25-08-2020, 11:39 PM
সব বিষয়ে শোনার পরে ইন্দ্রাণী হেসে বলে, "না দানা, আমার জন্য আর তোমার চিন্তা করতে হবে না। কারন, রঞ্জনের পদন্নোতি হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা এই শহর ছেড়ে চলে আমগুরি চলে যাচ্ছি। পাহাড়ের কোলে বেশ বড় শহর আমগুরি, ছেলে মেয়েদের কাছেও থাকতে পারব আমরা।"
ইন্দ্রাণী চলে যাবে জেনে দানার মন খানিক ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। দানার হাতে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলে, "এই দানা তাই বলে ভেব না যে মহুয়াকে না দেখেই আমি এখান থেকে যাবো। তোমার বিয়ে খেতে পুরো পরিবার নিয়ে উপস্থিত থাকবো চিন্তা নেই।"
দানা জানায় অচিরে দেখা করাবে, কিন্তু ইন্দ্রাণী নাছোড়বান্দা, আগামী কাল দেখা করতে চায়। মোবাইল খুলে মহুয়া আর রুহির ছবি দেখায়। কচি শিশু রুহি আর মহুয়াকে দেখে, ইন্দ্রাণী যারপরনাই আনন্দিত। ইন্দ্রাণীকে এই কয়দিন একটু সাবধানে চলাফেরা করতে অনুরোধ করে। ইন্দ্রাণী হেসে জানিয়ে দেয়, যে কয়েকদিনের মধ্যে কলেজ যাওয়া ছেড়ে দেবে। বাড়ির জিনিস পত্র ঘুছানোর আছে, নতুন জায়গায় স্বামী কন্যে আর পুত্রকে নিয়ে নতুন ভাবে সংসার তৈরি করার এক অনাবিল উত্তেজনায় ইন্দ্রাণীর হাওয়া ভাসছে। ইন্দ্রাণীর ওই হাসি মুখ দেখে দানা একটু ভারাক্রান্ত হলেও, খুশি হয়, এইবারে বিনা দ্বিরুক্তিতে মহুয়াকে কাছে পেতে পারে।
বিদায়ের নেওয়ার জন্য দানা উঠে দাঁড়ায়। সেই সাথে ইন্দ্রাণীও উঠে দাঁড়ায়। ওর পাশে এসে মিহি কণ্ঠে বলে, "শেষ বারের মতন একবার জড়িয়ে ধরবে না।"
দানার চোখ ছলকে ওঠে। ছলছল নয়ন কিন্তু ইন্দ্রাণীর লাল ঠোঁটের মিষ্টি হাসি দেখে দানা, ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যায়। দানা, ইন্দ্রাণীকে কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে আনে। ইন্দ্রাণী হাত দুটি দানার কাঁধে উঠে যায়, উষ্ণ প্রেমের শ্বাসে ইন্দ্রাণীর স্তন জোড়া ফুলে উঠে দানার প্রশস্ত ছাতির সাথে পিষে যায়। কঠিন আঙুলের ভালোবাসার পরশে ইন্দ্রাণীর কমনীয় দেহ পল্লব অসাড় হয়ে আসে। দানা ইন্দ্রাণীর কোমরের দুপাশে হাত রাখে, ইন্দ্রাণীর ওর প্রশস্ত বুকের ওপরে হাতের তালু মেলে আদর করে বুলিয়ে দেয়। দানা মাথা নিচু করে ইন্দ্রাণীর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। ইন্দ্রাণী দানার জামার কলার খামচে ধরে নিজের ঊর্ধ্বাঙ্গ দানার ছাতির সাথে মিশিয়ে ওর দেহের উত্তাপ নিজের দেহে মাখিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে। দুই প্রেম পিপাসু নর নারী চোখের ভাষা বিদায়ের ক্ষণের অন্তিম মিলনের চাহিদা ব্যাক্ত করে। দানা ওর কাজল কালো গভীর চোখের তারায়, মণি নিবিষ্ট করে তাকিয়ে থাকে।
কঠিন হাতের উষ্ণ পরশে ইন্দ্রাণীর শুন্য চিত্ত ভরে ওঠে। একবারের জন্য মনে হয় নিজেকে উজাড় করে দিতে, কিন্তু পরখনেই পিছিয়ে আসে কিছু একটা বাঁধা পেয়ে। সেই পুরানো দানা, যে ওকে ভালোবাসার পথ দেখিয়েছিল, রাতের পর রাত ওর মাথার কাছে বসে থাকত, ওর নেশা গ্রস্থ অর্ধ অচেতন দেহ কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিত। সেই দানার চোখের আগুনে চাহনি, প্রগাড় আলিঙ্গন, বুকের ধুকপুক, শরীরের উত্তাপ ইন্দ্রাণীকে অবশ করে দেয়। দানা ইন্দ্রাণীর কোমর জড়িয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে দেয় ওর মুখের কাছে। ধীরে ধীরে ইন্দ্রাণীর দুই চোখের পাতা অবশ হয়ে ভারী হয়ে যায়। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া অল্প খুলে অধর মিলনের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে পরে। ধীরে ধীরে দানার ঠোঁট নেমে আসে ইন্দ্রাণীর লাল নরম ঠোঁটের ওপরে। চোখ বুজে, দানার গলা জড়িয়ে ইন্দ্রাণী, দানার গভীর আলিঙ্গনে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। কোমর জড়িয়ে খোলা পিঠে হাত বুলিয়ে উত্তপ্ত করে তোলে কমনীয় নারীকে। দানারগলা জড়িয়ে চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে চুম্বন নিবিড় করে নেয় ইন্দ্রাণী। ওদের চারপাশে সময় থমকে দাঁড়িয়ে পরে। দুইজনে এই ক্ষণ অনন্ত কালের জন্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু সময়ের কাঁটা কারুর অপেক্ষা করে না। কতক্ষণ ওইভাবে পরস্পরের অধর মিশিয়ে শেষ বারের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল খেয়াল নেই। তবে একসময়ে ইন্দ্রাণী নিজেই ওই গভীর অধর চুম্বন থেকে নিজেকে মুক্ত করে দানার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়।
বিদায়ের বেলায় ইন্দ্রাণী ওকে বলে, "কাল সকালেই আমি মহুয়ার সাথে দেখা করতে চাই। ঠিক এগারোটা নাগাদ আমার বাড়িতে চলে আসবে। না হলে আধা ঘন্টার মধ্যে আমি তোমার গুমটিতে গিয়ে হানা দেব কিন্তু।"
দানা মাথা নুইয়ে হেসে ফেলে, "যথাআজ্ঞা মহারানী, আপনার আদেশ শিরোধার্য।"
ইন্দ্রাণী ওর বুকের ওপরে একটা চাঁটি মেরে মিষ্টি হেসে বলে, "এইখানের মহারানী বদলে গেছে। তোমাকে থাকতে বলতাম কিন্তু রঞ্জন আজ রাতে বাড়ি ফিরছে না তাই আর বললাম না।" বলেই হেসে ফেলে ইন্দ্রাণী।
দানাও ইন্দ্রাণীর সেই বাক্য শুনে হেসে দেয়। ওর ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে হেসে বলে, "না গো পাখী, এই মিষ্টি হাসি নিয়েই তুমি থাকো সেটাই আমার কাম্য।"