26-08-2020, 10:28 AM
।। এক ।।
পার্কস্ট্রীটের এই বার টার নাম অদ্ভুত। স্টারলেট গার্ডেন। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি তারাতলা। খুব ছোট্ট একটা বার অথচ স্টারলেট গার্ডেন হল ছাপোষা মধ্যবিত্তদের স্বর্গরাজ্য। পার্কস্ট্রীটে অন্য যেসব পানশালা আছে সেখানে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। তারাতলায় যারা আসেন, তাঁরা ইচ্ছে করলে পার্কস্ট্রীটের নামকরা রেস্তোঁরা বা ফাইভস্টার হোটেলে বসে মদ্যপান করতে পারেন, কিন্তু তারাতলায় না এলে এদের ভাত হজম হবে না। মদ এখানে একশো ভাগ খাঁটি এবং সবচেয়ে সস্তা। গরমকালে মনোরম ঠান্ডা পরিবেশ, বিত্তবান লোকেরা যারা এখানে আসেন, তারা এখানকার পরিবেশটা বেশ পছন্দ করেন। কলকাতায় যেন এমন ছোট অথচ সুন্দর পানশালা আর দুটি নেই।
তারাতলার এই বারে,পাশাপাশি বসে আমি আর সোমনাথদা ড্রিংক করছি। সবে মাত্র সন্ধে হয়েছে একটু আগে। এই সময়টা পেটে লিকার না পড়লে সোমনাথদার আবার চলে না। আমি অবশ্য একটু দেরী করে খাই। রাত্রে শোবার আগে, দুপেগ হূইস্কি। নেশা হয় না, তবু খাই। ড্রিঙ্ক করার অভ্যাসটা বছর খানেক আগেও খুব বেশি ছিল। এখন কমিয়ে দিয়েছি। বেশি খেলে পরের দিন শরীরটা ভারভার থাকে। অফিসে যাবার তাড়া থাকে। কাজে বেরোতে তখন অসুবিধা হয়। তাই রাতে টিভি চালিয়ে ঐ টুকু মদেই আমি সন্তুষ্ট।
প্রাইভেট কোম্পানীতে মার্কেটিং এর চাকরী করি। সারা দিন অনেক লোকের সাথেই মেলামেশা। নতুন নতুন লোকের সাথে আলাপও হয়। সোমনাথদার সাথে আলাপ আমার বছর খানেক আগে। সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা বলে পরিচিত সোমনাথদা ইন্সুরেন্স কোম্পানীর একজন নামকরা অফিসার। আমাদের অফিসেও ওনার নিয়মিত যাতায়াত। সেখান থেকেই আমার সাথে পরিচয়। প্রতি শনিবার নিয়ম করে অফিস ছুটীর পরে সোমনাথদার সাথে পার্কস্ট্রীট বারে আসি। এখানেই বসে মদ খাই। গল্প গুজব, হাসি ঠাট্টা মস্করা, করি। উইক এন্ডটা দারুন এনজয় হয়, সময়টা আমাদের ভালই কেটে যায়।
সোমনাথটা রেগুলার ড্রিঙ্ক করে। আমার থেকেও বেশি। সপ্তাহে একটা দিন শুধু পার্কস্ট্রীটে আসি কেবল সোমনাথদার জন্যই। দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা দারুন গড়ে উঠেছে। অন্তত একটা দিন মিট করার জন্য আমরা দুজনেই মুখিয়ে থাকি। কোন কারনে দেখা না হলে দুজনেরই তখন মন খারাপ হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি সোমনাথদার সঙ্গ আমার ভীষন ভাল লাগে।
বছর ষাটের কাছাকাছি বয়স সোমনাথদার। রিটায়ার করবে হয়তো আর দু এক বছর পরে। মাথার চুলগুলো সব কলপ করা। লম্বা জুলফি, মোটা গোঁফ, স্বাস্থ্যও ভাল। দেখে মনে হবে বার্ধক্য যেন ছুঁতে পারেনি লোকটাকে। সোমনাথ দা এই বয়সেও খুব স্মার্ট। অফিসে এক ডাকে সোমনাথদাকে সবাই চেনে। অনেক লোক ওনার কাছ থেকে ইন্সুরেন্স করিয়েছে। উনি খুব পপুলার। আমারও তাই ভাল লাগে লোকটাকে।
কৌতুক প্রিয়, রসিক মানুষ এমনিতেই খুব জনপ্রিয় হয়। আলোচনা একবার শুরু হলে ভীষন জমিয়ে দিতে পারে লোকটা। সবাই হাঁ করে ওর কথা শোনে। হেন কোন ব্যাপার নেই, যা সোমনাথদার অজানা। জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই যেন নখ দর্পনে। প্রতিটা বিষয়ের ওপর সোমনাথদার এত আগ্রহ, এবং তা যেন খুব ভাল করেই সোমনাথদার জানা আছে। আমিও অফিসে যখন দেখা পাই ওর কথা শুনি। মজা লাগে, ভাল লাগে। এই অফিসে আমাকেই একমাত্র সোমনাথদা কাছের বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছে।
পার্কস্ট্রীটে তারাতলায় সপ্তাহে একদিন মদ খেতে আসার অভ্যাসটা সোমনাথদার জন্যই হয়েছে। এত দরাজ লোক, আমাকে কিছুতেই বিল পেমেন্ট করতে দেয় না। চারপেগ, পাঁচপেগ যাই খেলাম, সবই চোকাবে ঐ সোমনাথদা।
কিছু বললে সোমনাথদা বলে, "টাকাটা তুমি জমিয়ে রাখ সুদীপ। ভবিষ্যতে তোমারই কাজে লাগবে। আমার তো এ দুনিয়ায় কেউই নেই। সোমনাথ সেন সপ্তাহে একদিন সুদীপ বসুকে মাল খাওয়ালে ভিখারী হবে না। এটাতো আমারই ডিউটি। তুমি আমাকে কোম্পানী দিচ্ছ। তাই না আমি দিচ্ছি। আই মাস্ট পে ফর দ্যাট।"
আজ ঠিক করেছি হূইস্কির বিলটা আমিই পেমেন্ট করব। সোমনাথদাকে কিছুতেই পেমেন্ট করতে দেব না। আগে ভাগেই বলে ফেললাম, "তুমি কিন্তু পার্স বার করবে না সোমনাথদা। আজ সব খরচ আমার।"
গতকালই প্রমোশন লেটারটা পেয়েছি সোমনাথদা জানে। অফিসের সবাইকে রোল খাইয়েছি। কিন্তু সোমনাথদা আমার স্পেশাল লোক। তাই তার জন্য তারাতলায় আমার মানিব্যাগ ভর্তি নোট। সারা রাত বসে মদ খেলেও মানিব্যাগ আমার খালি হবে না।
মদ খেতে খেতে সোমনাথদা আবার তুলল সেই পুরোনো কথাটা। আমাকে যেন আরেকবার স্মরণ করালো। হূইস্কির গ্লাস হাতে ধরে হাসতে হাসতে সোমনাথদাকে বললাম, "তুমি পাগল হয়েছ? ওখানে কেউ যায়?"
সোমনাথদা বলল, "তুমি এত বেরসিক কেন বলো তো সুদীপ? ওখানে গেলে কি হবে? তোমার ইজ্জ্বত খোয়া যাবে?"
আমি তবু হাসছিলাম। হাসতে হাসতেই বললাম, "তাহলেও, তাই বলে সোনাগাছি?"
আসলে কদিন ধরেই সোমনাথদা আমাকে তাতাচ্ছে। - "বিয়ে থা তো করলে না সুদীপ। একদিন চলো তোমাকে একটা দারুন জায়গায় নিয়ে যাব। দেখলে চিত্তির চনমন করবে।"
আমি সোমনাথদাকে বললাম, "তুমিও তো বিয়ে করোনি, আর আমাকে নিয়ে যাবে সেই নিষিদ্ধ পল্লীতে? ওখানে ঢুকলেই আমার গা ছমছম করবে।"
সোমনাথদা বলল, "তুমি জানো না তাই বলছ। ওখানকার সব ব্যাপার আমার নখদর্পনে। গেলে বুঝবে কেমন খাসা জায়গা। তুমি যার সঙ্গে যাচ্ছ সে তো আর যা তা লোক নয়। আমি হলাম গিয়ে মালপাড়ার মেশো। খাতির যত্ন কাকে বলে দেখবে। কয়েকটা মেয়ে আছে, একরাত কাটালে জীবন ধন্য হয়ে যাবে। এ শহরের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সব ধরনের লোকই ওখানে যায়। পয়সা দিলে অনেক উচু ধরনের পসারিনীও জুটবে। দেহসুখের জন্য একটু নিষিদ্ধ সঙ্গী পেলে ক্ষতি কি? আমি তো আনন্দ করতে যাচ্ছি।"
হাসতে হাসতে বললাম, "ওফ তোমার এ বয়সেও সখ বলিহারি। ওখানে গেলে আমি কি পাব বলো তো?"
সোমনাথদা বলল, "আনন্দ ফুর্তীর কোন বয়স নেই। মরার আগের দিন পর্যন্ত করে যেতে হবে।"
আমি বললাম, "শুনেছি ওসব জায়গায় দালাল পুলিশের প্রচুর ঝামেলা হয়। তাছাড়া ভাড়া করা মেয়ের সাথে আমি তো কোনদিন রাত কাটাইনি। আমার এসবে কোন অভিজ্ঞতাই নেই। বুক ঢিপ ঢিপ করবে।"
সোমনাথদা একটু ব্যাঙ্গ করেই বলল, "আমার সঙ্গে ছেনালি করছ? এখনও যেন কচি খোকা রয়ে গেছ? বিয়ে থা করো নি বলে তোমার মেয়েমানুষের প্রতি কোন দূর্বলতা নেই? এটাই বোঝাতে চাইছ? আরে কাম অন ইয়ার। লেটস্ এনজয় দ্য লাইফ। জীবনটাতে একটু সেক্সের মোড়ক না লাগালে সাদামাটা হয়ে যায় জীবনটা। ভালবাসার অনেক ঝামেলা। অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। তার থেকে একরাত মস্তি করো। মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তী করো। খেল খতম, পয়সাও হজম।"
আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। সোমনাথদা বলল, "আর নেকু সেজে থেকো না তো? দামড়া কার্তিক হয়ে গেছ, এখন আবার এই নিয়ে টেনশন কিসের?"
মুখটা একটু কানের কাছে নিয়ে এসে সোমনাথ আস্তে আস্তে বলল, "আস্ত মেয়েটা যখন উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াবে না তোমার সামনে, তখন আর বলে দিতে হবে না কি করতে হবে। সব অটোমেটিক হবে, অটোমেটিক।"
ঝামেলার কথা আর একবার বলাতে সোমনাথদা বলল, "ঝামেলা আবার কি? কিস্যু ঝামেলা নেই। তুমি সোমনাথ সেনের সাথে যাচ্ছ, তোমার আবার ঝামেলা কি? গেলেই সব বুঝতে পারবে।"
ঠিক হল, কাল ঠিক বিকেল চারটের সময় বেরোবো আমরা। সোমনাথদা এই স্টারলেট গার্ডেন থেকেই আমাকে তুলে নিয়ে সোজা চলে যাবে সোনাগাছি। তারপর ওখানে ভাল মেয়ে খুঁজে আমরা ফুর্তি করবো সারারাত। রবিবার ছুটীর দিনটা আমাদের সাঙ্গলীলা সারা হবে উত্তর কলকাতার সেই বিখ্যাত নিষিদ্ধ পল্লীতে।
যাবার আগে অবশ্য একটা ব্যাপারে নিশ্চিত করল সোমনাথদা। আমাকে একদম সোজা সাপ্টা ভাবেই বলল, "তোমার তলার ওটা আবার দাঁড়ায় তো সুদীপ? নইলে কিন্তু প্রেস্টিজ পানচার। আনাড়ী হলে ক্ষতি নেই। ওরা হাতে কলমে সব শিখিয়ে দেবে।"
কিন্তু ইন্দ্রিয় যদি সজাগ না হয়ে দূর্বল হয় তাহলে বেশ্যাবাড়ী যাওয়াটাই মাটি।
সোমনাথদাকে আশ্বস্ত করলাম। বললাম, "আমার নরমাল সাইজ চার ইঞ্চি। ফুলে গেলে ওটা সাত ইঞ্চি মতন হয়। তোমার প্রেস্টিজ থাকবে তো?"
সোমনাথদাও নিশ্চিত হয়ে বলল, "আলবাত থাকবে আলবাত, বৎস। তাহলে তো কথাই নেই।"
পরের দিন তিনটের পরেই হাজির হয়ে গেলাম স্টারলেট গার্ডেনে। সোমনাথদাও একটু পরে এসে উপস্থিত হল। বলল, "গাড়ী নিয়ে এসেছি। শুধু শুধু ট্যাক্সি করে যাবার দরকার নেই। এখন গাড়ীতেই মাল খেতে খেতে যাব। সারা রাত গাড়ী থাকবে ওখানে। তুমি একটাকে নেবে, আমি একটা। তারপর সারা রাত কাটিয়ে এই গাড়ী করেই ফিরব কাল সকালে।"
সোমনাথদাকে স্মরণ করালাম, "কিন্তু কালকের অফিস?"
উত্তরে সোমনাথদা বলল, "আরে ছাড়ো তো তোমার অফিস। একদিন অফিসে না গেলে কি এমন অসুবিধা হবে। একটা মেডিকাল লীভ নিয়ে নেবে আর কি?"
আমার মনে হলো, একেবারে তৈরী হয়ে এসেছে সোমনাথদা। ব্যাটা ঝানু মাল। ষাট বছরের বুড়ো কে বলবে? এখনও স্ফুর্তীর নেশা লেগে আছে শরীরে। আর আমিই কিনা গো বেচারার মতন ইতস্তত করছি। দেখাই যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।
গাড়ীতে যেতে যেতেই মাল খেতে শুরু করল সোমনাথদা। আমাকেও দিল। বলল, "চীয়ার্স"
একসঙ্গে রাম খেতে খেতে সোনাগাছির দিকে যাচ্ছি। ড্রাইভার গাড়ী চালাচ্ছে। আমাকে সোমনাথদা বলল, "জানো সুদীপ, বিয়ে থা তো আমিও করিনি তাই কাজ কর্মের ফাঁকে এই একটু আধটু ফুর্তী করি আর কি। লাইফটা নইলে বোর হয়ে যেত। আমার তো সাতকূলে কেউ নেই। যা রোজগার করি, সবই মাল আর মেয়েমানুষের পেছনেই চলে যায়। তোমার সঙ্গে মেলামেশার পর থেকে এতদিন বলব বলব করেও বলা হয়নি। কি জানি তুমি আবার যদি কিছু মাইন্ড করো। আজকালকার ছেলেদের বোঝা খুব মুশকিল।"
চোঁ চোঁ করে দুপেগ গাড়ীর মধ্যেই শেষ করে সোমনাথদা বলতে লাগল, "বয়সে তুমি ছোট বলে প্রানখোলাও হতে পারছিলাম না এতদিন। আমার সন্মন্ধে তোমার ধারনাটা যদি খারাপ হয়ে যায়, মুখে তাই কুলুপ এঁটে বসেছিলাম। তুমি সন্মতি দিলে। তাই এখন আমি অনেক নিশ্চিন্ত।"
হেসে বললাম, "আপনি বুঝি অনেকদিন ধরেই ও পাড়ায় যাচ্ছেন? তা অভিজ্ঞতা কেমন?"
সোমনাথদা বলল, "তা বছর ছয়েক তো হবেই। আসলে রুচি অরুচির একটা ব্যাপার তো আছেই। যারা ওখানে যায় সবাই ঠিক আমার মতন নয়।"
একটু কৌতূহলের সাথেই জিজ্ঞাসা করলাম, "ব্যাপারটা কি রকম? ওখানেও আবার রুচি অরুচির কোন ব্যাপার আছে নাকি? বেশ্যাদের আবার জাত আছে না কি?"
সোমনাথদা হেসে বলল, "জাত আছে বৈকি। ওখানকার সব বেশ্যারা একরকম নয়। কয়েকজন আছে যারা তোমার সঙ্গে আপনি আজ্ঞে ছাড়া কথা বলবে না। ওরা সন্মান দিতে জানে, কখনও অসন্মান করে না। খদ্দেরের কোয়ালিটি বুঝে সঠিক ব্যবহার করবে। ওদের কথাবার্তার ধরনটাই অন্যরকম। প্রফেশনাল, কিন্তু ধান্দাবাজ নয়। খুব কো-অপারেটিং। অনেক তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছে। আমি এরকমই একটা মেয়েকে চিনি ওখানে। নাম রাখী। ওর ঘরে দুতিনবার গিয়েছি। মেয়েটি বেশ ভাল। সুন্দরী, আকর্ষন বোধ আছে। আমার সঙ্গে বেশ ভাল পটে গেল। আমি রাখীর জন্যই বলতে পারো সোনাগাছিতে যাই।"
আমি বললাম, "তোমার সাথে ইন্টারকোর্স হয়েছে?"
সোমনাথদা অবাক হয়ে বলল, "কি যে বলো? তা হবে না আবার? সোনাগাছিতে কি লোকে এমনি এমনি যায়? কিছু পাবার আশাতেই তো যায়। রাখীর কাছ থেকে যা পেয়েছি কোনদিন ভুলব না জীবনে।"
অবাক হয়ে ভাবছিলাম, লোকটার এই বয়সেও এখনও কি সখ। রাখীকে নিয়ে বুড়ো বয়সে মস্তি লুটছে ব্যাটাটা।
সোমনাথদা নিজে থেকেই বলল, "রাখী অবশ্য আমাকে অনেক হেল্প করেছে। লুপঝুপ শিখিয়ে দিয়েছে।"
আমি বললাম, "লুপঝুপ কি?"
সোমনাথদা বললো, "হ্যাঁ ঐ যৌনকেরামতি আর কি? বলতে পারো আমাকে সাহস জুগিয়েছে রাখীই। প্রথমে একটু ভয় ভয় ছিল। বয়স বেড়েছে। এই বয়সে মেয়েমানুষের ঝক্কি কি আর সামলাতে পারব? কিন্তু রাখী আমার আত্মবিশ্বাসটাই বাড়িয়ে দিল। বয়স বেড়েছে বলে যৌনক্ষমতাটা কমে যায় নি। এখনও ইচ্ছে করলে দুতিন ঘন্টা রাখী কে নিয়ে আমি শুতে পারি। ঢোকানো আর বার করাটা কোন ব্যাপারই নয় আমার কাছে।"
তাজ্জব বনে যাচ্ছিলাম সোমনাথদার কথা শুনে। একটু ভয় ভয়ও হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত আমার কপালে আবার রাখীর মত কেউ না জুটলে তখন আমি আবার কি করব?
সোমনাথদা বোধহয় আন্দাজ করছিল ব্যাপারটা। আমাকে সাহস জুগিয়ে বলল, "চিন্তা করছ? তোমার ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমি আছি তো তোমার সঙ্গে। ভাল একটা মেয়ে তোমাকেও আমি জুটিয়ে দেব শেষ পর্যন্ত।"
সোমনাথদা রাখীকে যে আমার সাথে ছাড়বে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমার কপালে রাখীর বদলে যে কোন পাখী এসে জুটবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। একটু চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বললাম, "সোমনাথদা আর বাকী যারা ওখানে আছে তারা কেমন?"
মদের গ্লাসটা মুখে ঠেকিয়ে সোমনাথদা বলল, "নিশ্চয়ই রাখীর থেকেও সুন্দরী আরও ভাল কেউ আছে। না যাওয়া পর্যন্ত ঠিক বোঝা যাবে না। হড়বড় করে কোন লাভ হবে না। আমি ওখানে যে কটা দালাল কে চিনি তারা আমাকে খারাপ মাল গছাবে না। তোমার কেমন চাই বলো? পরী হলে চলবে?"
মনে মনে বললাম, "পরী কেন, তোমার ঐ রাখী হলে তো ভালই হত। কিন্তু সেটা মুখে তো তোমায় বলতে পারছি না। কি যে পারমানেন্ট মাল ফিট করে রেখেছ। ওখানে হাত দেবার উপায় নেই।"
সোমনাথদা যেন মনের কথা বোঝে। আমার দিকে মুচকি হেসে বলল, "কেউ না হলে শেষ পর্যন্ত রাখী তো আছে। তোমার জন্য নয় আমি স্যাক্রিফাইস করব একদিন। কি বলো হে হে।"
একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম আমি। বললাম, "যাঃ তা হয় নাকি? তুমি তাহলে কি করবে? আমার সাথে রাখীর একবার আলাপ করে দিও, তাহলেই হবে।"
সোমনাথদা ভুরু উঁচিয়ে বললো, "আলাপ?"
হো হো করে হাসতে লাগল সোমনাথদা। মুখে বলল, "তোমার মগজে কি ঢুকেছে বলতো সুদীপ? শোবে একজনের সঙ্গে, আর আলাপ করবে আর একজনের সঙ্গে? এ আবার হয় নাকি কখনও? রাখী সুন্দরী আর স্বাস্থ্যবতী। তারপর যদি তোমার মাথা বিগড়ে যায়?"
বুঝলাম বেশ্যা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করছে লোকটা। এমন ভাব করছে যেন রাখী ওর কেনা গোলাম হয়ে গেছে। অবস্থা বুঝে আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম। রাখীকে নিয়ে সোমনাথদার কাছে আর কোন কথা তুললাম না।
গাড়ী দেখতে দেখতে ধর্মতলা ছাড়িয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিন্যু তে ঢুকল। এখন সেন্ট্রাল এভিন্যু দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ী, সোমনাথদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "সোনাগাছিটা ঠিক কোথায়? স্পটটা আমি ঠিক চিনি না।"
সোমনাথদা বলল, "একটু পরেই বিডন স্ট্রীট আসবে, তারপরই পেট্রোল পাম্পটা। ওটা ছাড়িয়েই বাঁদিকের রাস্তাটা।"
সবই সোমনাথদার নখদর্পনে। একটা সিগারেট বার করে সোমনাথদাকে দিলাম, নিজেও ধরালাম একটা। সোমনাথদাকে বললাম, "আমাকে বাকীদের কথা কিন্তু বললে না?"
সোমনাথদা একটু নেশার ঘোরে বলল, "বাকী মানে?"
আমি বললাম, "ঐ যে বেশ্যার জাতগুলোর কথা তুমি বলছিলে।"
সোমনাথদা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, "ওহ হো।" তারপর বলতে লাগলো, "ওখানে কিছু শ্রেনীর আছে যারা একটু রদ্দি টাইপের। একশ টাকা দুশো টাকা দিলে তুমি সহজেই পেয়ে যাবে। কিন্তু কোন ভক্তি হবে না তোমার দেখলে। বৌবাজারের হাড়কাটা গলিতেও ওরকম অনেক আছে। মেয়েগুলো একটু বেহায়া টাইপের হয়। মুখে গালি গালাজ করবে, তুই তোয়াক্কি ছাড়া কোন কথা নেই। রঙ তামাসা, ফস্টি নস্টি যারা ওদের সাথে করে তারাও ওদের মতন হয়। তুমি আমি তা পারব না।"
মনে মনে বললাম, "সোমনাথদার কথাই ঠিক। আমাদের তো একটা রুচি বোধ আছে। বেহায়া বেশ্যা আমাদের পোষাবে না।"
গাড়ী যত এগিয়ে চলেছে, আমি যেন কেমন গুটিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা গ্রাস করছে মনে। কি জানি বাবা, নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ অভিযান কেমন হবে শেষ পর্যন্ত কে জানে?
সোমনাথদা মাল খেতে খেতে মজা করেই আমার টেনশনটা বাড়াচ্ছিল আরও বেশি করে। রসিকতা করে বলল, "শোন সুদীপ, তুমি হচ্ছো যে এখন একটা বেড়াল। এখন তোমার কপালে টাটকা মাছ জুটবে না পচা মাছ? সেটা তোমার কপালের ওপর নির্ভর করছে। অযথা টেনশন নিও না। আমি দেখছি তোমার ব্যাপারটা। টেক ইট ইজি। টেক ইট ইজি।"
পেট্রোল পাম্প এসে গেছে। সোমনাথদা ড্রাইভারকে ইশারা করল এবার বাঁদিকের রাস্তাটায় ঢুকতে। গাড়ী বাঁদিকের রাস্তায় ঢুকতেই সোমনাথদা এবার বলল, "ডানদিকে।"
ডানদিকে গাড়ী ঘুরতেই সোমনাথদা এবার ড্রাইভারকে বলে দাঁড় করালো গাড়ীটা। ব্যস ব্যস এখানেই।
গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমি কাঁচ দিয়ে দেখলাম, ডানদিকে তিনতলা একটা সাদা রঙের বাড়ী। সামনের দিকে ঝোলানো দ্বোতলা আর তিনতলায় দুপাশে দুটো করে বারান্দা। একতলায় মাঝখানে সদোর দরজা। দরজার সামনে ছোট্ট একটা রক। বসে আছে দুটো ষন্ডা মার্কা লোক। পরণে লুঙ্গি আর শার্ট। দেখে অনেকটা পালোয়ান গোছের মনে হচ্ছে। সোমনাথদা গাড়ী থেকে নামতে নামতে বলল, "এই বাড়ীটীর নাম হচ্ছে নীলপুরী। এখানেই আমার রাখী থাকে। এসো খোঁজ করে দেখি তোমার জন্যও ভাল কিছু পাওয়া যায় কিনা?"
গাড়ী থেকে নামতেই ঐ পালোয়ান গোছের লোক দুটো এগিয়ে এল। সোমনাথদাকে ওরা ভাল করেই চেনে। দুজনে দুপাশ দিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে বলল, "ক্যায়া বাবুসাব, ইতনা দিন কই খবর নেহী। আপনার রাখীকে কি আপনি ভুলে গিলেন? বহূত দিন পরে দেখলাম আপনাকে। তা বাবুসাব কিমন আছেন? নমস্কার সোমনাথবাবু।"
বুঝলাম এই পালোয়ান গোছের লোকগুলো আসলে দালাল। দেখলে একেবারে পিলে চমকে উঠবে। দু-দুটোর চেহারাই অনেকটা দানবের মত। সোমনাথদাকে দেখে ওরা আবার সেলাম ঠুকলো।
সোমনাথদা বাড়ীর সদোর দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের মধ্যে একজনকে ডাকল, "এই চিন্না, ইধার আও।"
যে চিন্না সে এগিয়ে এল। সোমনাথদা পার্স বের করে একটা ১০০ টাকার নোট ওর হাতে দিয়ে বলল, "রাখীর ঘর ফাঁকা আছে?"
চিন্না ঘাড় নেড়ে বলল, "জী সাব।"
এবার সোমনাদা আমার সাথে আলাপ করালো ওকে। চিন্নাকে বলল, "এ মেরা দোস্ত হ্যায়। আচ্ছা চীজ হ্যায় অউর কোহী? মেরা এ দোস্ত কে লিয়ে?"
লোকটা আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকালো। তারপর কি যেন ভেবে ওর সাকরেদটাকে ডাকল। ওর নাম বীরজু। ওকে বলল, "যারা শুন যারা ইধার।"
বীরজু এগিয়ে এল। চিন্না আমার দিকে তাকিয়ে বীরজুকে উদ্দেশ্য করে বলল, "হামারা এ নয়া বাবুকে লিয়ে এক খুবসুরত লড়কী চাহিয়ে। উনকো থোড়া স্বপ্নপুরী মে লেকে চলা যা। আচ্ছা চীজ মিল যায়েগি উধার।"
সোমনাথদা ওকে বাধা দিয়ে বলল, "স্বপ্নপুরীতে ও একা যাবে না। আমিও যাব ওর সাথে। আজ প্রথমবার এসেছে ওর অসুবিধা হবে।"
চিন্না অবাক হয়ে সোমনাথদার দিকে তাকালো, বলল, "আপনি রাখীর ঘরে যাবেন না?"
সোমনাথদা বলল, "যায়েঙ্গে। পহেলে তুমদোনো দেখকে আও। উধার স্বপ্নপুরীমে কই খালি হ্যায় ইহা নেহী। তবতক হামদোনো রাখীকে ঘরমে থোড়ীদেরকে লিয়ে ইনতেজার করতে হ্যায়।"
দেখলাম বীরজু লোকটা চিন্নার কানে কানে কি বলল। তারপর ওরা দুজনে চলে গেল আমার জন্য সুন্দরী মালের খোঁজ করতে।
সোমনাথদা বলল, "তোমার জন্য নতুন মাছের খোঁজ করতে পাঠালাম। ততক্ষণ চলো আমরা রাখীর ঘরে গিয়ে বসি।"
এই বাড়ীটার নাম যদি হয়, নীলপুরী। তাহলে স্বপ্নপুরীটা কোথায়?
পার্কস্ট্রীটের এই বার টার নাম অদ্ভুত। স্টারলেট গার্ডেন। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি তারাতলা। খুব ছোট্ট একটা বার অথচ স্টারলেট গার্ডেন হল ছাপোষা মধ্যবিত্তদের স্বর্গরাজ্য। পার্কস্ট্রীটে অন্য যেসব পানশালা আছে সেখানে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। তারাতলায় যারা আসেন, তাঁরা ইচ্ছে করলে পার্কস্ট্রীটের নামকরা রেস্তোঁরা বা ফাইভস্টার হোটেলে বসে মদ্যপান করতে পারেন, কিন্তু তারাতলায় না এলে এদের ভাত হজম হবে না। মদ এখানে একশো ভাগ খাঁটি এবং সবচেয়ে সস্তা। গরমকালে মনোরম ঠান্ডা পরিবেশ, বিত্তবান লোকেরা যারা এখানে আসেন, তারা এখানকার পরিবেশটা বেশ পছন্দ করেন। কলকাতায় যেন এমন ছোট অথচ সুন্দর পানশালা আর দুটি নেই।
তারাতলার এই বারে,পাশাপাশি বসে আমি আর সোমনাথদা ড্রিংক করছি। সবে মাত্র সন্ধে হয়েছে একটু আগে। এই সময়টা পেটে লিকার না পড়লে সোমনাথদার আবার চলে না। আমি অবশ্য একটু দেরী করে খাই। রাত্রে শোবার আগে, দুপেগ হূইস্কি। নেশা হয় না, তবু খাই। ড্রিঙ্ক করার অভ্যাসটা বছর খানেক আগেও খুব বেশি ছিল। এখন কমিয়ে দিয়েছি। বেশি খেলে পরের দিন শরীরটা ভারভার থাকে। অফিসে যাবার তাড়া থাকে। কাজে বেরোতে তখন অসুবিধা হয়। তাই রাতে টিভি চালিয়ে ঐ টুকু মদেই আমি সন্তুষ্ট।
প্রাইভেট কোম্পানীতে মার্কেটিং এর চাকরী করি। সারা দিন অনেক লোকের সাথেই মেলামেশা। নতুন নতুন লোকের সাথে আলাপও হয়। সোমনাথদার সাথে আলাপ আমার বছর খানেক আগে। সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা বলে পরিচিত সোমনাথদা ইন্সুরেন্স কোম্পানীর একজন নামকরা অফিসার। আমাদের অফিসেও ওনার নিয়মিত যাতায়াত। সেখান থেকেই আমার সাথে পরিচয়। প্রতি শনিবার নিয়ম করে অফিস ছুটীর পরে সোমনাথদার সাথে পার্কস্ট্রীট বারে আসি। এখানেই বসে মদ খাই। গল্প গুজব, হাসি ঠাট্টা মস্করা, করি। উইক এন্ডটা দারুন এনজয় হয়, সময়টা আমাদের ভালই কেটে যায়।
সোমনাথটা রেগুলার ড্রিঙ্ক করে। আমার থেকেও বেশি। সপ্তাহে একটা দিন শুধু পার্কস্ট্রীটে আসি কেবল সোমনাথদার জন্যই। দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা দারুন গড়ে উঠেছে। অন্তত একটা দিন মিট করার জন্য আমরা দুজনেই মুখিয়ে থাকি। কোন কারনে দেখা না হলে দুজনেরই তখন মন খারাপ হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি সোমনাথদার সঙ্গ আমার ভীষন ভাল লাগে।
বছর ষাটের কাছাকাছি বয়স সোমনাথদার। রিটায়ার করবে হয়তো আর দু এক বছর পরে। মাথার চুলগুলো সব কলপ করা। লম্বা জুলফি, মোটা গোঁফ, স্বাস্থ্যও ভাল। দেখে মনে হবে বার্ধক্য যেন ছুঁতে পারেনি লোকটাকে। সোমনাথ দা এই বয়সেও খুব স্মার্ট। অফিসে এক ডাকে সোমনাথদাকে সবাই চেনে। অনেক লোক ওনার কাছ থেকে ইন্সুরেন্স করিয়েছে। উনি খুব পপুলার। আমারও তাই ভাল লাগে লোকটাকে।
কৌতুক প্রিয়, রসিক মানুষ এমনিতেই খুব জনপ্রিয় হয়। আলোচনা একবার শুরু হলে ভীষন জমিয়ে দিতে পারে লোকটা। সবাই হাঁ করে ওর কথা শোনে। হেন কোন ব্যাপার নেই, যা সোমনাথদার অজানা। জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবই যেন নখ দর্পনে। প্রতিটা বিষয়ের ওপর সোমনাথদার এত আগ্রহ, এবং তা যেন খুব ভাল করেই সোমনাথদার জানা আছে। আমিও অফিসে যখন দেখা পাই ওর কথা শুনি। মজা লাগে, ভাল লাগে। এই অফিসে আমাকেই একমাত্র সোমনাথদা কাছের বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছে।
পার্কস্ট্রীটে তারাতলায় সপ্তাহে একদিন মদ খেতে আসার অভ্যাসটা সোমনাথদার জন্যই হয়েছে। এত দরাজ লোক, আমাকে কিছুতেই বিল পেমেন্ট করতে দেয় না। চারপেগ, পাঁচপেগ যাই খেলাম, সবই চোকাবে ঐ সোমনাথদা।
কিছু বললে সোমনাথদা বলে, "টাকাটা তুমি জমিয়ে রাখ সুদীপ। ভবিষ্যতে তোমারই কাজে লাগবে। আমার তো এ দুনিয়ায় কেউই নেই। সোমনাথ সেন সপ্তাহে একদিন সুদীপ বসুকে মাল খাওয়ালে ভিখারী হবে না। এটাতো আমারই ডিউটি। তুমি আমাকে কোম্পানী দিচ্ছ। তাই না আমি দিচ্ছি। আই মাস্ট পে ফর দ্যাট।"
আজ ঠিক করেছি হূইস্কির বিলটা আমিই পেমেন্ট করব। সোমনাথদাকে কিছুতেই পেমেন্ট করতে দেব না। আগে ভাগেই বলে ফেললাম, "তুমি কিন্তু পার্স বার করবে না সোমনাথদা। আজ সব খরচ আমার।"
গতকালই প্রমোশন লেটারটা পেয়েছি সোমনাথদা জানে। অফিসের সবাইকে রোল খাইয়েছি। কিন্তু সোমনাথদা আমার স্পেশাল লোক। তাই তার জন্য তারাতলায় আমার মানিব্যাগ ভর্তি নোট। সারা রাত বসে মদ খেলেও মানিব্যাগ আমার খালি হবে না।
মদ খেতে খেতে সোমনাথদা আবার তুলল সেই পুরোনো কথাটা। আমাকে যেন আরেকবার স্মরণ করালো। হূইস্কির গ্লাস হাতে ধরে হাসতে হাসতে সোমনাথদাকে বললাম, "তুমি পাগল হয়েছ? ওখানে কেউ যায়?"
সোমনাথদা বলল, "তুমি এত বেরসিক কেন বলো তো সুদীপ? ওখানে গেলে কি হবে? তোমার ইজ্জ্বত খোয়া যাবে?"
আমি তবু হাসছিলাম। হাসতে হাসতেই বললাম, "তাহলেও, তাই বলে সোনাগাছি?"
আসলে কদিন ধরেই সোমনাথদা আমাকে তাতাচ্ছে। - "বিয়ে থা তো করলে না সুদীপ। একদিন চলো তোমাকে একটা দারুন জায়গায় নিয়ে যাব। দেখলে চিত্তির চনমন করবে।"
আমি সোমনাথদাকে বললাম, "তুমিও তো বিয়ে করোনি, আর আমাকে নিয়ে যাবে সেই নিষিদ্ধ পল্লীতে? ওখানে ঢুকলেই আমার গা ছমছম করবে।"
সোমনাথদা বলল, "তুমি জানো না তাই বলছ। ওখানকার সব ব্যাপার আমার নখদর্পনে। গেলে বুঝবে কেমন খাসা জায়গা। তুমি যার সঙ্গে যাচ্ছ সে তো আর যা তা লোক নয়। আমি হলাম গিয়ে মালপাড়ার মেশো। খাতির যত্ন কাকে বলে দেখবে। কয়েকটা মেয়ে আছে, একরাত কাটালে জীবন ধন্য হয়ে যাবে। এ শহরের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সব ধরনের লোকই ওখানে যায়। পয়সা দিলে অনেক উচু ধরনের পসারিনীও জুটবে। দেহসুখের জন্য একটু নিষিদ্ধ সঙ্গী পেলে ক্ষতি কি? আমি তো আনন্দ করতে যাচ্ছি।"
হাসতে হাসতে বললাম, "ওফ তোমার এ বয়সেও সখ বলিহারি। ওখানে গেলে আমি কি পাব বলো তো?"
সোমনাথদা বলল, "আনন্দ ফুর্তীর কোন বয়স নেই। মরার আগের দিন পর্যন্ত করে যেতে হবে।"
আমি বললাম, "শুনেছি ওসব জায়গায় দালাল পুলিশের প্রচুর ঝামেলা হয়। তাছাড়া ভাড়া করা মেয়ের সাথে আমি তো কোনদিন রাত কাটাইনি। আমার এসবে কোন অভিজ্ঞতাই নেই। বুক ঢিপ ঢিপ করবে।"
সোমনাথদা একটু ব্যাঙ্গ করেই বলল, "আমার সঙ্গে ছেনালি করছ? এখনও যেন কচি খোকা রয়ে গেছ? বিয়ে থা করো নি বলে তোমার মেয়েমানুষের প্রতি কোন দূর্বলতা নেই? এটাই বোঝাতে চাইছ? আরে কাম অন ইয়ার। লেটস্ এনজয় দ্য লাইফ। জীবনটাতে একটু সেক্সের মোড়ক না লাগালে সাদামাটা হয়ে যায় জীবনটা। ভালবাসার অনেক ঝামেলা। অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। তার থেকে একরাত মস্তি করো। মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তী করো। খেল খতম, পয়সাও হজম।"
আমি একটু ইতস্তত করছিলাম। সোমনাথদা বলল, "আর নেকু সেজে থেকো না তো? দামড়া কার্তিক হয়ে গেছ, এখন আবার এই নিয়ে টেনশন কিসের?"
মুখটা একটু কানের কাছে নিয়ে এসে সোমনাথ আস্তে আস্তে বলল, "আস্ত মেয়েটা যখন উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াবে না তোমার সামনে, তখন আর বলে দিতে হবে না কি করতে হবে। সব অটোমেটিক হবে, অটোমেটিক।"
ঝামেলার কথা আর একবার বলাতে সোমনাথদা বলল, "ঝামেলা আবার কি? কিস্যু ঝামেলা নেই। তুমি সোমনাথ সেনের সাথে যাচ্ছ, তোমার আবার ঝামেলা কি? গেলেই সব বুঝতে পারবে।"
ঠিক হল, কাল ঠিক বিকেল চারটের সময় বেরোবো আমরা। সোমনাথদা এই স্টারলেট গার্ডেন থেকেই আমাকে তুলে নিয়ে সোজা চলে যাবে সোনাগাছি। তারপর ওখানে ভাল মেয়ে খুঁজে আমরা ফুর্তি করবো সারারাত। রবিবার ছুটীর দিনটা আমাদের সাঙ্গলীলা সারা হবে উত্তর কলকাতার সেই বিখ্যাত নিষিদ্ধ পল্লীতে।
যাবার আগে অবশ্য একটা ব্যাপারে নিশ্চিত করল সোমনাথদা। আমাকে একদম সোজা সাপ্টা ভাবেই বলল, "তোমার তলার ওটা আবার দাঁড়ায় তো সুদীপ? নইলে কিন্তু প্রেস্টিজ পানচার। আনাড়ী হলে ক্ষতি নেই। ওরা হাতে কলমে সব শিখিয়ে দেবে।"
কিন্তু ইন্দ্রিয় যদি সজাগ না হয়ে দূর্বল হয় তাহলে বেশ্যাবাড়ী যাওয়াটাই মাটি।
সোমনাথদাকে আশ্বস্ত করলাম। বললাম, "আমার নরমাল সাইজ চার ইঞ্চি। ফুলে গেলে ওটা সাত ইঞ্চি মতন হয়। তোমার প্রেস্টিজ থাকবে তো?"
সোমনাথদাও নিশ্চিত হয়ে বলল, "আলবাত থাকবে আলবাত, বৎস। তাহলে তো কথাই নেই।"
পরের দিন তিনটের পরেই হাজির হয়ে গেলাম স্টারলেট গার্ডেনে। সোমনাথদাও একটু পরে এসে উপস্থিত হল। বলল, "গাড়ী নিয়ে এসেছি। শুধু শুধু ট্যাক্সি করে যাবার দরকার নেই। এখন গাড়ীতেই মাল খেতে খেতে যাব। সারা রাত গাড়ী থাকবে ওখানে। তুমি একটাকে নেবে, আমি একটা। তারপর সারা রাত কাটিয়ে এই গাড়ী করেই ফিরব কাল সকালে।"
সোমনাথদাকে স্মরণ করালাম, "কিন্তু কালকের অফিস?"
উত্তরে সোমনাথদা বলল, "আরে ছাড়ো তো তোমার অফিস। একদিন অফিসে না গেলে কি এমন অসুবিধা হবে। একটা মেডিকাল লীভ নিয়ে নেবে আর কি?"
আমার মনে হলো, একেবারে তৈরী হয়ে এসেছে সোমনাথদা। ব্যাটা ঝানু মাল। ষাট বছরের বুড়ো কে বলবে? এখনও স্ফুর্তীর নেশা লেগে আছে শরীরে। আর আমিই কিনা গো বেচারার মতন ইতস্তত করছি। দেখাই যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।
গাড়ীতে যেতে যেতেই মাল খেতে শুরু করল সোমনাথদা। আমাকেও দিল। বলল, "চীয়ার্স"
একসঙ্গে রাম খেতে খেতে সোনাগাছির দিকে যাচ্ছি। ড্রাইভার গাড়ী চালাচ্ছে। আমাকে সোমনাথদা বলল, "জানো সুদীপ, বিয়ে থা তো আমিও করিনি তাই কাজ কর্মের ফাঁকে এই একটু আধটু ফুর্তী করি আর কি। লাইফটা নইলে বোর হয়ে যেত। আমার তো সাতকূলে কেউ নেই। যা রোজগার করি, সবই মাল আর মেয়েমানুষের পেছনেই চলে যায়। তোমার সঙ্গে মেলামেশার পর থেকে এতদিন বলব বলব করেও বলা হয়নি। কি জানি তুমি আবার যদি কিছু মাইন্ড করো। আজকালকার ছেলেদের বোঝা খুব মুশকিল।"
চোঁ চোঁ করে দুপেগ গাড়ীর মধ্যেই শেষ করে সোমনাথদা বলতে লাগল, "বয়সে তুমি ছোট বলে প্রানখোলাও হতে পারছিলাম না এতদিন। আমার সন্মন্ধে তোমার ধারনাটা যদি খারাপ হয়ে যায়, মুখে তাই কুলুপ এঁটে বসেছিলাম। তুমি সন্মতি দিলে। তাই এখন আমি অনেক নিশ্চিন্ত।"
হেসে বললাম, "আপনি বুঝি অনেকদিন ধরেই ও পাড়ায় যাচ্ছেন? তা অভিজ্ঞতা কেমন?"
সোমনাথদা বলল, "তা বছর ছয়েক তো হবেই। আসলে রুচি অরুচির একটা ব্যাপার তো আছেই। যারা ওখানে যায় সবাই ঠিক আমার মতন নয়।"
একটু কৌতূহলের সাথেই জিজ্ঞাসা করলাম, "ব্যাপারটা কি রকম? ওখানেও আবার রুচি অরুচির কোন ব্যাপার আছে নাকি? বেশ্যাদের আবার জাত আছে না কি?"
সোমনাথদা হেসে বলল, "জাত আছে বৈকি। ওখানকার সব বেশ্যারা একরকম নয়। কয়েকজন আছে যারা তোমার সঙ্গে আপনি আজ্ঞে ছাড়া কথা বলবে না। ওরা সন্মান দিতে জানে, কখনও অসন্মান করে না। খদ্দেরের কোয়ালিটি বুঝে সঠিক ব্যবহার করবে। ওদের কথাবার্তার ধরনটাই অন্যরকম। প্রফেশনাল, কিন্তু ধান্দাবাজ নয়। খুব কো-অপারেটিং। অনেক তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছে। আমি এরকমই একটা মেয়েকে চিনি ওখানে। নাম রাখী। ওর ঘরে দুতিনবার গিয়েছি। মেয়েটি বেশ ভাল। সুন্দরী, আকর্ষন বোধ আছে। আমার সঙ্গে বেশ ভাল পটে গেল। আমি রাখীর জন্যই বলতে পারো সোনাগাছিতে যাই।"
আমি বললাম, "তোমার সাথে ইন্টারকোর্স হয়েছে?"
সোমনাথদা অবাক হয়ে বলল, "কি যে বলো? তা হবে না আবার? সোনাগাছিতে কি লোকে এমনি এমনি যায়? কিছু পাবার আশাতেই তো যায়। রাখীর কাছ থেকে যা পেয়েছি কোনদিন ভুলব না জীবনে।"
অবাক হয়ে ভাবছিলাম, লোকটার এই বয়সেও এখনও কি সখ। রাখীকে নিয়ে বুড়ো বয়সে মস্তি লুটছে ব্যাটাটা।
সোমনাথদা নিজে থেকেই বলল, "রাখী অবশ্য আমাকে অনেক হেল্প করেছে। লুপঝুপ শিখিয়ে দিয়েছে।"
আমি বললাম, "লুপঝুপ কি?"
সোমনাথদা বললো, "হ্যাঁ ঐ যৌনকেরামতি আর কি? বলতে পারো আমাকে সাহস জুগিয়েছে রাখীই। প্রথমে একটু ভয় ভয় ছিল। বয়স বেড়েছে। এই বয়সে মেয়েমানুষের ঝক্কি কি আর সামলাতে পারব? কিন্তু রাখী আমার আত্মবিশ্বাসটাই বাড়িয়ে দিল। বয়স বেড়েছে বলে যৌনক্ষমতাটা কমে যায় নি। এখনও ইচ্ছে করলে দুতিন ঘন্টা রাখী কে নিয়ে আমি শুতে পারি। ঢোকানো আর বার করাটা কোন ব্যাপারই নয় আমার কাছে।"
তাজ্জব বনে যাচ্ছিলাম সোমনাথদার কথা শুনে। একটু ভয় ভয়ও হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত আমার কপালে আবার রাখীর মত কেউ না জুটলে তখন আমি আবার কি করব?
সোমনাথদা বোধহয় আন্দাজ করছিল ব্যাপারটা। আমাকে সাহস জুগিয়ে বলল, "চিন্তা করছ? তোমার ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমি আছি তো তোমার সঙ্গে। ভাল একটা মেয়ে তোমাকেও আমি জুটিয়ে দেব শেষ পর্যন্ত।"
সোমনাথদা রাখীকে যে আমার সাথে ছাড়বে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমার কপালে রাখীর বদলে যে কোন পাখী এসে জুটবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। একটু চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বললাম, "সোমনাথদা আর বাকী যারা ওখানে আছে তারা কেমন?"
মদের গ্লাসটা মুখে ঠেকিয়ে সোমনাথদা বলল, "নিশ্চয়ই রাখীর থেকেও সুন্দরী আরও ভাল কেউ আছে। না যাওয়া পর্যন্ত ঠিক বোঝা যাবে না। হড়বড় করে কোন লাভ হবে না। আমি ওখানে যে কটা দালাল কে চিনি তারা আমাকে খারাপ মাল গছাবে না। তোমার কেমন চাই বলো? পরী হলে চলবে?"
মনে মনে বললাম, "পরী কেন, তোমার ঐ রাখী হলে তো ভালই হত। কিন্তু সেটা মুখে তো তোমায় বলতে পারছি না। কি যে পারমানেন্ট মাল ফিট করে রেখেছ। ওখানে হাত দেবার উপায় নেই।"
সোমনাথদা যেন মনের কথা বোঝে। আমার দিকে মুচকি হেসে বলল, "কেউ না হলে শেষ পর্যন্ত রাখী তো আছে। তোমার জন্য নয় আমি স্যাক্রিফাইস করব একদিন। কি বলো হে হে।"
একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম আমি। বললাম, "যাঃ তা হয় নাকি? তুমি তাহলে কি করবে? আমার সাথে রাখীর একবার আলাপ করে দিও, তাহলেই হবে।"
সোমনাথদা ভুরু উঁচিয়ে বললো, "আলাপ?"
হো হো করে হাসতে লাগল সোমনাথদা। মুখে বলল, "তোমার মগজে কি ঢুকেছে বলতো সুদীপ? শোবে একজনের সঙ্গে, আর আলাপ করবে আর একজনের সঙ্গে? এ আবার হয় নাকি কখনও? রাখী সুন্দরী আর স্বাস্থ্যবতী। তারপর যদি তোমার মাথা বিগড়ে যায়?"
বুঝলাম বেশ্যা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করছে লোকটা। এমন ভাব করছে যেন রাখী ওর কেনা গোলাম হয়ে গেছে। অবস্থা বুঝে আমি চুপচাপ হয়ে গেলাম। রাখীকে নিয়ে সোমনাথদার কাছে আর কোন কথা তুললাম না।
গাড়ী দেখতে দেখতে ধর্মতলা ছাড়িয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিন্যু তে ঢুকল। এখন সেন্ট্রাল এভিন্যু দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ী, সোমনাথদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "সোনাগাছিটা ঠিক কোথায়? স্পটটা আমি ঠিক চিনি না।"
সোমনাথদা বলল, "একটু পরেই বিডন স্ট্রীট আসবে, তারপরই পেট্রোল পাম্পটা। ওটা ছাড়িয়েই বাঁদিকের রাস্তাটা।"
সবই সোমনাথদার নখদর্পনে। একটা সিগারেট বার করে সোমনাথদাকে দিলাম, নিজেও ধরালাম একটা। সোমনাথদাকে বললাম, "আমাকে বাকীদের কথা কিন্তু বললে না?"
সোমনাথদা একটু নেশার ঘোরে বলল, "বাকী মানে?"
আমি বললাম, "ঐ যে বেশ্যার জাতগুলোর কথা তুমি বলছিলে।"
সোমনাথদা মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, "ওহ হো।" তারপর বলতে লাগলো, "ওখানে কিছু শ্রেনীর আছে যারা একটু রদ্দি টাইপের। একশ টাকা দুশো টাকা দিলে তুমি সহজেই পেয়ে যাবে। কিন্তু কোন ভক্তি হবে না তোমার দেখলে। বৌবাজারের হাড়কাটা গলিতেও ওরকম অনেক আছে। মেয়েগুলো একটু বেহায়া টাইপের হয়। মুখে গালি গালাজ করবে, তুই তোয়াক্কি ছাড়া কোন কথা নেই। রঙ তামাসা, ফস্টি নস্টি যারা ওদের সাথে করে তারাও ওদের মতন হয়। তুমি আমি তা পারব না।"
মনে মনে বললাম, "সোমনাথদার কথাই ঠিক। আমাদের তো একটা রুচি বোধ আছে। বেহায়া বেশ্যা আমাদের পোষাবে না।"
গাড়ী যত এগিয়ে চলেছে, আমি যেন কেমন গুটিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা গ্রাস করছে মনে। কি জানি বাবা, নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ অভিযান কেমন হবে শেষ পর্যন্ত কে জানে?
সোমনাথদা মাল খেতে খেতে মজা করেই আমার টেনশনটা বাড়াচ্ছিল আরও বেশি করে। রসিকতা করে বলল, "শোন সুদীপ, তুমি হচ্ছো যে এখন একটা বেড়াল। এখন তোমার কপালে টাটকা মাছ জুটবে না পচা মাছ? সেটা তোমার কপালের ওপর নির্ভর করছে। অযথা টেনশন নিও না। আমি দেখছি তোমার ব্যাপারটা। টেক ইট ইজি। টেক ইট ইজি।"
পেট্রোল পাম্প এসে গেছে। সোমনাথদা ড্রাইভারকে ইশারা করল এবার বাঁদিকের রাস্তাটায় ঢুকতে। গাড়ী বাঁদিকের রাস্তায় ঢুকতেই সোমনাথদা এবার বলল, "ডানদিকে।"
ডানদিকে গাড়ী ঘুরতেই সোমনাথদা এবার ড্রাইভারকে বলে দাঁড় করালো গাড়ীটা। ব্যস ব্যস এখানেই।
গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে। আমি কাঁচ দিয়ে দেখলাম, ডানদিকে তিনতলা একটা সাদা রঙের বাড়ী। সামনের দিকে ঝোলানো দ্বোতলা আর তিনতলায় দুপাশে দুটো করে বারান্দা। একতলায় মাঝখানে সদোর দরজা। দরজার সামনে ছোট্ট একটা রক। বসে আছে দুটো ষন্ডা মার্কা লোক। পরণে লুঙ্গি আর শার্ট। দেখে অনেকটা পালোয়ান গোছের মনে হচ্ছে। সোমনাথদা গাড়ী থেকে নামতে নামতে বলল, "এই বাড়ীটীর নাম হচ্ছে নীলপুরী। এখানেই আমার রাখী থাকে। এসো খোঁজ করে দেখি তোমার জন্যও ভাল কিছু পাওয়া যায় কিনা?"
গাড়ী থেকে নামতেই ঐ পালোয়ান গোছের লোক দুটো এগিয়ে এল। সোমনাথদাকে ওরা ভাল করেই চেনে। দুজনে দুপাশ দিয়ে আমাদের ঘিরে ধরে বলল, "ক্যায়া বাবুসাব, ইতনা দিন কই খবর নেহী। আপনার রাখীকে কি আপনি ভুলে গিলেন? বহূত দিন পরে দেখলাম আপনাকে। তা বাবুসাব কিমন আছেন? নমস্কার সোমনাথবাবু।"
বুঝলাম এই পালোয়ান গোছের লোকগুলো আসলে দালাল। দেখলে একেবারে পিলে চমকে উঠবে। দু-দুটোর চেহারাই অনেকটা দানবের মত। সোমনাথদাকে দেখে ওরা আবার সেলাম ঠুকলো।
সোমনাথদা বাড়ীর সদোর দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে ওদের দুজনের মধ্যে একজনকে ডাকল, "এই চিন্না, ইধার আও।"
যে চিন্না সে এগিয়ে এল। সোমনাথদা পার্স বের করে একটা ১০০ টাকার নোট ওর হাতে দিয়ে বলল, "রাখীর ঘর ফাঁকা আছে?"
চিন্না ঘাড় নেড়ে বলল, "জী সাব।"
এবার সোমনাদা আমার সাথে আলাপ করালো ওকে। চিন্নাকে বলল, "এ মেরা দোস্ত হ্যায়। আচ্ছা চীজ হ্যায় অউর কোহী? মেরা এ দোস্ত কে লিয়ে?"
লোকটা আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকালো। তারপর কি যেন ভেবে ওর সাকরেদটাকে ডাকল। ওর নাম বীরজু। ওকে বলল, "যারা শুন যারা ইধার।"
বীরজু এগিয়ে এল। চিন্না আমার দিকে তাকিয়ে বীরজুকে উদ্দেশ্য করে বলল, "হামারা এ নয়া বাবুকে লিয়ে এক খুবসুরত লড়কী চাহিয়ে। উনকো থোড়া স্বপ্নপুরী মে লেকে চলা যা। আচ্ছা চীজ মিল যায়েগি উধার।"
সোমনাথদা ওকে বাধা দিয়ে বলল, "স্বপ্নপুরীতে ও একা যাবে না। আমিও যাব ওর সাথে। আজ প্রথমবার এসেছে ওর অসুবিধা হবে।"
চিন্না অবাক হয়ে সোমনাথদার দিকে তাকালো, বলল, "আপনি রাখীর ঘরে যাবেন না?"
সোমনাথদা বলল, "যায়েঙ্গে। পহেলে তুমদোনো দেখকে আও। উধার স্বপ্নপুরীমে কই খালি হ্যায় ইহা নেহী। তবতক হামদোনো রাখীকে ঘরমে থোড়ীদেরকে লিয়ে ইনতেজার করতে হ্যায়।"
দেখলাম বীরজু লোকটা চিন্নার কানে কানে কি বলল। তারপর ওরা দুজনে চলে গেল আমার জন্য সুন্দরী মালের খোঁজ করতে।
সোমনাথদা বলল, "তোমার জন্য নতুন মাছের খোঁজ করতে পাঠালাম। ততক্ষণ চলো আমরা রাখীর ঘরে গিয়ে বসি।"
এই বাড়ীটার নাম যদি হয়, নীলপুরী। তাহলে স্বপ্নপুরীটা কোথায়?
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!