাচ্ছে, বেশ্যার হয়ে দালালগিরি করতে করতে ওরা বেশ্যাকেই বিয়ে সাধী করে নেয়। তোমার সেরকমই একজনের সাথে মোকাবিলা হয়েছে।"
সোমনাথদাকে বললাম, "কিন্তু কামিনী আমার সাথে এরকম কেন করল? ওর তো বোঝা উচিৎ ছিল।"
সোমনাথদা বলল, "বাবুয়াকে হয়তো ওর পছন্দ নয়। একে সুন্দরী, তার ওপর ভাল ছেলে দেখলে অনেকেই বন্দী খাঁচা থেকে উড়ে বেরোতে চায়। কামিনী হয়তো সেই কাজটাই করতে চেয়েছিল তোমাকে হাতিয়ার করে। বাবুয়া সব জেনে ফেলাতে, প্ল্যান সব ভেস্তে গেছে।"
সোমনাথদাকে বললাম, "খুব কষ্ট পেলাম সোমনাথদা, জীবনে এরকম ভুল আর কখনও করব না।"
সোমনাথদা বলল, "ভুল তো আমিই করেছি সুদীপ। এবার সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমি করতে চাই।"
কথাটার মানে আমি বুঝিনি। একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম, "কি রকম?"
সোমনাথদা বলল, "ঘরে চলো সুদীপ, আসতে আসতে সবই তুমি জানতে পারবে।"
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!