16-08-2020, 08:16 PM
সম্বিতের ঘুম ভাঙলো শম্পার ডাকে , ওকে বলাই ছিল সাড়ে চারটেতে ডাকার কথা , ঘুম থেকে উঠে দেখলো আকাশ পরিষ্কার হয়ে গ্যাছে , মনটা ভালো হয়ে গ্যালো , ঘ্যানঘেনে বৃষ্টি ওর মোটেও পছন্দ নয় , আর কলকাতায় তো এরই নয় জল জমা , কাদা বিরক্তিকর , তবু সল্ট লেক ভালো , তাও আজকাল মাঝেমধ্যেই জল জমে যাচ্ছে , আর সেই জল নামতেও অনেক সময় নিচ্ছে , পৌরসভায় ব্লকের কয়েজন মিলে গিয়ে অভিযোগ করেছিল , কিন্তু কোনো উদ্যোগ দেখতে পায়নি , আগে হলে ও দেখতো এখন তো ' রিটায়ার্ড বুড়ো ' , কে আর পাত্তা দেবে ? আগের আমল হোক আর এই জমানা হোক , সম্বিৎ চাকরি জীবনের পুরোটাই ক্ষমতা উপভোগ করেছে , মন্ত্রী আমলাদের কাছে কাজের মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিল , তাই অঢেল ক্ষমতা ভোগ করেছে , সে শিক্ষা দপ্তর হোক বা অর্থ দপ্তর হোক কিংবা স্বরাস্ট্রই হোক , সবসময়ই ক্ষমতার কেন্দ্রের মধ্যেই কাটিয়েছে , সারাজীবনে চাকরির সূত্রে বেশ কয়েকজন বন্ধুও পেয়েছে এছাড়া কলেজের দুইতিনজন বন্ধু তো ছিলই , সেইরকমই একবন্ধু গোপাল বেরা, এখন সল্টলেকেই বাড়ি করেছে , আরো কয়েকজন যারা এখন সল্টলেকে থাকে , তাদের সল্টলেকে আস্তানা তৈরির পিছনে সম্বিতের ভূমিকা আছে তাই তারা এখনো সম্বিতকে ভোলেনি , একইসাথে সবাই আড্ডা জমায় কখনো সিটি সেন্টারে বা কখনো কোনো বারে | শম্পা চা নিয়ে এলো , চা'টা খেয়ে ট্রাউসার আর টিশার্ট পরে বেরিয়ে পড়লো , একটু এগোতেই গোপালের বাড়ি , নিচে দাঁড়িয়ে ডাকতেই গোপালের বৌ চৈতালি ব্যালকনিতে এসে বললো '' কেমন আছেন ?'' '' আসছে আপনার বন্ধু '' চৈতালির মুখে দুস্টু হাসি এখন চৈতালির বয়স প্রায় বাহান্ন , যখন প্রথম দেখেছিলো তখন চৈতালি ছাব্বিশের আশেপাশে , সুশ্রী , রংটা শ্যামলা উচ্চতা সাড়েপাঁচ ফুট হবে দুরন্ত শরীরের গঠন এককথায় কামনার আগুন , উত্তরবঙ্গে বাপের বাড়ি , সম্বন্ধ করে গোপালের সাথে বিয়ের একবছরের মধ্যেই একটা মেয়েকে নিয়ে তিনজনের সংসার , বৈশাখীতে সরকারি আবাসনে থাকে , সম্বিত যেহেতু গাড়ি পেতো , তাই প্রায়ই গোপালকে লিফ্ট দিতো , গোপালের বাড়িতে এক কাপ চা খেয়ে বাড়িতে ফিরতো | সেইসূত্রেই গোপালের বৌয়ের সাথে সম্পর্কটা বেশ সাবলীল ছিল , অনেকসময় গোপাল অফিসের কাজে বাইরে গেলে সল্টলেকের সবচেয়ে বড়ো আর ভালো বি ডি বাজারে চৈতালি আসতো বাজার করতে মেয়েকে নিয়ে , সন্বিতও ঐখানেই নিয়মিত বাজার করতে যেত , দুজনে দেখা হলে চৈতালি খুব উচ্ছাসের সাথেই কলকল করে ওর সাথে অনেক কথা বলতো , আসলে গোপাল খুব বেশি কথা বলতোনা বাড়িতে , বৌয়ের সাথে আরো কম , ফলে এই অজানা শহরে একমাত্র বেশি পরিচিত সম্বিতের সাথে সম্পর্কটা বেশ বন্ধুর মতোই হয়েছিল , তখন মৌসুমীর সাথে খুব বেশি মেলামেশা হয়নি ফলে সম্বিতের জীবনে তখন নারী বলতে পূর্ণিমা দি , বন্ধুর বৌ বলে সংকোচ হতো কিন্তু চৈতালিও ওকে বেশ আকর্ষণ করতো , হয়তো সেইজন্যই গোপাল ওকে চা খাওয়ার কথা বললে কখনো না করতোনা , বাজার করা হয়ে গেলে সম্বিত চৈতালিকে অটো রিক্সায় বা এমনি রিক্সায় তুলে দিয়ে তবে নিজের বাড়ির রাস্তা ধরতো | অনেকসময় গোপালকে বলতো '' তুই ট্যুরে যখন থাকিস তখন বাজার তাজার করে রেখে যাসনা কেন , তোর বৌটা বেচারা মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করে বাজার করে '' শুনে গোপাল হেসে বলতো '' আচ্ছা বলতো বাড়ির সামনের বৈশাখীর বাজার ছেড়ে ঐখানে যায় কেন চৈতালি ?'' '' কেন ?'' '' কারণ ওর ধারণা বি ডি বাজারেই একমাত্র ভালো সবজি মাছ পাওয়া যায় , বুঝলি কিছু ? আমি থাকলে তো বাজার আমিই করি , আমি ট্যুরে গেলেই উনি চলে যান বাজার করতে '' একটু থেমে গোপাল আবার বললো '' কি জানিস গাঁইয়া তো ! শহরের চাকচিক্য দেখে চোখ ঝলসে গ্যাছে , অন্যদেড় সাথে কম্পিটিশন করে দেখতে চায় ও কত মডার্ন '' এই বলে গোপাল একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো , সম্বিতের খারাপ লাগলো |