Thread Rating:
  • 33 Vote(s) - 3.15 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
এতক্ষণ দানার কাহিনী শোনার পরে ইন্দ্রাণী ওকে হেসে প্রশ্ন করে, "তোমার মতন একটা ছেলে নয়না বোসের ড্রাইভার? বাপ রে, এই কয় মাসে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ তাহলে।"

দানা মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়, "হ্যাঁ, অনেক কিছু দেখেছি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।"

ইন্দ্রাণী বেশ কিছুক্ষণ দানার দিকে তাকিয়ে থাকে। দানার চোখে সেই পুরানো আগুন দেখতে পেয়ে ইন্দ্রাণীর চিত্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। নিজেকে একটা বাঁধের আড়ালে ঢেকে দুই হাতের নখ খোঁটে, কিছু একটা বলতে গিয়ে আটকে যায়। একটু ইতস্তত ভাব দেখা দেয় মনের আঙ্গিনায়। কি জিজ্ঞেস করতে চাইছে ইন্দ্রাণী?

ইন্দ্রাণী উৎসুক চাহনি দেখে দানা আর থাকতে পারে না, ইন্দ্রাণীর কাছে এসে বলে, "তোমাকে আজ ভারী সুন্দরী দেখাচ্ছে পাখী। এই শাড়িতে আরও বেশি সুন্দরী লাগছে তোমাকে।"

বহু দিন পরে দানার মুখে ওই বুলি শুনে ইন্দ্রাণীর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মিষ্টি হেসে ওকে বলে, "তাই নাকি শয়তান ছেলে?"

দানা মৃদু কণ্ঠে বলে, "তোমার ওই কাজল কালো চোখের তারায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।"

ইন্দ্রাণীর চোখ ছলছল করে ওঠে, "কে বারন করেছিল হারিয়ে যেতে? ইচ্ছে করেই চলে গেছিলে।"

দানার চোখ ছলছল করে ওঠে ওই কথা শুনে, "বড় পাপ করেছিলাম যে। তোমাকে খুব মনে পড়তো জানো।"

ইন্দ্রাণী উঠে দাঁড়ায়, রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু থমকে দাঁড়িয়ে দানার দিকে দেখে ঠোঁট কামড়ে ধরে ছল ছল চোখে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে দানাকে প্রশ্ন করে, "এতদিন আমার কথা মনে ছিল না, শয়তান ছেলে। এতদিন পরে প্রেম দেখাত এসেছো?"

দানা সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে দামামা বাজতে শুরু করে দেয়। দোদুল্যমান দানার চিত্ত কোন দিকে যাবে বুঝে উঠতে পারে না। ওর হৃদয় মাঝে নিষ্পাপ মিষ্টি সুন্দরী মহুয়ার বাস।

দানা ওর কোমল হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নিয়ে বলে, "পাখী, তুমি....." কথাটা কোন এক অব্যাক্ত কারনে শেষ করতে পারলো না দানা।







গোধূলি লগ্ন (#০২)

ইন্দ্রাণীর চোখের কোল উপচে পড়ে। হৃদয় দুলে ওঠে, দানার চোখ ওকে ভীষণ ভাবে কাছে টানে, কিন্তু এক দ্বিধা বোধ মনে কোনায় জেগে ওঠে ইন্দ্রাণী। তপ্ত হাতের ছোঁয়ায় শরীর অবশ হয়ে আসে, কিন্তু এই ইন্দ্রাণী অনেক মার্জিত। ধীরে ধীরে নিজের হাত দানার হাতের মধ্যে থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

মৃদু হেসে দানাকে বলে, "তুমি সোফায় বস আমি তোমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি।"

দানা এখানে কফি খেতে আসেনি, এসেছিল ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা করতে আর পারলে ইন্দ্রাণীকে কোন নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখতে। দেখা করা হয়ে গেছে, আর মহুয়া যে ভয় করেছিল সেটা সত্যি হয়ে গেছে। কিন্তু এখন ইন্দ্রাণীকে লুকিয়ে ফেলার কথাটা ওকে বলা হয়নি। আবার সেই নিজের ভুলে ইন্দ্রাণীর জীবন বিপন্ন করেছে, কোন মুখে ইন্দ্রাণীকে সেই কথা জানাবে দানা। ইন্দ্রাণীর হাত ছেড়ে, মৃদু হেসে চুপচাপ বসার ঘরে চলে যায়। নিস্পলক চোখে ইন্দ্রাণীর যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে থাকে। বেশ কিছু পরে ইন্দ্রাণী একটা ট্রেতে কফির কাপ আর কিছু খাবার নিয়ে টেবিলে রাখে।

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে দানা একভাবে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ইন্দ্রাণী বুঝে যায় দানা কি চিন্তা করছে। ওর চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করে, "তুমি কি এখনও আমাকে ভালোবাসো দানা?"

ওই প্রশ্ন শুনে দানা নড়ে ওঠে, এর কি উত্তর দেবে। সেই সাথে ইন্দ্রাণীকে দেখে ওকে ফিরে পাওয়ার এক সুপ্ত ইচ্ছে মনের এক কোনায় দেখা দেয়। একপাশে ইন্দ্রাণী অন্যপাশে মহুয়া, দুইজনকে সমান ভাবে ভালোবাসে। কাকে ছেড়ে কার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে দানা? মহুয়া অবশ্য ইন্দ্রাণীর ব্যাপারে সব জানে, জানে দানা একসময়ে ইন্দ্রাণীকে খুব ভালবাসতো, কিন্তু ছলনায় পরে আর নিজের ভুলে ইন্দ্রাণীকে হারিয়েছে। হয়তো ইন্দ্রাণীর সাথে আবার দেখা হলে সেই পুরানো প্রেম জেগে উঠবে। নিজের চিত্ত কে স্বান্তনা দিয়ে, কঠিন চিত্তে বুক বেঁধে গত কয়েক দিনেই নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আসন্ন বিরহের প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।

ইন্দ্রাণীর এই মানসিক দ্বন্দ, মানসিক ঝঞ্ঝা দানার নজর এড়ায় না। বুঝে যায়, ইন্দ্রাণী আর ওকে সেই আগের মতন নজরে দেখে না। শক্তি আর বলাইয়ের মুখে ইতিমধ্যে শুনেছে একজন ভদ্র লোকের কথা। কে সেই ভদ্রলোক, কি তার আসল পরিচয়, সেই ভদ্রলোক কি ইন্দ্রাণীকে ভালোবাসে? ইন্দ্রাণী নিশ্চয় তাকে ভালোবাসে বলেই এতদিন পরে দানার সাথে দেখা হবার পরেও ঠিক ভাবে নিজের চিত্তকে মেলে দিতে পারছে না।

হৃদয় দুলে দুলে ওঠে। দোদুল্যমান দানার মন, শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয়ের কথাটা ব্যাক্ত করেই ফেলে, "হ্যাঁ পাখী আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি।" কিন্তু না, দানা শেষ পর্যন্ত ওই কথা মুখে আনতে পারলো না। নিরুত্তর দানা নিস্পলক নয়নে ইন্দ্রাণীর ম্লান হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

দানাকে নির্বাক দেখে ইন্দ্রাণী ছলছল চোখে দানার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলে, "তুমি, আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে চলে গেলে, জানো।"

ইন্দ্রাণী চোখের কোল মুছে নিজের কথা বলতে শুরু করে। দানাকে দেওয়া কথা মতন, রাতে বেরাতে বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। বি.এড. করা ছিল না, তাই কোন বড় কলেজে চাকরি পায়নি। একটা ছোট বাচ্চাদের মন্টেসরি কলেজে বাচ্চাদের পড়ায় আর বি.এড. করতে শুরু করে দেয়। দানা চলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরে কঙ্কনার ফোন আসে। ইন্দ্রাণী ওর ফোন পেয়ে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, বিশেষ কিছু কথা না বাড়িয়ে ওর সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। তারপরে কোনোদিন আর কঙ্কনার সাথে দেখা হয়নি। তবে একবার রমলার সাথে দেখা হয়েছিল। কলেজ আর বাচ্চাদের পড়াশুনা নিয়েই দিন কেটে যায়।

সব কথা বলার পরে ইন্দ্রাণী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ওর চোখে চোখ রেখে বলে, "দানা একটা কথা বলতে চাই তোমাকে।"

উৎসুক হয়ে দানা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইন্দ্রাণী ওকে বলে, "তুমি আর আমি দুই ভিন্ন মেরুর মানুষ।" দানা এটা অনেকদিন আগেই বুঝে গিয়েছিল তাই এক সময়ে ওর থেকে দূরে সরে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষ থেকে এত ভীষণ আকর্ষণ দেখা দেবে সেটা ভেবেই পায়নি। ইন্দ্রাণী বলে চলে, "স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়, দানা। কিন্তু দানা, বাবা মায়ের মধ্যে, ভাই বোনের মধ্যে বিচ্ছেদ কখন শুনেছ তুমি?" কি কথা বলতে চায় ইন্দ্রাণী সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। ইন্দ্রাণী বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, "দানা, আমার স্বামী রঞ্জন আবার ফিরে এসেছে।"

অন্যকারুর সাথে ইন্দ্রাণীকে দেখলে হয়ত এতটা অবাক হত না দানা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওর স্বামী? যে মানুষ একসময়ে ইন্দ্রাণীর বিশ্বাস, ইন্দ্রাণীর ভালোবাসা উপেক্ষা করে অনেক মেয়ে সাথে কাটিয়েছে।

ইন্দ্রাণী ম্লান হেসে দানার মনের ভাব বুঝে বলে, "তুমি চলে যাবার পরে আমি বড় একা হয়ে গেলাম। আমিও ওই রাতে ঘুরে বেড়ান ছেড়ে দিলাম, কলেজ বাচ্চা আর পড়াশুনা নিয়ে মেতে উঠলাম। পুরুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস অনেক আগে থেকেই চলে গিয়েছিল, কিন্তু তুমি থাকাতে সেটা একবার জন্মে ছিল। তোমাকে হারানোর পরে আবার সেই পুরুষের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা জন্মে গেল। বারেবারে দুই বার, আমি খুব ভেঙ্গে পড়ে গেলাম। একমাস পরে রঞ্জন এই শহরে বদলি হয়ে আসে। মাঝে মাঝেই রঞ্জন আমার বাড়িতে আসতো। মাঝে মাঝেই আমাদের এখানে সেখানে দেখা হয়ে যেত। ধীরে ধীরে কেন জানি না, স্বামীর মধ্যে এক প্রেমিকের খোঁজ পেয়ে গেলাম। কখন জানি না, রঞ্জন সেই শুন্যস্থানে ঢুকে আমাকে ভরিয়ে দিল। বিয়ের কুড়ি বছর পরে, ছেলে মেয়েকে সাথে নিয়ে এই শীতে কাশ্মীর গেলাম হানিমুনে।" বলেই হেসে ফেলে ওই ছবি দেখায়, "অনেক কিছুই ফিরে পেলাম দানা।" বলে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলে, "আমাকে মন থেকে মুছে ফেল দানা।"

দানার হাতের ওপরে ইন্দ্রাণীর কোমল উষ্ণ হাত বেশ কিছুখন থমকে থাকে। দানার মনের সব দ্বিধা দ্বন্দ এক নিমেষের মধ্যে কেটে যায়। ইন্দ্রাণীকে আমরন ভালবাসতে কষ্ট নেই, তবে এইবারে মহুয়ার কাছে অকপটে ফিরে যেতে পারবে। অন্তত ইন্দ্রাণীর বুক চিরে মহুয়াকে কাছে পেয়েছে সেই মনোভাব আর থাকবে না।

দানা, হেসে ইন্দ্রাণীর হাতের ওপরে হাত রেখে হেসে ফেলে, "জানো পাখী, আমিও একজন কে ভালোবাসি, মানে সে আমাকে ভালোবাসে।"

ইন্দ্রাণীর মন খুশিতে নেচে ওঠে অবাক চোখে প্রশ্ন করে, "কে সে ভাগ্যবতী? তোমার নজর বরাবর সুন্দরীদের ওপরেই। কি নাম কোথায় থাকে?"

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মিচকি হেসে বলে, "রাজস্থানি মেয়ে মহুয়া বাজপাই, খুব মিষ্টি মেয়ে। আমার চেয়ে মনে হয় এক বছরের বড় হবে। ওর একটা ছোট মেয়ে আছে, রুহি।"

ইন্দ্রাণী কপাল চাপড়ে হেসে ফেলে, "কি যে বলি না তোমাকে, দানা। বিবাহিতা মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ তোমার নজরে পড়ে না তাই না।"

দানা মাথা চুলকিয়ে ওকে বলে, "না মানে মহুয়ার সাথে দেখা হওয়া আর প্রেমে পড়া একটু অন্যভাবে হয়েছে।" তারপরে সবিস্তারে মহুয়ার ব্যাপারে জানায়। মহুয়ার সাথে প্রথম দেখা, লোকেশের বাড়িতে। মহুয়ার পরিচয়, কি ভাবে মহুয়াকে ইতর লোকেশের হাত থেকে বাঁচিয়েছে ইত্যাদি।

মহুয়ার সম্বন্ধে শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে আতঙ্কে আঁতকে ওঠে ইন্দ্রাণী, মানুষ কি সত্যি মনুষত্ব হারিয়েছে? কোন মানুষ কি নিজের বিধবা বৌমাকে এই ভাবে যৌন নির্যাতন করে নাকি? একমাত্র বিকৃত কাম মনস্ক পিশাচেরা এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। তবে খুশি হয় দানার সাহস আর ভালোবাসা দেখে।

শেষ পর্যন্ত হেসে ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, "কবে দেখা করাচ্ছো তোমার প্রেমিকার সাথে।"

দানা মাথা চুলকে বলে, "মেয়েটা একটু ক্ষেপে আছে।"

ইন্দ্রাণী আঁতকে ওঠে, "কেন, আবার কি করেছ ওর সাথে।"

এইবারে আসল কথায় আসতেই হবে, দানার এইখানে আসার আসল কারন আর মহুয়ার ক্রোধ দুটোই পরস্পরের সাথে জড়িত। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দানা শুরু করে নয়নার কাহিনী। নয়নার সাথে, রাজনৈতিক নেতা বিমান চন্দের গোপন সম্পর্ক, রাজনৈতিক নেতা বাপ্পা নস্করের সাথে সম্পর্ক। সেই সাথে সঙ্গীতাকে ;.,ের ঘটনা। বাপ্পা নস্করকে খুনের পরিকল্পনা আর রমলার কাছ থেকে নয়না জেনে যায় দানার আর ইন্দ্রাণীর মেলামেশা। ইন্দ্রাণীর মুখ শুকিয়ে যায় এই জটিল পরিস্থিতির কথা শুনে। দানাকে বাগে ফেলার জন্য নয়না হয়ত ওকে আঘাত করতে পারে। সেই শুনে আতঙ্কে ইন্দ্রাণী শিউরে ওঠে। দানা ওকে অভয় দিয়ে বলে ওর কিছু হবে না, কারন ওর বাড়ির ওপরে বেশ কয়েকদিন থেকেই দুই জন লোক নজর রেখে চলেছে। সেই শুনে ইন্দ্রাণী অবাক হয়ে যায়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 25-08-2020, 08:07 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)