Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#14
Part 9

রাতে খেয়ে রুমে ঢুকতেই ফোনটা বেজে উঠল, ছোড়দি ফোন করেছে দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলে…পুবালী জিজ্ঞেস করল…কি রে ভাই…রুপসার ফোন ধরছিস না কেন? তিন বার ফোন করেছে তোকে।

আমি ছিলাম না রে, খেতে গিয়েছিলাম…এখুনি করছি…এখোনো রেগে আছে নাকি রে?

না রে…ও রাগ করে থাকার মেয়ে নাকি…

ছোড়দি…তুই একটু ধর…রুপসাকে লাইনে নিচ্ছি…খুব এম্ব্যারাসাড হয়েছি আজ…বুঝলি।

কি হোলো আবার…

একটু ধর…রুপসাকে ধরি…তারপর বলছি…

দু বোনকে লাইনে নিয়ে পবনের ভাবীজী বলা আর পূজো দেবার ব্যাপারটা বলতেই রুপসা প্রায় লাফিয়ে উঠল…দেখলি তো…আমি বললেই তোর যত প্রবলেম…আর সবাই কি বলছে এখন? তোদের ওই পবন দু দিনেই বুঝে গেছে…আর তুই কিছু বুঝতে পারছিস না…বল…এবার…

হুম…বুঝলাম…তুই এবার বল…আমার উপরে আর রেগে নেই তো?

ধুস…তোর উপর রেগে থাকলে এতবার ফোন করি নাকি? একটা মাত্র দাদাভাই…রাগ করে থেকে কি করবো রে? কি রে ছোড়দি…তাই তো?
পুবালী হেসে ফেলে বলল…তাছাড়া …আবার কি…

পরের দিন মহাকাল মন্দীরে সবাই মিলে গিয়ে পূজো দেওয়ার পর আর হোটেলে না ফিরে দিনের বাকিটা এদিক ওদিক ঘুরে আসতে আসতে প্রায় সন্ধে হয়ে গেল। আগের দিন শুক্লাদি আর মৌ ভুতের গল্প শুনে খুব ভয় পেয়েছিল বলে আজ ওরা চারজনে বসে লুডো খেলছে। অরিত্র পবন কে সাথে নিয়ে বাজারের দিকে গেল কিছু ঘর সাজানোর জিনিষ কিনতে…বন্ধুবান্ধব, অফিস কলিগ… সবাই কে কিছু না কিছু দিতে হয়। ফিরে এসে কিছুক্ষন গল্প গুজব করে খেয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে সাড়ে নটা বাজলো…ঠান্ডাও মোটামুটি ভালোই পড়েছে…সারাদিন বাইরে ঘুরে সবাই একটু ক্লান্তও ছিল। পরের দিন সকালে আর বেরোনো গেল না,দিদান আর শুক্লাদি দুজনেরই গায়ে অল্প জ্বর এসেছে। বোস দাদুকে ফোন করলে… কি ওষুধ খাওয়াবে বলে দিয়ে বলল…এক কাজ কর একটু করে ব্র্যান্ডি খাইয়ে দে…বিকেলের ভেতরে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।পবন দুবার উপরে এসে ডাক্তার দেখাতে হবে কিনা খোঁজ নিয়ে গেছে। দিদানরা বেরোতে পারবে না বলে দাদু বলে দিয়েছে বেরোবে না…মৌ দিদানের পাশে বসে টিভি দেখছে…কেউ বেরোচ্ছে না বলে ওরও বেরোবার কোনো ইচ্ছে ছিল না। অরিত্র কিছু কাজ না পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে টিভিতে গান শুনছিল…চ্যনেল ভি তে। দরজাটা খোলাই ছিল…সাড়ে দশটা নাগাদ দাদু এসে বলল…চুপচাপ বসে থেকে কি করবি…মৌ কে নিয়ে কাছাকাছি কোথাও গিয়ে ঘুরে আয় না…

কোথায় যাবো? দিদান দের জ্বর।

সামান্য জ্বর…ও নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই…আমি তো আছিই…তোরা ঘুরে আয়। মৌ কে বলেছি…তুই গেলে ও যেতে রাজী আছে।

পবন হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আরো কয়েক জনের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল, ওরা দুজনে বেরোতেই দৌড়ে এসে বলল…সাব…কাঁহা যানা হ্যায়?
চলো…নজদিক থোড়া ঘুমকে আতে হ্যায়।

কিছুটা যাবার পর রাস্তার একদিকে চায়ের বাগান আর একদিকে পাহাড় …এক জায়গায় রাস্তার বাঁকে একটা ছোটো ঝরনার মতো…অনেকটা উপর থেকে সরু জলের ধারা নেমে আসছে…মৌ খুব মন দিয়ে জায়গাটা দেখছে দেখে অরিত্র গাড়ী দাঁড় করালো…দুজনে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিল…খুব সুন্দর জায়গাটা…রাস্তার উল্টো দিকের ঢালে চায়ের ছোটো ছোটো গাছ…হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে…আর এদিকে ঝরনা। পবন গাড়ী থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে এসে বলল…সাব ফোটো লিজিয়ে না…

মৌকে ঝরনার দিকে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন পোজে কয়েকটা ফটো তোলার পর পবন নিজেই এগিয়ে এসে বলল…সাব…আপ ভাবীজী কী পাশ যাইয়ে…আপ দোনো কা সাথ সাথ মে ফোটো বহুত আচ্ছা আয়েগা…

নিকন ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা…শুধু শাটার টিপলেই হবে না…পবন তুলতে পারবে কি পারবে না ভেবে মৌকে উলটো দিকে দাঁড় করিয়ে সব কিছু সেট করে নিয়ে পবন কে দেখিয়ে দিল কি করতে হবে…পবন ক্যামেরাটা নিয়ে দাঁড়ালে অরিত্র রাস্তা পেরিয়ে মৌ এর পাশে গিয়ে ইশারা করলো শাটার টিপতে…ওর দাঁড়ানো পবনের পছন্দ হল না…হাত নাড়িয়ে ইশারা করছিল ওদের দুজনকে আরো কাছাকাছি আসতে। আরো একটু কাছাকাছি এলেও পবন ইসারা করছিল…আরো কাছাকাছি। কি বিপদে পড়া গেছে ভেবে মৌ এর দিকে তাকালো…নির্বিকার মুখে চা বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে…ভাবখানা যেন এই…ঠিক হয়েছে…আমি এত চেয়েছি…তবু কাছে আসোনি…এখন বোঝো…কি করবে। ধ্যাত তেরি কি…জড়িয়ে ধরে দাঁড়াই…ভেবে…ওর একেবারে পাশে এসে এক হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালে পবন হাত তুলে ইশারা করল…এবার ঠিক আছে। পবন বোধহয় ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময় নিচ্ছিল শাটার টিপতে কিন্তু কিছু করার নেই…মৌ এর এত কাছে কোনোদিন আসেনি…ভীষন ভালো লাগছিল…ওকে এত কাছে পেয়ে…ওর শরীরের মেয়েলী গন্ধে মন মাতাল হয়ে যেতে চাইছিল। পবন হাত তুলে জানালো হয়ে গেছে…তার পরেই বলল…সাব অউর এক…আপলোগ ইধার আইয়ে…ম্যায় উস তরফসে খিচেঙ্গে।

মৌকে সাথে করে রাস্তা পেরিয়ে চা গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ফিরে গেল ক্যামেরাটা সেট করতে…ওদিকে গাছের ছায়া থাকায় আলো কম ছিল…এদিকে অনেকটাই ঝকঝকে আলো আছে…আগের মতো তুললে হবে না…মৌ একটা চা গাছ ছুঁয়েহাসি মুখে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে…ক্যামেরার লেন্স দিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ক্লোজ আপে নিয়ে এসে দেখছিল…কি সুন্দর সারল্য মাখানো মুখ…কোথাও কোনো মালিন্য নেই…ক্যামেরাটা সেট করে পবনের হাতে দিয়ে রাস্তা পেরোতে গেল…এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে খেয়াল করেনি যে ও একটা রাস্তা পেরোতে যাচ্ছে। হটাত একটা ভীষন কর্কশ আওয়াজ কানে এল…সাথে সাথে কেউ যেন ওকে এক ঝটকায় টেনে ধরল। কয়েক সেকেন্ড মাথাটা পুরো যেন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল…সম্বিত ফিরে এলে কি হতে যাচ্ছিল ভেবে সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল… রাস্তার মাঝখানে একটা টাটা সুমো দাঁড়িয়ে আছে…ডাইভার গালাগালি দিতে যাচ্ছিল…পবনকে দেখে গালাগালি না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করল…কোথাও লেগেছে কিনা। 

কিছু হয়নি…খুব ভুল হয়ে গেছে…একেবারে খেয়াল করিনি বলার পর মনে পড়ল…ওদিকে মৌ একা দাঁড়িয়ে আছে…ভয় পেয়ে যায় নি তো? ওর আবার টেনশান হলে চলবে না…ভেবে…তাড়াতাড়ি গাড়ীটার পেছন দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে ঘাবড়ে গেল…মৌ চা গাছটার পাশে হাঁটু মুড়ে মুখ নিচু করে বসে আছে …সারা শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে…আরো কাছে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ওকে ডাকতে গিয়ে ওর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেয়ে অবাক হয়ে গেল।এর আগে একবার কাঁদতে দেখেছে কিন্তু গলায় তো কোনো আওয়াজ ছিল না। আর কিছু ভাবার সময় ছিলনা…তাড়াতাড়ি ওর কাঁধে দু হাত রেখে ডাকলো…এই…মৌ…এই তো আমি…কিছু হয়নি আমার…ওঠো…

নিজের কানকেই বোধ হয় বিশ্বাস করতে পারছিল না ও…আস্তে আস্তে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে… কান্না যেন আরো বেড়ে গেল…অরিত্র দু হাতে ধরে তোলার চেষ্টা করলে নিজেই উঠে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকলো…কান্না কিছুতেই থামছে না দেখে…অরিত্র আবার বলল…এই…আমি ঠিক আছি… দেখো…আমার কিছু হয়নি…
বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে কান্না ভেজা গলায় বলল…আমার চাই না ফটো…তুমি কেন ওদিকে একা গেলে?
নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না অরিত্র…মৌ কথা বলছে…স্বপ্ন দেখছে না তো? ওর মাথা নিজের বুকে আরো 


নিবীড় ভাবে চেপে ধরে মুখ নামিয়ে বলল…তোমাকে একা রেখে আমি আর কোথাও যাবো না…





আর কোথাও যাওয়ার কোনো প্রশ্ন ছিল না…সবাই কে জানাবার জন্য মনটা ভীষন ছটপট করছিল…নিজের ফোনটা আনতে ভুলে গিয়েছিল…পবনের ফোন থেকে যে দাদুকে ফোন করবে তার উপায় নেই…দাদুর নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করা থাকে বলে মনে থাকে না …পবন সাবধানে গাড়ী চালাতে চালাতে বকবক করে যাচ্ছে…ও যে বলেছিল পূজো দিলেই কাজ হবে। মৌ ওর পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে কোলের উপরে অরিত্রর হাতটা ধরে চুপ করে চোখ বুজে বসে আছে পরম নিশ্চিন্তে…



হোটেলের সামনে পৌঁছোতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেমে মৌ এর হাত ধরে প্রায় দৌড়ে দাদুর রুমে গিয়ে পৌঁছোলে সবাই ওদেরকে ওইভাবে আসতে দেখে বুঝতে পারছিল না কি হয়েছে…কোনো রকমে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে পারল…মৌ…


আর কিছু বলতে পারছে না দেখে দাদু ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল…কি হয়েছে…এত হাঁপাচ্ছিস কেন…


অরিত্র একটু দম নিয়ে বলতে পারল…কথা বলেছে।


কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না ওর কথা…দিদান ততক্ষনে উঠে এসেছে…মৌ দিদান কে জড়িয়ে ধরলে দিদান ওর মুখটা তুলে ধরে বলল…এই মৌ…সত্যি? 


মৌ অস্ফুট স্বরে বলল …দিদান…


শুক্লাদি আর দাদুও ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল…কেউই বিশ্বাস করতে পারছিল না…দিদান নিজের চোখের জল আটকাতে পারলো না…ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে ওকে কিভাবে আদর করবে যেন বুঝতে পারছিল না। দিদানের চোখের জল আস্তে আস্তে যেন বাকিদের চোখেও জল এনে দিল…


পবন প্রায় লাফাতে লাফাতে ঘরে ঢুকে ওদের অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়ালো…হাতে বেশ বড় একটা মিষ্টির প্যকেট…সবার চোখে জল দেখে ওর চোখেও জল এসে গেছে…চোখের জল নিজেই মুছে নিয়ে একটা মিষ্টি মৌ এর মুখে দিয়ে…বলল…আজ ম্যায় বহুত খুশ হঁ…মেরা বহেন ঠিক হো গ্যায়ি। দিদান ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল…যা…নিজের হাতে সবাই কে খাইয়ে দে। সবার আগে পবনকে খাইয়ে তারপর সবাই কে এক এক করে খাইয়ে অরিত্রর কাছে এলে…অরিত্র মুখটা গম্ভীর করে বলল…আমার দুটো চাই।


তখোনো মুখের কান্না কান্না ভাবটা যায়নি…তার ভেতরেই মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল…কেন?


বা রে…আমিই তো তোমার কথা প্রথম শুনেছি…তাই না?


উমম…এখন পাবে না…পরে।
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 07-03-2019, 07:14 AM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)