Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#75
#চোরাবালি
পর্ব চার। অনুভূতি (#3-#21)
তিতাস কে গাড়িতে বসিয়ে, দরজা খুলে বেড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। বুক ভরে শ্বাস নেয় অভিনন্দন চ্যাটারজি, কি করছিস তুই? উত্তর আসে, শুধু মাত্র বন্ধুত্ত্ব, ব্যাস আর কি। সবে মাত্র দুটো টান দিয়েছিল সিগারেটে। গলির বাঁকে, ত্রস্ত পায়ে দিয়াকে ওর দিকে আসতে দেখে মনে মনে হেসে ফেলে। হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু একি, হাতে ব্যাগ নেই, পরনে খুব সাদা মাটা একটা হলদে রঙের সালোয়ার কামিজ। ঘড়ি দেখল অভি, এখানেই সাড়ে বারোটা বাজে। এখন দিয়া তৈরি হয়নি, কখন বের হবে আর কখন পৌঁছাবে।
ওর সামনে এসে, ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তুমি না বড্ড শয়তান।”
অভি হেসে বলতে যাচ্ছিল, আমি কেন শয়তান হলাম।
কোন কথা শোনার অপেক্ষা করে না দিয়া। গাড়ির দরজা খুলে তিতাসকে কোলে তুলে বলে, “দুত্তু মিত্তি সোনা, একা একা বসে কি করছ?”
তিতাসকে কোলে নিয়ে একটু তফাত হয়েই দাঁড়ায়। চোখে সলজ্জ এক হাসি মাখিয়ে একটু গলার স্বরে দ্বিধাবোধ নিয়ে বলে, “তুমি দশ মিনিট দাঁড়াও আমি এখুনি তৈরি হয়ে আসছি।”
দিয়ার সলজ্জ হাসির অর্থ বুঝতে বেগ পেতে হয় না অভির, ওর গায়ে দামী সুট, হাতে দামী ঘড়ি দেখে নিশ্চয় বাড়িতে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করছে। দিয়ার মনের দ্বিধাবোধ কাটাতে উত্তর দেয়, “ও কিন্তু খুব দুষ্টু, তুমি ওকে একা রাখতে পারবে না কিন্তু।”
দিয়া তাও ওকে একটু হেসে বলে, “না না, আমি ঠিক পারবো।”
দিয়ার ভাসা ভাসা দুই চোখের নীলচে মণির দিকে তাকিয়ে বলে, “ইস হামাম মে হাম সব নঙ্গে হ্যায় দিয়া। (এই স্নান ঘরে আমরা সবাই ল্যাংটো)। এই সুট দেখে কি লাভ বল।”
হাসিটা মিলিয়ে যায় দিয়ার ঠোঁট থেকে, অভির মুখের দিকে তাকিয়ে তিতাসকেই কোলের মধ্যে খুব জোরে চেপে ধরে নিচু গলায় বলে, “তুমি আসবে একবারও বলতে পারলে না?”
অভি বলতে যাচ্ছিল, তাহলে কি আর সারপ্রাইজ দিতে পারতাম নাকি? সেটা না বলে, দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে মুচকি হেসে বলে, “এই হটাত করেই দিদিভাই আসতে বলল তাই ভাগ্নেকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।”
অভির চাহনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো কেমন যেন অবশ হয়ে আসে। কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে...” ঠোঁট জোড়া অল্প কেঁপে ওঠে, কি উত্তর দেবে দিয়া, ওযে সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
অভি ওর হারিয়ে যাওয়া ভাষা ধরে নিয়ে বলে, “চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
এতক্ষন দিয়ার কোলে তিতাস চুপচাপ একবার মামার মুখের দিকে তাকায়, একবার যার কোলে আছে তার দিকে তাকায়। এই দুটোর মধ্যে কি যে চলছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
তিতাসকে কোলে করে দিয়া নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেল। গলির শেষ প্রান্তে দিয়াদের বাড়ি। তিতাস বেশ মিশে গেছে দিয়ার সাথে, তুমি চকলেট খাও? তিতাস মাথা দুলিয়ে, হ্যাঁ খুউব। “মামা দুষ্টু?” “হুম, মামা ব্যাড বয়।” হেসে ফেলে দুইজনেই। ঘেরা দেওয়া বারান্দায় একটা তক্তপোশ পাতা, পাশে দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার। অভিকে ঢুকতে দেখে, দিয়ার মা প্রশ্ন করেন, কে রে? গলা নামিয়ে অভির পরিচয় দিতেই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পরেন। অভি মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানিয়ে অনুরোধ করে যেন ব্যাতিব্যাস্ত না হন। দিয়া, ওকে বসতে বলে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। এর মাঝে দিদিভাইয়ের ফোন, তোরা বেরিয়েছিস কি? অভি উত্তর দেয়, বেড়িয়ে পড়েছে, দিয়াকে সাথে নিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে।
বেশ কিছু পরে একটা ব্যাগ আর একটা বাক্স হাতে দিয়া বেড়িয়ে এলো, “চলো আমি তৈরি।”
তিতাস কে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে যাওয়ার সময়ে একবার আপাদমস্তক দিয়াকে দেখে নেয় অভি। দিয়ার গোলগাল দেহের ওপর লাল রঙের টপ সাথে কালো জিনস দারুন মানিয়েছে। লম্বা চুল একটা হাত খোঁপা করে বাঁধা, তাতে একটা কাঠের ক্লিপ গোঁজা। ইচ্ছে করেই দুকদম পেছনে হাঁটে, শয়তান মন, সুগোল দুই নরম নিতম্বের দুলুনি দেখে অভির বুকের রক্তে দোলা লেগে যায়।
আড় চোখে অভির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে দিয়া, “কি হল এখন দেরি হচ্ছে না?”
ধরা পরে যাওয়াতে ভীষণ লজ্জায় পরে যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাশাপাশি এসে বলে, “না মানে এই বদমাশ টাকে কোলে নিয়ে হাঁটা একটু মুশকিল।”
ভুরু উঁচু করে অবাকের সুর টেনে বলে, “ও আচ্ছা তাই নাকি? কিন্তু তোমার চোখ অন্য কোথাও ছিল।”
লজ্জা পেয়ে যায় অভি, “না আমি এই আশেপাশের জায়গা দেখছিলাম।”
গাড়ির দরজা খুলে ব্যাগ বাক্স রাখতে রাখতে দিয়া জবাব দেয়, “এটা শিমলা মানালি নয় যে আশেপাশে অনেক কিছু দেখার আছে।” বলেই ফিক করে হেসে দেয়।
অভি তিতাসকে কোল থেকে নামিয়ে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে সত্যি কথায় পারা যায়না।”
দিয়া কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়ে ঠোঁট কেটে হেসে বলে, “অনেকটা রাস্তা, কত সময় লাগবে?”
গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিয়ে দিয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়, “কম করে ঘন্টা তিনেক।”
মাথা দোলায় দিয়া, “বেশ একটা আরাম করে ঘুম দেয়া যাবে কি বল।” বলেই জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
অনেক কথা বলেছে দিয়া, এবারে একদম চুপ, সব কিছু কি সেই বলবে নাকি? অভি কি কোন সারা শব্দ করবে না? মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে কানে গুঁজে, সিটের ব্যাক রেস্টে মাথা এলিয়ে দিয়ে, জানালার দিকে ফিরে চোখ বুজে নেয়। হেডফোন শুধু মাত্র দেখানোর জন্য লাগিয়েছে, কোন গান চালায়নি, পাছে যদি অভি কোন কথা বলতে চায় আর যদি ওর কানে না পৌঁছায় সেই ভয়ে। ওর দুই কান সজাগ থাকে, কখন কিছু ত বলবে অভি। বুকের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা, কিছু বল, কিছু বল। বাইক নিয়ে একা আসতে পারত, বেশ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে এতটা পথ একসাথে যেত। এই ভালোলাগা, এই আকর্ষণ, এই ভীষণ দোলা, একবারের জন্য অনুভব করতে চেয়েছিল।
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার দিকে তাকায়, যাঃ বাবা, সত্যি ঘুমাবে নাকি মেয়েটা। কোলে বসে তিতাস জানালার বাইরে তাকিয়ে এক মনে এক এক করে গাড়ি, ট্রাক বাস ইত্যাদি দেখে চলেছে। গাড়ি চলছে, একাটানা ভ্রুম ভ্রুম ভ্রুরররর আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নেই, মাঝে মধ্যে পাশের গাড়ির হর্ন। দুইজনে চুপচাপ, ভীষণ চুপচাপ। কিছুক্ষনের মধ্যে তিতাস মামার কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে ঘুমিয়ে পরে। অভি, দিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে, কানে হেডফোন গুঁজে চুপচাপ চোখ বুজে পরে রয়েছে। জিনসের জ্যাকেটের মধ্যে থেকে লাল টপের ভেতরে হাঁসফাঁস করা দুই সুউন্নত স্তন জোড়া ভীষণ ভাবেই উঁচিয়ে। হাল্কা শ্বাসের ফলে আর গাড়ির দুলুনিতে নরম স্তন জোড়া দুলে দুলে উঠছে। অভির চোখ আটকে যায়, দিয়ার গলায়, একটা ছোট তিল ঠিক গলার মধ্যি খানে। কি মেখেছে বলা মুশকিল কিন্তু গন্ধটা ভারী মিষ্টি, একবার মনে হয়েছে যে মসৃণ ঘাড়ে নাক গুঁজে দিয়ার গায়ের গন্ধে মাথা ডুবিয়ে উন্মাদ হয়ে যাওয়া। ভাবতে ভাবতে নিজের মনে হেসে ফেলে অভি। খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, কেন সেই রাতে আস্তে চালাতে বলেছিল।
দ্বিধা কাটিয়ে গলা খ্যাঁকরে প্রশ্ন করে, “ঘুমালে নাকি?”
কান বরাবর সজাগ ছিল, তাও না শোনার ভান করে চুপচাপ চোখ বন্ধ করেই পরে থাকে দিয়া।
অভি এবারে একটু জোর গলায় প্রশ্ন করে, “ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?”
বলেছে, এইবারে সত্যি বলেছে। চোখ খুলে অভির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “না মানে, অনেক লম্বা জার্নি তাই ভাবছিলাম একটু রেস্ট নিয়ে নেই।”
অভি হতাশ কণ্ঠে বলে, “ওহ আচ্ছা, বেশ। গত রাতে ঘুম হয়নি?”
দিয়া হেসে ফেলে, “না না, বেশ ঘুম হয়েছে, আমি খুব ঘুম কাতুরে। একটা বালিশ পেলেই হল ব্যাস।”
অভি প্রশ্ন করে, “সত্যি নাকি?”
ঘুমন্ত তিতাসের গালে আদর করে প্রশ্ন করে, “তোমার কাছ একদম ছাড়ে না, তাই না?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “না, এখানে এলে অথবা আমি যখন মুম্বাই যাই একদম আমার কাছ ছাড়ে না।”
আবার কিছুক্ষন দুইজনেই চুপচাপ, গাড়ির একটানা আওয়াজ, পাশের গাড়ির হর্ন। এক ঘেয়েমি কাটাতে দিয়া প্রশ্ন করে, “আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব, একটু পার্সোনাল?”
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার দিকে তাকায়, কি জিজ্ঞেস করতে চলেছে মেয়েটা। মনে মনে হেসে ফেলে, যেটা সবাই জিজ্ঞেস করে সেটাই হবে। এত পড়াশুনা করেও কেন বাড়িতে বসে অথবা তোমার কোন গারলফ্রেন্ড আছে?
দিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত চুপচাপ কেন?”
একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে হেসে উত্তর দেয়, “কোথায় চুপচাপ, এই’ত কথা বলছি।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “না মানে আগের দিন সেইভাবে কথাবার্তা বললে না।”
অভি উত্তর দেয়, “ওহ, সেটা ত কাজের ব্যাস্ততা।” বলে হেসে ফেলে, “ঝন্টুর বিয়ের কথা মনে আছে?”
খিলখিল করে হেসে ফেলে দিয়া, “বাপ রে সে কথা কি আর ভুলতে পারি নাকি?”
হাসিটা ভীষণ মন কাড়া, হাসির সাথে বুকের দুলুনি আরো বেশি করে মন কাড়ে অভির। “লেখা তোমার খুব ভালো বান্ধবী, তাই না?”
দিয়া উত্তর দেয়, “হ্যাঁ খুব।”
দিয়ার কাছ থেকে জানতে পারে যে লেখা একটু চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে, সব সময়ে একটা স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে থাকতে খুব ভালোবাসে, গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে, গান গাইতে ভালোবাসে। অভি মাঝে মাঝে হ্যাঁ, হুম আচ্ছা এইসবেই জবাব দেয়। দিয়া ওদের কলেজের কথা বলে, জিওগ্রাফি অনার্স নিয়ে পড়েছে, কলেজ পালিয়ে সিনেমা দেখা, একটু বদমাশি করা ইত্যাদি। পড়াশুনাতে মোটামুটি ছিল, তাই শুধু মাত্র স্নাতক হয়েই খান্ত দেয়। বেশি পড়াশুনার একদম ইচ্ছ ছিল না দিয়ার। কলেজে থাকাকালীন খুব সাজতে ভালবাসত, সেই কথা বলতে গিয়ে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। সেই সাজতে আর সাজাতে গিয়েই এই মেকআপ করা শিখে যায়। তারপর সেটা কেই নেশা আর পেশায় পরিনত করে। ইচ্ছে আছে কোনদিন নিজের একটা বিউটি পার্লার খুলবে। বিয়ে বোউভাতের মরশুমে বারাসাত, কাজিপাড়া, হৃদয়পুর মধ্যমগ্রাম এমন কি মাঝে মাঝে একনম্বর গেট থেকেও ডাক আসে। আজকাল মেয়েরা ভীষণ ভাবেই সাজে, পারটি তে গেলে, বিয়ে বাড়ি, বউভাত অন্নপ্রাশন, গৃহ প্রবেশ কিম্বা জন্মদিনের পারটি বাঙ্গালীর হুজুগের যেমন শেষ নেই ঠিক তেমনি সাজের বহরের শেষ নেই। অভি এক মনে দিয়ার কথা গুলো শুনে যায়, কত প্রাণবন্ত মেয়েটা। হলদে রঙের সালোয়ার পরে যে মেয়েটা প্রথমে বেড়িয়ে এসেছিল, সেই মেয়েটা আর এই লাল টপ কালো জিনস পরা মেয়েটা অনেক আলাদা।
কথা গুলো বলতে বলতে হটাত দিয়া বলে ফেলে, “জানো, লেখা আমার এই মেকআপের জিনিস কেনার জন্য এক বছর আগে পঞ্চাস হাজার টাকা দিয়েছিল।” একটু আনমনা হয়েই বলে, “বেশ কিছুটা শোধ করে দিয়েছি, পনেরো এখন বাকি। কারুর দেনা রাখতে ভালো লাগে না, বিশেষ করে বন্ধুত্ত্বের মাঝে টাকা পয়সা আনা একদম পছন্দ করি না।” শেষের দিকে দিয়ার গলায় একটু ব্যাথার সুর।
কারনটা জিজ্ঞেস করা উচিত না অনুচিত সেই দ্বিধাতে আর জিজ্ঞেস করল না অভি শুধু প্রশ্ন করল, “আচ্ছা?”
দিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে কণ্ঠে উচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে অভিকে জিজ্ঞেস করে, “বাঃ রে আমিই শুধু বলে যাবো নাকি? তুমি কিছু বল?”
অভি হেসে ফেলে, “কি বলব বল?”
দিয়া উত্তর দেয়, “যাঃ বাবা, তুমি না সত্যি মুখ চোরা।” বলেই হেসে ফেলে, “আচ্ছা তোমার পাহাড় ভালো লাগে না সমুদ্র?”
পাহাড় বলতে ছোট বেলায় দারজিলিং আর গ্যাংটক একবার গেছে। তবে বড়দির বিয়ের পর, বহুবার মুম্বাই গেছে, সেখান থেকে দমন দিউ গেছে কিন্তু গোয়া যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে মুম্বাইয়ের সি-বিচ দেখে সেখানে লোকের ভিড় দেখে সমুদ্র বিশেষ ভালো লাগেনি ওর। আবার পাহাড় তেমন ভাবে টানে না ওকে। এখন ঠিক ভাবে বুঝতে পারেনি ওর কোনটা ভালো লাগে। উত্তরে বলে, “ঠিক জানি না, তবে সমুদ্রও দেখেছি আবার পাহাড় ও দেখেছি। একটা জায়গায় গেলেই হল।” বলেই হিহি করে হেসে ফেলে।
দিয়া অসন্তুষ্ট হয়ে বলে, “তুমি না যাতা লোক, পাহাড় দেখেছ আবার সমুদ্র দেখেছ কিন্তু বলতে পারো না কোনটা বেশি ভালো লাগে?”
অভি একটু হেসে বলে, “পাহাড় বা সমুদ্র নয়, আমার কি ভালো লাগে জানো?” দিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, কি? দিয়ার নীলচে চোখের মণির গভীরে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “শুধু কোথাও হারিয়ে যেতে।”
এইভাবে একদম মুখের সামনে এসে উত্তর দেবে অভি সেটা ভাবতে পারেনি, দিয়া চোখের পলক নামিয়ে লজ্জা পেয়ে হেসে বলে, “ধ্যাত সেটা কোন জায়গা হল নাকি? আমি জায়গার কথা জিজ্ঞেস করছি আর তুমি হেঁয়ালি করছ। বল না, কি ভালো লাগে?”
অভি হেসে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, তোমার কিরকম জায়গায় যেতে ভালো লাগে?”
দিয়া একটু চিন্তা করে উত্তর দেয়, “আমার না, সমুদ্র ভীষণ ভালো লাগে। পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারেবিয়ান মুভি দেখেছ?” অভি মাথা দোলায়, হ্যাঁ। দিয়া বলে, “ঠিক অমন একটা কাঠের জাহাজ হবে, উত্তাল সমুদ্র হবে, কালো ঘন রাতে ভীষণ ঝড় হবে আর আমি জাহাজে কোন এক অন্তহীন সমুদ্র পাড়ি দেব।”
অভি হেসে ফেলে, “বাপ রে, তাহলে একটা পাইরেটের (জলদস্যুর) সাথে প্রেম কর আর কি।”
দিয়াও ঠোঁট কেটে মুচকি হেসে বলে, “জলদস্যু নয় একটা মাটির দস্যু হলেই হবে, ব্যাস।”
অভিও মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “তুমি বেশ ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় থাকতে ভালোবাসো তাই না?”
দিয়া ভাসা ভাসা নয়নে উত্তর দেয়, “রাতের বেলা, বন্ধ দরজা পেছনে একা একা বিছানায় শুয়ে, এই ফ্যান্টাসির দুনিয়াই বেশ ভালো লাগে। দিনের আলো বড় কঠিন, গো।”
অভি ম্লান হেসে বলে, “লাইফ একটা রোলার কোস্টারের মতন, যেমন উপরের দিকে যায় তেমন নিচের দিকে যায়, উলোট পালট হয়েই ঘোরা, সেটাই আসল ছন্দ। তখন তুমি ভয়ে চিৎকার করবে না আনন্দে লাফাবে সেটা তোমার ব্যাপার।”
দিয়া স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “সত্যি বলেছ, তাহলে এই চুপচাপ মানুষের মধ্যে এক দার্শনিক লুকিয়ে আছে।”
হিহি করে হেসে ফেলে অভি, “না না, এটা ত কেউ একটা মেসেজ ফরোয়ার্ড করেছিল সেটা ঝেড়ে দিলাম, আমি কোন দার্শনিক নই বাবা।”
দিয়াও হেসে ফেলে অভির দিকে তাকিয়ে। এমন সময়ে তিতাস উঠে যায়। দুইজনে ব্যাস্ত হয়ে পরে তিতাসকে নিয়ে। গাড়ি ততক্ষনে রুবি হসপিটাল পেরিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলেছে।
[+] 2 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by pnigpong - 25-08-2020, 01:19 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)