Thread Rating:
  • 8 Vote(s) - 3.13 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance তুমি এলে তাই
#11
Part 6

দেখতে দেখতে পূজো শুরু হয়ে গেল, সপ্তমী থেকে ছুটি শুরু…চারটে দিন পাড়ার পুজো, কালচারাল প্রোগ্রাম আর একদিন রাতে কোলকাতায় গিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে সারা রাত প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো আর একদিন দাদু দিদান দের নিয়ে বেরোনো ছিল গত দু তিন বছরের ছক কিন্তু এবারে হয়তো কিছুটা অন্য রকম কিছু ভাবতে হবে। মৌকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে বেরোনো যাবে না আবার বন্ধুদের সাথে না বেরোলে ওরা আবার পেছনে লাগবে। একবার ভাবলো দাদুদের কে নিয়ে যেদিন বেরোবে সেদিন তো মৌ এর ও ঘোরা হয়ে যাবে তাহলে আর আলাদা করে বেরোনোর দরকার থাকবে না কিন্তু তার পরেই মনে হল একবার ওর সাথে কথা বলে নেবার দরকার আছে না হলে মন খারাপ করতে পারে। দিদান হয়তো বুঝতে পেরেছিল ওর সমস্যাটা তাই নিজের থেকেই সপ্তমীর দিন দুপুরে খেতে বসে কথাটা তুললো…


আমরা আর এ বছর বাইরে কোথাও যাবো না ভাবছি…বাড়ীর সামনেই তো পূজো হচ্ছে…এখানেই কাটিয়ে দেবো।


অরিত্র খাওয়া থামিয়ে দিদানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল…প্রতি বছরই তো এখানে পূজো হয় আর আমরা বেরোই…এবারে আবার আলাদা কিছু আছে নাকি?


দিদান হেসে বলল…মৌকে নিয়ে বেরোতে হবে তো… নাকি…মেয়েটা পূজোর সময়েও বাড়ীতে বসে কাটাবে।আমাদের না হয় বয়স হচ্ছে…ওর তো বাইরে বেরোতে ইচ্ছে হয়।

দাদু আর শুক্লাদিও দেখা গেল দিদানের সাথে একমত…মনে হয় ওরা আগেই নিজেদের ভেতরে আলোচনা করে রেখেছিল। মৌ মাথা নেড়ে বোঝালো ও রাজী নয়। অরিত্র কিছুক্ষন ভেবে বলল…একদিন তো আমি একাই বেরোই…সেদিন ওকে নিয়ে বেরোনো যাবে।

দিদান শুনে বলল…একটা দিনই তো বন্ধুদের সাথে বেরোস…ওদের সাথে না বেরোলে আবার খারাপ ভাববে না তো?

Laptops[img=1x0]https://ir-in.amazon-adsystem.com/e/ir?t=storyblog08-21&l=ur2&o=31&camp=3638[/img]

দেখি কি করা যায়…

অরিত্র খাওয়ার পর একটু গড়িয়ে নিয়ে মৌ এর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখলো ও ঘরে নেই…হয়তো ছাদে গেছে…ফিরে আসবে ভেবে অপেক্ষা করছিল…ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে…দেখলেও ভালো লাগে। কিছুক্ষন পর কি মনে করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মৌ দুহাতে কিছু শুকনো জামাকাপড় বুকে চেপে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু চোখে জিজ্ঞাসা…কিছু বলবে?

অরিত্র ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল…কি হল…বসতে বলবে না নাকি?

দুষ্টুমি ভরা হাসি মুখে নিয়ে মাথা নেড়ে উত্তর দিল…নাঃ…

হুম…তাহলে যাই…ভেবেছিলাম তোমার সাথে গল্প করবো।

একটু অবাক হবার ভান করে যেন জিজ্ঞেস করল…তাই?

হুম…তাই…

সারা মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে এসে বিছানার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বোঝালো…বোসো।

অরিত্র ওর বিছানায় বসে ওকেও ইশারা করে বসতে বললে জামাকাপড় গুলো রেখে উল্টোদিকে বসে ওর দিকে তাকালো…যেন বলতে চাইছে…বলো…কি বলবে।

ভাবছি…এবারে আর বন্ধুদের সাথে বেরোবো না।তোমাকে নিয়ে একদিন বেরোবো।

মাথা নেড়ে জানালো…সেটা ঠিক হবে না।

কেন…তুমি যাবে না ঠাকুর দেখতে?

হ্যাঁ।

কি করে হবে…একদিন দাদুদেরকে নিয়ে বেরোবো…একদিন বন্ধুদের সাথে বেরোবো…তোমাকে নিয়ে তাহলে আলাদা করে কি করে বেরোবো?

ঠোঁট উল্টে বোঝালো…সে আমি কি জানি…তুমি ভাবো কি করবে।

ওর দুষ্টূমি ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে অরিত্র ভাবছিল…কি করা যায়…ওকে নিয়ে কাছাকাছি ঘুরে এসে তারপর একটু দেরীতে বন্ধুদের সাথে বেরোনো ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই বলাতে মাথা নেড়ে জানালো…চলবে।

বিকেল থেকে অরিত্রর টেনশান শুরু হয়ে গেল…বাচ্চাগুলো কি করবে কে জানে…যদিও শেষ দিনের রির্হাশাল দেখে তো মনে হয়েছিল ভালোই করবে…তবুও…বড়রা হলে না হয় হোতো…বাচ্চাদের নিয়ে কিছু করা সত্যিই টেনশানের। সাড়ে ছটায় নাটক শুরু হওয়ার কথা… চারটের মধ্যে সবাইকে আসতে বলা ছিল… বিকেলের চা খেয়েই দৌড়ল ক্লাবের দিকে। নাঃ…ঠিকই আছে…বাচ্চারা সবাই এসে গেছে…মেকআপ চলছে… এক এক করে সবার পিঠ চাপড়ে উতসাহ দিয়ে স্টেজের অবস্থা কি দেখতে গেল। যদিও চিন্তা করার কোনো কারন ছিল না… গত পাঁচ বছর ধরে একই লোক কাজ করছে… এতদিনে খুব ভালো বুঝে গেছে কি চাই। পাড়ার বাচ্চাদের নাটক… মা বাবা রা তো আসবেই, বাড়ীতে অন্য কেউ থাকলে তারাও আসে। মোটামুটি ছটার মধ্যে স্টেজের সামনের চেয়ারগুলো দখল হয়ে গেছে। ঠিক সাড়ে ছ টাতেই শুরু হল নাটক, তার আগে কালচারাল প্রোগ্রামের সেক্রেটারী হিসেবে শুভকে ছোট করে একটা বক্তব্য রাখতে হয়েছে…আজ থেকে তিন দিনের প্রোগ্রাম নিয়ে।নাটকের প্রথম দৃশ্য ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করল… মোটামুটি নয়… বেশ ভালোই অভিনয় করেছে সবাই। বাকিটা নিশ্চয় ভালোই করবে মনে হচ্ছে…ভেবে স্টেজের পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ল। একটু একটু করে নাটক এগোচ্ছে… দর্শকদের অভিব্যাক্তি বলছে খুব ভালো হচ্ছে।ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো যে এত সুন্দর অভিনয় করতে পারবে কেউই বোধ হয় ভাবতে পারেনি। পৌনেআটটায় নাটকের শেষ দৃশ্যের পর হাত দর্শকদের হাততালি যেন শেষ হতে চায় না… শেষ পর্যন্ত নাটকের সব বাচ্চাদের স্টেজে নিয়ে এসে পুজো কমিটির সেক্রেটারী, সুধন্য বাবু নিজের বক্তব্য শুরু করলেন… এত সুন্দর একটি নাটক দেখার সুযোগ করে দেবার জন্য আমাদের এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষক অরুনাভ স্যরের নাতি অরিত্র ও আমার ভাইপো শুভর কাছে এবং যে সমস্ত ছোটোছোটো ছেলে মেয়েরা অংশ গ্রহন করেছে তাদের সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেই বারন করেছিলাম এত ছোটো বাচ্চাদের কে নিয়ে নাটক না করার জন্য… আমি যে ভুল ছিলাম সেটা ওরা সবাই প্রমান করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ইচ্ছে থাকলে সব কিছুই করা সম্ভব।আপনারা সবাই নাটক টি দেখে নিশ্চয় বুঝেছেন… সত্যিকারের ইচ্ছে থাকায় কি ভাবে একটি সহায়সম্বলহীন ছেলে কিভাবে নিজের চেস্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছে, শুধু তাই নয় ভালো রেজাল্টও করেছে। আমি আশা করবো… আমাদের এলাকার ছেলেমেয়েরা যাদের সব কিছুই আছে…তারা নাটকটি দেখে উদুব্ধ হবে। আমি অরিত্র ও শুভ কে অনুরোধ করছি…দুজনেই যদি এখানে এসে আমাদের সবার অভিনন্দন গ্রহন করে। অরিত্র আর শুভ স্টেজের পাশে দাঁড়িয়েছিল… অরিত্র বরাবরই কিছুটা মুখচোরা…পেছনে থেকে সব কিছু করবে কিন্তু সামনে আসতে পারেনা…শুভ আবার ঠিক বিপরীত… জেঠুর কাছ থেকে মাইক্রোফোন টা নিয়ে বলতে শুরু করল… আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের উতসাহ দেবারজন্য। আমার মতে অরিত্রর পাওনাটাই বেশি…আমি শুধু ওকে কিছুটা সাহায্য করেছি মাত্র। আপনারা যে নাটকটি দেখলেন তা কোনো কল্পনা নয়…সত্যি ঘটনার উপরে লেখা… অরিত্র আর আমি বছর দুয়েক আগে বীরভুম বেড়াতে গিয়েছিলাম… ওখানে আমরা এক চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে দোকানের ছেলেটির সাথে কথা বলে জানতে পারি… ওর বাবা প্রায় দু বছর নিরুদ্দেশ…বাড়ীতে দুটো ছোট ছোটো ভাইবোন,দাদু, ঠাকুমা… সাহায্য করার কেউ নেই…ছেলেটি ওর মায়ের সাথে মিলে ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটির ইচ্ছা দেখে আমরা দুজনে কিছু সাহায্য করা শুরুকরি… ছেলেটি এই বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে ৯০% মার্ক্স পেয়ে যা কি না যে সমস্ত ছেলে মেয়ে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায় তারাও সহজ়ে করতে পারে না। ছেলেটির পড়াশোনা যাতে আর বাধা নাপায় তার জন্য আমরা আমাদের ক্লাবের তরফ থেকে ওর পড়াশোনার সমস্ত ভার নিয়েছি এবং সাথে সাথে এই বছর থেকে যাতে আরো এই রকম মেধাবী দরিদ্র ছেলে মেয়েদের সাহায্য করা যায় তার জন্য আলাদা একটা ফান্ড আমরা তৈরী করেছি। আশাকরি আপনাদের সবার সাহায্য আমরা পাবো।

বাইরে যাবার প্রোগ্রামটা একটু পালটে নিয়ে…মৌ কে নিয়ে সপ্তমীর রাতেই বেরোবে ঠিক করে নিয়ে শুভকে বাকি সময়টা দেখে নিতে বললে শুভ এক কথায় রাজী হয়ে গেল। মৌ এর ব্যাপার টা মোটামুটি ওর জানা ছিল। মজা করে বলল… কি গুরু…শুধু প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা নাকি… আরো কিছু আছে?


কি আবার থাকবে? তুই ও যেমন…কিছু করার ইচ্ছে থাকলে বাইরে যাবো কেন…


কে জানে বাবা… তুই কেমন করে নিজেকে সামলে রাখিস… আমি হলে তো কবেই… আর কিছু না হোক…


অরিত্র হেসে ফেলে বলল… থাক আর এগোস না… এই জন্যই তো তোর সাথে আমার এত বন্ধুত্ব… একেবারে উলটো বলেই বোধ হয় এত টান…


তা যা বলেছিস… আচ্ছা…যা…যেতে হবে যখন দেরী করিস না… আমি এদিকটা সামলে দিচ্ছি…চিন্তা করিস না।

তুই কবে বেরোচ্ছিস?


দাঁড়া…আমার প্রানেশ্বরী এখোনো নাকি বাড়ীতে ম্যানেজ করে উঠতে পারেন নি…

সে কি রে… সেদিন যে বললি বাড়িতে জানিয়ে দেবে…

আরে বললেই কি আর বলা যায় নাকি? ওর বাবা কে তো চিনিস… বাঘের বাচ্চা…বলতে গিয়েও ব্যাক গিয়ার দিয়ে দিয়েছে…

তুই কাকুকে দিয়ে বলাচ্ছিস না কেন? বাড়ীতে বলিসনি নাকি?

মা কে একটা আভাস দিয়ে রেখেছি…দেখি তাই করতে হবে… আর ভালো লাগছে এই ভাবে লুকোচুরি খেলতে…

ঠিক আছে চল… কাল সকালে তোদের বাড়ী যাচ্ছি… চিন্তা করিস না…কাকীমা কে দিয়ে কাকুকে ঠিক ম্যানেজ করে নেবো…আসি রে…

দিদানরা কিছুক্ষন আগেই নাটক দেখে ফিরে এসেছে… নাটক চলাকালীন ওখানেই দিদান কে বলে দিয়েছিল আজকেই মৌ কে নিয়ে বেরোবে। মৌ একাই বেরোবে বলে তৈরী হচ্ছে…আজ তো আর রুপসা নেই যে সাজিয়ে দেবে…শুক্লাদি কিছুক্ষন পর অরিত্র কে ডেকে বলল… গিয়ে দেখ… চুপ করে বসে আছে… কি পরবে ঠিক করতে পারছে না।


তুমি দেখে দাও না…আমি আবার কি করবো গিয়ে…


শুক্লাদি হেসে ফেলে বলল…দিয়েছিলাম…কোনোটাই পছন্দ নয়…তুই গিয়ে দেখ।


ঠিক আছে চলো।

ওর ঘরে গিয়ে দেখা গেল যতজামাকাপড় ছিল সব বিছানায় ছড়ানো…এক পাশে মুখ ভার করে বসে আছে। অরিত্র কে দেখতে পেয়েই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল… যেন বোঝাতে চাইলো… তুমি এসে গেছো? কি পরবো দেখে দাও না…


সব গুলোই খুব সুন্দর…বাছাবাছির তেমন কিছু নেই দেখে দু একটা দেখে নিয়ে একটা জমকালো দেখে কিছু একটা তুলে হাতে দিলে খুব খুশী…অরিত্র নিজেও জানে না ড্রেসটার কি নাম…সাউথ সিটি মলে গিয়ে ভালো লেগেছিল বলে মৌ আর দু বোনের জন্য একই জিনিষ নিয়েছিল…আজকাল মেয়েদের কতরকম নতুন নতুন ডিজাইনের ড্রেসআসছে যে নাম মনে রাখা মুশকিল…তার উপরে এতদিন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকারই পড়েনি… মৌ একবারের জন্যও দেখলো না ওকে কেমন লাগবে…হাসি মুখে বোঝালো…এটাই ঠিক আছে।


শুক্লাদি পাশ থেকে হেসে ফেলে বলল… কি রে মৌ…একটু আগেই তো আমিও দিয়েছিলাম… তখন তো মাথা নেড়ে এমন করে না বললি যে…মনে হচ্ছিল ওটার থেকে খারাপ আর কিছু হয় না।


লাজুক একটা মিষ্টি হাসিতে বোঝালো… তোমার দেওয়া আর ওর দেওয়া কি এক? ও যা দেবে সেটাই সব থেকে ভালো।

শুক্লাদি বুঝতে পেরে ওকে-জড়িয়ে ধরে বলল…বুঝেছি…যা…তাড়াতাড়ি পরে নে… আর কখন বেরোবি।

নবমী অব্দি কিভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না…পূজো আসছে ভাবতে কত ভালো লাগে…কিন্তু কি করে যে চারটে দিন কেটে যায় কে জানে।আজ বিজয়া দশমী…পাড়ার অনেকেই বাইরে কোথাও বেরোবে বলে বিসর্জন একটু তাড়াতাড়ি সেরে নেওয়া হয়। সন্ধের মুখে দিদানের সাথে মৌ সিন্দুর খেলা দেখতে গেছে, অরিত্র শরীর টাভালো ছিল না বলে বাড়ী থেকে বেরোয় নি…ড্রয়িং রুমে দাদুর সাথে বসে টিভিতে পুজো পরিক্রমা দেখছিল, আটটা নাগাদ ওরা ফিরলো…দিদানের মতো মৌ এর ও সারা মুখে সিন্দুর মাখানো। দাদু দিদান আর শুক্লাদিকে বিজ়য়ার প্রনাম করে শরীর টা ভালো লাগছে না…একটু শুয়ে নি বলে ও উপরে গিয়ে নিজের ঘরে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষন পর কপালে কারুর হাতের ছোঁয়া পেয়ে তাকিয়ে দেখে মৌ, ওর দিকে তাকিয়ে আছে…চোখে মুখে কিছুটা চিন্তার ছাপ…যেন বলতে চাইছে…খুব শরীর খারাপ লাগছে?


ওর হাতটা ধরে নিজের গালে আলতো ভাবে চেপে ধরে বুকের ভেতরটা যেন অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে উঠল…ওর টুকটুকে ফর্সা মুখে লাল সিন্দুরের দাগ…ওকে যেন আর মোহময়ী করে তুলেছে… খুব ইচ্ছে করছিল… বুকে টেনে নিয়ে জ়ড়িয়ে ধরে আদর করে বলতে…তোমাকে একান্ত ভাবে নিজের করে নিতে চাইছি…কিন্তু পারছিনা…তুমি কি বুঝতে পারছো? না বলা কথা গুলো নিজের ভেতরে চেপে রেখে মুখে হাসি এনে বলল…তেমন কিছু হয় নি…রাতে ভালো করে ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে।


মৌ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে কি বুঝলো কে জানে…ইশারা করে বোঝালো ও বিজয়ার প্রনাম করতে চায়।


এই দেখো…আমাকে আবার কেন?


আবার ইশারা করে বোঝালো…ওকে প্রনাম করতে দিতেই হবে।

মৌ ওর পা ছুঁয়ে প্রনাম করে উঠে দাঁড়ালে ওর কাঁধে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…প্রনাম তো করলে…কিন্তু কি বলে তোমাকে আশীর্বাদ করি বলতো। মৌ চোখ বুজে থেকে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে যেন বোঝাতে চাইলো…আমার যে তোমাকে ছাড়া আর কিছু চাই না…আমি কি চাই তা কি তুমি কোনোদিনও বুঝেও বুঝবে না?

পরের দিনটা শুরু হল বাকি আর পাঁচটা বিজয়া দশমীর পরের দিন হিসেবে। ফোন আর এসএমএসে বিজ়য়া দশমীর শুভেচ্ছা আদান প্রদান চলছিল সকাল থেকেই। যারা বাড়ীতে আসার তারা আর একটু পর থেকেই আসতে শুরু করবে। অরিত্রর শরীর মোটামুটি ভালোই। দশটা নাগাদ নারায়নদা নাতনী প্রিয়া কে সাথে নিয়ে প্রতি বছরের মতো একটা মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে হাজির। প্রিয়া ওর দাদুর মুখে মৌ এর ব্যাপারে শুনেছিল কিন্তু এই প্রথম নিজের চোখে দেখলো। মৌ কে দেখার পর থেকেই প্রিয়া চিন্তা করছিল…কোথাও যেন ওকে দেখেছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। হঠাত মনে হল…কলেজে দেখেনি তো? সপ্তাহে একদিন ও অনেক সকালে টিউশান পড়তে যায় কলেজের এক স্যারের কাছে। কলেজ থেকে খুব বেশী দুরে নয় বলে টিউশান থেকে বেরিয়ে যখন কলেজে আসে তখনও মর্নিং সেকশানের ক্লাস শেষ হতে কিছুটা বাকি থাকে বলে কলেজের সামনে অপেক্ষা করতে হয়। মনে হয় মর্নিং সেকশানের ছুটির পর ওকে দেখেছে কিন্তু ঠিক কিনা বুঝতে পারছে না। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। বাড়ী ফিরে দাদুকে বলতেই দাদু ওকে একটু বকাবকি করল…কেন তুই ওখানেই বলিস নি…জানিস অরিত্র দাদাভাইরা কত চেষ্টা করেছে মৌ দিদি কে জানার জন্য। সাথে সাথেই আবার নারায়নদা ফিরে এল প্রিয়া কে সাথে নিয়ে। মৌ নিচে না থাকায় ওদের সুবিধা হল ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে, মোটামুটি প্রিয়ার কাছ থেকে যেটুকু জানা গেল তাতে বিশেষ কিছু বোঝা না গেলেও একটা আশার আলো দেখা গেল। হয়তো কলেজে গিয়ে খোঁজ নিলে কিছু জানা যেতে পারে কিন্তু কলেজ খুলতে তো সেই লক্ষী পূজোর পর, এই কটা দিন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। দাদু এক ফাঁকে বিশ্বাস কাকুকে ফোন করে মোটামুটিভাবে বুঝিয়ে দিল। যে কেউ গেলে তো আর কলেজ কতৃপক্ষ কোনো কথা বলবে না, পুলিশকে দিয়েই খোঁজ নিতে হবে। আর একটা রাস্তা আছে, কলেজ ইউনিয়ান থেকে খোঁজ পাওয়া যেতে পারে কিন্তু সে ও তো কলেজ খোলার আগে সম্ভব নয়। বিশ্বাস কাকু ছুটি নিয়ে বাড়ী এসেছে দেখে মৌ এর একটা ফোটো নিয়ে অরিত্র এক ফাঁকে দিয়ে এল। মনের ভেতরে ভীষন তোলপাড় হচ্ছিল, এবারে হয়তো কিছু একটা জানা যাবে। রুপসা আর পুবালীকে ফোন করে জানাতে ওরা তো প্রায় লাফিয়েই উঠল, দুজনেই জানে মৌ এর পরিচয় না জানায় অরিত্র চাইলেও এগোতে পারছে না।
Like Reply


Messages In This Thread
তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 21-01-2019, 11:09 AM
RE: তুমি এলে তাই - by sorbobhuk - 07-03-2019, 07:08 AM
RE: তুমি এলে তাই - by arn43 - 12-10-2020, 09:31 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)