Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#69
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#7-#17)
পুজো শেষ, আশীর্বাদ শেষ, এবারে বিয়ের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। বড় জামাইবাবু, নীলাদ্রি মুম্বাই ফিরে গেলেও, বড়দি শর্বাণী তার ছেলে তিতাসকে নিয়ে থেকে যায়, একেবারে বিয়ের পরেই মুম্বাই ফিরবে। রোজ রাতে খাওয়ার পর জমিয়ে আড্ডা বসে, মনে হয় সেই পুরান দিন গুলো আবার ফিরে এসেছে বাড়িতে। ছোট বেলায় শর্বাণীর মধ্যে যে একটা বড় দিদি গোচের ভাব ছিল, যার জন্য মনামি আর অভির সাথে একটা দুরত্ব ছিল, সেই গুলো কাটিয়ে এই কয়দিনে তিন ভাই বোনের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে। মাঝে মধ্যেই লেখাও দলে জুটে যায়, আর তখন মেয়েদের দল ভারি হয়ে যায়।
সেদিন কোন এক কাজে অভির বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। অন্যদিনের মতন শর্বাণীদি ভাতের থালা হাতে, পুত্র তিতাসকে খাওয়াতে ব্যাস্ত।
অভি চোখ টিপে হেসে ভাগ্নেকে বলে, “একা একা খাচ্ছিস লজ্জা করে না?” বলেই বড়দির কাছে গিয়ে আবদার করে, “আমিও খাবো।”
শর্বাণী মুচকি হেসে এক গাল ভাত অভিকে খাইয়ে দেয়, “এই নে, গেল, আমার গুষ্টির পিন্ডি চটকে গেল” বলেই হেসে ফেলে।
মনামি কাছে পিঠে কোথাও ছিল। বড়দির মুখে “গুষ্টির পিন্ডি” কথাটা শুনে দৌড়ে এসে আবদার করে, “ও একা কেন, আমাকেও দে।” বলেই হাঁ করে।
দীপাদেবী মাথা নাড়িয়ে হেসে বলেন, “দাঁড়া তাহলে আরো একটু ভাত নিয়ে আসি।”
ভাগ্নে তিতাস হাঁ করে একবার মাকে দেখে, একবার মাসির দিকে তাকায় একবার মামার দিকে তাকায়। অভিকে জিজ্ঞেস করে, “এইটা কেমন খাবার, মামু?”
এই “গুষ্টির পিন্ডি”র পেছনের কাহিনী মনে পড়তেই শর্বাণীর সাথে সাথে মনামির চোখ দুটো ভরে আসে। তখন শর্বাণী সবে কলেজ যেতে শুরু করেছে, আর মনামি আর অভি তখন স্কুলের গন্ডি পার হয়নি। রোজ সকালে বাড়িতে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ লেগে যেত। প্রনবেশ বাবুর অফিস, দুই ছেলে মেয়ের স্কুল, বড় মেয়ে কলেজ যাবে। দীপাদেবী কিছুতেই ছেলে মেয়েকে ভাত না খাইয়ে পাঠাবে না, আর সকাল বেলাতে ভাত খাওয়া নিয়ে মনামি আর অভির ভীষণ ভাবে অরুচি। সবাই কেমন পাউরুটি খেয়ে যায়, কিন্তু দীপাদেবীর শাসন, ভাত না খেলে গায়ে লাগে না। রুটি, পাউরুটি টিফিনের খাবার, কিন্তু সকালে ভাত খাওয়া অনিবার্য। শেষ পর্যন্ত ভার পড়ত শর্বাণীর ওপর। শেষ পর্যন্ত একটা থালায় ভাত মেখে রাগে গজগজ করতে করতে দুই ভাই বোনের মুখের মধ্যে ভাতের গ্রাস ঠেসে দিত আর বলত, “আমার গুষ্টির পিন্ডি চটকে খা। তোদের জ্বালায় একদিন ও ঠিক ভাবে সেজেগুজে কলেজ যেতে পারি না।” খেতে না চাইলেই, এঠো হাতেই ভাই বোনের গালে সপাটে চড়। একটু বড় না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকদিন ওদের মুন্ডপাত করতে করতে বড়দি ওদের খাইয়ে দিত। শেষ কবে ভাই বোন কে এই ভাবে খাইয়ে দিয়েছিল সেটা মনে পরেনা, তবে সেদিন রাতের “গুষ্টির পিন্ডি” স্বাদ ভীষণ ভাবেই মিষ্টি ছিল।
বেশ কিছুদিন পর এক রাতে, প্রনবেশ বাবু আর অভি মিলে অতিথিদের তালিকা তৈরি করতে ব্যাস্ত ছিল। তখন কথা উঠল ফাল্গুনীর। এই আশীর্বাদের ঝামেলায় আর বিয়ের কেনা কাটার ঝামেলায় ফাল্গুনীর কথা কারুর মনে ছিল না। প্রনবেশ বাবু অভিকে বললেন যে একবার ফাল্গুনীর সাথে ফোনে কথা বলে বিয়ের নিমন্ত্রন পত্র যেন দিয়ে আসে। দশ বছর আগে বড়দির বিয়েতে ক্ষনিকের জন্য দেখা হয়েছিল তারপরে কোনদিন কথাবার্তা অথবা আলাপ পরিচিতিও হয়নি। অভি এই ব্যাপারে একটু ইতস্তত করছিল কিন্তু পাপার আদেশ অমান্য করতে পারেনি। বড়দির বিয়ের সময়ে এই সবের কোন ঝামেলা ছিল না। দেবাশিস বাবুকে তখন বড়মা ফোনেই নিমতন্ন করেছিলেন আর সেই সাথেই তখন ফাল্গুনী এসেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে, দেবাশিস বাবু আর ফাল্গুনীর মধ্যের সমীকরণ অনেক বদলে গেছে, তাই অভিকেই যেতে হবে নিমতন্ন করার জন্য। শেষ পর্যন্ত ইতস্তত ভাব কাটিয়ে, এক দুপুরে ফোন করল ফাল্গুনীকে। ফাল্গুনী প্রথমে চিনতে পারেনি অভিকে, না চেনার কথা কোনদিন ফোনে আওয়াজ শোনেনি অভির।
অভি ফোন করে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো, ফাল্গুনী ম্যাডাম আছেন?”
ফাল্গুনী ওইপাশ থেকে প্রশ্ন এলো, “কে বলছেন?”
অভি উত্তর দেয়, “আমি অভিনন্দন চ্যাটারজি বলছি।”
ফাল্গুনী আশা করেনি যে কোনদিন অভি তাঁকে ফোন করবে। একটু অবাক, খানিকটা ভীতি নিয়েই জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার হটাত করে ফোন করলে?”
ফাল্গুনী ম্যাডামের কণ্ঠের আড়ষ্ঠভাব কাটানোর জন্য স্মিত হেসে জবাব দেয়, “না মানে, দিদির বিয়ে তাই ফোন করলাম।”
ফাল্গুনী হেসে উত্তর দেয়, “ও আচ্ছা, বেশ ভালো। কবে বিয়ে? তুমি কেমন আছো, বাড়ির সবাই ভালো ত?”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, বাড়ির সবাই ভালো আছে। এই ডিসেম্বরেই বিয়ে। আজ বিকেলে কি বাড়িতে আছেন, তাহলে একবার যাবো।”
ফাল্গুনী বেশ উৎসুক হয়েই উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ, চলে এসো।” বলে নিজের ঠিকানা দেয়।
ফাল্গুনী ম্যাডামের বাড়িতে যাওয়ার আগে, বড়মা বললেন যে প্রথম বার ওদের বাড়িতে যাচ্ছে তাই হাতে করে কিছু নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রণামীর জন্য প্রচুর শাড়ি কেনা হয়েছিল সেখান থেকে একটা দামী শাড়ি দিলেন। কিন্তু মুশকিল বাঁধল দেবযানীর জন্য, উঠতি বয়সের বর্তমান যুগের মেয়ে, ঠিক কি ধরনের জামা কাপড় পছন্দ হবে সেটা বলা মুশকিল, তাই দীপাদেবী বললেন যে দেবযানীর হাতে দুই হাজার টাকা দেয় আর বলে যেন নিজের পছন্দ মতন কিছু একটা কিনে নিতে।
যথা সময়ে, ঠিক সন্ধ্যের পরে অভি ফাল্গুনীর ফ্লাটে পৌঁছে যায়। কলিং বেল বাজানোর আগে ভীষণ বাধো বাধো ঠেকছিল অভির। সামনের দরজা যেন এক দুর্ভেদ্য দেয়াল, কত রকমের মানুষ, কত রকমারি সম্পর্কের বন্ধন। কখন আপনজন পর হয়ে যায় আর কখন অচেনা কেউ খুব আপন হয়ে যায়। এই দরজার ওইপাশের মানুষের সাথে অভির ঠিক কি ধরনের সম্পর্ক সেটাই ঠিক করে উঠতে পারে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে শেষ পর্যন্ত কলিং বেল বাজাল। ফাল্গুনী ম্যাডাম, দরজা খুলে স্মিত হেসে বেশ সমাদর করেই অভিকে ভেতরে আসতে বলেন। ফ্লাটটা বেশি বড় না হলেও বেশ ছিমছাম, সাজান গোছান।
সোফায় বসতে বলে অভিকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমাকে সেই দশ বছর আগে শর্বাণীর বিয়েতে দেখেছিলাম।” বলে একটু হাসেন, যেন বলতে চাইছেন যে না দেখা দিলেই ভালো হত।
নিমন্ত্রিন পত্র ফাল্গুনী ম্যাডামের দিকে এগিয়ে দিয়ে উত্তর দেয় অভি, “হ্যাঁ। আগামী ডিসেম্বরে দিদির বিয়ে, বিয়েতে বড়মা আর পাপা কিন্তু বার বার করে আসতে বলেছেন আপনাদের।”
নিমন্ত্রন পত্রটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিচু গলায় বললেন, “যাওয়ার ইচ্ছে ত খুব আছে, কিন্তু ঠিক বলতে পারছি না।”
অভি ফাল্গুনী ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখল, ঠোঁটে হাসি কিন্তু চোখে ভাষায় এক অব্যাক্ত বেদনা। এই বাধার আসল কারন অভির বুঝতে বিন্দু মাত্র কষ্ট হল না, “আপনি সে নিয়ে চিন্তা করবেন না, সেসব বুঝেই বড়মা আপনাদের বিয়েতে আসতে বলেছে।”
স্বস্তির এক হাসি হেসে উত্তর দেন ফাল্গুনী, “তাহলে নিশ্চয় যাবো। আত্মীয় সজ্জন বলতে সেইভাবে কারুর সাথেই কোন বিশেষ সম্পর্ক নেই, আলাপ পরিচিতিও নেই। দেবীর ভালোই লাগবে।”
দেবী অর্থাৎ দেবযানী, সম্পর্কে অভির সৎ বোন, একটু ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, “দেবযানী কোথায়, দেখছি না যে?”
ফাল্গুনী উত্তর দেয়, “টিউসানি গেছে, এই একটু পরেই চলে আসবে। সামনেই পরীক্ষা, তার ওপর আবার মেডিকেল এন্ট্রান্স এর জন্য আলাদা করে পড়াশুনা, খুব চাপ।” বলেই হেসে ফেলেন।
মাথা দোলায় অভি, “হ্যাঁ তা সত্যি।”
আবার কিছুক্ষন কারুর মুখে কোন কথা নেই, দুইজনেই মুক হয়ে প্রশ্ন আর উত্তর হাতড়ে বেড়ায়। এইভাবে চুপ করে বসে থাকতে অভির খুব খারাপ লাগে তাই বিদায় চায় অভি, “আজ তাহলে আসি, বিয়েতে আসবেন কিন্তু।”
ফাল্গুনী প্রচন্ড বিব্রত বোধ করে, “আরে না না, এত তাড়াতাড়ি কেন চলে যাবে। দেবী একটু পরেই চলে আসবে। একে বারে ডিনার করেই যাবে।” বলে রান্না ঘর থকে একটা ট্রেতে রকমারি খাবার নিয়ে উপস্থিত।
অভি একটা মিষ্টি তুলে খেতে খেতে হেসে ফেলে, “না না ডিনার না হয় অন্য দিন করব।”
ফাল্গুনী হেসে বলে, “আচ্ছা তোমার কথা বল, আজকাল কি করছ?”
অভি একটু হসে বলে, “এখন কিছু করছি না, এই দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর চাকরি করব।”
ফাল্গুনী একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে, “তোমার মতন এত মেধাবী ছেলে এখন বসে?” মাথা নাড়িয়ে বলে হেসে, “এটা একদম মানতে পারলাম না।”
অভি হেসে ফেলে, “না না ব্যাপারটা সে রকম নয়, আসলে কোলকাতার বাইরে যাবো না তাই।”
ফাল্গুনী বলে, “ওহ আচ্ছা। আমার একটাই মেয়ে, তবে ঠিক করে নিয়েছি যেখানে যেতে চায় যেতে পারে, ঘরের মধ্যে ধরে বেঁধে রাখব না।”
অভি মাথা দোলায়, “সেটা আলাদা ব্যাপার।”
কিছু পরেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ফাল্গুনী অভিকে একটু হেসে বললেন, “দেবী এসে গেছে, দেখো তোমাকে দেখে খুব অবাক হয়ে যাবে।”
অভিও একটু হাসি দিল। দশ বছর আগের দেখা দেবযানী আর দরজা দিয়ে যে মেয়েটা ঢুকল সেই দেবযানীর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। সাজগোজ চলন বলন অতি আধুনিক। উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণী, ঘাড় পর্যন্ত ঢেউ খেলান চুল, গায়ের রঙ ফরসার দিকেই। পরনে একটা কালো রঙের জিনসের ক্যাপ্রি আর গোলাপি ক্রপ টপ, কানে হেডফোন গোঁজা, পিঠে ব্যাগ।
বসার ঘরে বসা অভিকে ঠিক খেয়াল করেনি দেবী, তাই ঘরে ঢুকেই মায়ের ওপর আদুরে আবদার করে উঠল, “আমার কিন্তু একটা হাইহিল বুট চাই এইবার।”
মেয়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে হেসে ফেলে, “এইত কয়েকদিন আগেই একটা বুট কিনলি।”
মায়ের গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, “ওটা ত জাস্ট এঙ্কেল পর্যন্ত, স্মিতা থাই হাই বুট কিনেছে আমারও চাই, প্লিজ মা।”
ফাল্গুনী মেয়েকে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা সে না হয় হবে। এখন দেখ ত কে এসেছে, তোর দাদা, অভিনন্দন।”
অভি এতক্ষন দেবীর আর ফাল্গুনীর দিকেই তাকিয়ে ছিল। অভির দিকে দেখতেই নিমেষের মধ্যে ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেল। আলতো মাথা দুলিয়ে অভিবাদন জানাল, “হাই।” চোখে বিষাক্ত এক চাহনি, এইভাবে হটাত করে কেন এসেছে।
দেবীর চোখের এই চাহনি অভিকে ভীষণ ভাবে নাড়িয়ে দেয়, আজকের এই দুই জনের মাঝের দুরত্ত্বের কারন অভিনন্দন নয়। যার কারনে এই দুরত্ত্ব সে এই দুই জনের বর্তমানের ধারে কাছেও নেই। অভি ম্লান হেসে দেবীকে অভিবাদনের প্রত্যুত্তরে মাথা দুলিয়ে বলে, “হাই, কেমন আছো?”
ভালো মন্দ কোন উত্তর না দিয়েই নিজের ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে দেবী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ম্লান হেসে অভির দিকে দেখে বললেন ফাল্গুনী, “এই পড়া থেকে এসেছে ত তাই একটু টায়ার্ড। তুমি বস আমি এখুনি আসছি।”
অভির বুঝে যায় বেশিক্ষন আর বসা ঠিক নয় তাই বলে, “না, আজকে না হয় আসছি পরে আবার দেখা হবে।”
ফাল্গুনী মাথা নাড়িয়ে বলেন, “না না তুমি বস, এখুনি যাবে কোথায়?” এই বলে দেবীর ঘরে ঢুকে গেলেন।
বেশ কিছু পরে ফাল্গুনী বেড়িয়ে এলেন দেবীর রুম থেকে, সাথে দেবী। বাইরের কাপড় বদলে বাড়ির কাপড়, তাতেও আধুনিকার ছোঁয়া স্পষ্ট। জিনসের শর্টস আর টি শার্ট। মোবাইল তখন হাতে, পুরোদমে বন্ধুদের সাথে নিশ্চয় মেসেজিং চলছে। অভির দিকে দেখে স্মিত এক হাসি দিয়ে একটা সোফায় বসে পরল। অভি কি বলবে, কি ভাবে আলাপ শুরু করবে কিছুই ভেবে পায় না। দেবী মাঝে মাঝেই মোবাইলে কি সব টাইপ করতে করতে ফিক ফিক করে হেসে চলেছে। ফাল্গুনী মেয়েকে একটু ঠেলে ইশারা করেন মোবাইল ছেড়ে অভির সাথে কথা বলতে।
বেশ কিছু পরে অভি প্রশ্ন করে, “তুমি মেডিকেলের জন্য তৈরি হচ্ছ?”
মোবাইল থেকে মাথা না উঠিয়েই উত্তর দেয় দেবী, “হুম।”
অভি বলে, “বিয়েতে এসো, ভালো লাগবে।”
মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “যাওয়াটা কি খুব জরুরী?”
ফাল্গুনী মেয়ের এহেন উত্তর শুনে একটু আহত হন। দেবীকে মৃদু ধমক দিয়ে বলেন, “এইভাবে কারুর সাথে কথা বলতে নেই, দেবী।”
মাথা নাড়িয়ে বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, “আমার ওপর রাগ করে, অভিমান করে কি লাভ বল।”
দেবী আহত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “রাগ অথবা অভিমান তার ওপরেই হয় যাকে আমরা চিনি। আপনাকে ত ঠিক ভাবে ...”
দেবীর কথাটা ফাল্গুনী কেড়ে নিয়ে আবার মৃদু ধমক দেন, “আচ্ছা, চেনা পরিচিতি ত হয়েই গেল এখন এইভাবে ধরে বসে থাকলে হবে।”
অভি হেসে দেবীকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বল, তোমার রাগ কমানোর জন্য কি চাই?”
এটা শুনে দেবীও হেসে ফেলে, “বেশ দারুন একটা লেহেঙ্গা চাই, দিদির বিয়ে বলে কথা।”
পরিবেশ সামান্য হতে বেশি দেরি আর হয় না, দেবীও বুঝে যায় যে দোষ আসলে কারুর নয়, শুধু মাত্র বিধির লিখনে এই দুরত্ত্ব। সেদিন অভি অবশ্য রাতের খাওয়ার জন্য থাকেনি বাড়ি ফিরে এসেছিল। তবে কিছুদিন পরে দেবীকে নিয়ে ফাল্গুনী ম্যাডামকে নিয়ে গড়িয়াহাট গিয়ে একটা দামী লেহেঙ্গা কিনে দেওয়া হয়েছিল। অভি নিমন্ত্রন করে আসার পর অবশ্য দীপাদেবী ফাল্গুনীকে ফোন করেছিলেন এবং সেই সাথে বলেছিলেন বিয়ের দিন সকালেই চলে আসতে। সত্যি, জীবন কত অদ্ভুত, হিসেব নিকেষ করে, অঙ্ক কষে পথ চলা যায় না, গা ভাসিয়ে দিতে হয় এই নদীতে। স্রোতের সাথে চলাটাই বাঞ্ছনীয়, শুধু মাত্র কান্ডারির মতন শক্ত হাতে দাঁড় ধরে রাখতে হয়। সবাই যে পেরে উঠবে সেটাও নয়, কেউ পারে কেউ পারে না।
[+] 3 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by pnigpong - 18-08-2020, 02:05 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)