Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#15
Part 10

পবন এখুনি ঘুরে আসছি বলে বেরিয়ে গেছে…কোন মন্দিরে নাকি মানত করে রেখেছিল পূজো দেবে বলে…দাদু, দিদান আর শুক্লাদি মৌকে কাছ ছাড়া করতে চাইছিল না…যেন আজই ওর সাথে সব কথা বলা শেষ করতে হবে, নিজেদের যে শরীর ভালো নেই যেন ভুলেই গেছে। অরিত্র ওর রুমে গিয়ে এক এক করে সবাইকে ওর কথা বলা শুরু করার ব্যাপারটা জানাচ্ছিল। বোস দাদু শুনেই বলল…মনে হচ্ছে যা ভেবেছিলাম…তাই…বিরাট একটা শক পেয়ে যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তেমনি আবার একটা শক পেয়ে ঠিক হয়ে গেছে। যাক গে…আরো একটা চিন্তা থেকেই গেল…স্মৃতি ফিরবে কিনা আর যদি ফেরে কতটা বা কিভাবে ফিরবে…ভালো বা খারাপ দুটোই হতে পারে…এর মাঝে আমি অনেকের সাথে আলোচনা করেছি কিন্তু কেউ সেভাবে আশার আলো দেখাতে পারেনি…আজকাল অনেকরকম চিকিতসা হচ্ছে কিন্তু ভালো হবেই কেউ বলতে পারছে না…ভালো করতে গিয়ে যদি আরো খারাপ হয়ে যায়…সেটাই চিন্তা। কেউ কেউ বলছে ঠিক কি কি ঘটেছিল জানতে পারলে একটা চেষ্টা করে দেখা যেত।


অরিত্র একটু চুপ করে থেকে বলল…কি জানি কি হবে…দেখা যাক। এখন যা হয়েছে…সেটাই বা কম কি…

বিশ্বাস কাকুকে ফোনে পাওয়া গেল না…নেটওয়ার্কের বাইরে আছে…পরে আবার চেষ্টা করবে ভেবে রুপসাকে ফোন করল…একসাথে পুবালীকে পেলে ভালো হ’ত কিন্তু এখন পাওয়া যাবে না, ওর অফিসে একটা মিটিং আছে বলেছিল। রুপসা শুনে যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না…দাদাভাই, প্লিজ একবার আমার সাথে কথা বলিয়ে দে…উঃ…আমার ইচ্ছে করছে এখুনি চলে যাই রে…

দাঁড়া…দিদানদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। আর শোন…তুই কাউকে বলিস না…আমি সবাই কে নিজে জানাবো…না হলে…খারাপ দেখাবে…বুঝলি…
হ্যাঁ…বুঝলাম…তুই আগে ফোনটা দে না বাবা…
মৌকে ডেকে নিয়ে এসে ফোনটা হাতে দিলে জিজ্ঞেস করল…কে?
অরিত্র হেসে বলল…দেখো…কে আছে… 
মৌ হ্যালো বলতেই…রপসা…বলল…এই…মৌ…আমি কে বলোতো?
মৌ একবার অরিত্রর দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে বলল…উমম…ছোড়দি…
ইস…ছোড়দির নাম তো পুবালী।
উঁ হুঁ…পুবালী দিদি তো তোমার ছোড়দি…আর আমার মেজ দি। তুমি…আমার ছোড়দি…রুপসা দিদি।
কি করে বুঝলে? 
বা রে…বলবো কেন? 
জানো তো…তোমার কথা খুব মিষ্টি…একেবারে তোমার মতো।
ধ্যাত…তুমি খালি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছো। তোমার গলাও তো কত মিষ্টি।
ধুস…আমার গলা…হাঁসের মতো…সব সময় নাকি প্যাঁক প্যাঁক করে কথা বলি…
মৌ হেসে ফেলে বলল…কে বলেছে…তোমার গলা হাঁসের মতো।
কে আবার বলবে…বলার তো একজনই আছে…
কে… ব’ল না।
উমম…তোমার কাছে কেউ নেই তো?
উঁ হুঁ…এখানে খালি তোমার দাদাভাই ছাড়া আর কেউ নেই…
ওই দাদাভাই টাই তো বলে…আমার সাথে কথা বললে নাকি কান ঝালাপালা হয়ে যায়…পাগল পাগল লাগে।
অরিত্রর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়ে হেসে ফেলে বলল…তাই?
হ্যাঁ গো…তাই বলে…আচ্ছা…শোনো না…কি করে হোলো বলোতো…আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
কি জানি…তোমার দাদাভাই জানে হয়তো।
যাক গে…বাদ দাও…তুমি কথা বলতে পারছো…এটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়…পরে দাদাভাই এর থেকে জেনে নেবো।
ছোড়দি…তুমি কবে আসছো?
ইচ্ছে তো করছে…আজই চলে আসি…সামনের সোমবার আমার একটা ইন্টারভিউ আছে…হয়ে গেলেই চলে আসবো।
খুব ভালো হবে…তোমার সাথে অনেক গল্প করবো।
ইস…আমার সাথে কেন গল্প করবে…আর একজন তো পাশেই আছে।
ধ্যাত…তুমি না খালি পেছনে লাগো।
ইস…আমি পেছনে লাগি? তোমার ইচ্ছে করে না নাকি? ও হ্যাঁ…ওটার কিছু হ’ল…তোমাকে যেটা বলেছিলাম…
কি গো?
ওই যে দাদাভাইকে দিয়ে ব’লাতে…
তুমি এসো না…তারপর…

দুপুরের পর থেকে আবার ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঠান্ডায় কারুরই শুতে ইচ্ছে ছিল না…দাদুদের ঘরে ওরা সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর অরিত্র ওদিকে নিজের ঘরে এক এক করে সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছে। যারা খুব কাছের তাদেরকে আবার উঠে গিয়ে মৌ এর সাথে কথা বলিয়ে দিতে হচ্ছে…এই করতে করতে বিকেল হয়ে গেল তবুও বৃষ্টি থামার নাম নেই। বৃষ্টির জন্য বোধহয় ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে দেখে কম্বল মুড়ি দিয়ে কি করা যায় ভাবছিল, শুক্লাদি এসে বললো…দাদু ডাকছে। দাদু সোফায় পা তুলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর ওদিকে মৌ যথারীতি দিদানের সাথে কম্বলের তলায়। আগের দিনের মতো শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। শুক্লাদিও ফিরে এসে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ল। 
কি ব্যাপার…দাদু…আজকেও কি ভুতের গল্প হচ্ছে নাকি?
না রে…যা সব ভীতু…ভুতের গল্প নয়…আজ তোর দিদানের ছোটোবেলার গল্প হচ্ছিল। স্কুল যেতে গিয়ে নাকি রামছাগলের তাড়া খেয়ে পুকুরে পড়ে গিয়েছিল…আরো কত কি…

যাই বলো দাদু…তোমাদের ছোটোবেলায় খুব মজার মজার ঘটনা আছে…

তা অবশ্য ছিল…তোরা তো অনেক কিছুই দেখিস নি…আস্তে আস্তে সব কিছু কেমন যেন পালটে যাচ্ছে।

তা তো যাবেই…তোমরা কিছু খাবে এখন? দুপুরে তো ভালো করে খাওয়াই হোলো না…পবন কেও ডাকি একবার…ও বেচারা এই ঠান্ডায় বাইরে বসে আছে।
চিকেন পকোড়া আর সাথে গরম কফি খেতে খেতে পবনের সাথে কথা হচ্ছিল ওর বাড়ী নিয়ে। বাড়ীতে মা আর ছোটো বোন থাকে, দাদা বিয়ে করে আলাদা থাকেএই দার্জিলিং এ…বাবা অনেক দিন আগে ওদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল…আর ফিরে আসেনি… বোনের বিয়ের চেষ্টা করছে, বোনের বিয়ে হয়ে গেলে তারপর নিজের বিয়ের কথা ভাববে। কথা বলতে বলতে পবন একটু কুণ্ঠার সাথে বলল…ওর মা নাকি সবাইকে গ্যাংটক যাবার দিন দুপুরে ওদের বাড়ীতে যেতেবলেছে…দুপুরের খাওয়াটা ওদের বাড়ীতে সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে না হয় তারপর গ্যাংটক যাবে। ওর মা নাকি বাঙ্গালীদের মতো মাংশ রান্না করতে পারে। দাদু শূনে খুব খুশি হয়ে বলল…আরে…কেন যাবো না…নিশ্চয় যাবো…কি গো…তোমার আপত্তি নেই তো বলে দিদানকে জিজ্ঞেস করতে দিদানও হ্যাঁ বলে দিল। পবনের সাথে এই কদিনে এমন একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে যে ওদের কারুরই যেতে কোনো আপত্তি ছিল না।

পরের দিন দিদান আর শুক্লাদির শরীর মোটামুটি ঠিক থাকলেও বেশী ঘোরাঘুরি না করে দুপুর অব্দি ঘুরে এসে বিকালের দিকে না হয় কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসা হবে ঠিক হল কারন পরের দিন আবার ঘন্টা ছয়েক গাড়ীতে করে যেতে হবে। রাস্তা খালি থাকলে একটু কম সময় লাগতে পারে কিন্তু একটু বেশি ধরে চলাই ভালো, পাহাড়ী রাস্তা…কখন কি হয় বলা খুব মুশকিল। সন্ধের দিকে দিদান আর শুক্লাদি ব্যাগ পত্র গোছাচ্ছিল…মৌ ওদেরকে সাহায্য করতে গেলে দিদান মিষ্টি করে বকুনি দিয়ে বলল…তোকে এখানে গিন্নিপনা করতে হবেনা…যা না…দেখ দুষ্টু কোথায় আছে…বাইরে গিয়ে ঘুরে আয়…ছেলেটাও হয়েছে তেমনি…আমরা না বেরোলে কোথাও বেরোবে না…আরে বাবা…আমাদের না হয় বয়স হচ্ছে…তোদের তো এখন ঘোরার বয়স। মৌ দাদুর দিকে তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে বলল…দেখলে দাদু…দিদান আমাকে কেমন বকে দিল…তোমার নাতি না বেরোলে আমি কি দোষ করলাম। দাদু টিভিতে খবর দেখছিল…টিভির আওয়াজটা একটু কমিয়ে দিয়ে বলল……ঠিকই তো বলেছে…যা…গিয়ে বল…ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে। অরিত্র ওদের কথার মাঝখানে ঘরে ঢুকলে…দাদু বলল…এই তো…ভালো সময়ে এসেছিস…তোর কথাই হচ্ছিল…

তাই? আমি আবার কি করলাম?
কিচ্ছু করিস নি…যা…মৌ কে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। 
বুঝেছি…নিজে বলতে পারে নি…তোমাদের কে দিয়ে বলাচ্ছে…

মৌ মুখটা আরো গোমড়া করে বলল…দেখলে দাদু…কেমন করে বলল…আমি বলেছি নাকি যাবো? তোমরাই তো বললে ঘুরে আসতে। যাও…আমি যাবো না কোথাও। 

দাদু হেসে ফেলে বলল…আরে…রাগ করিস না…যা…তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিয়ে ঘুরে আয়…আসার সময় আমাদের জন্য ভালো করে পান বানিয়ে নিয়ে আসবি।
মৌ অরিত্রর দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো…ও যে পেছনে লাগার জন্য বলেছে বুঝতে পেরে যত তাড়াতাড়ি মুখ গোমড়া করেছিল ততটাই তাড়াতাড়ি উঠে দিদানকে বলল…ও দিদান দেখো না…এটা পরেই তো যাওয়া যাবে…খুব খারাপ নাকি? 
দিদান হেসে ফেলে বলল…তুই কি আমার সাথে যাবি?
অরিত্র…মনে মনে ভাবছিল…তুমি এত সুন্দর…যা পরবে…তাতেই ভালো লাগবে। মুখে বলল…খুব চলবে…চলো…

পবন হোটেলের রিশেপশানের সামনের সোফাতে বসে টিভিতে একটা হাসির সিনেমা দেখছিল, ওদেরকে নামতে দেখে উঠে এলে অরিত্র বলল…গাড়ীতে যাবে না। এই আশে পাশে কিছুটা হেঁটে ঘুরে আসবে। পবন রাজী হল না…এই সন্ধের সময় ভাবীজীকে নিয়ে একা একা ও বেরোতে দিতে চাইছে না। ও ঠিকই বলছে দেখে অগত্যা গাড়ীতে উঠতে হল। চারদিকের দোকানগুলোতে আলো ঝলমল করছে…আকাশ ভালো থাকায় রাস্তায় ভীড়ও খারাপ নয়। গাড়ীর মাঝখানের সিটে ওরা দুজন দুদিকে বসে…মৌ একেবারে কোনের দিকে কোলের উপর হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল। অরিত্রর মোবাইলে একটা ফোন এল…বড়দি ফোন করেছে…কিছুক্ষন ফোনে কথা বলে ও মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলল… বড়দিরা সামনের সপ্তাহের শেষের দিকে আসছে…তোমার কথা বলছিল…আমাদের বাড়ীতে যদি না আসতে পারে তাহলে তোমাকে নিয়ে ভবানীপুর যেতে বলল।
অরিত্রর দিকে তাকিয়ে ও কি বলছে শোনার পর আস্তে করে বলল…সবাই আমার খোঁজ করে…দেখতে চায়…
তা তো চায়…সবাই তোমাকে ভালোবাসে।
সবাই চায়…শুধু একজন ছাড়া।
অরিত্রর বুঝতে অসুবিধা হল না…ও কার কথা বলছে। বুঝতে পারছিল না কি উত্তর দেবে…কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল…কে বলেছে তোমাকে?
কেউ বলেনি…আমি বুঝতে পারি। 
আর কিছু না বলে ওর দিকে সরে গিয়ে ডান হাত দিয়ে ওর বাঁ হাত আলতো ভাবে চেপে ধরলে একটু যেন কেঁপে উঠল। বাইরের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করল কিন্তু গাড়ীর ভেতরে খুব একটা আলো না থাকায় বুঝতে না পেরে ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে অরিত্রর হাতের উপর ডান হাতের চাপ দিয়ে হাতটা সরিয়ে নিয়ে মুখ নিচু করে বসে থেকে কিছু যেন বোঝাতে চাইলো। বুকের ভেতরে ওকে জ়ড়িয়ে ধরে আদর করার ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রেখে চুপ করে বসে থাকতে থাকতে মনে হল এক ফোঁটা উষ্ণ জল হাতের উপরে পড়ল। কিছু পেয়েও না নিতে পারার ব্যাথায় বুকের ভেতরটা ভীষন একটা কষ্টে ভরে উঠল। গাড়ী এখন আর বাজারের ভেতরে নেই…জায়গাটা মোটামুটি নির্জন…কিছুটা দুরে রাস্তার থেকে কিছুটা নিচে একটা মাত্র দোকান দেখা যাচ্ছে, নিজেকে শক্ত করে পবনকে গাড়ীটা দাঁড় করাতে বলে ওকে দাদুদের জন্য পান আনার কথা বললে…পবন গাড়ীর দরজা বাইরে থেকে রিমোট লক করে চলে গেল। ওর একেবারে পাশে সরে গিয়ে নিজের বুকে টেনে নিলে বুকের উপরে মাথা রেখে বসে থাকলো…চোখের জল নিজের হাতে মুছে দিতে দিতে আস্তে করে বলল…এই…

অস্ফুট গলায় সাড়া এল…বলো… 
পারবে না …আমাকে আরো একটু সময় দিতে?
অরিত্রর বুকের উপরে নিজেকে আরো একটু চেপে ধরে কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বলল…পারবো। 
আরো কিছুক্ষ্ণন ওকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকার পর আবার ওকে ডাকলো…এই মৌ।
উঁ
আমার দিকে তাকাও।
উমম…কেন?
না তাকালে বলবো কি করে?
আস্তে আস্তে ওর বুকের উপর থেকে উঠে তাকালে…দুহাতে ওর মুখটা ধরে জিজ্ঞেস করল…এখোনো কি মনে হচ্ছে…একজন বাদে সবাই তোমাকে চায়?
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 07-03-2019, 07:50 AM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)