26-08-2020, 01:56 AM
২
দুপুরে মায়ের সাথে শুয়ে মায়ের আদর খেতে খেতে কখন অর্ক ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই. কিন্তু ঘুমের মধ্যে কিনা ও জানেনা একটা হাসির শব্দ ওর কানে এলো. কেউ যেন হাসছে. কে হাসে? মা? কিন্তু আওয়াজ টা যেন নিচের থেকে আসছে. যেন ওর খাটের নীচে কেউ হাসছে. ঘুমের কারণে এমন হচ্ছে নাকি অন্য কিছুর কারণে সেটা অর্ক বুঝলোনা. শুধু স্বপ্ন দেখলো খালি রাস্তা দিয়ে ও বাড়ি ফিরছে. কোথাও কেউ নেই রাস্তায়. শুধু ওই বাইরে, বাকি জগৎ যেন দুপুরে ভাতঘুম দিচ্ছে. অর্কর বার বার মনে হচ্ছে ওর পেছন পেছন কেউ আসছে. একদৌড়ে ও বাড়ি ফিরে এলো ভয়. বাড়ি ফিরতে মা গেট খুললো ঠিকই কিন্তু ওর ঢোকার আগেই ওকে ধাক্কা দিয়ে কালো ছায়া মতো কিছু একটা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো. আর সেই সময় আবার কানে এলো সেই অদ্ভুত নারী কণ্ঠে হাসি.
ঘুম ভাঙলো মায়ের নড়াচড়ায়. মা খাট থেকে নামছে. মানে বাবা ফিরে এসেছে. অর্ক শুয়ে রইলো. কিছুক্ষন পরেই মা আর বাবার গলার আওয়াজ পেলো ও. আর ঘুমোলোনা অর্ক. উঠে বসে রইলো. বাবা ঘরে ঢুকে ছেলেকে দেখে হেসে পাশে বসে জামা প্যান্ট খুলতে লাগলো. অর্ক ভেবেছিলো তখনি বাবাকে বলবে কিন্তু পরে ভাবলো বাবা এইমাত্র ফিরেছে. থাক.... পরে বলবে. বাবা স্নানে চলে গেলো. বাবা ফিরে এলে মা আর শোয়না, তার আগেই যতটুকু ঘুমানোর ঘুমিয়ে নেয়. অর্কও সোফায় গিয়ে বসলো আর টিভিটা চালিয়ে দেখতে লাগলো.
উফফফফফ... মানে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই টিভি দেখতে বসে যাবে ছেলেটা.
মায়ের সেই বকুনি. তবে এটাকে ওতো পরোয়া করেনা অর্ক. মা এরকম রোজই বলে. ও টিভি দেখতে লাগলো. একটু পরে বাবা এসে পাশে বসলো.
এই চা নিয়ে এসো - বাবা মাকে বললো
মা : হ্যা এই যাচ্ছি..... বলে মা নীচে রান্নাঘরে চলে গেলো.
এই সুযোগ... বাবাকে নিজের দলে টানার. মা নীচে. অর্ক তাকালো বাবার দিকে. সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রেস্ট নিচ্ছে. অর্ক উঠে বাবার কাছে গিয়ে ঘনিষ্ট হয়ে বসে আদুরে গলায় বাবাকে ডাকলো : বাবা..
বাবা চোখ খুলে ছেলেকে জড়িয়ে বললো : কি হয়েছে বাবু? আজ মাকে ছেড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলে? ব্যাপার কি?
অর্ক ভয় ভয় গলায় বললো : বাবা আজকে না......... কি হয়েছে জানো... একটা লোক......
বাবাকে সব খুলে বললো অর্ক. ও বললো যে ও নিতে চায়নি কিন্তু লোকটা প্রায় জোর করেই ওকে মূর্তিটা দিয়ে দিয়েছেন. সব শুনে বাবা একটু সিরিয়াস ভাবেই বললো...
বাবা : উহু....কাজটা তুমি ঠিক করোনি অর্ক.... যাকে তুমি চেনোনা জানোনা তার থেকে তুমি জিনিস নেবে কেন? মা কতবার বারণ করেছে না তোমায়?
অর্ক : আমি তো ফেরত দিয়ে দিতেই চেয়েছিলাম বাবা... কিন্তু
বাবা পুরোটা না শুনেই বললেন : না...... তোমার আগে এসেই মাকে বলা উচিত ছিল.
অর্ক : মাকে বললে মা হয়তো ওটা বাইরে ফেলে দিতো, আসলে মূর্তিটা এত সুন্দর দেখতে...
বাবা : সে যাই হোক.... সে তোমায় দেবে বললো আর তুমি নিয়ে নিলে? সে কে? তোমার পরিচিত? নয়তো? তাহলে গেলে কেন তার কাছে? আবার সে তোমায় মূর্তি দিলো? তাও এমনি এমনি? ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে..... কই দেখি কোথায় সেটা?
অর্ক বাবার কাছ থেকে উঠে খাটের তোলা থেকে মূর্তিটা বার করে বাবার হাতে দিলো. বাবা সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো. বাবা এতক্ষন চিন্তিত মুখে ছিলেন কিন্তু অর্ক দেখলো এবারে বাবা শান্ত মুখে মূর্তিটা দেখছে. তাহলে কি বাবারও মূর্তিটা ভালো লাগলো?
এর উত্তর অর্ক সঙ্গে সঙ্গে পেলো.
বাবা : বাহ্.... দারুন জিনিস তো. যে বানিয়েছে তার হাতের কাজ বেশ নিখুঁত. দারুন নিখুঁত কাজ. এটা কিসের মূর্তি? মেয়ে সেতো বোঝাই যাচ্ছে কিন্তু তাহলে আবার দুটো ডানা কেন? পরীর মূর্তি নাকি?
-কিসের মূর্তি?
কথাটা এলো পেছন থেকে. অর্ক দেখলো মা চা নিয়ে এসেছে বাবার জন্য. ও বুঝলো এবারে আর নিস্তার নেই. বাবাও বাঁচাতে পারবেনা এই যাত্রায়. মায়ের বকুনি খেতেই হবে.
মা এগিয়ে এসে চায়ের কাপটা সামনের টেবিলে রাখতেই বাবার হাতে ওই মূর্তিটা দেখতে পেলো.
মা বললো : এই? এটা কি? কোথা থেকে পেলে?
অর্ক বুঝলো ব্যাস..... হয়ে গেলো. তৈরী হও বকুনি খেতে. হয়তো দু একটা থাপ্পড় খেতেও হতে পারে. মা এমনিতে শান্ত কিন্তু রেগে গেলে... বাবারে.
কিন্তু অর্ককে অবাক করে দিয়ে ওর বাবা অতনু বাবু বললেন : আজ ফেরার পথে কিনলাম এটা. ওই অনেকদিন কোনো সাজানোর জিনিস কেনা হয়নি, তাই ভাবলাম কিছু কিনি. এটা পছন্দ হলো তাই আরকি.
অর্ক অবাক. সাথে খুশি প্রচন্ড. উফফফ এই যাত্রায় তাহলে বাবা বাঁচিয়ে দিলো.
শ্রীপর্ণা অর্থাৎ অর্কর মা বললেন : বুঝলাম... উঠলো বাই তো কটক যাই..... কথাও কিছু নেই উনি কিনে আনলেন ঘর সাজানোর মূর্তি. তাও যদি কোনো বিখ্যাত মানুষের মূর্তি হতো. এটা কি? কিসের মূর্তি এটা? বাবা.. . আবার দুটো ডানাও আছে. কি এটা?
বাবাও মায়ের কথায় ঘাবড়ে গিয়ে বললেন : ওই..... ঐতো.... ওই.. পরী... হ্যা.. পরী.
মা : পরী? পরীদের আবার লেজ থাকে নাকি? এর তো লেজ রয়েছে দেখছি... কি জানি বাবা... এ আবার কেমন পরী?
বাবা : আহা.... যে পরী হোক.... মূর্তিটা দেখো... কি নিখুঁত কাজ. জিনিসটা ভালো করে দেখো. আর্ট টা দেখো. উফফফ দারুন. এসব জিনিস ঘরে রাখলে ঘরের শোভা আরও বারে বুঝলে?
মা : হুম.... তা কত নিলো?
এই সেরেছে রে..... বাবা কি জবাব দেবে এর?
বাবা হেসে বললো : বেশি না.... যা ভেবেছি তার অনেক কমেই পেয়েছি. খুবই কম দাম.... ওতো ভেবোনা তো. আমাদের কি টাকার কি ওতো অভাব পড়েছে নাকি যে গুনে গুনে টাকা খরচ করতে হবে?
মা : সেটা করাই উচিত. যাকগে... দাও শোকেসে রেখে দি.
বাবা : শোকেসে না..... আমাদের ওই টেবিলে রাখো. চোখে পড়বে.
মা ওটা নিয়ে ঘরের একটা টেবিলে রেখে দিলো. ওখানে বেশ মানিয়েছে জিনিসটা.
মা : আমি নীচে গেলাম.... বাবার সর্দিটা একটু বেড়েছে মনে হয়. আবার জ্বর না আসে. যাই আদা দিয়ে চা করে দি বাবাকে.
বাবা : বাবার জন্য কি জ্বরের ওষুধ কিনতে হবে নাকি?
মা : না.... তোমার মা বললো অতটাও কিছু নয় তবু বয়স হচ্ছে তো..... যাই ওদের চা দিয়ে আসি.
মা আবার নীচে চলে গেলো. অর্ক ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. অতনু বাবুও ছেলেকে আদর করতে লাগলেন. তবে অর্ক কথা দিলো এরকম ভুল আর করবেনা.
কিন্তু ওই একটা ভুলই যথেষ্ট ছিল.
অর্ক দাদুর ঘরে. দাদুর একটু শরীরটা খাড়াপ. তবে তেমন কিছু নয়. সন্ধেবেলায় বাবা বেরিয়ে তাও দাদুর জন্য জ্বরের ওষুধ কিনে এনেছে. ঠাম্মা আর মা রান্নাঘরে রাতের রান্না করছে. আর অতনু বাবু দোতলায় টিভি দেখছেন. আজ শনিবার আর কাল রবিবার. এইদুটো দিন অর্ককে ওর মা কিছুতেই পড়াতে বসাতেই পারেনা. তাই আজও ও সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে. কখনো মায়ের কাছে যাচ্ছে, কখন দাদুর ঘরে, কখনো নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছে.
-উফফফ বাবু এমন ঘোরাঘুরি না করে ওপরে গিয়ে একটু পড় না..... মায়ের হালকা বকুনি খেয়ে অর্ক দোতলায় চলে এলো. ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো বাবা সোফায় বসে. সামনে টিভি চলছে. কিন্তু বাবার দৃষ্টি টিভিতে নেই. বাবার দৃষ্টি হাতে ধরে থাকা ওই মূর্তিটার ওপর. ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে ওটাকে ওর বাবা.
- কি দেখছো ওটা বাবা?
বাবা যেন কোনো খেলে ডুবে গেছিলো তাই মনেহয় অর্কর কথা কানেই যায়নি ওনার. উনি দেখছেন মূর্তিটা.
অর্ক বাবার গায়ে হাত রেখে বলল: বাবা? কি দেখছো ওটা?
এবারে ওর বাবা বললেন : হ্যা? কি? ওহ না. কিছুনা... এই মূর্তিটা.... মানে... মানে......... কি সুন্দর দেখতে...... অপূর্ব মুখটা মেয়েটার.
আবার কি ভাবতে লাগলো বাবা. অর্ক আর বাবার দিকে না তাকাই রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টিয়ে ডোরেমন দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো.
রাতে খাওয়ার পরে ওরা দোতলায় উঠে এলো. এখন অর্কর দাদুর শরীরটা কিছুটা ঠিক. উনি ঘরে শুতে চলে গেলেন. শাশুড়ির সাথে বাকি কাজ সেরে অর্কর মাও ওপরে চলে এলো.
রাতে একবার করে স্নান করার অভ্যেস অতনু বাবুর. তিনি ঘুমোনোর আগে স্নান করতে ঢুকে গেলেন. বাইরের ঘরে অর্ক বসে টিভি দেখছে. একটু পরে মা উঠে এসে ছেলেকে টিভির সামনে হা করে বসে থাকতে দেখে একটু রেগেই বললেন..
মা : যতটা ধ্যান টিভিতে দিচ্ছ অতটা যদি অংকে দিতে তাহলে আর আমার চিন্তা থাকতোনা. মনে আছে আগের বারে পরীক্ষায় কত গুলো ভুল করেছিলি তুই বাবাই ?
অর্ক : মা.... প্লিস... সারাদিন তো পড়ি. এই শনিবার আর রবিবারটা ছাড়ো আমাকে প্লিস... মা সোনা মা.... আমি আবার সোমবার থেকে তোমার সব কোথা শুনবো.
মা হেসে : হ্যা... শুনে তো একেবারে উল্টে যাচ্ছ তুমি.
শ্রীপর্ণা ছেলের সাথে কথা বলছিলো এমন সময় ওদের বাথরুমের থেকে ওনার স্বামী হঠাৎ ডাকলো - হ্যা বলো
শ্রীপর্ণা বাথরুমের কাছে গিয়ে বললেন : কি হলো?
অর্কর বাবা : ডাকলে কেন?
অর্কর মা : আমি? আমি আবার তোমায় কখন ডাকলাম?
বাবা : যা বাবা.... এই একটু আগেই দরজায় টোকা দিলেনা?
মা : কি? আমি? আমিতো ছেলের সাথে কথা বলছিলাম. কি বলছো কি?
বাবা : ওমা...... সেকি....... আমি স্নান করছিলাম..... মনে হলো দরজায় টোকা দিলো কেউ. একবার না...... দুদুবার. আমি বললাম কে? কোনো জবাব নেই. তাইতো আমি দরজা খুলে তোমায় ডাকলাম.
মা : ও তুমি ভুল কিছু শুনেছ... ছাড়ো... স্নান করা হয়নি এখনও?
বাবা : হ্যা.. এই বেরোচ্ছে.... কিন্তু শ্রীপর্ণা... সত্যি বলছি... স্পষ্ট শুনলাম কেউ....
অর্কর মা ওনাকে থামিয়ে বললেন : আরে কে ডাকবে? আমি আর তোমার ছেলে তো টিভির ঘরে. ও তুমি ভুল শুনেছ. ছাড়ো... তাড়াতাড়ি করো.
মায়ের সেই বকুনি. তবে এটাকে ওতো পরোয়া করেনা অর্ক. মা এরকম রোজই বলে. ও টিভি দেখতে লাগলো. একটু পরে বাবা এসে পাশে বসলো.
এই চা নিয়ে এসো - বাবা মাকে বললো
মা : হ্যা এই যাচ্ছি..... বলে মা নীচে রান্নাঘরে চলে গেলো.
এই সুযোগ... বাবাকে নিজের দলে টানার. মা নীচে. অর্ক তাকালো বাবার দিকে. সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রেস্ট নিচ্ছে. অর্ক উঠে বাবার কাছে গিয়ে ঘনিষ্ট হয়ে বসে আদুরে গলায় বাবাকে ডাকলো : বাবা..
বাবা চোখ খুলে ছেলেকে জড়িয়ে বললো : কি হয়েছে বাবু? আজ মাকে ছেড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলে? ব্যাপার কি?
অর্ক ভয় ভয় গলায় বললো : বাবা আজকে না......... কি হয়েছে জানো... একটা লোক......
বাবাকে সব খুলে বললো অর্ক. ও বললো যে ও নিতে চায়নি কিন্তু লোকটা প্রায় জোর করেই ওকে মূর্তিটা দিয়ে দিয়েছেন. সব শুনে বাবা একটু সিরিয়াস ভাবেই বললো...
বাবা : উহু....কাজটা তুমি ঠিক করোনি অর্ক.... যাকে তুমি চেনোনা জানোনা তার থেকে তুমি জিনিস নেবে কেন? মা কতবার বারণ করেছে না তোমায়?
অর্ক : আমি তো ফেরত দিয়ে দিতেই চেয়েছিলাম বাবা... কিন্তু
বাবা পুরোটা না শুনেই বললেন : না...... তোমার আগে এসেই মাকে বলা উচিত ছিল.
অর্ক : মাকে বললে মা হয়তো ওটা বাইরে ফেলে দিতো, আসলে মূর্তিটা এত সুন্দর দেখতে...
বাবা : সে যাই হোক.... সে তোমায় দেবে বললো আর তুমি নিয়ে নিলে? সে কে? তোমার পরিচিত? নয়তো? তাহলে গেলে কেন তার কাছে? আবার সে তোমায় মূর্তি দিলো? তাও এমনি এমনি? ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে..... কই দেখি কোথায় সেটা?
অর্ক বাবার কাছ থেকে উঠে খাটের তোলা থেকে মূর্তিটা বার করে বাবার হাতে দিলো. বাবা সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো. বাবা এতক্ষন চিন্তিত মুখে ছিলেন কিন্তু অর্ক দেখলো এবারে বাবা শান্ত মুখে মূর্তিটা দেখছে. তাহলে কি বাবারও মূর্তিটা ভালো লাগলো?
এর উত্তর অর্ক সঙ্গে সঙ্গে পেলো.
বাবা : বাহ্.... দারুন জিনিস তো. যে বানিয়েছে তার হাতের কাজ বেশ নিখুঁত. দারুন নিখুঁত কাজ. এটা কিসের মূর্তি? মেয়ে সেতো বোঝাই যাচ্ছে কিন্তু তাহলে আবার দুটো ডানা কেন? পরীর মূর্তি নাকি?
-কিসের মূর্তি?
কথাটা এলো পেছন থেকে. অর্ক দেখলো মা চা নিয়ে এসেছে বাবার জন্য. ও বুঝলো এবারে আর নিস্তার নেই. বাবাও বাঁচাতে পারবেনা এই যাত্রায়. মায়ের বকুনি খেতেই হবে.
মা এগিয়ে এসে চায়ের কাপটা সামনের টেবিলে রাখতেই বাবার হাতে ওই মূর্তিটা দেখতে পেলো.
মা বললো : এই? এটা কি? কোথা থেকে পেলে?
অর্ক বুঝলো ব্যাস..... হয়ে গেলো. তৈরী হও বকুনি খেতে. হয়তো দু একটা থাপ্পড় খেতেও হতে পারে. মা এমনিতে শান্ত কিন্তু রেগে গেলে... বাবারে.
কিন্তু অর্ককে অবাক করে দিয়ে ওর বাবা অতনু বাবু বললেন : আজ ফেরার পথে কিনলাম এটা. ওই অনেকদিন কোনো সাজানোর জিনিস কেনা হয়নি, তাই ভাবলাম কিছু কিনি. এটা পছন্দ হলো তাই আরকি.
অর্ক অবাক. সাথে খুশি প্রচন্ড. উফফফ এই যাত্রায় তাহলে বাবা বাঁচিয়ে দিলো.
শ্রীপর্ণা অর্থাৎ অর্কর মা বললেন : বুঝলাম... উঠলো বাই তো কটক যাই..... কথাও কিছু নেই উনি কিনে আনলেন ঘর সাজানোর মূর্তি. তাও যদি কোনো বিখ্যাত মানুষের মূর্তি হতো. এটা কি? কিসের মূর্তি এটা? বাবা.. . আবার দুটো ডানাও আছে. কি এটা?
বাবাও মায়ের কথায় ঘাবড়ে গিয়ে বললেন : ওই..... ঐতো.... ওই.. পরী... হ্যা.. পরী.
মা : পরী? পরীদের আবার লেজ থাকে নাকি? এর তো লেজ রয়েছে দেখছি... কি জানি বাবা... এ আবার কেমন পরী?
বাবা : আহা.... যে পরী হোক.... মূর্তিটা দেখো... কি নিখুঁত কাজ. জিনিসটা ভালো করে দেখো. আর্ট টা দেখো. উফফফ দারুন. এসব জিনিস ঘরে রাখলে ঘরের শোভা আরও বারে বুঝলে?
মা : হুম.... তা কত নিলো?
এই সেরেছে রে..... বাবা কি জবাব দেবে এর?
বাবা হেসে বললো : বেশি না.... যা ভেবেছি তার অনেক কমেই পেয়েছি. খুবই কম দাম.... ওতো ভেবোনা তো. আমাদের কি টাকার কি ওতো অভাব পড়েছে নাকি যে গুনে গুনে টাকা খরচ করতে হবে?
মা : সেটা করাই উচিত. যাকগে... দাও শোকেসে রেখে দি.
বাবা : শোকেসে না..... আমাদের ওই টেবিলে রাখো. চোখে পড়বে.
মা ওটা নিয়ে ঘরের একটা টেবিলে রেখে দিলো. ওখানে বেশ মানিয়েছে জিনিসটা.
মা : আমি নীচে গেলাম.... বাবার সর্দিটা একটু বেড়েছে মনে হয়. আবার জ্বর না আসে. যাই আদা দিয়ে চা করে দি বাবাকে.
বাবা : বাবার জন্য কি জ্বরের ওষুধ কিনতে হবে নাকি?
মা : না.... তোমার মা বললো অতটাও কিছু নয় তবু বয়স হচ্ছে তো..... যাই ওদের চা দিয়ে আসি.
মা আবার নীচে চলে গেলো. অর্ক ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো. অতনু বাবুও ছেলেকে আদর করতে লাগলেন. তবে অর্ক কথা দিলো এরকম ভুল আর করবেনা.
কিন্তু ওই একটা ভুলই যথেষ্ট ছিল.
অর্ক দাদুর ঘরে. দাদুর একটু শরীরটা খাড়াপ. তবে তেমন কিছু নয়. সন্ধেবেলায় বাবা বেরিয়ে তাও দাদুর জন্য জ্বরের ওষুধ কিনে এনেছে. ঠাম্মা আর মা রান্নাঘরে রাতের রান্না করছে. আর অতনু বাবু দোতলায় টিভি দেখছেন. আজ শনিবার আর কাল রবিবার. এইদুটো দিন অর্ককে ওর মা কিছুতেই পড়াতে বসাতেই পারেনা. তাই আজও ও সারা বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে. কখনো মায়ের কাছে যাচ্ছে, কখন দাদুর ঘরে, কখনো নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে দেখছে.
-উফফফ বাবু এমন ঘোরাঘুরি না করে ওপরে গিয়ে একটু পড় না..... মায়ের হালকা বকুনি খেয়ে অর্ক দোতলায় চলে এলো. ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো বাবা সোফায় বসে. সামনে টিভি চলছে. কিন্তু বাবার দৃষ্টি টিভিতে নেই. বাবার দৃষ্টি হাতে ধরে থাকা ওই মূর্তিটার ওপর. ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে ওটাকে ওর বাবা.
- কি দেখছো ওটা বাবা?
বাবা যেন কোনো খেলে ডুবে গেছিলো তাই মনেহয় অর্কর কথা কানেই যায়নি ওনার. উনি দেখছেন মূর্তিটা.
অর্ক বাবার গায়ে হাত রেখে বলল: বাবা? কি দেখছো ওটা?
এবারে ওর বাবা বললেন : হ্যা? কি? ওহ না. কিছুনা... এই মূর্তিটা.... মানে... মানে......... কি সুন্দর দেখতে...... অপূর্ব মুখটা মেয়েটার.
আবার কি ভাবতে লাগলো বাবা. অর্ক আর বাবার দিকে না তাকাই রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টিয়ে ডোরেমন দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো.
রাতে খাওয়ার পরে ওরা দোতলায় উঠে এলো. এখন অর্কর দাদুর শরীরটা কিছুটা ঠিক. উনি ঘরে শুতে চলে গেলেন. শাশুড়ির সাথে বাকি কাজ সেরে অর্কর মাও ওপরে চলে এলো.
রাতে একবার করে স্নান করার অভ্যেস অতনু বাবুর. তিনি ঘুমোনোর আগে স্নান করতে ঢুকে গেলেন. বাইরের ঘরে অর্ক বসে টিভি দেখছে. একটু পরে মা উঠে এসে ছেলেকে টিভির সামনে হা করে বসে থাকতে দেখে একটু রেগেই বললেন..
মা : যতটা ধ্যান টিভিতে দিচ্ছ অতটা যদি অংকে দিতে তাহলে আর আমার চিন্তা থাকতোনা. মনে আছে আগের বারে পরীক্ষায় কত গুলো ভুল করেছিলি তুই বাবাই ?
অর্ক : মা.... প্লিস... সারাদিন তো পড়ি. এই শনিবার আর রবিবারটা ছাড়ো আমাকে প্লিস... মা সোনা মা.... আমি আবার সোমবার থেকে তোমার সব কোথা শুনবো.
মা হেসে : হ্যা... শুনে তো একেবারে উল্টে যাচ্ছ তুমি.
শ্রীপর্ণা ছেলের সাথে কথা বলছিলো এমন সময় ওদের বাথরুমের থেকে ওনার স্বামী হঠাৎ ডাকলো - হ্যা বলো
শ্রীপর্ণা বাথরুমের কাছে গিয়ে বললেন : কি হলো?
অর্কর বাবা : ডাকলে কেন?
অর্কর মা : আমি? আমি আবার তোমায় কখন ডাকলাম?
বাবা : যা বাবা.... এই একটু আগেই দরজায় টোকা দিলেনা?
মা : কি? আমি? আমিতো ছেলের সাথে কথা বলছিলাম. কি বলছো কি?
বাবা : ওমা...... সেকি....... আমি স্নান করছিলাম..... মনে হলো দরজায় টোকা দিলো কেউ. একবার না...... দুদুবার. আমি বললাম কে? কোনো জবাব নেই. তাইতো আমি দরজা খুলে তোমায় ডাকলাম.
মা : ও তুমি ভুল কিছু শুনেছ... ছাড়ো... স্নান করা হয়নি এখনও?
বাবা : হ্যা.. এই বেরোচ্ছে.... কিন্তু শ্রীপর্ণা... সত্যি বলছি... স্পষ্ট শুনলাম কেউ....
অর্কর মা ওনাকে থামিয়ে বললেন : আরে কে ডাকবে? আমি আর তোমার ছেলে তো টিভির ঘরে. ও তুমি ভুল শুনেছ. ছাড়ো... তাড়াতাড়ি করো.
চলবে.....
বন্ধুরা নতুন পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন. এবং ভালো লেগেছে থাকলে Like ও Reps দিতে পারেন.একজন লেখককে inspiration দিতে ওই টুকুই যথেষ্ট