Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সাগরকন্যা
#10
সাগরকন্যা – ৬ (শেষ পর্ব)


আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি আসলেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আয়নায় আমার প্রতিফলনটা, আর আমার নিজের কয়েকদিন আগের আসল রূপটা কোনভাবেই মিলাতে পারলাম না। মনে মনে স্বীকার করলাম, এই শাড়ি পড়া রূপটাই বেশি সুন্দর। আচ্ছা, কি দরকার আবার ছেলে হয়ে যাওয়ার? আমি কি পারিনা মেয়েই থেকে যেতে? বাসায় বললে কি বেশিই আপসেট হবে সবাই নাকি মেনে নিবে? আমি কি পারি না…..



ভাবতে ভাবতেই দরজায় নক হল। আমি উঠে দরজার দিকে হাটা দিলাম…হিলটা বেশিই উঁচু। আর শাড়িটা এত পাতলা, হাটতে গেলেই ভয় লাগছে যদি কোথাও ফেঁসে যায় খোঁচা লেগে? যাই হোক, হিলের খটখট শব্দটা আরো বাড়িয়ে দিয়ে আমি দরজা খুললাম। মাইশা এসেছে। মাইশাকে দেখে আমার আজকে আবারও হার্টবিট প্রায় বন্ধ হয়ে এলো।



মাইশা পড়েছে কুচকুচে কালো সিল্কের একটা শাড়ি। সাথে কালো সিল্কের ব্লাউজ। কোনটাই আমার মত সি-থ্রু না তবে শাড়িটা কিভাবে যেন বেশ টাইট করে পড়েছে, দেহের প্রতিটা বাঁকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে শাড়িটা। ব্লাউজটা যেন কামড়ে ধরে আছে বুকের উপরে, এতটা সুন্দর হয় কিভাবে একটা মানুষের আকৃতি? আমার মতই স্মোকি সাজ, আমার গলারটার মতই আরেকটা নেকলেস ওর গলায়। ব্লাউজটা পিঠের দিকে অনেক বড়, ওর ধবধবে ফর্সা পিঠটা উন্মুক্ত হয়ে আছে। পায়ে উঁচু একটা হিল, ওগুলোতে ভর করে যখন মাইশা হাটছে তখন সারাদেহে কেমন যেন একটা মোহনীয় ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আমি চোখ ফিরাতেই পারলাম না মাইশা মৃদু একটা বকা না দেওয়া পর্যন্ত!



“এই স্পর্শিয়া, তাড়াতাড়ি চলো নিচে যাই!”

“ওহ হ্যা চলো চলো…দাঁড়াও আপুদের রুমে নক করে যাই, আছে কিনা দেখি”



করিডর ধরে গিয়ে আপুদের রুমগুলোতে নক দিলাম। কোনটিতেই কারোর সাড়া পেলাম না, তারমানে নিচে চলে গেছে। আমি আর মাইশাও বলরুমে চলে গেলাম।



রুমটা বড়, গমগম করছে। ওয়েস্টার্ন মুভিগুলোর মত কিছু একটা পার্টি এটা, সবাই হাটাচলা করছে, বুফে থেকে কিছু খাচ্ছে, গান হচ্ছে মৃদু লয়ে। চেয়ারও দেওয়া আছে আশেপাশে, ওখানে গিয়ে বসলাম আমি আর মাইশা। চারপাশে খুঁজলাম আপুদের কে, পেলাম না। গেল কোথায় ওরা?



তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। একটু পরেই দেখি সবাই-ই নেমে এসেছে। ওরা এসে চুপচাপ এক সাইডের চেয়ারগুলোতে বসে পড়ল, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। জার্নির ক্লান্তি এখনো যায়নি ওদের। আমি মাইশা কে বললাম, “চলো দেখা করে আসি। আপুরা চমকে যাবে আমাকে এভাবে দেখলে।”

মাইশা উৎসাহিত হয়ে বলল “চলো চলো”



আস্তে করে গিয়ে আপুর চোখ ধরলাম পিছন থেকে। “আপু!”

আপুরা চমকে পিছে তাকালো। তাকিয়ে মোটামুটি বাকরূদ্ধ হয়ে গেল। বেশ অনেকক্ষণ পরে প্রায় খাবি খাওয়ার মত করে জিজ্ঞাসা করল, “স্পর্শিয়া, এটা সত্যিই তুই?”

“আরে বাবা হ্যা আমি। আমি নাহলে তোমার চোখ ধরতাম নাকি এসে…আর এইযে মাইশা। তোমাদের পরিচয় হয়েছে অবশ্য দুপুরেই…তাও আবার পরিচিত হও”

আমার আপু ছাড়া আর কাউকেই বেশি হতচকিত মনে হল না। কিন্তু আপু দেখলাম কেন যেন ঠিক খুশি হতে পারছে না, মুখে একটা চিন্তার ছাপ। আড়চোখে দু’বার বুকের দিকেও তাকালো, আর আমারও তখন মাথার মধ্যে খেলে গেল। বাস্ট জেলটা ৩-৪ দিনেই ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা, এক সপ্তাহেও এটা একটুও কমেনি কেন? বেশি ভাবার অবকাশ হলো না, মাইশার সাথে সবার কথা শেষ হতেই নাঁচের মিউজিক শুরু হলো আর রিন্তি আপু আমাকে আর মাইশাকে টেনে নিয়ে গেল মাঝখানে সবার সাথে। আমি আর কথা বলতে পারলাম না, কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরে তাল দিয়ে নাচতে থাকলাম।



কোন মিউজিকের সাথে নাচা যে একটা মজার ব্যাপার সেটা কিছুক্ষণেই টের পেলাম। হাইহিলের টিকটক শব্দ আর সেই সাথে আমার দেহের প্রতিটি বাঁকে একটা মৃদু ঢেউ, আমি নিজেই মজা পেতে শুরু করলাম। নাচতে নাচতেই একসময় রিন্তি আপু আর মাইশার থেকে কখন যেন আলাদা হয়ে গেলাম, খেয়ালও করিনি। একটা ‘হাই’ যখন শুনলাম কানের কাছেই তখন সচকিত হয়ে দেখলাম কাছে ওরা কেউ নেই, হাই বলেছে একটা ছেলে। যাকে আমি রুমে যাওয়ার সময় নামতে দেখেছিলাম।



“হাই” আবার বলল ছেলেটা।

“উমম হাই” আমি মৃদু হেসে উত্তর দিলাম।

“একা একা নাচছিলাম দেখি তুমিও একা…আমরা কি একসাথে নাচতে পারি? আমি অর্ণব।”

“উমম হ্যা শিওর। আসো। আমি স্পর্শিয়া। ” সম্মতি দিয়ে দিলাম, একবার ভাবলামও না যে এখন আমি হোটেলে একা নই, আপুরা চলে এসেছে।



নাঁচটা প্রথমে শুরু হল খুব কাছাকাছি থাকার মধ্যে দিয়ে, তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আবিষ্কার করলাম আমি অর্ণবের আলিঙ্গণের ভিতরে চলে এসেছি। ওর একটা হাত আমার কোমরে, আরেকটা হাতে আমার হাত ধরা, আর আমার অন্য হাতটা ওর কাঁধের উপরে রাখা। ঠিক যেভাবে কাপলরা নাচে, আর আমি বেশ ভালোভাবেই আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে আছি, আমার ভীষণ রকমের সুডৌল বুকদুটো ওর বুকের সাথে একদম লেগে আছে। ওর হাতও কোমর থেকে পিঠে চলে এসেছে, ব্রা’র চিকন ফিতাটা বারবার ব্লাউজের উপর দিয়ে টানছে, খোলা পিঠে পালকের মত করে স্পর্শ করছে, ঘষছে। কেন যেন আমার খুব ভালো লাগতে থাকে ব্যাপারটা।



“এখানে অনেক গুমোট লাগছে। একটু বাইরে যাবে?”

“বাইরে যাবা?” আমি ইতস্তত করতে থাকলাম।

“চলো কিছু হবে না। পুলের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো।”

“আচ্ছা চলো” আস্তে করে ভীড় থেকে বের হতে লাগলাম। আপু দেখলাম নাচতে শুরু করেছে বাকি আপুদের সাথে, আমাকে দেখলো না বেরিয়ে যেতে। মাইশা আরেকটা ছেলের সাথে নাচছে।





পুলের পাশটা একদমই ফাঁকা। অন্যদিন আলো ঝলমল করে, পুলের নিচ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। আজকে জায়গাটা অন্ধকার, পুলের পাশে ডিমলাইটের মত হালকা কিছু লাইট আছে, পুলের পাশে সতর্ক করার জন্য মিটমিট করা লাইট আছে তবে ফ্লাডলাইটের মত বড় লাইটগুলো নেই। পাশের চেয়ারগুলোও ফাঁকা, মানুষজন বেশিরভাগই আজকে বলরুমে, আর যারা এখানে নেই তারা রুমে। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম পুলের পাশে, একটু পরে অর্ণবও আসলো। এসে কিছুক্ষণ ইতস্তত করে কাঁধে হাত রেখে দাঁড়ালো, যেন কতদিনের পরিচিত প্রেমিক প্রেমিকা। আমি একটু কুঁকড়ে গেলাম, সেটা ও টের পেয়ে হাতটা সরিয়ে নিলো।



“স্পর্শিয়া, লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইটে বিশ্বাস করো?”



আমি পুরোই টাশকি খেয়ে গেলাম। বলে কি এই ছেলে?

“শুনো তুমি বিশ্বাস করো আর না-ই করো, তোমাকে আমি প্রথমবার দেখেই যা অনুভব করেছি সেটা আর কখনো করিনি আমি। বিশ্বাস করো, কোন মেয়েকে দেখে আমার কখনো মনে হয়নি যে এই মেয়েটা শুধুই আমার জন্য। কিন্তু তোমাকে দেখে আমি তোমার কথা ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। প্লিজ তুমি না করো না, প্লিজ!”



কথাগুলো শুনে মনে হল বলে দিই যে দেখো আমি কিন্তু মেয়ে না। কিন্তু পারলাম না। সংকোচের এক বিশাল স্রোত আমাকে তো বাঁধা দিলই, সেই সাথে আরেকটা স্রোত যেন বলে উঠলো “কেন হ্যা বলছ না? তুমি কি নিজেকে পছন্দ করছ না? অস্বীকার করো না, স্পর্শ’র চেয়ে নিজেকে স্পর্শিয়া ভাবতেই তুমি বেশি পছন্দ করো। কেন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখবে? সুযোগ এসেছে, গ্রহণ করো!”



আমি পরের স্রোতেই ভেসে গেলাম। ও আমার হাত ধরে রেখেছে, আমি আস্তে করে বললাম, “ঠিক আছে আমি না করব না। কিন্তু তাহলে তোমাকে কথা দিতে হবে, আমাকে তুমি কখনো কষ্ট দেবে না। কখনো না।”



“কেন দেব। তুমি আমার কাছে দেবীর মত, দেবীকে পূজা করা যায়, অর্চনা দেওয়া যায়, কষ্ট দেওয়া যায় না।” কথা বলতে বলতেই আমরা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি। দুজনের চোখ দুজনের চোখে স্থির হয়ে আছে, দূরত্বটা আস্তে আস্তে কমে এল। খুব শীঘ্রই আমাদের চোখ বুঁজে এল, কারণ ততক্ষণে ঠোঁট দুটো যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।



ভালোবাসা শুধুই মানসিক নয়, সাথে শরীরও অনেক কিছু চায়। আমার বেলায় কি হয়েছে আমি জানি না, কারণ গত সাত দিনে আমি অসংখ্যবার বিছানায় গেছি, তাও কিনা প্রথমে একটা ছেলে আর পরে একটা মেয়ের সাথে। প্রতিবার মনের অতৃপ্ত সুপ্ত বাসনাগুলো মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ছিলো, আমি নিজেও বুঝিনি আমার মনে মাঝে এতখানি সুপ্ত বাসনা। আজ যখন পুলের পাশে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি তখন হঠাৎ করেই বুঝতে পারলাম যে আমি আসলে এতদিন ভুল দেহে আটকা পড়া একটা মেয়ে ছিলাম। হ্যা, আমি মেয়েই। ভুলে আটকা পড়েছিলাম স্পর্শ নামের একটা ছেলের দেহে। এখন খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে আমার আসল সত্তা, আমি আর সেটাকে আটকাতে পারছি না। সীমান্ত নামের ছেলেটা আমার এ খাঁচা ভাঙতে পারেনি, মাইশা নামের মেয়েটাও পারেনি কিন্তু অর্ণব যেন কিভাবে পেরে গেল। তবে কি একেই বলে destination? যেটাই হোক, ও যখন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ওর রুমের দিকে আমি একটা বারও নিষেধ করিনি, সম্মতি দিয়ে ওর সাথেই হেটে যাচ্ছি। আমার হিলের টকটক শব্দ, আমার চুড়ির রিনিঝিনি, আমার শাড়ির আঁচলের পালকের মত স্পর্শ – সবকিছু আমার কাছে অন্যদিনের চেয়ে অনেক বেশি আপন লাগছে, নিজের মনে হচ্ছে।



অর্ণবের রুমে ঢুকেই আমি আঁচলের সেফটিপিনটা খুলে নিলাম আস্তে করে, আঁচলটা যেন মৃদু হাওয়ায় পালকের মত খসে পড়ল। আমার অর্ধস্বচ্ছ ব্লাউজের মধ্যে দিয়ে ফুটে থাকা ফুলের মত বুক দুটো দেখে অর্ণব আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারল না, আমাকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ল বিছানায়। আমি অনেক কষ্টে অর্ণবকে শুধু বললাম, “প্লিজ পেটিকোটটা খুলবে না। এটুকু বিশ্বাস তো আমি তোমার কাছে পেতেই পারি, তাই না?”



“অবশ্যই পেতে পারো। তুমি চাওনা এমন কিছুই আমি করব না।” আমার ঠোট আবার বন্ধ হয়ে এল। আস্তে আস্তে শাড়ি, ব্লাউজ, ব্রা সবকিছুই খুলে নিল অর্ণব,ওর ভালোবাসায় আমি সিক্ত হতে থাকলাম। রুমে শুধুই আমাদের গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ, আর আদি প্রেমলীলা।







কতক্ষণ চললো জানি না। কারণ সম্ভবত এত বেশি সুখ সহ্য করতে না পেরে আমি অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম। ঘড়িতে ১০টা বাজে, প্রোগ্রামটা এখনো শেষ হওয়ার কথা না, তাড়াতাড়ি রুমে যেতে হবে। অর্ণব তার কথা রেখেছে, আমার পরণে শুধুই পেটিকোটটা ছাড়া আর কিছুই নেই। মাইশার দামী সব অলংকার গুলোও যত্ন করে খুলে রেখেছে সাইড টেবিলে। দেহের সর্বত্র ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে, আমার বুকেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ধাক্কা দিয়ে ওকে তুললাম।



“অর্ণব আমাকে রুমে যেতে হবে। রাত হয়ে গেছে, বকা খাবো তো”

“ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে যাবে না তো?”

“না যাবো না, সত্যি বলছি!”

ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা এগুলো বিনিময় করতে করতেই শাড়িটা পড়ে ফেললাম। সবকিছুই মোটামুটি জায়গামত বসালাম, মেকআপটা এখন পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব না। তাড়াতাড়ি রুমের দিকে হাটা দিলাম, হাইহিল পড়ে হাটা আগে যত কষ্টকর মনে হত এখন তা আর মোটেও মনে হচ্ছে না। সত্যি, সাতটা দিন কিভাবে আমাকে পুরো পাল্টে দিল!



রুমে গিয়ে ঢুকে দেখি আপুরা আসেনি তখনো। বাঁচা গেল! হাফ ছাড়ার সুযোগ পেলাম না, সাথে সাথেই আপু এসে ঢুকলো রুমে। আমি আঁতকে উঠলাম, আপু সারাক্ষণ আমার পিছে পিছেই ছিল!



“স্পর্শ” আপু শীতল কণ্ঠ বলল “কেন করলি এটা?”

“আপু” আমি কিছু একটা শুরু করার আগেই আপু বাঁধা দিল, কণ্ঠের কাঠিন্য একেবারেই নেই এখন “আমারই আসলে ভুল ছিল। ফাজলামি করতে গিয়ে তোর কত বড় একটা সর্বনাশ করে দিলাম!”

“তুই কি টের পেয়েছিস তোর বুক যে কমছে না? বরং সাতদিনে বেড়ে এটা আমাদের যে কারো সমান হয়ে গেছে?”

“হ্যা টের পেয়েছি তো….”

“এটা আর ঠিক হবে না স্পর্শিয়া। যেমন আছে তেমনই থেকে যাবে। যখন লাগিয়েছিলাম ক্রিমটা তখন আমি জানতাম না” আপু ভাঙা গলায় বলল। আপুর চোখে পানি, ফুঁপিয়ে উঠলো এরপরে। কান্না দমন করে রেখেছে, অপরাধবোধে ভুগছে আপু। দেখে আমার এত মায়া লাগলো তা আর বলার না!



আপুর মাথায় আস্তে করে হাত রেখে বললাম, “আপু।”

“দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?”

আপু বলল, “একদম অপ্সরীর মত। মাইশা তোকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।”

আমি সাহস সঞ্চয় করে বললাম, “আপু তোমরা কি অনেক রাগ করবে যদি আমি সবসময়ই এমন অপ্সরী থেকে যেতে চাই? যদি আমি অর্ণব ছেলেটার সাথে প্রেম করতে চাই? মাইশাকে যদি আমি সবসময়ই আমাকে এভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই?……যদি আমি তোমার বোন হতে চাই, তোমরা কি আপত্তি করবা?”



আপু একদম চুপ হয়ে গেল। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরে বলল, “তুই সত্যি সত্যি মেয়ে হতে যেতে চাস?”

“হ্যা আমি সত্যিই চাই। এই সাতদিনে আমি নিজেকে মেয়ে হিসেবে যতখানি চিনেছি তার আগে ১৩ বছরে কখনো নিজেকে ছেলে হিসেবে চিনতে পারিনি। কেন যেন নিজেকে আপন ভাবতে পারিনি কখনো, যেটা পেরেছি এই সাতদিনে। প্লিজ তোমরা না করো না! প্লিজ বাসায় তুমি বুঝিয়ে বলবা, কথা দাও?”



আপুর অশ্রুভেজা মুখে হাসি ফুটল। “বলবো রে, পাগলি বোনটা আমার” আমার বুক থেকে একটা ভারী পাথর নেমে গেল। আমিও হাসিমুখে আপুকে আমার বুকে জড়িয়ে রাখলাম…পাগলীবোনটা আমার হু হু করে কাঁদছে।





—————————-





পরেরদিন মধ্য দুপুর। ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি আমরা, হোটেল ছাড়বো। সাতটা দিনে অসম্ভব সুন্দর কেটেছে, এখন বাড়ি ফেরার পালা। এরই মধ্যে অর্ণবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি, মাইশাকে ওর জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে এসেছি। ওর সাথে বন্ধুত্বটা অনেক গাঢ় হয়েছে আমার। ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে রেডি হচ্ছি এখন। বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগাতে যাবো, রিন্তি আপু দুড়দাড় করে এসে ঢুকলো।



“এই স্পর্শিয়া, এটা তোর জন্য!” আমার দিকে কয়েকটা কাপড় বাড়িয়ে দিল।

“কি এটা?”

“আমার কালো সাটিনের জামাটা, তোর অনেক পছন্দ ছিলো যেটা। মনে নাই শুরুরদিন বলেছিলি? যা তোকে এটা দিয়েই দিলাম, তোর নতুন জীবনের সেলিব্রেশন গিফট।”

“থ্যাঙ্কিউ আপু!” আমি খুশিমনে ড্রেসটা নিয়ে দরজা আটকে দিলাম। স্লিভলেস কালো একটা কামিজ আর একটা কালো লেগিংস, সাথে সাথে নেটের ব্রা প্যান্টিগুলোও দিয়ে গেছে। সবকিছু পড়ে নিলাম ঝটপট; কাজল, মাশকারা, লিপস্টিক আর টিপ দিয়ে মেকআপটাও সেরে ফেললাম। সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে!



এরপরে ঘটনা সংক্ষিপ্ত। এয়ারপোর্টে চেক ইন করলাম, বোর্ডিং পাস নিলাম। প্লেন আসার পরে আবার হাইহিলের শব্দ তুলে প্লেনে উঠে বসলাম আপুর সাথে।



প্লেনটা দ্রুতই রানওয়ে ধরে দৌড়াতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরেই মাটির মায়া ত্যাগ করল, দিগন্তের দিকে ছুটে চলেছে দ্রুতবেগে। সেই সাথে আমার স্বপ্নও ছুটে চলেছে, স্বপ্নটাকে যে দিগন্ত ছুঁতেই হবে!
[+] 1 user Likes KEWekJON's post
Like Reply


Messages In This Thread
সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 01:10 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 01:12 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 01:14 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 01:32 PM
RE: সাগরকন্যা - by Scared Cat - 20-08-2020, 08:55 PM
RE: সাগরকন্যা - by Scared Cat - 20-08-2020, 09:10 PM
RE: সাগরকন্যা - by fuhunk - 20-08-2020, 10:07 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 10:31 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 10:35 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 10:36 PM
RE: সাগরকন্যা - by KEWekJON - 20-08-2020, 10:42 PM
RE: সাগরকন্যা - by Scared Cat - 21-08-2020, 07:23 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)