Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
দশ

কামিনীর ছলনা (#১)

যদিও বাপ্পা নস্করের দিক থেকে সেই রকম কোন চাপ নেই তাও দানা জানতে চায় নয়না একা একা কোথায় যায় তাই একদিন ঠিক করে যে নয়নাকে অনুসরন করবে। বিকেলে যথারীতি নয়না গাড়ি নিয়ে বের হতেই দানা একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওর গাড়ির অনুসরন করে। কিছুক্ষণের মধ্যে নয়নার গাড়ি শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে এক মফস্বল এলাকার দিকে ধেয়ে যায়। দানার ট্যাক্সি নয়নার গাড়ির বেশ পেছনে।

অনেকক্ষণ পিছু করার পরে নয়নার গাড়ি একটা গ্রাম্য এলাকায় ঢুকে পরে। দানা বেশ দূরে ট্যাক্সি থেকে নেমে ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়। গ্রাম বেশি বড় নয়, অতি সহজে নিজেকে আড়ালে রেখে পায়ে হেঁটে গাড়ির পিছু করে। চারপাশে বড় বড় গাছপালা, আম কাঁঠালের বাগান ঘেরা একটা ছোট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাছের আড়াল ধরে, ওই বাড়ির দিকে চোখ রাখে দানা। গাড়ি থেকে নেমে নয়না, মাথায় একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নেয় আর চোখে কালো চশমা পরে নেয়। একবার অতি সন্তর্পণে এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে ওই ছোট বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। দানা আড়াল থেকে সব লক্ষ্য করে। বাড়ির সামনে একটা সাদা রঙের গাড়ি দেখতে পায়। এই গাড়ির মালিক কে জানার জন্য দানা চুপিচুপি বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। গাড়ি থেকে গাড়ির ড্রাইভার নামতেই দানা সতর্ক হয়ে ওঠে। গাড়ির ড্রাইভার দানার খুব চেনা, এঁকে দেখেছে কোথায় যেন দেখছে। চেহারায় দাড়ি গোঁফ ভর্তি, চিনতে কষ্ট হয় তাও ওর হাঁটা চলা দেখে দানার সন্দেহ হয়। কিছুক্ষণ ভালো ভাবে দেখার পরে গাড়ির ড্রাইভার দেবুকে চিনতে পেরে দানা আশ্চর্য হয়ে যায়। মনে পরে যায় কেষ্টর কথা এক সময়ে ওকে বলেছিল, দেবু কোন রাজনৈতিক দল নেতার গাড়ির চালক। কিন্তু ওই বাড়ির মালিক কে সেটা এখন জানা যায়নি। পায়ে পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে, গাড়ির পেছনে লুকিয়ে বাড়ির মধ্যে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে। বড় বড় কাঁচের জানালা পর্দায় ঢাকা, কান পাতলে হাসির কলতান আর নারী পুরুষের কণ্ঠ স্বর শোনা যায়। নারীর কণ্ঠস্বর নয়নার কিন্তু পুরুষের কণ্ঠস্বর দানা ঠিক চিনতে পারে না। এমন সময়ে ওর কাঁধে এক হাত পরে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দেবু ওর পেছনে দাঁড়ানো। দানাকে এইখানে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে দেবু।

দানা সঙ্গে সঙ্গে ওর দিকে হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি রে বালছাল বানচোদ ছেলে কেমন আছিস?"

দানাকে এইখানে দেখতে পাবে সেটা দেবুর পক্ষে আশাতীত। দানা ততক্ষণে পকেট থেকে পিস্তল বের করে হাতে নিয়ে নেয়। ভয় না দেখালে কেউ উত্তর দেবে না সেটা ভালো ভাবেই জানে দানা। ওর হাতে পিস্তল দেখে দেবু আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, "তুই এখানে কি করছিস?"

দানা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "শালা, সেই যে রুমা কে খুন করে পালালি তারপরে আর তোর কোন খবর নেই। তুই তোর খবর বল আগে তারপরে আমি বলছি।"

দেবু ওকে টেনে বেশ দূরে নিয়ে যায়। একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দেবু আর দানা সিগারেট জ্বালায়। দেবু অনেকক্ষণ দানার সামনে অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপরে ক্ষীণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ রে, তুই এখন কালী পাড়ার বস্তিতেই থাকিস?"

দানা মাথা নাড়িয়ে জানায়, "হ্যাঁ ওই খানে থাকি।"

দেবু জিজ্ঞেস করলে, দানা জানায় ওর বাবা মা, এক প্রকার বেঁচে আছেন। কয়েক মাস আগেই দানা টাকা খরচ করে অনেকের বাড়ি ঘরদোর পাকা করে দিয়েছে। ছেলে মেয়েকে খুইয়ে একপ্রকার মৃত্যুর দিন গুনছেন দেবুর বৃদ্ধ বাবা মা। দেবু দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলে, "আমি সত্যি খুব বড় পাপী রে। নিজের বোনের সাথে সহবাস করেছি, রুমাকে খুন করেছি, বাবা মাকে দেখতে পারি না। আমি সত্যি বড় পাপী।"

দানা ওর কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, "হ্যাঁ, তুই বড় পাপী। তা এইখানে কি মনে করে।"

দানা, দেবুর মুখে জানতে পারে, আজকাল দেবু বিমান চন্দের গাড়ি চালায়। সেটা শুনেই দানা সতর্ক হয়ে যায়। পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেবুর অলক্ষ্যে মোবাইল চালিয়ে ওর কথা রেকর্ড করতে শুরু করে দেয়। গত মাস পাঁচেক ধরে নয়না আর বিমানের এই গোপন সম্পর্ক চলছে। মহানগরের বুকে এই ভাবে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারে না তাই মহানগর ছাড়িয়ে দুর একটা গ্রামের মধ্যে বিমানের বাগান বাড়িতে দুইজনে দেখা সাক্ষাৎ করে। বাপ্পা নস্করের বিরোধী দল নেতা বিমান চন্দের সাথে নয়নার সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পেরে দানার রক্ত গরম হয়ে ওঠে। শত হোক বাপ্পা নস্কর একজন রাজনৈতিক নেতা হলে কি হবে, মানুষের কাছে পাপী বাপ্পা নস্কর, সামাজিক প্রতারক। কিন্তু দানা যে ওর গুপ্ত চর, তাই এই খবর পেয়ে দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। দেবুকে বিমানের বিষয়ে আরও প্রশ্ন করে। দেবু ওকে জানায়, বিমান চন্দ, প্রতিপত্তিশালী শিল্পপতি মোহন খৈতানের বাল্যবন্ধু। মোহনের সাথে বিমানের গলায় গলায় বন্ধুত্ত। সব শুনে দানা, দেবুকে নিয়ে চুপচাপ বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। দেবুর কাছে আরো জানতে পারে, নয়না আর বিমান কখন ওই বাড়ি থেকে বের হবে তার ঠিক নেই। কোন কোনদিন দেবু সারা রাত গাড়িতে কাটিয়ে দেয়। সব কথা শুনে দানা বুঝতে বাকি থাকে না যে নয়না দুই নৌকায় পা রেখে এক চরম ছলনার খেলায় নেমেছে।

সন্ধ্যে নেমে আসে গ্রামের বুকে। বাড়ির আলো এক এক করে জ্বলে ওঠে। দানা আর দেবু, বিমানের গাড়িতে বসে নিজেদের গল্পে মশগুল হয়ে যায়। বেশ কিছু পরে বিমান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দেবুকে ডাক দেয়, ওর কিছু পেছনে নয়না দাঁড়িয়ে। অন্ধকার গাড়ির মধ্যে বসে নয়নাকে পরিস্কার দেখতে পায় দানা। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বের করে বিমান চন্দের আর নয়নার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ফেলে। বিমানের পঞ্চাসের মতন বয়স কিন্তু চেহারা বেশ পেটানো, ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, কোমরে শুধু একটা সাদা তোয়ালে জড়িয়ে। নয়না, বিকেলে একটা জিন্স আর শার্ট পরে বেড়িয়ে ছিল কিন্তু মনে হয় ওদের কামকেলির ফলে সেই পোশাক খুলে ফেলা হয়েছে। একটা তোয়ালে শরীরে জড়িয়ে বিমানের পেছনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের পানীয়ের গেলাসে চুমুক দেয়। দানা একবার ভাবে সামনে যাবে, কিন্তু কি ভেবে গাড়ির মধ্যেই বসে থাকে। বিমান হঠাৎ নিজের গাড়ির দিকে দেখে দানার ছায়া দেখতে পায়। দেবুকে কড়া কণ্ঠে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চায়।

দেবু আমতা আমতা করে, বিমান রেগে উঠে দেবুকে শাসায়, "বানচোদ ছেলে, এইবারে তোকে ঠিক পুলিসে দেব। তোকে এত টাকা দেই এই দেখতে কেউ যেন বাড়ির কাছাকাছি না আসে আর তুই একজনকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে রেখেছিস?" বলেই সপাটে এক চড় কষিয়ে দেয় দেবুর গালে।

নয়না ভুরু কুঁচকে অন্ধকার গাড়ির ভেতরে আগন্তুকের ছায়া দেখে চমকে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে দরজার পেছনে লুকিয়ে যায়। ওদের এই গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে জানাজানি হয়ে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে, বিশেষ করে বাপ্পা নস্কর জানতে পারলে ওকে হয়ত মেরেই ফেলবে। দেবু নিচু কণ্ঠে কিছু একটা বলতেই বিমান সতর্ক হয়ে যায়। দেবুর নিরুপায় অবস্থা দেখে দানা গাড়ি থেকে নেমে আসে। হাতে পিস্তল নিয়ে দানাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে বিমানের চোয়াল কঠিন হয়ে যায়, কয়েক পা পিছিয়ে চোখে মুখে রুদ্র রূপ দেখা দেয়।

ভেতর থেকে নয়না ক্ষীণ কণ্ঠে জ্জিজ্ঞেস করে, "গাড়ির মধ্যে কে বসে?"

বিমান দানার দিকে চোখ রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে নয়নাকে বলে, "নিজে এসে দেখে যাও কে। তুমি ড্রাইভার নিয়ে এসেছ সেটা জানাও নি কেন?"

নয়না দরজার আড়াল থেকে উঁকি মেরে দানাকে হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যায়। কঠিন চোয়াল, হাতে পিস্তল, দানার দুই চোখের তারায় আগুন। নয়না কি করবে ভেবে পায় না, ওর চেহারা ক্ষণিকের মধ্যে রক্ত শুন্য হয়ে যায়। নয়নার ভয়ার্ত চোখ দেখে দানার চোয়াল আরো কঠিন হয়ে ওঠে। নয়না চোখের ইশারায় দানার কাছে ক্ষমা ভিক্ষার আর্ত অনুরোধ করে। দানা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এই খবর একবার বাপ্পা নস্করের কানে গেলে ওকে টাকা দিয়ে ভরিয়ে দেবে, কিন্তু যদি মুখ না খোলে তাহলে নয়না আর বিমান হয়ত ওকে টাকা দিয়ে ভরিয়ে দেবে। ওর হাতে পিস্তল আর ওর দশাসই চেহারা দেখে সহজে ওকে মারার চেষ্টা হয়ত নয়না অথবা বিমান করবে না।

নয়না অবস্থার সামাল দিয়ে ঠোঁটে মেকি হাসি মাখিয়ে বিমানের গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, "আরে না না, আজকে শরীরটা ভালো ছিল না তাই ড্রাইভারকে সাথে এনেছি। অসুবিধে কি আছে এতে?"

বিমান কড়া কণ্ঠে নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার ড্রাইভার নাকি বাপ্পা নস্করের লোক তাহলে? তুমি কি আমার সাথেও ছলনার খেলা খেলছ?"

এহেন অপবাদে নয়নার চোখ ছলছল করে ওঠে। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, কত ছলনাই না জানে এই চটুল নারী। বিমানের গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে ওকে শান্ত করে নয়না বলে, "বাপ্পার লোক কিন্তু আমার খুব বিশ্বাসী দেহ রক্ষী। দানা খুব ভালো ছেলে আমার কথার একদম অমান্য করে না। তোমার কোন চিন্তা করতে হবে না বিমান, আমি সব সামলে নেব।"

দানার দিকে চোখ রেখে নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "এত বিশ্বাসী ছেলে তাহলে হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে কেন?"

দানার সাথে নয়নার চোখে চোখে কথা হয়। নয়না আর্ত চোখে দানার দিকে তাকিয়ে অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য ভিক্ষা চায়। দানা সঙ্গে সঙ্গে জামার পেছনে পিস্তল লুকিয়ে ফেলে। নয়নাকে বাঁচানোর জন্য দানা, বিমানকে বলে, "না মানে, স্যার স্লাইড চেক করছিলাম তাই হাতে ছিল আর কিছু না।"

বিমানের পেছন থেকে, নয়না মৃদু মাথা দুলিয়ে দানাকে ধন্যবাদ জানায়।

বিমান চিবিয়ে চিবিয়ে নয়নাকে বলে, "তোমার মতন ছেনালি নারীদের বিশ্বাস করতে নেই একদম। শালী রান্ডী কখন কার সাথে শুয়ে কাকে মেরে ফেলবে ঠিক নেই।"

কথাটা শুনে নয়নার চোখ মুখ লাল হয়ে ওঠে সেই সাথে দানার চোয়াল ক্রোধে কঠিন হয়ে যায়। নয়না অগ্নি দৃষ্টি হানে দানার দিকে, যেন বলতে চায় হাতে পেলে খুন করে দেবে। নিজেকে সামলে বিমানের হাত নিজের গলার ওপরে চেপে বলে, "অবিশ্বাস করলে মেরে ফেল এর চেয়ে বেশি আর কি বলব তোমাকে।"

বিমান শেষ পর্যন্ত হেসে ফেলে, "কি যে বলি না তোমাকে।" বলে মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে ওদের সামনেই নয়নার কোমর জড়িয়ে নরম গালে একটা চুমু খায়। তারপরে দেবু দানার দিকে তাকিয়ে বলে, "দ্যাখ তো কোথাও মুরগি পাওয়া যাবে কি না? পারলে নিয়ে আয়, রাতটা এইখানেই কাটাবো।"

নয়না বিমানকে আদুরে কণ্ঠে বলে, "এই শোন না, আজকে না শরীরটা বিশেষ ভালো নেই। আজ রাতে থাকতে পারছি না। প্লিস কিছু মনে কর না, পরে একদিন আসব সারা রাত কাটাব।" তারপরে দানার দিকে আড় চোখে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে।

দানা মৃদু মাথা নাড়িয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ির চাবি ওর কাছে নেই তাই গাড়ি খুলে ভেতরে ঢুকতে পারে না। প্রায় আধা ঘন্টা পরে নয়না জামা কাপড় পরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দানার হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেয়। গাড়ির চাবি দেওয়ার সময়ে দানার দিকে রক্ত চক্ষু হেনে শাসিয়ে দেয় নয়না, কিন্তু দানা ওই চোখে ভোলার পাত্র নয়। এতদিন এই খবর বাপ্পার অজানা, জানে এই খবর একবার বাপ্পাকে দিতে পারলে বাপ্পা ওকে টাকা দিয়ে ভরিয়ে দেবে। বিমানকে একটা চুমু ছুঁড়ে গাড়িতে বসে পড়ে নয়না। দানা গাড়ি নিয়ে গ্রাম্য পথ ধরে গ্রাম ছেড়ে বেড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে।

বড় রাস্তায় পড়তেই পেছন থেকে নয়না ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "আমার ওপরে চর গিরি করতে কে বলেছে তোমাকে? আমি জানি তুমি বাপ্পার গুপ্ত চর, তাই বলে কি নিজেস্ব সময় কাটাতে পারব না আমি?"

দানা চুপ চাপ গাড়ি চালায় আর আয়নায় নয়নাকে ক্ষুব্ধ বাঘিনী মতন ফুঁসতে দেখে। দানাকে চুপ থাকতে দেখে নয়না আবার চেঁচিয়ে ওঠে, "গাড়ি দাঁড় করাও এইখানে। কি চাও তুমি, আমাকে মেরে ফেলতে চাও?"

দানা তাও গাড়ি হুহু বেগে শহরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দানার মনের মধ্যে দ্বন্দের বিশাল ঢেউ দেখা দেয়। পেছনে বসা এই নারীর আসল পরিচয় কি? কামুকী, চটুল আবার সেই সাথে ভাইয়ের জন্য সব কিছু করতে পারে। মাঝে মাঝে ওর চোখ দেখে মনে হয় খুব দুঃখিনী। মাঝে মাঝে চোখের চাহনি দেখে মনে হয় ক্ষুধার্ত বাঘিনী। মাঝে মাঝে মনে হয় চটুল চপলা লাস্যময়ী, টাকা প্রতিপত্তি ক্ষমতার জন্য যা খুশি তাই করতে পারে এই নারী।

দানা চোয়াল চেপে হিমশীতল কণ্ঠে নয়নাকে জিজ্ঞেস করে, "কোথায় যেতে চান?"

প্রচন্ড ক্রোধে নয়নার কান গাল লাল হয়ে যায়, ছলছল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "নরকে নিয়ে যাও আর কি!"

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে দানাকে শাসায়, "জানো, যদি আমি বাপ্পার কানে একবার লাগিয়ে দেই যে তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছ, তাহলে ওই নিতাইকে দিয়ে তোমার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেবে।"

প্রচন্ড ক্রোধে দানার মাথা গরম হয়ে যায়। তাও নিজেকে সংযত রেখে নয়নার দিকে আড় চোখে তাকায়। ওই দৃষ্টি দেখে নয়না বুঝতে পারে দানা ভয় পাওয়ার মানুষ নয়, দানা অন্য ধাতুর তৈরি।

নয়না কণ্ঠস্বর নরম করে ওকে বলে, "আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে, বল কি চাও তুমি।"

দানা বাঁকা হেসে ওকে বলে, "এখন শুধু জানতে চাই কোথায় যেতে চান আপনি।"

দানার ঠোঁটে হাসি দেখে নয়না স্বস্তি পায়। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একটা ঠিকানা দিয়ে নিয়ে যেতে বলে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শহরে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে সোজা ওই ঠিকানায় চলে যায় দানা। বেশ বড় লোকেদের এলাকা, চারপাশে উঁচু পাঁচিল দেওয়া বাগানে ঘেরা ছোট ছোট বাড়ি, কোনটা একতলা কোনটা দুইতলা। নয়নার নির্দেশ মতন একটা বড় গেটের সামনে পৌঁছে যায় গাড়ি নিয়ে। নয়না দানার হাতে এক গুচ্ছ চাবি দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেট খুলতে বলে। দানা চাবি দিয়ে বড় লোহার গেট খুলে আবার গাড়িতে বসে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে।

সুন্দর বাগানে ঘেরা একতলা বাড়ি, পুরো ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই। কার বাড়ি এটা, এইখানে কেউ থাকে না কেন, ইত্যাদি প্রশ্ন দানার মনে ভিড় করে আসে। দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, এই নির্জন অন্ধকার বাড়িতে নয়না কেন দানাকে নিয়ে এসেছে? কি চায় নয়না ওর কাছ থেকে? নিশ্চয় টাকার লোভ দেখাবে, কত টাকা দিলে দানার মুখে কুলুপ থাকবে? অঙ্ক কষে দানা, এক লাখ, না না দশ লাখ চাইবে।

দানা বাঁকা হেসে নয়নাকে বলে, "কুলুপ আঁটার দাম কত?"

লাল ঠোঁটে বাঁকা হেসে নয়না বলে, "শুধু কি টাকা চাই?"
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 18-08-2020, 12:44 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)