Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#19
Thumbs Up 
Part 12

রাস্তা ছেড়ে আস্তে আস্তে গাড়ীটা একটা সরু রাস্তায় নামিয়ে এগোতে এগোতে পবন জানালো ওর বাড়ী আর একটু নীচে। কিছুটা নামার পর ছোট্ট একটা পাহাড়ী গাঁ, পিকচার পোস্ট কার্ডের মতো সাজানো পাহাড়ের ঢালে সাজানো ছোট ছোট বাড়ী। আরো একটু নীচে পাহাড়ের ধাপে ধাপে চাষের জমি। পবন গাড়ীটাকে নামাতে নামাতে একটা বাঁকঘুরে কিছুটা উঠিয়ে একটা ছোট্ট বাড়ীর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে জানালো ওরা পৌঁছে গেছে। দিদান নামার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে অরিত্রদের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। ক্ষনিকের জন্য হলেও বুকের ভেতরে একটা স্বপ্ন উঁকি দিয়ে চলে যেতে চাইলে সেটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করে বলল…শুক্লা দেখ……কি সুন্দর ঘুমোচ্ছে দুটোতে…কি ভালো লাগছে দেখতে তাই না…

শুক্লাদি পেছন ফিরে দেখতে দেখতে বলল…তোমাকে তো কতবার বললাম…দাদুভাই এর সাথে খুব সুন্দর মানাবে…দাদুভাই এর সাথে কথা বল…
ভাবলেই তো আর বলা যায় না… 

ঘুম ভাঙ্গলো শুক্লাদির ডাকে…এই দাদুভাই…ওঠ…এসে গেছি।

অরিত্র আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো…পাহাড়ের ধারে ছোট্ট একটা ছবির মতো বাড়ি…বাড়ীর এক দিকে ভুট্টার ক্ষেত…আর একদিকে ছোট্ট একটা ফুলের বাগান। চোখ রগড়ে নিয়ে মৌ এর দিকে তাকালো…পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। কাঁধে হাত রেখে আস্তে আস্তে নাড়া দিয়ে ওকে ডাকলো…এই…মৌ…ওঠো।

ঘুম জড়ানো গলায় বলল…উঁ…ঘুমোতে দাও না।

পবনের বাড়ী এসে গেছি তো…ওঠো।

আস্তে আস্তে উঠে বসে চোখ কচলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল…কি সুন্দর জায়গাটা…তাই না। 

হুঁ…চলো…

দিদানরা কোথায়?

সবাই ভেতরে গেছে…

ততক্ষনে উনিশ কুড়ি বছরের একটি মেয়ে তাড়াতাড়ি করে এসে গাড়ীর কাছে এসে হাসিমুখে ওদের কে ভেতরে যেতে বললো। অরিত্র সামনের সিটটা লক খুলে নামিয়ে দিয়ে নেমে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে এদিক ওদিক দেখছিল, মৌ নেমে এলে মেয়েটা ওর দিকে এগিয়ে এসে জানালো ও পবনের বোন লছমী। ওদের দেরী দেখে বোধ হয় পবনও বেরিয়ে এলো… বোনকে আদর মাখানো গলায় বকুনি দিয়ে বলল…দাঁড়িয়ে না থেকে জলদি ভাবীজীকে নিয়ে ভেতরে যেতে। পবনের পেছন পেছন একটা সাদা ধবধবে লোমে ঢাকা স্পানিয়েল বেরিয়ে এলো…খুব বেশী হলে মাস তিনেক বয়স হবে…অরিত্রর দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে দুবার ডেকে উঠল…ভাবখানা যেন বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন…ভেতরে এসো।

দুটো মাত্র ছোট ছোট ঘর ওদের কিন্তু চারদিকে যত্নের ছাপ, কেউ আসবে বলে যে গোছানোর চেষ্টা করা হয়েছে তা নয়। পবনের মা খুব যত্ন করে খাওয়ালো। এমন বেশী কিছু নয়, গরম গরম হাতে তৈরী রুটী, কষা মাংশ, আচার আর টক দই…আন্তরিকতা থাকায় আর কয়েকদিন হোটেলের খাওয়ার খাবার পর বাড়ীতে রান্না করা খাবার যেন অমৃত সমান হয়ে উঠল। শুধু তাই নয়, বেরোবার সময় টিফিন ক্যারিয়ারে করে পরোটা আর আলুর দম, সাথে আচার দিয়েদিল…বিকেলে খাওয়ার জন্য। 

পবনদের বাড়ী থেকে বেরিয়ে গ্যাংটক যাবার জন্য বেরোতে বেরোতে দুটো বাজলো। আর একটু আগে বেরোতে পারলে ভালো হত কিন্তু খেয়ে ওঠার সাথে সাথে না বেরিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরোনো ভালো বলে পবনের মা আটকে দিয়েছিলো। বেরোনোর পরপরই আকাশ কালো করে এসে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে…এখন আর বৃষ্টি নেই…মেঘের ফাঁক দিয়ে সুর্যের আলো পড়ে ভেজা গাছের পাতা ঝকঝক করছে। বেরোতে দেরী হয়েছে একটু কিন্তু খুব একটা নয় বলে পবন ধীরে সুস্থে গাড়ী চালাতে চালাতে এগোচ্ছে। অরিত্র ক্যামেরাটা নিয়ে ছবি তুলছিল, মনে পড়ল গতবার ফেরার সময় দাদু তিস্তার চরে নামতে চেয়েছিল কিন্তু দেরী হয়ে যাবে বলে চলে যেতে হয়েছিল। দাদুরা ঘুমোচ্ছে দেখে পবনকে ডেকে বলে দিল একটা ভালো জায়গা দেখেও যেন গাড়ী একেবারে নদীর ধারে নামিয়ে দেয়। মৌ বাইরের দিকে তাকিয়ে বসেছিল, পবনের সাথে কথা বলা হয়ে গেলে ওর দিকে তাকালে দুজনের চোখাচুখি হয়ে গেল, মৌ চোখের পলক না ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…সবাই ঘুমোচ্ছে।

অরিত্র দাদুদের দিকে আর একবার তাকিয়ে দেখেবলল…হুঁ…

একই ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে বলল…আমরা ঘুমোইনি… 

কি বলতে চাইছে প্রথমটা বুঝতে না পেরে ওরদিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করল…যেন কিছু হয়নি এমন একটা ভাব করে চুপচাপ ওর দিকে তাকিয়ে আছে…একটু পরে মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতো বসে থাকলো…অরিত্রওর দিকে সরে গিয়ে বলল…হ্যাঁ…আমরা ঘুমোই নি…

মুখ ঘুরিয়ে ওর চোখ চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল…তুমি কখন ফোন করবে…

কি অদ্ভুত মেয়ে কে জানে…কোথা থেকে কোথায় চলে গেল…মেয়েরা যে কি চায় কে জানে ভাবতে ভাবতে বলল…যখন তুমি চাও…

ইস…যখন তুমি চাও…তোমার কখন সময় হবে আমি কি করে জানবো…

ইচ্ছে তো করে সারাদিন তোমার সাথে গল্প করতে…অনেক কিছুই তো বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু সব কিছু তো আর যায় না বলা ভেবে বলল…উমম…ভাবছি…সন্ধে সাড়ে পাঁচটা কি ছটা নাগাদ করবো…

চোখ কুঁচকে কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…অফিস কখন ছুটি হবে?

আমি যখন ফোন করবো তখন ওখানে রাত এগারোটা মত হবে।

তাই? ঘুমোবে কখন?

তোমার সাথে কথা বলা হয়ে গেলে…

আর…আমি যদি ফোন না ছাড়ি?

ঘুমোবো না…ব্যাস…আবার কি…

হুম…ঘুমোবো না…ভালো…পরের দিন অফিসে বসে ঘুমোবে…আর …ভাগিয়ে দিয়ে বলবে…যাও…বাড়ী ফিরে যাও…এখানে থাকতে হবে না…খুব মজা হবে…তাই না?

ওর কথা বলার ধরন দেখে হাসি পেয়ে গেল অরিত্রর…মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল…আর যদি চাকরীটাই চলে যায়…কি হবে?

কি আবার হবে…ভালো হবে…তোমাকে আর ভোর বেলা উঠে অফিস যেতে হবে না…আর আমাদেরকে রাত জেগে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে না।

কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ…দুজনেই হয়তো ভাবছিল কি বলবে বা চুপচাপ থাকলেও শরীরের ভাষায় হয়তো কথা হচ্ছিল…কখোনো আড় চোখে তাকানো…কখোনো বা একটু হাসি…যে হাসির কোনো মানে নেই…আবার হয়তো অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে সেই ছোট্ট হাসির ভেতরে। 

মৌ কোলের উপরে হাত রেখে বসেছিল…খুব ইচ্ছে করছিল ওকে একবার ছুঁতে। ওর দিকে কিছুটা সরে গেলে বাইরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো…চোখে চোখ রেখে আলতো করে হাতের উপরে হাত রেখে চাপ দিলে কেমন যেন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন…তারপর চোখ বুজে খুব প্রিয় কারুর স্পর্শ নিজের বুকের ভেতরে অনুভব করতে করতে অস্ফুট স্বরে বলল…কিছু বলছো না তো?

ভাবছি…কি বলবো।
শোবে?
কোথায়?
আমার কোলে।
অরিত্র ভাবছিল…ও কি করে বুঝলো…আমার মনের কথা। আর কিছু না বলে ওর কোলে মাথা রেখে শুলে আস্তে আস্তে চুলের ভেতরে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিল। মেয়েলী সুগন্ধ বুক ভরে নিয়ে ওকে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল …আর কিছু চাই না… ওর দু চোখে খুশির ঝিলিক…একটু ঝুঁকে যেন আরো ভালোভাবে ওকে দেখতে চাইলো…এত কাছে ওর উদ্ধত যৌবনের উপস্থিতি…খুব ইচ্ছে করছিল সেই আকাঙ্খিত অজানা অচেনাকে মুখ গুঁজে অনুভব করতে…আরো একটু ঝুঁকে কপালে ওর নাক লাগিয়ে আলতো ভাবে ঘষে দিয়ে মুখ তুলে নিল…দু চোখের খুশি এখন ওর সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে…যেন…জীবনের সব কিছু পাওয়া হয়ে গেছে…আর কিছু চাই না…মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে…আলতো ভাবে ওর গালে আঙ্গুল বোলাতে বোলাতে বলল…কি দেখছো?
উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলে আবার জিজ্ঞেস করল…এই…বলো না…কি দেখছো।

হাসি মুখে জবাব দিল…খুব মিষ্টি একজন কে দেখছি…

তাই?

হুঁ।

খুব মিষ্টি তো দুষ্টু একজন কাছে আসতে চায়না কেন?

কে বলেছে কাছে আসতে চায় না? এই তো এসেছে…

চায় না তো…ভীষন দুষ্টু…খালি আমাকে কষ্ট দেয়…

আর দেবে না…

জানি…

চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বলল…এই.. আর একটু উঠে শোও না…ওদিকে তো পা রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। উঠে শুতে গেলে ওর কোমল বুক ছুঁয়ে থাকলো গালের পাশে, গাড়ীর ঝাঁকুনিতে সেই আকাঙ্খিত স্পর্শ মাঝে মাঝে আরো নিবীড় হয়ে উঠছিল, মৌ ওর মাথার পেছনে হাত রেখে আরো কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ফিস ফিস করেবলল… ঘুমোবে?
উঁ হুঁ…তোমাকে দেখবো কি করে।

মুখ নামিয়ে নিয়ে এসে আলতো করে নাক দিয়ে কপালে ঘষে দিয়ে বলল… আজকেই সব দেখে নিলে পরে কি দেখবে? 

সারা জীবন দেখলেও শেষ হবে না।

তাই?

হুঁ
চোখের পলক না ফেলে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েছিল, ভুলে গেছে হয়তো ওরা একা নয়। মাঝে মাঝে চোখ চলে যাচ্ছিল অন্য দিকে, কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে ঠিক করতে না পেরে, গালের হালকা গোলাপি আভা, এক গোছা অবাধ্য রেশম কোমল চুল বারে বারে মুখের উপর এসে চোখ ঢেকে দিয়ে বলতে চাইছে নাকি? এই…এখনই এতো দেখো না… ওই নরম লাল ঠোঁট…মনে হ’ল তির তির করে কাঁপছে… মন মানতে চাইলো না… কিছু পাবার ইচ্ছে নিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে নীরবে জানালো কি চাই… চোখের ইশারায় উত্তর এলো… কি করে দেবো…কেউ দেখে ফেললে? দাও না…খুব ইচ্ছে করছে… উত্তর এলো উমমম…দাঁড়াও… ভাবি। আস্তে করে বলল…একটু ওঠোনা।
কেন? লাগছে?
উঁ হুঁ…
মাথা তুলে একটু সরে গেলে গায়ের শালটা দিয়ে নিজের মাথা ঢেকে নিয়ে ইসারা করলো আবার শুতে। আগের মতো শুয়ে পড়লে বুকে চেপে নিয়ে মুখ নিচু করে এগিয়ে এলো…শালটা দিয়ে ওকেও ঢেকে নিয়ে। এতো কাছে দুজনের ঠোঁট, শালের অবগুন্ঠনের আড়ালের আবছা আলোয় দুজনেরই চোখে আকাঙ্খা… কই…চুমু দাও। অপেক্ষা করতে করতে চোখ বুজে এলো দুজনের…এই ভেবে…আগে ও দিক। কেউ জানে না কে আগে কার ঠোঁট ছুঁয়েছে…শুধু বুঝেছে ওরা একে অপরকে ছুঁয়ে আছে। শুধু ছুঁয়ে থাকলেও যে এতো ভালো লাগতে পারে জানা ছিল না কারুরই…সময় কেটে যাচ্ছে…হালকা নিশ্বাস আস্তে আস্তে ঘন হয়ে উঠল… হয়তো বুক ভরে স্বাস নেওয়ার জন্য এক পলকের জন্য দুজনে দুজনের স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। চোখ মেলে তাকালো দুজনে…কে জানে কে আগে…চোখের ইশারা…আরো চাই…লাজুক হাসিতে বোঝালো…ইস…লজ্জা করছে…তুমি নাও। উঁ হুঁ…তুমি এসো…দুজনেরই চোখ বুজে গেল আবার…আলতো চুমুর অস্পষ্ট মিষ্টি আওয়াজ…একের পর এক…কিন্তুনেই কোনো তাড়াহুড়ো…কারুর ঠোঁটে আর একজনের আলতো কামড়…অসহ্য সুখের অস্ফুট আঃ আওয়াজ কারুর গলায়…আরো পাওয়ার আশায় অপরজন নিজেকে আরো এগিয়ে দিয়েছে… পাশ দিয়ে বোধ হয় একটা গাড়ী খুব জোরে হর্ন দিয়ে পেরিয়ে গেল।সম্বিত ফিরে এলো হয়তো এক সাথেই দুজনের… অবগুন্ঠনের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বুকের উপরে শুয়ে থাকা দুষ্টুটার গালে আদরের আলতো চিমটি দিয়ে চোখের ভাষায় বোঝালো… খুব শখ… না… সবাই এতো কাছে… ওইভাবে না কামড়ালে হোতো না?

ভালো ছেলেটা আবার ছোটোবেলার মতো দুষ্টু হয়ে গিয়ে হাসি মুখে বোঝালো…আরো করবো…দুষ্টুমি।
আকাঙ্খিত উত্তরটা পেয়ে গেলে প্রত্যুত্তর এলো… ইস…বয়ে গেছে।
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 07-03-2019, 10:23 AM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)