Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#12
Part 7

প্রতি বছরই বেশ কয়েকদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়া ওদের অনেক বছর ধরে চলছে, চাকরী পাবার আগে দাদুই নিয়ে যেত আর এখন যেহেতু ও নিজে খরচ করতে পারে তাই দাদুকে খরচ করতে দেয় না।এবারেও যাবার সব কিছু ঠিক করা আছে। লক্ষী পুজোর পরদিন বেরিয়ে দার্জিলিং আর গ্যাংটক হয়ে ফিরবে, আগেও দুবার গেছে কিন্তু সব জায়গা গুলো এখোনো দেখা হয়ে ওঠেনি। দিদানের প্লেন চড়তে খুব ভয় থাকায় ট্রেনেই যাওয়া আসা করতে হবে না হলে বাগডোগরা পর্যন্ত প্লেনে যাওয়া আসা করা যেত। মৌ এর ব্যাপারে খোঁজ নেবার জন্য নিজ়ে কোলকাতায় থাকলে ভালো হ’ত কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই, বিশ্বাস কাকুর সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতে হবে। বেড়াতে যাবার আগে কয়েকটা দিন অফিস করতে একেবারেই ভালো লাগছিল না, আশা নিরাশার দোটানায় মনের ভেতরে ভীষন একটা অস্থিরতা…কি হবে…যদি কিছু না জানা যায়। বাড়ীতে ফিরে নিজের মনের অবস্থাও চেপে রাখতে হচ্ছে…মৌ কে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। ডাক্তার বার বার সাবধান করে দিয়েছিল…কোনোভাবেই ও যেন কোনো মানসিক চাপের মধ্যে না থাকে…তাতে আরো খারাপ হলেও হতে পারে। এই রকম একটা অবস্থার মধ্যে বেরোনোর জন্য গোছগাছ চলছিল, বাইরে যাওয়া তো নয় যেন দক্ষযজ্ঞ, শুধু তো আর জামাকাপড়নিয়ে বেরিয়ে পড়লে হবে না, দাদুদের প্রেসক্রিপশান, ওষুধ, হটব্যাগ, তার সাথে একটা জিনিষতো চাই ই চাই দাদুর, টি পট নিতেই হবে, দাদুর আবার দার্জিলিং ফ্লেভার ছাড়া চলে না। যদিও দিদান আর শুক্লাদি এসব ব্যাপারে ভুল করেনা তবুও অরিত্র নিজে একবার দেখে নেয়। মৌ বেড়াতে যাওয়া হবে বলে ভীষন খুশী, দিদান আর শুক্লাদির সাথে সব সময় থেকে অনেকটাই সাহায্য করছে গোছগাছ করতে।




মোটামুটি ভালো ভাবেই ওরা দার্জিলিং পৌঁছে গেছে।রাতের ট্রেন জার্নি আর পরের দিন পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী করে এসে সবাই বেশ ক্লান্ত বলে প্রথম দিন আর কোথাও না বেরিয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন থেকে শুরু করা হবে ঠিক হল। এমনিতেও তাড়াহুড়োর কিছু নেই, ধীরে সুস্থে যাতে ঘোরা যায় তার জন্য হাতে এক দিন বেশি রেখেই হোটেল বুক করা আছে। সন্ধের দিকে ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল, সবাই ঘুমোচ্ছে দেখে অরিত্র একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। পাহাড়ী রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে এসে দেখল তখোনো কেউ ওঠেনি। ঠান্ডাও বেশ জমিয়ে পড়েছে দেখে হোটেলের বারে গিয়ে এক পেগ হুইস্কি নিয়ে বসার পরই বিশ্বাস কাকুর ফোন এল। বিস্বাস কাকু নিজেই গিয়েছিলেন কলেজে,পুলিশ বলে পরিচয় দেওয়াতে কাজও হয়েছে। প্রিন্সিপাল ছবি দেখে চিনতে না পারলেও দুজন অফিস স্টাফ মোটামুটি একটা আভাস দিয়েছেন যে মেয়েটি ওই কলেজেরই ছাত্রী ছিল, খুব সম্ভবত গত বছরই বিএ অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু কাগজপত্র না দেখে বলা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। অফিসের কাগজপত্র খুঁজে নাম ঠিকানা বের করে দেখার জন্য আগামীকাল আবার যেতে অনুরোধ করেছেন উনারা। বুকের ভেতরে একটা আশার আলো নিয়ে ওদের দু বোনকে কন কলে নিয়ে জানালো কতটা কি হয়েছে। ওদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে পেগটা শেষ করে উঠবে ভাবছিল এমন সময় রিশেপশানের দিকে চোখ পড়ল, মৌ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে যেন খুঁজছে, ওকেই খুঁজছে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি উঠে যেতেই ওকে দেখতে পেয়ে সারা মুখে যেন খুশী উছলে উঠল আর তার সাথে দু চোখে বকুনি দেবার ইচ্ছে…কোথায় ছিলে তুমি…কখন থেকে খুঁজছি তোমাকে। ওর হাত ধরে ফিরে এসে বসতে বললে…এদিক ওদিক তাকিয়ে দু চোখে অবাক জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকালো…তুমি এখানে কি করছো…তুমি আবার এই সব খাও নাকি?
অরিত্র ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বলল…আগে বোসো…বলছি।
মৌ অনিচ্ছা সত্বেও বসার পর গায়ের শালটা একটু ঠিক করে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো…দু চোখে সেই একই জিজ্ঞাসা নিয়ে।
অরিত্র ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল…আমি সব সময় খাই না…অফিসের পার্টি থাকলে একটু আধটু খেতেই হয়…না হলে খারাপ দেখায়…আর…এমনিতে আমার প্রেসার কম বলে হয়তো… একটা কি বড় জোর দুটো পেগ খেলেই…বেশ ঘুম ঘুম ভাব এসে যায় … তার বেশী খেলে কষ্ট হয় বলে আর খাই না…দাদুরা জানে…
আস্তে আস্তে ওর মুখ থেকে অবাক জিজ্ঞাসা কেটে গিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার ভাব ফিরে এলে…গ্লাসটা দেখিয়ে ইশারা করে বোঝালো…এটাই শেষ?
অরিত্র হাসি মুখে জবাব দিল…হুম…এটাই প্রথম…আর এটাই শেষ…বুকের ভেতরে আরো একটা না বলা কথা ঝঙ্কার দিয়ে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো…ঠিক তোমারই মতো…তুমিই প্রথম…তুমিই শেষ…আমার জীবনে। ইচ্ছে তো হয় বলতে কিন্তু এখনই পারবোনা…ভাবতে ভাবতে বলল…তুমি একটা জুস নাও…আমি ততক্ষনে আমারটা শেষ করে ফেলি।
মাথা নাড়িয়ে জানালো…আচ্ছা।
ওয়েটারকে ডেকে জুস দিতে বলে ওর গায়ের শালটার দিকে তাকিয়ে খুব চেনা চেনা লাগলো, মায়ের বিয়ের আগের খুব প্রিয় একটা দামী কাশ্মীরী হাতের কাজ করা টকটকে লাল শাল, দিদান খুব যত্ন করে এত বছর রেখেছে। নিজের একমাত্র মেয়ের প্রিয় শালটা এতদিন স্মৃতি হিসেবে রাখার পরেও আজ দিদান কি ভেবে ওকে দিয়েছে বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না কিন্তু বুকের ভেতরে সেই কষ্টটা ফিরে আসতে চাইলে জোর করে আটকে রেখে বলল…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর মুগ্ধ চোখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটু যেন লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল…ওরও বুকের ভেতরে একটা ব্যাথা মুচড়ে উঠে বলতে চাইলো…দিদান আমাকে সব বলেছে…এটা তোমার মায়ের খুব প্রিয় ছিল…তুমি নাকি মাঝে মাঝে তোমার বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমোতে…বিস্বাস কর…আমি প্রথমে নিতে চাইনি…বুঝতে পারি দিদান আমাকে কি চোখে দেখতে চায়…না বলতে পারিনি…তাই নিয়েছি…জানি না…নিজের কাছে রাখতে পারবো কিনা…তুমি যদি সেই অধিকার আমায় না দাও…কি করে রাখবো আমার কাছে? কেন জানিনা…তোমাকে ঠিক বুঝতে পারিনা…তুমি কি সত্যিই আমাকে চাও না? বলতে চাইলেও তো সব সময় সব কিছু বলা যায় না…আরো অনেক না বলা কথার মতো এটাকেও বুকে আটকে রেখে লাজুক হাসি মুখে নিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে তাকালো…ঠিক যেন বলতে চাইছে…তাই? আমাকে খুব সুন্দর লাগছে?




অরিত্র দু চোখের মুগ্ধতা দিয়ে ওকে স্পর্শ করতে করতে বলল…সত্যিই…তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মৌ ওর হাতটা ধরে আলতোভাবে চাপ দিয়ে যেন বোঝাতে চাইলো… তোমার চোখ দিয়েই আমি নিজেকে দেখতে চাই সারা জীবন…



পরের দিন সকালে আকাশে আর মেঘ নেই, ভোর রাতে উঠে টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখে দিন শুরু হয়েছে। সত্যিই আজ ওদের কপাল ভালো ছিল…এর আগের বার আকাশে এত মেঘ ছিল যে সূর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি। ঝকঝকে পরিস্কার আকাশ, পাহাড়ী নরম রোদ মাতাল হাওয়ার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে গা ছুঁয়ে যেন আদর করে যেতে চাইছে। বাতাসিয়া লুপ থেকে চারদিকটা ভীষন ভালো লাগে দেখতে…এমনিতে তাড়াহুড়ো নেই তার উপর দিদান আর শুক্লাদি সেই কখন থেকে সোয়েটার দেখে যাচ্ছে দেখে অরিত্র এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল…দাদুর সাথে মৌ গেছে গাড়ীর দিকে…দাদু সকালের ওষুধটা খেতে ভুলে গিয়েছিল আজ। এগারোটা বেজে গেছে দেখে অরিত্র বিস্বাস কাকুকে ফোন করল কিছু খবর আছে কিনা জানার জন্য। বিশ্বাস কাকু ফোনটা ধরে বলল…অনেক দিন বাঁচবি রে…তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম…বল…তোরা কেমন ঘুরছিস? বিশ্বাস কাকুর গলা শুনে মনে হল আজ কিছু ভালো খবর আছে। নিজেই একটা প্রশ্ন করলেও উত্তরের অপেক্ষা না করে কাকু বলল…শোন…অপারেশন মৌ সাকসেসফুল…আজ যাতে আর ঘোরাতে না পারে ভেবে সকাল বেলাতেই চলে গিয়েছিলাম। নাম ঠিকানা সব পাওয়া গেছে। তারপর জোড়াবাগান থানার মেজোবাবুকে পাকড়াও করে ঠিকানা খুঁজে চলে গিয়েছিলাম। ঠিকানাও পাওয়া গেছে কিন্তু বাড়ীতে কাউকে পাওয়া যায়নি।আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানলাম…কোথাও বেড়াতে গেছে…দিন দশেক পরে ফিরবে |


বুকের ভেতরে যতটা আশা জেগেছিল ততটাই নিরাশা ফিরে এল। একই রকম বা অনেকটা মিল আছে চেহারাও মুখের এমন কেউ তো হতে পারে ভেবে বলল…ঠিক জায়গাতে পৌছনো গেছে কিনা তো বোঝা গেল না।

কাকু হয়তো জানতো ও কি বলতে পারে…তাই…আস্বস্ত করে বলল…শোন…এত বছর পুলিশে চাকরী করে কি কিছুই শিখিনি রে…বাজিয়ে দেখে নিয়েছি…পাশের বেশ কয়েকটা বাড়ীর লোকজনের সাথে কথা বলেছি। নর্থ কোলকাতা তো জানিস কি রকম…সবাই সবাই কে চেনে। অনেক বছর ধরে পাশাপাশি থাকলে যা হয়।

কিছু ডিটেলস পেলে?

হ্যাঁ রে পেয়েছি…কিছু নয়…অনেকটাই…ভালো নাম…মৌমিতা গাঙ্গুলী…ডাক নাম…মৌ…আমি তো ডাক নামটা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম…তোর দেওয়া নামের সাথে কি করে যে মিলে গেল…যাক গে… গত বছর বি এ অনার্স পাশ করেছে…রেজাল্ট ভালো…স্বভাব চরিত্রও ভালো…কোনো খারাপ কিছু কেউ দেখেনি…তবে বেশ কিছুদিন ধরে দেখতে না পেয়ে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলে ওর মা নাকি বলেছে বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটিতে এম এ পড়ছে…হোস্টেলে থাকে… বাবা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে একটা দুর্ঘটনায়…নিজের মা অনেক আগেই ছোটো বেলায় মারা গেছে…সাডেন হার্ট ফেলিওর…বাবার সেকেন্ড ম্যারেজ এর দিক থেকে এক ছেলে আর এক মেয়ে…ছেলেটা বড়…ভালো নাম আকাশ, ডাক নাম বিল্টু…ক্লাস টেনে পড়ছে…মেয়ের ভালো নাম সম্পূর্না, ডাক নাম মিষ্টি… এখন এইটে পড়ছে…বাবার ট্রান্সপোর্টের ব্যাবসা এখন মা দেখে…টাকা পয়সা মোটামুটি ভালোই আছে…অন্তত…আশে পাশের লোকজনের তাই ধারনা।

তাহলে…কি এমন হতে পারে…যার জন্য হয়তো বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল…বুঝতে পারছি না।

হুম…ঠিকই ধরেছিস…নিশ্চয় এমন কিছু আছে যা আশে পাশের লোকজন জানে না…সেটাই আমাকে খুঁজে বের করতে হবে…কিন্তু এখন আরঅপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই…বাড়ীর লোকজন ফিরুক…তারপর দেখছি কি করা যায়…ভেতরের খবর বের করতে হলে একটু বেগ পেতে হবে মনে হচ্ছে। মা আছে কিন্তু নিজের নয়, দু দুটো ভাই বোন…বাবা নেই…সম্পত্তির অধিকার থেকে হটানোর একটা গন্ধ পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। যাক গে…তোরা ভালোভাবে ঘুরে আয়…দাদুদের কে জানাস…আমি আর আলাদা করে ফোন করছি না…বুঝলি?

হ্যাঁ ঠিক আছে…কাকু তোমাকে কি বলে যে thanx জানাবো…

ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কাকু বলল…শোন…আমাকে তোর আর ওইসব জানিয়ে নিজেকে ছোটো করিস না…তোর দাদু দিদান আমাদের জন্য যা করেছে তা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। এতদিন পর তোদের জন্য কিছু একটা করতে পেরে মনে হচ্ছে কিছুটা হলেও ঋন মুক্ত হতে পারবো। আর শোন…ভালো কথা…মেয়েটাকে একা একা একদম ছাড়বি না…বলা যায় না…নিশ্চয় খারাপ কিছু উদ্দেশ্য আছে…গুন্ডা লাগিয়ে কিছু একটা করতে পিছপা হবে না…না হলে মেয়েটা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার পর পুলিশের কাছে কেন যায়নি… টাকাপয়সা খুব খারাপ জিনিস…বুঝলি…নিজের বাপ ছেলেকেও খুন করতে পিছপা হয় না…আর এ তো…নিজের মা নয়। পুলিশের চাকরী করতে গিয়ে যে কত কিছুর সামনা করতে হয় সে আমি হাড়ে হাড়ে জানি।
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 07-03-2019, 07:10 AM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)