24-08-2020, 09:46 PM
(This post was last modified: 08-07-2022, 04:29 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গত শুক্রবারের কথা। একটা কাজে গড়িয়াহাটের কাছে গেছিলাম। হাতে ঘন্টাখানেক সময় ছিল, একদম যাকে বলে 'টাইম কিল' করার জন্য...তাই ঠিক করলাম রাসবেহারী মোড় পর্যন্ত হাঁটব। সময় ও নিজে নিজেই মরে যাবে, আর আমিও একটু সচল থাকতে পারব! নইলে এই লকডাউন তো আমাকে আরো বেশি অলস পান্ডা করে তুলেছে!
এক সপ্তাহ পরে, আজও নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে...ভাগ্যিস...ভাগ্যিস সেদিন হাঁটছিলাম...তাই তো দেখতে পেলাম ভাত, গরম ভাতের ওপর ডাল থাকার মায়া...।
বাসন্তী দেবী কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলাম। ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের মোড়টার আগে, 'আনন্দ পাবলিশার্সের' দোকান টা পেরিয়ে দেখি একজন বয়স্ক মানুষ ক'টা টিপের পাতা, দড়ি, কাপড় কাচার ব্রাশ, ক্লিপ, সেফটিপিন এসব নিয়ে বসে আছেন। বয়স্ক মানে, বেশ বয়স্ক...সত্তরোর্ধ তো হবেনই। ঘষা কাঁচের মতো চশমা পরা... মলিন আধময়লা ফতুয়া... দোকানে একজন ও ক্রেতা ছিলেন না। এই 'নিউ নর্ম্যাল' দিনে এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম...তাতে আবার এইসব জিনিস...। আমি ভাবছিলাম কী কী কেনা যায় ওনার থেকে...। টিপ তো লাগেই, দড়ি, সেফটিপিন সব ই দরকারি...এই ভেবে সামনে এগিয়ে গেলাম। সবমিলিয়ে কুড়ি টাকার জিনিস। টাকাটা বের করে ওনাকে দিতে যাব, উনি খুব কিন্তু কিন্তু করে বললেন "মা গো, তুমি ওই ভাতের হোটেলে টাকাটা দিয়ে দেবে?" বলে, সামনের একটা দোকান, ঠিক রাস্তার হোটেল যেমন হয়, তেমনি একটা হোটেলের দিকে দেখালেন।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কেন, দাদু? তুমি নেবে না?"
উনি একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন "কাল খেয়ে টাকা দিতে পারিনি...তাই...আজ তুমিই প্রথম কাস্টমার মা গো...বাজার খারাপ...জানি না আর কেউ আসবে কিনা...আগে কালকের ভাতের ধার টা শোধ হোক..."
ঘষা কাঁচের চশমা...আর ঠিকরে আসা জীবনদর্শন।
ধার শোধ...ভাতের ধার শোধ...!
সেই দোকানটিতে যাবার পর, দোকানের রাঁধুনি মাসি একটু হাসলেন, তারপর টাকাটা নিয়ে বললেন "দাদু এইরকমই...আগে তাও খাবারের টাকা দু' একদিন না দিয়েও থাকতেন...এখন যে আমার ও বিক্রি নেই, তাই ধার রাখতে চান না...এই দেখুন না দিদি, আজ সকাল থেকে মাত্র কয়েকজন খেয়েছে, যত বলছি, সব পরিষ্কার, বেঞ্চি, টেবিল স্যানিটাইজার দিয়ে মুছছি, হাত ধুচ্ছি বারবার...তাও লোক আসে না..."
কী যে হয়ে গেল আমার...অদ্ভুত লাগছিল... অনির্বচনীয় এক অনুভূতি...একটা এম্পটিনেস...
পলকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।
নাম না জানা, অচেনা সেই দাদু কে গিয়ে বললাম "আজ আমার জন্মদিন, চলো, এক সাথে খাই..."
শুনে দাদুর কী হাসি..
আর সেই মাসিরও।
সবুজ কলাপাতা...সাদা গরম ভাত আর হরিদ্রাভ ডাল..পাশে একটু নুন, লেবু, কাঁচালঙ্কা...। এই তো, এইটুকুই তো চাই...। মাসি আমাকে ডিম ভেজে দিয়েছিলেন, সেটাও জন্মদিনের উপহার। আমার মা নেই শুনে ছলছলে চোখে বলেছেন, একদিন গিয়ে চাট্টি মাছ ভাত খেয়ে আসতে।
ক্ষুন্নিবৃত্তির পরে দাদু সরল বিশ্বাসে আমাকে একটা ক্লিপ উপহার দিয়েছিলেন। বিশ্বাস করুন...এত সুন্দর উপহার কক্ষনো পাই নি আমি!
পরের দিন, শনিবার ছিল স্বাধীনতা দিবস। এক 'বিশিষ্ট' ফেরার ব্যক্তিত্ব ট্যুইট করে 'হ্যাপি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে' জানিয়ে ট্রোলড হলেন, আবার। আর আমার চোখে ভাসছিলেন একজন মলিন বৃদ্ধ - যিনি ধার রাখতে চান না...কুড়ি টাকার ধার ও না। কেউ 'জন্মদিন' বলে বায়না করলেও তাকে সাধ্যমত উপহার দেন...।
এই বাহ্যত মলিন, কিন্তু ঝকঝকে অন্তরের মানুষ...এরাই আমার ভারতবর্ষ... আমাদের ভারতবর্ষ। দরিদ্র, কিন্তু মানবিকতায় উজ্জ্বল। বহুমূল্য সুগন্ধি নয়, আজ ও আমাদের প্রিয় গন্ধ কলাপাতায় গরম ভাত এবং ডালের মায়াবী মিলন...।।
এক সপ্তাহ পরে, আজও নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে হচ্ছে...ভাগ্যিস...ভাগ্যিস সেদিন হাঁটছিলাম...তাই তো দেখতে পেলাম ভাত, গরম ভাতের ওপর ডাল থাকার মায়া...।
বাসন্তী দেবী কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলাম। ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের মোড়টার আগে, 'আনন্দ পাবলিশার্সের' দোকান টা পেরিয়ে দেখি একজন বয়স্ক মানুষ ক'টা টিপের পাতা, দড়ি, কাপড় কাচার ব্রাশ, ক্লিপ, সেফটিপিন এসব নিয়ে বসে আছেন। বয়স্ক মানে, বেশ বয়স্ক...সত্তরোর্ধ তো হবেনই। ঘষা কাঁচের মতো চশমা পরা... মলিন আধময়লা ফতুয়া... দোকানে একজন ও ক্রেতা ছিলেন না। এই 'নিউ নর্ম্যাল' দিনে এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম...তাতে আবার এইসব জিনিস...। আমি ভাবছিলাম কী কী কেনা যায় ওনার থেকে...। টিপ তো লাগেই, দড়ি, সেফটিপিন সব ই দরকারি...এই ভেবে সামনে এগিয়ে গেলাম। সবমিলিয়ে কুড়ি টাকার জিনিস। টাকাটা বের করে ওনাকে দিতে যাব, উনি খুব কিন্তু কিন্তু করে বললেন "মা গো, তুমি ওই ভাতের হোটেলে টাকাটা দিয়ে দেবে?" বলে, সামনের একটা দোকান, ঠিক রাস্তার হোটেল যেমন হয়, তেমনি একটা হোটেলের দিকে দেখালেন।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কেন, দাদু? তুমি নেবে না?"
উনি একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন "কাল খেয়ে টাকা দিতে পারিনি...তাই...আজ তুমিই প্রথম কাস্টমার মা গো...বাজার খারাপ...জানি না আর কেউ আসবে কিনা...আগে কালকের ভাতের ধার টা শোধ হোক..."
ঘষা কাঁচের চশমা...আর ঠিকরে আসা জীবনদর্শন।
ধার শোধ...ভাতের ধার শোধ...!
সেই দোকানটিতে যাবার পর, দোকানের রাঁধুনি মাসি একটু হাসলেন, তারপর টাকাটা নিয়ে বললেন "দাদু এইরকমই...আগে তাও খাবারের টাকা দু' একদিন না দিয়েও থাকতেন...এখন যে আমার ও বিক্রি নেই, তাই ধার রাখতে চান না...এই দেখুন না দিদি, আজ সকাল থেকে মাত্র কয়েকজন খেয়েছে, যত বলছি, সব পরিষ্কার, বেঞ্চি, টেবিল স্যানিটাইজার দিয়ে মুছছি, হাত ধুচ্ছি বারবার...তাও লোক আসে না..."
কী যে হয়ে গেল আমার...অদ্ভুত লাগছিল... অনির্বচনীয় এক অনুভূতি...একটা এম্পটিনেস...
পলকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।
নাম না জানা, অচেনা সেই দাদু কে গিয়ে বললাম "আজ আমার জন্মদিন, চলো, এক সাথে খাই..."
শুনে দাদুর কী হাসি..
আর সেই মাসিরও।
সবুজ কলাপাতা...সাদা গরম ভাত আর হরিদ্রাভ ডাল..পাশে একটু নুন, লেবু, কাঁচালঙ্কা...। এই তো, এইটুকুই তো চাই...। মাসি আমাকে ডিম ভেজে দিয়েছিলেন, সেটাও জন্মদিনের উপহার। আমার মা নেই শুনে ছলছলে চোখে বলেছেন, একদিন গিয়ে চাট্টি মাছ ভাত খেয়ে আসতে।
ক্ষুন্নিবৃত্তির পরে দাদু সরল বিশ্বাসে আমাকে একটা ক্লিপ উপহার দিয়েছিলেন। বিশ্বাস করুন...এত সুন্দর উপহার কক্ষনো পাই নি আমি!
পরের দিন, শনিবার ছিল স্বাধীনতা দিবস। এক 'বিশিষ্ট' ফেরার ব্যক্তিত্ব ট্যুইট করে 'হ্যাপি ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে' জানিয়ে ট্রোলড হলেন, আবার। আর আমার চোখে ভাসছিলেন একজন মলিন বৃদ্ধ - যিনি ধার রাখতে চান না...কুড়ি টাকার ধার ও না। কেউ 'জন্মদিন' বলে বায়না করলেও তাকে সাধ্যমত উপহার দেন...।
এই বাহ্যত মলিন, কিন্তু ঝকঝকে অন্তরের মানুষ...এরাই আমার ভারতবর্ষ... আমাদের ভারতবর্ষ। দরিদ্র, কিন্তু মানবিকতায় উজ্জ্বল। বহুমূল্য সুগন্ধি নয়, আজ ও আমাদের প্রিয় গন্ধ কলাপাতায় গরম ভাত এবং ডালের মায়াবী মিলন...।।