Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
এগারো

যুদ্ধের দামামা (#১)

রাত প্রায় তিনটে বাজে তখন, যখন দানা নয়নার বাড়ি ছেড়ে বের হয়। জানুয়ারি মাসের শেষের ঠাণ্ডায় নির্জন রাস্তায় কুকুরের দেখা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা সিগারেট জ্বালায়। কিছুটা অনুশোচনা ভর করে আসে দানার মাথায়। সত্যি কি আবার দানা এক পশু হয়ে গেল। কি করে মহুয়া আর রুহির সামনে এই দেহ নিয়ে দাঁড়াবে। নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করে, নয়না চেয়েছিল এই ধর্ষকাম তাই চরম ধর্ষকামে মেতে উঠেছিল। বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধাচরণ হয়ত করত কিন্তু ওকে খুন করার চিন্তা কোনোদিন দানার মাথায় আসেনি। কিন্তু তাহলে দানা কেন এক নৃশংস জানোয়ারে পরিনত হয়ে গেল। হ্যাঁ, দানার বুকে আজও একটু হলেও ইন্দ্রাণীর প্রতি ভালোবাসা কোথাও একটা রয়ে গেছে। তাই নয়নার মুখে যখন ইন্দ্রাণীর নাম শোনে তখন দানা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। মহেন্দ্র বাবুর শিক্ষা দীক্ষা, মহুয়ার ভালোবাসা, রুহির আধো আধো কথা সব উপেক্ষা করে দানা এক পশু হয়ে উঠেছিল।

হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস ওকে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দেয়। মদ খেয়ে আর নয়নার শরীরের সাথে নৃশংস ভাবে খেলা করে ওর শরীর গরম হয়ে গেছে। নয়নার মতন চূড়ান্ত লাস্যময়ী অভিনেত্রীর সাথে ভীষণ ধর্ষকাম ক্রীড়া করার পরে দানার পাশবিক চিত্ত অতীব ভালো লাগায় ভরে যায়। তবে দানা মনে মনে বুঝতে পারে, নয়না যেমন ধূর্ত ভয়ঙ্কর সর্পিণী সে নিশ্চয় দানার ওপরে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেই করবে। ওর হাতে আর বেশি সময় নেই। সকালের আগেই সঙ্গীতাকে একটা নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে ফেলতে হবে, মহুয়ার আর ইন্দ্রাণীর বাড়ির সামনে পাহারা বসাতে হবে। মহুয়ার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারে কেউই জানে না, তাই নয়না সেই ব্যাপারে আঁচ করতে পারেনি। তবে এইবারে নয়ন সতর্ক হয়ে যাবে আর দানার প্রতিটি পদক্ষেপে ওর নজর থাকবে। বারে বারে ইন্দ্রাণীকেই সবাই আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করে। ইন্দ্রাণী কি মন্দিরের ঘন্টা, যে কেউ আসতে যেতে একবার বাজিয়ে চলে যাবে। দানা কি করবে, এর পরের পদক্ষেপ কি হবে, কার কাছে গেলে সাহায্য পাওয়া যাবে, ইত্যাদি ভাবতে শুরু করে দেয়। সব থেকে আগে সঙ্গীতাকে এক নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া দরকার। রমলা এই খবর জানতে পারলে সঙ্গীতাকে হয়ত প্রানে মেরে ফেলেবে।

এত রাতে এই নির্জন এলাকায় ট্যাক্সি পাওয়া খুব মুশকিল। দানা, কেষ্টকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বেজে যাওয়ার পরে ঘুম ঘুম চোখে কেষ্ট ফোন উঠায়। দানা ওকে এই এলাকার ঠিকানা দিয়ে ট্যাক্সি আনতে নির্দেশ দেয়। কেষ্ট প্রথমে কিছুই বুঝতে পারে না। অনেকদিন পরে আসন্ন সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে বেশ জড়িয়ে ধরে, লেপের তলায় ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু দানার জলদ গম্ভীর কণ্ঠের নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ট্যাক্সি নিয়ে দানার দেওয়া ঠিকানায় চলে আসে। দানা, ট্যাক্সিতে উঠে কেষ্টকে সঙ্গীতার ঠিকানা দিয়ে ওইখানে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। পথে যেতে যেতে দানা বিশেষ কিছু কেষ্টকে জানায় না, শুধু এইটুকু জানায় যে খুব বিপদে পড়েছে। দানার রক্ত চক্ষু আর হিমশীতল কণ্ঠ স্বর শুনে, কেষ্ট বিশেষ কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পায় না। পথে যেতে যেতে দানা, শঙ্কর আর রমিজ কে ফোন করে, সেই সাথে ফারহান আর মদনাকেও ফোন করে সঙ্গীতার ঠিকানায় ডেকে নেয়। সবাইকে এক কথা জানায় যে একটা মেয়ে খুব বিপদে, কিন্তু কি বিপদ জানতে চাইলে কাউকে কিছু পরিষ্কার করে না জানিয়ে বলে দেখা হলে সব কথা খুলে বলবে।

রাত চারটে নাগাদ দানা সঙ্গীতার বাড়িতে পৌঁছায়। সঙ্গীতার বাড়ির লোক তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দানা বুক ভরে এক শ্বাস নেয়। সঙ্গীতাকে সেই এক মাস আগে নয়নার কবল থেকে বাঁচানোর পরে ওদের মধ্যে বিশেষ দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। একবার হয়েছিল, সঙ্গীতা নিজের প্রেমিক মৈনাককে নিয়ে ওকে একটা বড় রেস্টুরেন্টে খাইয়েছিল আর সেই সাথে মৈনাক আর সঙ্গীতা ওর হাত ধরে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। সেদিন সঙ্গীতা খুব কেঁদেছিল, দানা না থাকলে সেদিন হয়ত নয়না আর সুমিতা ওকে আধমরা করে রাস্তায় ফেলে দিত।

বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজানোর পরে সঙ্গীতার বাবা এসে দরজা খুলে অবাক হয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি ব্যাপার, এতরাতে কি হয়েছে?"

দানা, কেষ্টকে নিয়ে সঙ্গীতার বাড়িতে ঢুকে পড়ে, ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করে, "সঙ্গীতা কোথায়?"

এত রাতে একজন লোক বাড়িতে এসে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছে দেখে সঙ্গীতার বাবা ভয় পেয়ে যান। কম্পিত ভয়ার্ত কণ্ঠে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে?"

দানা, সঙ্গীতার বাবাকে আশ্বস্ত করে বলে, "কাকা, সঙ্গীতার খুব বিপদ। এখুনি সঙ্গীতাকে কোন নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে ফেলতে হবে।"

কথাবার্তা শুনে সঙ্গীতার মা, নিজের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন, দানা আর কেষ্টকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলেন সঙ্গীতার মা। সঙ্গীতার মাকে ওই ভাবে কাঁদতে দেখে, দানা অবাক হয়ে যায়। সঙ্গীতার বাবা দানাকে আক্ষেপের কণ্ঠে বলে, "সাত দিন আগে, সঙ্গীতার এক্সিডেন্ট হয়েছে। ওর বন্ধু মৈনাক ওই এক্সিডেন্টে মারা গেছে। সঙ্গীতা খুব মুষড়ে পড়ে গেছে, মেয়েটা একদম ভেঙ্গে পড়েছে দানা।"

সঙ্গীতার মা কাঁদতে কাঁদতে ওকে বলেন, "এই আসছে বৈশাখে মৈনাক আর সঙ্গীতার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু মেয়েটার অদৃষ্ট কোন সুখ ওর কপালে নেই মনে হয়।"

সেই শুনে দানার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে। সঙ্গীতাকে আগেই সরিয়ে ফেলা উচিত ছিল। ওর এই দেরির জন্য আজকে মৈনাক এই পৃথিবীতে নেই। রাগে ও ক্ষোভে দানার মনে হয় নিজের মাথার চুল ছেঁড়ে। ধুপ করে একটা চেয়ারে বসে সঙ্গীতার বাবাকে ওই এক্সিডেন্টের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, যে একদিন বিকেলে ওরা দুইজনে সঙ্গীতার স্কুটিতে করে বেড়াতে বেড়িয়েছিল। সেই সময়ে একটা ট্রাক এসে স্কুটির পেছনে ধাক্কা মারে। মৈনাক পেছনে বসে ছিল আর সঙ্গীতা স্কুটি চালাচ্ছিল, মৈনাক স্কুটি থেকে পড়ে যেতেই ট্রাকের পেছনের চাকা মৈনাককে রাস্তার সাথে পিষে দিয়ে চলে যায়। মৈনাক তৎক্ষণাৎ প্রান হারায় আর সঙ্গীতা বেশ কিছু দূরে ছিটকে পড়ে আর ওর পা ভেঙ্গে যায়। এক্সিডেন্ট কেস বানিয়ে পুলিস তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি অথবা সেই ট্রাকের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

দানা চোখ বুজে একবার চিন্তা করার চেষ্টা করে, এই কাজ নয়নার নয়। নয়না এত বড় ভুল পদক্ষেপ নেবে না। নয়না ভালো ভাবেই জানে, সঙ্গীতা মারা গেলে বাপ্পা নস্করের সাথে সাথে নিজেও বদনাম হয়ে যাবে। এতদিন পর্যন্ত দানা, নয়নার বিশ্বাস ভাজন ব্যাক্তি ছিল। সঙ্গীতার বিরুদ্ধে যদি কোন চক্রান্ত করত তাহলে দানা জানতে পারত। কে মারতে পারে সঙ্গীতাকে? সঙ্গীতা মারা গেলে কারা সব থেকে বেশি লাভবান হবে? বিমান চন্দ কি সঙ্গীতাকে মারতে চায়, কিন্তু কেন, তাতে বিমান চন্দের কি লাভ? হয়ত ওর ভয়টাই সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে, হয়ত রমলা বিশ্বাস সঙ্গীতাকে মারতে চেষ্টা করেছে। বুকের মাঝে দুমদুম করে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে, মাথা ভোঁ ভোঁ করে, চিন্তা শক্তি লোপ পায় কিন্তু এখুনি চিন্তা শক্তি লোপ পেলে হবে কি করে? ওকে যে আজ রাতের মধ্যেই সব কাজ সারতে হবে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 23-08-2020, 08:35 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)