Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
দানা সঙ্গীতার বাবার হাত ধরে বলে, "কাকা, সঙ্গীতাকে একটা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চাই।"

ওর মা চোখের জল মুছে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় নিয়ে যেতে চাও?"

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, "নিরাপদ স্থানেই নিয়ে যাবো। ওর মাথায় আসন্ন বিপদ। যাদের সাথে আমার যুদ্ধ তারা সবাই খুব শক্তিশালী আর ক্ষমতাশালী ব্যাক্তি। যদি পারা যায় তাহলে কয়েক মাসের জন্য দেশ ছেড়ে অন্য চলে গেলে আরো ভালো হয়।"

ওর বাবা খানিকক্ষণ চিন্তা করার পরে দানাকে বলে, "আমার এক দুর সম্পর্কের আত্মীয় ফ্রান্সে থাকে। আমার শালীর মেয়ে ওইখানে গেছে পড়াশুনা করতে। দেখি যদি ওকে ওইখানে পাঠাতে পারি। কিন্তু এখন কোথায় নিয়ে যেতে চাও?"

সঙ্গীতার বাবাকে মহেন্দ্র বাবুর কথা জানায় দানা। ইতিমধ্যে রমিজ ভাই আর শঙ্কর, জনা দশেক ছেলে নিয়ে সঙ্গীতার বাড়িতে পৌঁছে যায়। দানা সবাইকে সংক্ষেপে ঘটনা জানিয়ে দেয়। সেই শুনে সবাই ভাবনায় পড়ে যায়, বুঝতে বাকি থাকেনা যে দানা একটা বোলতার চাকে ঢিল ছুঁড়েছে। কিন্তু দানা জানে কোন বোলতা এখুনি ওকে কামরাতে আসবে না কারন দানা সরাসরি কোন বোলতাকে আক্রমন করেনি। তবে একটা সংশয় আছে, অভিনেত্রী নয়না বোস।

দানা, সঙ্গীতার মা'কে অনুরোধ করে এক বার সঙ্গীতাকে দেখতে চায়। সঙ্গীতার মা ওকে সঙ্গীতার ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। এই কয়দিনে সঙ্গীতার হাসি হাসি সুন্দর দেহ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, চোয়াল ঢুকে গেছে, কণ্ঠির হাড় বেড়িয়ে গেছে, দুই চোখের কোনে কালিমা পড়ে গেছে। সঙ্গীতার ওই শুকনো দেহ দেখে দানার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ভীষণ ক্রোধাগ্নি দাউদাউ করে মাথার মধ্যে জ্বলে ওঠে। অচেতন অবস্থায় সঙ্গীতা বিছানার ওপরে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে। সঙ্গীতার মা মেয়ের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে এতরাতে সামনে মাকে আর দানাকে দেখে কিছু বুঝতে পারে না। দানা ওর পাশে এসে ওর হাতের ওপরে হাত রাখতেই সঙ্গীতা ভেঙ্গে পড়ে। ওর চোখের সামনে মৈনাকের মৃত্যু দৃশ্য ছেয়ে যায়।

ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে দানাকে বলে, "বাঁচাতে পারলাম না গো, আমি কিছুতেই ওকে বাঁচাতে পারলাম না।"

সেই কান্না দেখে দানার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসার যোগাড় হয়, কিন্তু মন শক্ত করে সঙ্গীতাকে বলে, "তোমাকে নিয়ে এখুনি আমাদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। পারলে কাকু কাকিমা আমাদের সাথে আসুক।"

কিছুক্ষণের মধ্যেই সঙ্গীতা আর ওর বাবা মাকে নিয়ে দানা আর বাকিরা, মহেন্দ্র বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শঙ্কর সব কথা আগে থেকেই মহেন্দ্র বাবুকে জানিয়ে রেখেছিল। মহেন্দ্র বাবুর বাড়ি পৌঁছানর পরে দানা, মহেন্দ্র বাবুকে সবিস্তারে সব কিছু খুলে বলে। তবে ওর সাথে নয়নার গোপন সম্পর্ক আর রাতের ধর্ষকামের কথা লুকিয়ে যায়। মহেন্দ্র বাবু সব কিছু শুনে ভীষণ ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠেন। দানাকে বলেন এখুনি পুলিসের কাছে যেতে। মহেন্দ্র বাবুর চেনা পরিচিত, সাত্যকি চ্যাটার্জি, পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের কথা বলে দানাকে। কিন্তু দানা এখুনি পুলিসের কাছে যেতে চায় না, কারন এই জালে অনেক মানুষ জড়িয়ে, একজন কে আঘাত করলে অন্য জনে প্রতিশোধ নিতে তেড়ে উঠবে। আর সেই আগুন, ইন্দ্রাণী, মহুয়া আর রুহিকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। ভালো মানুষ সেজে এক এক করে সবাইকে জালে ফাঁসাতে হবে, তারপরে সময় হলে জাল গুটিয়ে নেবে। মহেন্দ্র বাবু জানতে চান, কি করতে চায় দানা, ওর মাথায় কি পরিকল্পনা চলছে। দানার সংক্ষেপে শুধু মাত্র জানায় যে এবারে ওকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পা ফেলতে হবে। এখন ওর মাথা খালি তবে কিছুদিনের মধ্যেই একটা সুচতুর পরিকল্পনা তৈরি করবে আর সবাইকে জানিয়ে দেবে।

দানা, ফারহানের হাত ধরে অনুরোধ করে যাতে এই খবর কোন মতে বাপ্পা নস্করের কানে না ওঠে। তবে সকালে ওর বাড়ি গিয়ে পিস্তল ফেরত দিয়ে বাপ্পা নস্করকে জানিয়ে দেবে যে আর নয়নার গাড়ি চালাতে চায় না। রমিজের কাছে দুটো পিস্তল চায়। সঙ্গে সঙ্গে রমিজ ওকে দুটো পিস্তল আর বেশ কয়েকটা ম্যাগাজিন ধরিয়ে দেয়। ফারহান আর বাকিরা সবাই সমস্বরে ওকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিশেষ করে রমিজ বলে ওর জন্য প্রান দিতে প্রস্তুত। সেই সাথে বস্তি থেকে আসা, মদনা, মনা পিন্টু বলাই সবাই সমস্বরে ওকে বলে দানার জন্য সবকিছু দিতে প্রস্তুত। দানা ওদের বস্তির হাল ফিরিয়ে দিয়েছে, ওই এলাকার মুকুট হীন রাজা।

সঙ্গীতার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ে ওকে বলে, "তুমি আর কাকা কাকিমা এইখানে থাকো। এইখানে তোমাদের চুলের ডগা কেউ ছুঁতে পারবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য চেষ্টা কর।" একটু থেমে ওকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার তদন্তের সব কিছু কি রমলার হাতে তুলে দিয়েছিলে?"

সঙ্গীতা মাথা নাড়িয়ে জানায়, "না না, ওই তথ্য প্রমানের দুটো কপি আছে। যেটা আমি রমলাকে দিয়েছিলাম তাতে শুধু বাপ্পা নস্করের ব্যাপারে আর ওর সাথে নয়নার গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে প্রমান ছিল। বাকি সব কিছু একটা দ্বিতীয় কপি করে একটা ছোট চিপে রাখা আর সেটা আমার মাসতুতো বোন অপরাজিতার কাছে। আমার বোন, অপরাজিতা ফ্রান্সে আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশুনা করতে গেছে। ওকে বলা আছে, যদি আমার কোনোদিন কিছু হয় তাহলে ওই চিপ যেন পুলিসের হাতে তুলে দেয়।"

সব শুনে দানা ওকে বলে, "আচ্ছা বুঝলাম, তুমি ফ্রান্সে গিয়ে ওই চিপ আমাকে পাঠানোর ব্যাবস্থা কর।"

সঙ্গীতা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, ফ্রান্সে গিয়ে সর্ব প্রথম সেই ব্যাবস্থা করবে।

বলাই আর শক্তিকে, ইন্দ্রাণীর বাড়ির ওপরে নজর রাখতে নির্দেশ দেয়, দানা। ওদের বুঝিয়ে বলে যে ইন্দ্রাণী আর ওর পরিবারের পেছনে যেন ছায়ার মতন লেগে থাকে। কখন যদি কিছু সন্দেহ জনক দেখে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন দানাকে খবর দেয়। ফারহানকে বলে আগের মতন বাপ্পা নস্করের কাছে ফিরে যেতে আর সকালের দিকে দানা নিজেই বাপ্পা নস্করের কাছে চলে যাবে। বাকি সবাইকে তখন কার মতন বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করে আর বলে রাতের বেলা মদনার চায়ের দোকানে দেখা করবে। বলাই আর শক্তি একটা গাড়ি নিয়ে ইন্দ্রাণীর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায়।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 23-08-2020, 11:55 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)