Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#70
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#8-#18)

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো, বাড়ি লোকে লোকারণ্য। দুরের যারা তারা একদিন আগেই পৌঁছে গেছে। আগের রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেছিল। ঝন্টু, অভি, অভির কয়েকজন বন্ধু আর বড় জামাই বাবু, নিলাদ্রী মিলে অনেক রাত পর্যন্ত অভির রুমে বসে মদ খেয়েছিল সেই সাথে হই হুল্লোড়। বাকিরা তখন ঘুমে কিন্তু অভিকে ডেকে তোলা হয়, আরে পুকুর থেকে জল আনতে যাবে এয়োস্ত্রীরা কিন্তু ফটোগ্রাফারের দেখা নেই যে। কোনমতে চোখ খুলে, ফোনে করেই ক্যামেরা ম্যানের মুন্ডপাত করল। চোখ বুজতে যাবে এমন সময় ভাগ্নে এসে ডাক দেয়, “মাম্মি তোমাকে ডাকছে, কি যেন গুষ্টির পিন্ডি খাওয়াবে।” তিতাসের কচি কণ্ঠে “গুষ্টির পিন্ডি” কথাটা শুনে খুব হাসি পেল অভির। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এলো ভাগ্নের সাথে। মনামির ঘরে ঢুকে দেখে, দধি মঙ্গলের জন্য এক গাদা মিষ্টি, চাল কলা মাখা ইত্যাদি নিয়ে মনামিকে খাওয়ান হচ্ছে। বড়দিকে দেখেই অভি হেসে বলে, “এই তোর গুষ্টির পিন্ডি মার্কা ভাষা অন্তত ওকে শিখাস না রে।”
অভি ব্যাস্ত হয়ে পরে কাজের মধ্যে, দুপুরের খাওয়া দাওয়ার তোড়জোড়, একদিকে বৃদ্ধি শুরুর কাজ ইত্যাদি। এক এক করে অতিথিদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। ঝন্টুও এর মধ্যে দময়ন্তীকে নিয়ে চলে আসে। কিছুক্ষনের মধ্যে ফাল্গুনী দেবযানীকে নিয়ে উপস্থিত। চলনে বলনে সাজে দেবযানী অতি আধুনিকা। নতুন ফ্যাশানের ছেঁড়া ফাটা কালো রঙের জিনস, হাই বুট, কালো টপের ওপরে ছাই রঙের লম্বা শ্রাগ। এই বাড়ির কেউই ফাল্গুনীকে অথবা দেবীকে ঠিক ভাবে চেনে না, তাই সবার চোখে হাজার প্রশ্ন। বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে দেবীকে নিয়ে উতসুকতা একটু বেশি। এই সুন্দরী আধুনিকার পরিচয় কি। অভি এক সময়ে বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে দেবী একা একা চুপচাপ বসে মোবাইলে ব্যাস্ত।
অভি জিজ্ঞেস করে, “কি রে তুই একা একা এই ভাবে বসে কেন রে?”
দেবী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কোথায় ছিলে?”
অভি আলতো এক টোকা দেয় দেবীর মাথায়, “বিয়ের বাড়ির কাজ বুঝতেই পারছিস। তুই ভেতরে যাসনি কেন?”
দেবী মুখ ব্যাজার করে উত্তর দেয়, “কাউকে চিনি না ত?”
অভি হেসে ফেলে, “তুই পারিস বটে। যা ভেতরে যা, মেয়েদের মহল ওই দিকে।” বলে ওকে নিয়ে দিদির ঘরে পৌঁছে দেয়। বড়দির সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়ার পরে, কিছুক্ষনের মধ্যে সবার সাথেই মিশে যায় দেবী।
ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই ঝন্টু ওকে ধরে, “এই কচি মালটা কে রে?”
অভি নিজের কপাল চাপড়ে মাথা নাড়িয়ে হেসে উত্তর দেয়, “বাল চোদা ছেলে, ওটা আমার বোন, দেবযানী চ্যাটারজি।”
ঝন্টু দাঁত কিড়মিড় করে ওঠে, “শালা, এমন একটা বোন আছে জানতাম না’ত।” বলেই হেসে ফেলে।
অভিও রসিকতা করে উত্তর দেয়, “তোরটা এইবারে কেটে দিতে ইচ্ছে করছে।”
ঝন্টুও রসিকতা করে উত্তর দেয়, “কেটে দিলে তোর পেছনে গুঁজে দেব।” বলেই দুইজনে হাহা করে হেসে ফেলে।
কয়েকজন লোকের সাথে কাজের কথা চলছিল, এর মধ্যে লেখা দময়ন্তী আর দেবী ঝড়ের বেগে অভির কাছে উপস্থিত।
দেবী আবদার করে, “আমায় সাজাতে কিন্তু বিউটিসিয়ান চাই, কোন কথা শুনব না।”
লেখাও একি সুরে আবদার করে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আলাদা বিউটিসিয়ান চাই।”
দময়ন্তী মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “এত গুলো মেয়েকে আমি একা সাজাতে পারব না, কিছু কর। শুধু মাত্র দিদিকে সাজাতে কিন্তু চার ঘন্টার মতন লেগে যাবে তারপরে আমার নিজের সাজ আছে।”
অভি মাথা চুলকে বলে, “আমি তাহলে তোমাদের সাজাতে বসি আর কি।”
দেবী নাছোড়বান্দা, “আমি কিছু জানি না, আমি আলাদা সাজবো।”
দময়ন্তীর দিকে তাকায় অভি, “কি করনীয়, ম্যাডাম?”
দময়ন্তী অভির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে, “ম্যাডাম নয়, আমি দিয়া।”
ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে অভি, মাথা নুইয়ে সায় দিয়ে বলে, “আচ্ছা, তোমার কি চাই সেটা বল।”
দময়ন্তী উত্তর দেয়, “আমি আরো দুইজন বিউটিসিয়ানকে ডাকি, না হলে কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত কারুর সাজ সম্পূর্ণ হবে না।”
এর মধ্যে শর্বাণীদি এসে যোগ দেয়, নিরুপায় অভি শেষ পর্যন্ত দময়ন্তীকে আলাদা বিউটিসিয়ান যোগার করার অনুমতি দিয়ে দেয়।
সকাল থেকে কাজের ব্যাস্ততায় দিদিভাইয়ের সাথে ঠিক ভাবে কথা হয়ে ওঠেনি। বেশ কিছু পরে লেখা এসে অভিকে ডেকে মনামির ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। দিদির ঘরে ঢুকে দেখে, ইতিমধ্যে ওর সাজ শুরু হয়ে গেছে। মুখে বেস ফাউন্ডেসান মেখে বসে, চুল ও খানিকটা বাঁধা হয়ে গেছে। বাকি মেয়েরাও সাজতে বসে গেছে। আলাদা করে যে দুইজন বিউটিসিয়ানকে ডাকা হয়েছিল, তাদের একজন দেবীকে সাজাতে ব্যাস্ত অন্যজন শর্বাণীদিকে সাজাতে ব্যাস্ত। অভির মনে হল যেন বাড়িতে চাঁদের হাট বসেছে।
মনামি ওকে দেখে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “খেয়েছিস?”
মাথা দোলায় অভি, “হ্যাঁ।”
মনামি ওর হাত দুটো ধরে বলে, “আমার কপালে এঁকে দিবি না?”
অভি স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “দময়ন্তী আছে ত।”
মনামি মাথা নাড়ায়, “না, তুই কিন্তু কথা দিয়েছিলি।”
দিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে তুলি আর সাদা পেইন্ট নিয়ে নেয়। কপালে ভাইয়ের ছোঁয়া পেতেই মনামির দুই চোখ ভীষণ ভাবেই ছলছল করে ওঠে। কাঁপা হাতে দিদির কপালে আঁকতে শুরু করে। ছোট বেলায় চড়কের মেলায় ঠিক যেমন ভাবে ভাইয়ের জামা আঁকড়ে ধরে থাকত ঠিক সেই রকম ভাবেই মনামি ওর ভাইয়ের জামাটা আঁকড়ে ধরে থাকে, এই বুঝি ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। মাঝে মাঝেই অভির নিঃশ্বাস থেমে যায়, চোয়াল শক্ত করে বুকের ভেতর থেকে ঠিকরে বেড়িয়ে আসা কান্নাটাকে কোন রকমে সংবরণ করে।
আঁকা শেষ করে দিদিকে বলে, “এবারে যাই।”
মনামি ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “কোথায় যাবি, একটু বস না।”
অভি হেসে বলে, “ধ্যাত তুই না, মেয়েরা এখানে সাজতে বসেছে আমি এখানে থেকে কি করব?”
মনামি কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করে, “জানি, প্লিজ পাঁচ মিনিট।”
অভি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে উত্তর দেয়, “অনেক কাজ আছে রে। এখন ওই বাড়িতে ঢু মারতে যেতে হবে, কি রকম কি ব্যাবস্থা হল সেটা এখন দেখা হয়নি। সব কিছু ঝন্টুর ওপরে ছেড়ে দিলে হয় না।”
মনামির ভাইয়ের গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে ছলছল চোখ বলে, “মা আর পাপাকে দেখিস।”
মাথা দোলায় অভি, “হুম” বুকটা ফেটে যাওয়ার উপক্রম, তাও দিদির সামনে চোখের জল কোন রকমে সংবরণ করে নেয়। সবার সাজ ততক্ষনে থেমে গেছে, সবার চোখের কোনায় একটু জলের রেখা। কেমন যেন এক বেদনার সুর সবার বুকে বেজে ওঠে। সেই বেদনা কাটাতে রসিকতা করে অভি দিদিকে বলে, “এই দ্যাখ, সাজ ঘ্যাঁচে গেলে কিন্তু দিয়াকে আবার অনেক খাটতে হবে।”
রসিকতাটা এড়িয়ে ভাইয়ের হাত দুটো শক্ত করে ধরে ধরা গলায় বলে, “আমার ভাইটাকে একটু দেখিস রে...”
এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে দিদিও ভেঙ্গে পরবে অভিও ভেঙ্গে পরবে, সেটা ভেবেই অবস্থার সামাল দিয়ে স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “তোরই ভাই, সর্বদা তোর পাশেই থাকবে তাতে অত আর দেখার কি আছে রে।”
অভির বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে দিদিভাইয়ের চোখের জল দেখে, জানে বেশিক্ষন এইভাবে ঐ দুই ভাসা ভাসা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে না। আর দাঁড়ায় না দিদির সামনে, ঘর থেকে বেড়িয়ে সবার অলক্ষ্যে চোখের কোল মুছে নেয়।
দিদির ঘর থেকে বেড়িয়ে ঝন্টুকে নিয়ে অভি সোজা বিয়ে বাড়িতে চলে যায়। মন্ডপের সাজ কতদুর সেটা তদারকি করতে হবে, বর যেখানে বসবে তার কি অবস্থা হল, দিদিকে নিয়ে যেখানে বসান হবে তার কি ব্যাবস্থা হল, বিয়ের জায়গা, ইত্যাদি। সোনারপুর থেকে মধ্যমগ্রাম, প্রায় ঘন্টা তিনেকের রাস্তা। অভি ফোন করে জেনে নিল যে বরের বাড়ি থেকে কখন বের হবে। সন্ধ্যে নামতেই, একজন দুজন করে অতিথি আসা শুরু হয়ে যায়। ঠাকুর মশাই বিয়ের জায়গা ঠিক করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। পাপা আর মামা বিয়ের জায়গার এক পাশে দুজনে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। এবাড়ি ওবাড়ি, কাজের ঝামেলায় এখন ঠিক ভাবে স্নান করা হয়নি। একবার বাড়িতে যেতে পারলে ভালো হত, ঠিক সেই সময়ে বড়দি ফোন করে অভিকে একবার বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে।
বাড়িতে ঢুকে দেখে যে দিদিভাইয়ের সাজ শেষ হয়ে গেছে। টকটকে লাল রঙের বেনারসি, গা ভর্তি সোনার গয়না আর ফুলের সাজে দিদিভাইকে ভীষণ অনন্যা দেখাচ্ছে। দিদিভাইয়ের কপালে ওর হাতেই আঁকা উল্কি গুলো ভীষণ ভাবে স্পষ্ট, দিয়া যেন প্রান ঢেলে সাজিয়েছে দিদিভাইকে। একবার মনে হচ্ছিল দিদিভাইকে শেষ বারের মতন জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে লুকিয়ে যায়। বড়দিও সেজে গুজে তৈরি, দেবীকে লাল রঙের লেহেঙ্গাতে ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে। লেখার সাজ আর দিয়ার সাজ তখন বাকি, অন্য দুই বিউটিসিয়ান তখন ওদের সাজাতে ব্যাস্ত। এতদিন অভির ছিল দুই বোন, হয়ে গেল তিন। মনামির অনুরোধে শেষ বারের মতন দিদির ঘরে বসে তিন ভাই বোন একটা ছবি তোলা হল। বড়দি শেষ পর্যন্ত দেবীকেও ডেকে নিল ছবি তোলার সময়। চ্যাটারজি বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যে, যদিও একদিনের পরিচয় মাত্র, কিন্তু সেই বা কেন বাদ থাকবে।
ছবি তোলার পরে অভি নিজের ঘরে চলে যায়, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জানা কাপড় পরে তৈরি হয়ে নেয়। এবারে দিদিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে হবে, এর মধ্যেই দুই বার পাপার ফোন চলে এসেছে, আর কত দেরি। ওদের দেরি দেখে ঝন্টুও এসে গেছিল। দিদিভাইকে, বড়দি আর দেবীকে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিল বিয়ের বাড়িতে। দিদি বেড়িয়ে যেতেই বাড়িটা ভীষণ ভাবে ফাঁকা হয়ে গেল। দিদির চলে যাওয়াতে শুধু বাড়িটা নয়, অভির বুকের বেশ কিছুটা খালি হয়ে যায়। শীতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বাইকে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল অভি। কিছুক্ষনের মধ্যে লেখাও সেজে গুজে উপস্থিত। লেখাও বেনারসি পড়েছে, মাথায় খোঁপা, যেন দ্বিতীয় বার বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। ঝন্টুর পেছনে বাইকে বসে ওর দিকে হাত নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেল, বলে গেল, তাড়াতাড়ি এসো। অভিও একটু রসিকতা করে লেখার দিকে একটা উড়ন্ত চুমু ছুঁড়ে দিল। সেটা দেখে ঝন্টু কপট কটমট করে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
অভিও বাইকে স্টারট দিতে যাবে এমন সময়ে ওর কাঁধে নরম এক হাতের ছোঁয়া। নাকে ভেসে আসে, মাদকতা ময় এক সুবাস। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দিয়া ঠিক ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট ফেলে ওর দিকে তাকায়। পরনে সমুদ্রের সবুজের রঙের একটা বেশ সুন্দর সুন্দর কাজ করা লেহেঙ্গা। কাঁচুলিটার পিঠের দিকে তিনটে পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা। পিঠের দিক বেশির ভাগটাই অনাবৃত, মেরুদন্ডের খাঁজ যেন বক্র এক পাহাড়ি নদী। চোখের কোলে কাজল, চোখের আইল্যাস গুলো বেশ লম্বা, চাহনিতে ভীষণ এক আকর্ষণ। খোঁপা করে চুল বাঁধা কিছু অংশ বাকিটা বেনুনি করা, সাপের মতন চোওড়া পিঠের ওপর দোদুল্যমান। অপেক্ষাকৃত সরু কোমরে ছাপিয়ে, দুই ভারী নিতম্ব পর্যন্ত নেমে গেছে সাপের মতন বেনুনিটা। গোলগাল দেহের গঠনে ভীষণ ভাবেই মত্ততার এক ছাপ। দুই সুগোল বুক জোড়া, সামনের দিকে উঁচিয়ে হাতছানি দিয়ে কাউকে আহ্বান করছে। হাতে কানে গলায়, সম্পূর্ণ মুক্তের গয়নার সাজ। ওড়না কাঁধের একপাশে ঝুলে রয়েছে। গায়ের রঙ চাপা হলেও ত্বক ভারী মসৃণ, যেন আলো পিছল খেয়ে যাবে এই গালে। বুকের মাঝের শূন্যতা কাটিয়ে নিস্পলক চোখে আপাদমস্তক দিয়াকে নিরীক্ষণ করে। ভিজে চকচকে দুই ঠোঁট দেখে অভি কথা বলতে ভুলে যায়। আধো আলো আঁধারে মনে হল যেন কোন এক পরী ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
দিয়া সলজ্জ ভঙ্গিমায় চোখ নামিয়ে মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “সবাই চলে গেলে আমাকে কে নিয়ে যাবে?”
স্মিত হেসে জবাব দেয় অভি, “বসে পর।”
অভির কাঁধে হাত রেখে বাইকে উঠে বসে, “দিদিকে ঠিক সাজিয়েছি ত?”
মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “ভীষণ ভাবেই ভালো, সে আর বলতে।”
বাইক স্টারট দিতেই ওর কাঁধ খামচে ধরে দিয়া, “একটু আস্তে চালিও।”
অভি প্রশ্ন করে, “কেন?”
দিয়া ওর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জবাব দেয়, “এমনি গো, খুব দেরি করতে ইচ্ছে করছে।” বলেই হেসে ফেলে।
অভি স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা তাই হবে।”
দিয়া ওকে প্রশ্ন করে, “তুমি ভালো জামা কাপড় কেন পড়লে না?”
খুব সাধারন দেখতে কিন্তু বেশ দামী জামা আর প্যান্ট পড়েছিল অভি, তাই হেসে বলে, “এই জামা প্যান্টে খারাপ কি?”
দিয়া উত্তর দেয়, “খুব সাদামাটা এটা, প্রচন্ড ফরমাল লাগছে। সুট পড়তে পারতে না হয় অন্তত একটা ব্লেজার।”
স্মিত হেসে জবাব দেয়, “কাজের মধ্যে কি আর ড্রেসের কথা মাথায় থাকে বল।”
ছোট এক জবাব দেয় দিয়া, “হ্যাঁ” বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর প্রশ্ন করে, “সেদিনের পর আর ফোন করনি কেন?”
এবারে হেসে ফেলে অভি, “তোমার ফোন নাম্বার’ত আমার কাছে নেই।”
দিয়া একটু আঘাতের সুরে বলে, “বল যে আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। ইচ্ছে থাকলে নিশ্চয় যোগাড় করে নিতে।”
বড় এক নিঃশ্বাস ছেড়ে অভি উত্তর দেয়, “দিয়া, প্লিজ, অন্তত আজকে নয়।”
বেশ কিছুক্ষন দুইজনের মধ্যে কোন কথাবার্তা হয় না। বাড়ি থেকে বিয়ে বাড়ি, মিনিট পাঁচেকের পথ, দময়ন্তীর অনুরোধে সেই মিনিট পাঁচেক কে প্রায় পনেরো মিনিট পার করিয়ে দেয়।
বিয়ে বাড়িতে পৌঁছান মাত্রই লেখা ওদের দেখে প্রশ্ন করে, এই পাঁচ মিনিটের পথ, এই পার করতে এত সময়? বাইক থেকে নেমে আলতো মাথা নাড়িয়ে লেখার কানেকানে কিছু একটা উত্তর দিল দময়ন্তী। দুই জনেই ফিক করে অভির দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। বিয়ে বাড়ি, বেশ শোরগোল, চারদিক ঘাড় ঘুরিয়ে একবার জরিপ করে নিল। দিদিভাইয়ের পাশে চুপ করে দেবী বসে আছে, কম বয়সী ছেলেদের মধ্যে দেবীকে নিয়ে বেশ কৌতূহল। লেখা, দিয়া আর ঝন্টুও এক কোনায় নিজেদের গল্পে বেশ মত্ত, ওদের সাথে অভির বেশ কিছু বন্ধুও যোগ দিয়েছে, দিদির বন্ধুরাও সেই দলে, দিয়া যেন সেখানে মধ্যমণি। প্রনবেশ বাবু বিয়ের জায়গায় বসে গেছেন, বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শিতাভ্রকে ততক্ষনে বরন কর নিয়ে আসা হয়ে গেছে বিয়ের জায়গাতে। বিয়ের লগ্ন আসন্ন, বুক ভরে শ্বাস নিল অভি, ঝন্টু আর কয়েকজনকে ডেকে নিল দিদির ঘরে, এবারে দিদিভাইকে পিঁড়িতে বসিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
ওকে দেখেই ছলছল চোখে মনামি কাছে ডাকে বলে, “ভাইরে কেমন একটা যেন লাগছে।”
চোখ দুটো ভীষণ ভাবে জ্বালা করে ওঠে অভির, তাও স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “পাগলি মেয়ে তুই।” তারপর পাশে দাঁড়ানো দেবীর দিকে তাকিয়ে রসিকতা করে বলে, “কি রে, কাউকে পছন্দ হল নাকি বল? একেবারে দিদিভাইয়ের সাথে বোনের বিয়েটাও এক মন্ডপে সেরে ফেলি, আমার খরচ বেঁচে যাবে।”
দেবী মিষ্টি হেসে বুক ফুলিয়ে উত্তর দেয়, “নো ওয়ান ইজ আপ টু মাই মার্ক, দাদাভাই (কেউই ঠিক আমার পছন্দের নয়)।”
“দাদাভাই” কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে দেবীর দিকে তাকায়। দেবীর চোখে মুখে মিষ্টি এক হাসি, যেন খুব বড় এক যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে এই এক বাক্যে। অভি ওকে কাছে টেনে মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলে, “তোর জন্য সাত সমুদ্র পাড়ের রাজপুত্র খুঁজে আনব।”
পিঁড়িতে বসে ঘন ঘন নাক মোছে আর এপাশ ওপাশ তাকিয়ে সবাইকে একবার করে দেখে। সিঁদুর পড়ান পর্যন্ত দিদিভাইয়ের পেছনে ঢালের মতন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অভিনন্দন। উলু ধ্বনি আর হর্ষ ধ্বনির সাথে আঙটিতে সিঁদুর মাখিয়ে শিতাভ্র মনামির সিঁথিতে পরিয়ে দিল। সিঁথিতে যেমন পরিমাণের সিঁদুর, ঠিক সেই পরিমাণের সিঁদুর মনামির ফর্সা নাকের ডগা লালে লাল করে দেয়। সারা মুখমন্ডলে এক নতুন জীবনের আস্বাদের ছটা, ঠোঁটে ফুটে ওঠে এক জয়ের হাসি সেই সাথে দুই ছলছল চোখের ভাষায় অনেক কিছু ছেড়ে যাওয়ার গল্পে মাখা।
প্রনবেশ বাবু আর দীপাদেবীর কনিষ্ঠ কন্যে, অভিনন্দনের দিদিভাই মিস মনামি চ্যাটারজি, দুর নিবাসী কোন এক অচেনা শিতাভ্রের আঙটিতে মাখা সিঁদুরের আঁচড়ে নতুন নাম লিখে নেয়, মিসেস মনামি ভট্টাচারজি।
[+] 6 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by pnigpong - 18-08-2020, 02:17 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)