25-08-2020, 09:22 AM
হঠাৎ কি বলতে গিয়ে থেমে গেল মহুয়ার। নিশ্চয় মহুয়া ভাবছে একবার যদি দানা ইন্দ্রাণীর কাছে যায় তাহলে নিজের প্রথম প্রেম ফিরে পেয়ে মহুয়াকে ভুলে যাবে। নিশ্চয় এই জন্যেই ভারাক্রান্ত হয়ে চুপ করে গেছে। ইন্দ্রাণীর সামনে গেলে দানার মানসিক অবস্থা কি হবে সেটা দানা নিজেও জানে না। ওর হৃদয় যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দানা মহুয়াকে তৎক্ষণাৎ ফোন করে, কিন্তু মহুয়া আর ওর ফোন উঠায় না। ফোন বারেবারে বেজে বেজে থেমে যায়, দানার মন ভারী হয়ে যায়। একপাশে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণী অন্যপাশে দাঁড়িয়ে মহুয়া। ঠিক কার কাছে ফিরে যাবে কিছুতেই ঠিক করতে পারে না দানা। সারা রাত বিছানায় বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে দেয়।
সকালে গুমটি থেকে বের হতেই সাজসাজ রব। মেয়েদের জন্য স্নানের জায়গা তৈরি করে দিয়েছিল দানা। ওকে দেখেই মেয়েরা সরে দাঁড়ায়। যেন দানা নয় এই রাজ্যের রাজার প্রবেশ হয়েছে। পুরো বস্তির এহেন আচরনে দানা বেশ বিবৃত বোধ করে, এতটা সন্মানের জন্য দানা প্রস্তুতি নেয়নি। নিজের পাপ বোধ কম করার জন্যেই কালী পাড়ার বস্তি আর আশেপাশের এলাকার উন্নয়নের জন্য টাকা খরচ করেছিল দানা। কোনদিন এত বড় হতে চায়নি, শুধু একটু ভালোবাসা চেয়েছিল, আর সেটা বারেবারে নিজের ভুল পদক্ষেপের জন্যেই খুইয়ে এসেছে। বালতি মগ নিয়ে, বাকি পুরুষের সাথে ওই রাস্তার ধারের করপোরেশানের কলের তলায় বসে স্নান সেরে ফেলে। অধীর বাবুর ট্যাক্সি চালানো নেই, নয়নার গাড়ি চালানো নেই তবে ওর মন বড় অশান্ত। পাশে যে মহুয়াও নেই, ওর মিষ্টি হাসির দেখা নেই, রুহির কোমল হাতের পরশ নেই।
তিনদিন কেটে যায়, মহুয়া কিছুতেই ওর ফোন উঠায় না। মনা আর পিন্টুর মাধ্যমেও মহুয়াকে ধরা যায় না। ওদের ফোনে ফোন করলেও কাজের অছিলায় এড়িয়ে যায়। দানার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, রুহি আর মহুয়ার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করে ওঠে সেই সাথে ইন্দ্রাণীর সাথে দেখা করার ইচ্ছেটাও প্রবল ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
নয়নার খবর জানতে চাইলে নাসির ওকে জানায়, গত তিন দিনে নয়না বাড়ি থেকে বের হয়নি। তবে একটা নতুন ড্রাইভার ইতিমধ্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। সমুদ্র আর সুমিতা এক প্রকার ওর বাড়িতেই আজকাল থাকে। মাঝে মাঝেই লোক জন আসে অসুস্থ নয়নার সাথে দেখা করতে। ইতিমধ্যে খবরের কাগজে খবর ছেপে গেছে, অভিনেত্রী নয়না বোস, বাথরুমে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে বসে। বাপ রে, এই অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিজস্ব একান্ত কোন জীবন নেই, না কি এটা একটা চাল। বড়লোকেরা সব সময়ে খবরের কাগজের শিরোনামে থাকতে ভালোবাসে। দানা ওদের দুর্বল নাড়ি ধরে ফেলে, কিন্তু সংবাদ মাধ্যম ওই ধনী ক্ষমতাশালীদের হাতের পুতুল।
ইন্দ্রাণীর বাড়ির খবর জানতে চাইলে, শক্তি আর বলাই জানায়, ওই ভদ্রলোক কে একদিন শুধু মাত্র দেখা গিয়েছিল তারপরে আর দেখা যায়নি। নিত্যদিনের মতন ইন্দ্রাণী কলেজ করে, বিকেলে ছোট ছেলে মেয়েদের পড়ায়।
ফারহান খবর দেয় যে বাপ্পা নস্কর, অসুস্থ নয়নার ব্যাপারে বেশ চিন্তিত। তবে বেশি চিন্তিত আসন্ন নির্বাচনের জন্য। নয় মাস পরে এই রাজ্যে নির্বাচন, দলের কাছে এইবারে অত টাকা নেই, নিজের ভাঁড়ার প্রায় শুন্য। ওর দৌরাত্মে নতুন কোন প্রোমোটার এই এলাকায় কাজে হাত লাগাতে চাইছে না। পুরানো প্রোমোটারদের কাছে হুমকি দিয়ে আর কত টাকা আদায় করতে পারে। বাপ্পার ভীষণ দৌরাত্মের ফলে এই এলাকায় বহু আবাসন স্থান অর্ধ নির্মিত হয়ে পরে আছে, সেই প্রোমোটারদের কাছে টাকা চাইতে পারছে না আর। এলাকায় বেশ কিছু বড় বড় কোম্পানির হোটেল আর আবাসন এখন পর্যন্ত শুধু মাত্র ভিত তৈরি হয়েই থেমে গেছে।
দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, ওকে এই প্রোমোটারি ব্যাবসায় নামতে হবে। মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকাকালীন প্রচুর বিল্ডার প্রোমোটারদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করেছে। যদিও ওই সব বিল্ডার প্রোমোটার অন্য এলাকার মানুষ কিন্তু দানাকে বুদ্ধি দিয়ে কিছুটা অন্তত সাহায্য করতে পারে। বাপ্পার কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে যাবে, বাপ্পাকে টাকা দিয়ে শান্ত রাখা যাবে আর টাকা আয় করার একটা বেশ ভালো পথ পাওয়া যাবে। পারলে ওই অর্ধ নির্মিত আবাসন গুলো মালিকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবে। বাপ্পাও খুশি, দানাও খুশি, সেই মালিক গুলো খুশি, যারা এতদিনে টাকা দিয়ে ওই আবাসনের ফ্লাট কিনেছিল তারা সময় মতন না হলেও কয়েক মাস পরে ফ্লাট পেয়ে খুশি হয়ে যাবে। তবে এর জন্য সর্ব প্রথম মহুয়ার সাথে কথা বলা দরকার, আর মহুয়া যে ওর ফোন উঠাচ্ছে না.....
********** পর্ব এগারো সমাপ্ত **********