14-08-2020, 09:45 PM
(This post was last modified: 06-02-2021, 11:57 AM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রহস্যের চাদরে মোড়া রাত
বাড়ির নীচে জিপ থেকে নেমে মনামীর মনে পড়ল দেবের কথা।দ্রুত উপরে উঠে এল,দরজা খুলে দিলেন সুপ্রভা।মনামী ভিতরে ঢুকতেই সুপ্রভা বললেন,তোমার জন্যে একজন অপেক্ষা করছে।
মনামী অবাক হয়ে বলল,কে?
--আমি ঠিক চিনি না।
--মা আপনি না চিনলে কাউকে ভিতরে ঢোকাবেন না।
--মেয়েছেলে তাই--।
মনামী বৈঠকখানার দরজায় উকি দিয়ে সঙ্ঘমিত্রাকে দেখে একটু বিরক্ত হল।শোবার ঘরে এসে পোশাক বদলায়।এমনি মিত্রাদিকে পছন্দ নয় তার উপর ও এখন সাস্পেণ্ড।পোশাক বদলে রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনার ছেলে ফেরেনি?
--কোথাও বেরোলে ওর হুশ থাকেনা।তোমাকে খুব ভয় পায় ভাল করে বকে দিও তো।
শাশুড়িমায়ের কথায় বিরক্তি ভাব কিছুটা প্রশমিত।হেসে বলল,পুলিশকে সবাই ভয় পায়।
সুপ্রভার চা করা হয়ে গেলে একটা ট্রেতে দু-কাপ চা কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে মনামী বসার ঘরে ঢুকে বলল,মিত্রাদি তুমি কতক্ষন?
--বেশিক্ষন না।তোর এত দেরী হল?
--গুছিয়ে টুছিয়ে আসতে দেরী হল।নেও চা খাও।
মনামী অনুমান করার চেষ্টা করে হঠাৎ কেন আগমন?চায়ে চুমুক দিতে দিতে সঙ্ঘমিত্রা কিভাবে বিষয়টা শুরু করবে মনে মনে সাজাতে থাকে।দেখে তো মনে হচ্ছে মুড ভাল।
--তারপর খবর সব ভালোতো?
--একটা খবর তোকে আমার আগেই দেওয়া উচিত ছিল--।
মনামী নির্বিকার চা খেতে থাকে।সঙ্ঘমিত্রা বলে,মি.ঘোষের মৃত্যু এ্যাক্সিডেণ্ট নয় মার্ডার।
--পুলিশ তদন্ত করছে।
স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনেও এমন নিস্পৃহভাব কিছুটা বিস্মিত হয় সুকুকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।সঙ্ঘমিত্রা বলল,জানি না তদন্তে কালুয়ার দলবলের হদিশ পাবে কিনা?একটা ট্রাক রাতারাতি গায়েব হয়ে গেল!
--কালুয়ার দলবল?
--মি.ঘোষ ওদের পথের কাটা ওরা যে কিছু করবে আমি জানতাম।
--তাহলে আগে বলনি কেন?
--ভয়ে মনা ভয়ে।এখন ইচ্ছে করছে নিজের গালে চড় মারি।পুলিশে কাজ করি হোক নটোরিয়াস ভয় পেলে চলে?
--যা হবার হয়ে গেছে এখন এসব কথা ভেবে কি লাভ?
--ওদের এখন সুকুর দিকে নজর।
--দেব কি করল?
--খবরটা পেয়েই আমার মনে হল মনাকে জানানো দরকার।
--শোনো মিত্রাদি দেবের জন্য তুমি ভেবোনা মনামী সোম তার স্বামীকে রক্ষা করতে জানে।তুমি নিজের কথা ভাবো।
সঙ্ঘমিত্রা মাথা নীচু করে বসে থাকে।মনামীর মনে হল এভাবে না বললেও হতো।বলল,মিত্রাদি আসলে দেবের কথা উঠতে মাথাটা গরম হয়ে গেল,কিছু মনে কোরনা।তোমার কেসের কিছু হল?
--আমার একটা ব্যবস্থা করেছি।শুধু তুই যদি একটু হেল্প করিস--।
--আমি?
--সুকু যদি একটা সার্ভিস দেয়--,
কথা শেষ হবার আগেই মনামী গর্জে ওঠে,হাউ ডেয়ার ইউ আর?
আচমকা সঙ্ঘমিত্রা ঝাপিয়ে পড়ে মনামীর পা জড়িয়ে ধরে বলল,আমার সংসারটা ভেসে যাবে আমার ছেলেটা অনাথ হয়ে যাবে।হাউ হাউ করে কান্না।হতচকিত মনামী একদম প্রস্তুত ছিলনা।অবস্থাটা বুঝতে মুহূর্তকাল সময় লাগে তারপর বলল,কি হচ্ছে পা ছাড়ো পা ছাড়ো--।
--আমি যদি তোর জন্য কিছু করে থাকি বোন সেকথা ভেবে দিদিটার জন্য কিছু কর।নাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না--।
--তুমি পা ছাড়ো কেউ এসে পড়লে কি ভাববে?
--একবার শুধু একবার বোন--।
--কি মুষ্কিল পা ছাড়বে তো?
--তুই কি চাস আমার ছেলেটা অনাথ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াক?
--ঠিক আছে পা ছাড়ো।কথা দিতে পারছিনা দেবের সঙ্গে কথা বলে দেখি।
--ও তোকে খুব ভালবাসে তোর কথা অমান্য করবে না।সঙ্ঘমিত্রা উঠে বসে চোখের জল মোছে।
--তুমি এখন যাও যে কোনো দেব চলে আসতে পারে।
সঙ্ঘমিত্রাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।যাবার আগে সঙ্ঘমিত্রা বলল,বড় আশা নিয়ে যাচ্ছি বোন।
এসসির ঘর থেকে বেরিয়ে স্বস্তি বোধ করে শুকদেব।প্রথমে মনে হয়েছিল এসসি বোধ হয় তাকে চিনতে পেরেছেন।কথা বলে তেমন মনে হল না।এসসির জীবনটা বেশ অদ্ভুত।এক ছেলে আছে বাবার সঙ্গে থাকে।মাঝে সাজে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে।এভাবে দু-দিক রক্ষা করে কতদিন চলবে।
মনামীর হয়তো এতক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে।সে নিজের সন্তান মায়ের সঙ্গে থেকে এতবড় হয়েছে।অথচ স্বল্প সময়ে তাকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে মনামী।কিছু হলে মা মনামীর পক্ষ নেয়।কত শুনেছে শাশুড়ী-বউয়ের বিবাদের কথা মনামী মাকে বুঝতে পারেনা কিভাবে বিবাদ হয়।মনামীর উপার্জনে সংসার চলে মনামীর আচরণে কখনো দেখা যায়নি আধিপত্যবোধ।যত দেখছে মনামীর একটা সম্ভ্রমবোধ তৈরী হয়।ওকে পুরোপুরি বাঙালী বলা যায় না।খুব খাটছে এত খেটেও যদি সাফল্য না আসে তাহলে খুব আঘাত পাবে।বয়স হয়েছে বেশিবার বসার সুযোগ নেই।এত নরম মন অথচ ওর পছন্দ কেন হল পুলিশ আর্মির মত চাকরি।মানুষের মন বড়ই বিচিত্র।
সুপ্রভা টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলেন।মনামী এসে বসতে টিভি অফ করে দিলেন।বউমার টিভিতে তেমন আগ্রহ নেই।
--বউমা মেয়েলোকটা কাদছিল কেন?
শাশুড়ীর প্রশ্নে মনামী অবাক হয় তারপর হেসে বলল,আপনি দেখেছেন?
--আমি টিভি দেখছিলাম প্রথমে ভাবলাম বুঝি টিভিতে তারপর উঠে গিয়ে দেখলাম সংসার ভেসে যাবে-টাবে কি সব বলছিল।
বেশ জোরে জোরে কাদছিল তখন বুঝতে পারেনি মনামী বলল,মা উনি খুব ভাল নয়।
--দেখো কেউ খারাপ হলে আমার ভাল হতে বাধা কোথায়?তোমার কিছু করার থাকলে করবে।
স্তম্ভিত দৃষ্টি মেলে শাশুড়িমাকে লক্ষ্য করেন। মনে মনে ভাবে মিত্রাদি কি চাইছিল সেকথা শাশুড়িমাকে বলা গেলে ওর মতামত জানা যেত।
কলিং বেল বাজতে সুপ্রভা বলেন,ওই বাবু ফিরলেন।
মনামী বলল আপনি বসুন আমি দেখছি।
দরজা খুলতে শুকদেব ঢুকল।মনামী জিজ্ঞেস করে,এত দেরী হল?
--আমার তো জিপ নেই বাস ট্রাম ঠেঙিয়ে আসতে হয়।
--শুনলে কথা?সুপ্রভা বললেন।
--চা খাবে তো?মনামী জিজ্ঞেস করে।
--দিলে খাই।
চেঞ্জ করে বসার ঘরে বসল শুকদেব।মা এরকম ছিলনা মনামীকে পেয়ে মায়ের অনেক বদল হয়েছে।
সুপ্রভা টিভি চালিয়ে দিলেন।মনামী দু-কাপ চা নিয়ে বসার ঘরে চলে গেল।দেবকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নিজে ঘরের কোনে চেয়ার টেবিলে বই নিয়ে বসল।
--আজ এত দেরী হল?
--হ্যা।এখন ডিস্টার্ব কোরোনা।
শুকদেব চায়ের কাপ নিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসল।সুপ্রভা বললেন,কিরে তুই এখন টিভি দেখবি নাকি,পড়বি না?
বিরক্ত হয়ে শুকদেব বলল,চা-টা খাবো নাকি?
--বউমাকে তো বলতে হয়না তোকে এত বলতে হয় কেন?
--বউমা তো এইমাত্র পড়তে বসল।এতক্ষন তো আড্ডা দিচ্ছিল।
--ঐ মেয়েলোকটা আসল বলে দেরী হল।বউমা আড্ডা দেবার মানুষ নয়।
--কে এসেছিল?
--আমি কি করে বলব?বউমার পা জড়িয়ে ধরে কি কান্না।
চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে শুকদেব উঠে শোবার ঘরে চলে গেল।এ ঘরেই সে পড়ে।কে আবার এসেছিল কান্নাকাটি করছিল।ওর অফিসের কেউ হতে পারে। মনা হয়তো পরে বলবে। বই নিয়ে বসে এসসির কথা মনে পড়ল।সেপারেশনের পর উনি আর বিয়ে করেন নি।ম্যামকে খারাপ লাগেনা তবু তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।অবাক লাগে ছাড়াছাড়ি কেন হয়?ডিভোর্স ব্যাপারটা শিক্ষিতদের মধ্যেই বেশি।কারণ তাদের পরিশীলিত মন।স্বাধীনচেতা মনোভাব।নীচুতলার মানুষের মধ্যে দেখেছে মদ খেয়ে এসে বউকে পেটায় তবু তাদের ছাড়াছাড়ি হয়না।কারণ সম্ভবত অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব।স্বামীকে ছাড়লে খাবে কি?
সুপ্রভা টিভি দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে উঠে রান্নাঘরে যাচ্ছেন।তার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না,বুকের মধ্যে আইঢাই করে।বয়স হয়েছে।ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা ছিল এখন নিশ্চিন্ত ভাল মানুষের পাল্লায় পড়েছে।ভাত উপুড় দিয়ে আবার টিভির সামনে এসে বসেন।এই সিরিয়ালটা দেখে খেতে দেবেন রাত হয়েছে।
বাড়ির নীচে জিপ থেকে নেমে মনামীর মনে পড়ল দেবের কথা।দ্রুত উপরে উঠে এল,দরজা খুলে দিলেন সুপ্রভা।মনামী ভিতরে ঢুকতেই সুপ্রভা বললেন,তোমার জন্যে একজন অপেক্ষা করছে।
মনামী অবাক হয়ে বলল,কে?
--আমি ঠিক চিনি না।
--মা আপনি না চিনলে কাউকে ভিতরে ঢোকাবেন না।
--মেয়েছেলে তাই--।
মনামী বৈঠকখানার দরজায় উকি দিয়ে সঙ্ঘমিত্রাকে দেখে একটু বিরক্ত হল।শোবার ঘরে এসে পোশাক বদলায়।এমনি মিত্রাদিকে পছন্দ নয় তার উপর ও এখন সাস্পেণ্ড।পোশাক বদলে রান্না ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনার ছেলে ফেরেনি?
--কোথাও বেরোলে ওর হুশ থাকেনা।তোমাকে খুব ভয় পায় ভাল করে বকে দিও তো।
শাশুড়িমায়ের কথায় বিরক্তি ভাব কিছুটা প্রশমিত।হেসে বলল,পুলিশকে সবাই ভয় পায়।
সুপ্রভার চা করা হয়ে গেলে একটা ট্রেতে দু-কাপ চা কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে মনামী বসার ঘরে ঢুকে বলল,মিত্রাদি তুমি কতক্ষন?
--বেশিক্ষন না।তোর এত দেরী হল?
--গুছিয়ে টুছিয়ে আসতে দেরী হল।নেও চা খাও।
মনামী অনুমান করার চেষ্টা করে হঠাৎ কেন আগমন?চায়ে চুমুক দিতে দিতে সঙ্ঘমিত্রা কিভাবে বিষয়টা শুরু করবে মনে মনে সাজাতে থাকে।দেখে তো মনে হচ্ছে মুড ভাল।
--তারপর খবর সব ভালোতো?
--একটা খবর তোকে আমার আগেই দেওয়া উচিত ছিল--।
মনামী নির্বিকার চা খেতে থাকে।সঙ্ঘমিত্রা বলে,মি.ঘোষের মৃত্যু এ্যাক্সিডেণ্ট নয় মার্ডার।
--পুলিশ তদন্ত করছে।
স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনেও এমন নিস্পৃহভাব কিছুটা বিস্মিত হয় সুকুকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।সঙ্ঘমিত্রা বলল,জানি না তদন্তে কালুয়ার দলবলের হদিশ পাবে কিনা?একটা ট্রাক রাতারাতি গায়েব হয়ে গেল!
--কালুয়ার দলবল?
--মি.ঘোষ ওদের পথের কাটা ওরা যে কিছু করবে আমি জানতাম।
--তাহলে আগে বলনি কেন?
--ভয়ে মনা ভয়ে।এখন ইচ্ছে করছে নিজের গালে চড় মারি।পুলিশে কাজ করি হোক নটোরিয়াস ভয় পেলে চলে?
--যা হবার হয়ে গেছে এখন এসব কথা ভেবে কি লাভ?
--ওদের এখন সুকুর দিকে নজর।
--দেব কি করল?
--খবরটা পেয়েই আমার মনে হল মনাকে জানানো দরকার।
--শোনো মিত্রাদি দেবের জন্য তুমি ভেবোনা মনামী সোম তার স্বামীকে রক্ষা করতে জানে।তুমি নিজের কথা ভাবো।
সঙ্ঘমিত্রা মাথা নীচু করে বসে থাকে।মনামীর মনে হল এভাবে না বললেও হতো।বলল,মিত্রাদি আসলে দেবের কথা উঠতে মাথাটা গরম হয়ে গেল,কিছু মনে কোরনা।তোমার কেসের কিছু হল?
--আমার একটা ব্যবস্থা করেছি।শুধু তুই যদি একটু হেল্প করিস--।
--আমি?
--সুকু যদি একটা সার্ভিস দেয়--,
কথা শেষ হবার আগেই মনামী গর্জে ওঠে,হাউ ডেয়ার ইউ আর?
আচমকা সঙ্ঘমিত্রা ঝাপিয়ে পড়ে মনামীর পা জড়িয়ে ধরে বলল,আমার সংসারটা ভেসে যাবে আমার ছেলেটা অনাথ হয়ে যাবে।হাউ হাউ করে কান্না।হতচকিত মনামী একদম প্রস্তুত ছিলনা।অবস্থাটা বুঝতে মুহূর্তকাল সময় লাগে তারপর বলল,কি হচ্ছে পা ছাড়ো পা ছাড়ো--।
--আমি যদি তোর জন্য কিছু করে থাকি বোন সেকথা ভেবে দিদিটার জন্য কিছু কর।নাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না--।
--তুমি পা ছাড়ো কেউ এসে পড়লে কি ভাববে?
--একবার শুধু একবার বোন--।
--কি মুষ্কিল পা ছাড়বে তো?
--তুই কি চাস আমার ছেলেটা অনাথ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াক?
--ঠিক আছে পা ছাড়ো।কথা দিতে পারছিনা দেবের সঙ্গে কথা বলে দেখি।
--ও তোকে খুব ভালবাসে তোর কথা অমান্য করবে না।সঙ্ঘমিত্রা উঠে বসে চোখের জল মোছে।
--তুমি এখন যাও যে কোনো দেব চলে আসতে পারে।
সঙ্ঘমিত্রাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।যাবার আগে সঙ্ঘমিত্রা বলল,বড় আশা নিয়ে যাচ্ছি বোন।
এসসির ঘর থেকে বেরিয়ে স্বস্তি বোধ করে শুকদেব।প্রথমে মনে হয়েছিল এসসি বোধ হয় তাকে চিনতে পেরেছেন।কথা বলে তেমন মনে হল না।এসসির জীবনটা বেশ অদ্ভুত।এক ছেলে আছে বাবার সঙ্গে থাকে।মাঝে সাজে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে।এভাবে দু-দিক রক্ষা করে কতদিন চলবে।
মনামীর হয়তো এতক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে।সে নিজের সন্তান মায়ের সঙ্গে থেকে এতবড় হয়েছে।অথচ স্বল্প সময়ে তাকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে মনামী।কিছু হলে মা মনামীর পক্ষ নেয়।কত শুনেছে শাশুড়ী-বউয়ের বিবাদের কথা মনামী মাকে বুঝতে পারেনা কিভাবে বিবাদ হয়।মনামীর উপার্জনে সংসার চলে মনামীর আচরণে কখনো দেখা যায়নি আধিপত্যবোধ।যত দেখছে মনামীর একটা সম্ভ্রমবোধ তৈরী হয়।ওকে পুরোপুরি বাঙালী বলা যায় না।খুব খাটছে এত খেটেও যদি সাফল্য না আসে তাহলে খুব আঘাত পাবে।বয়স হয়েছে বেশিবার বসার সুযোগ নেই।এত নরম মন অথচ ওর পছন্দ কেন হল পুলিশ আর্মির মত চাকরি।মানুষের মন বড়ই বিচিত্র।
সুপ্রভা টিভিতে সিরিয়াল দেখছিলেন।মনামী এসে বসতে টিভি অফ করে দিলেন।বউমার টিভিতে তেমন আগ্রহ নেই।
--বউমা মেয়েলোকটা কাদছিল কেন?
শাশুড়ীর প্রশ্নে মনামী অবাক হয় তারপর হেসে বলল,আপনি দেখেছেন?
--আমি টিভি দেখছিলাম প্রথমে ভাবলাম বুঝি টিভিতে তারপর উঠে গিয়ে দেখলাম সংসার ভেসে যাবে-টাবে কি সব বলছিল।
বেশ জোরে জোরে কাদছিল তখন বুঝতে পারেনি মনামী বলল,মা উনি খুব ভাল নয়।
--দেখো কেউ খারাপ হলে আমার ভাল হতে বাধা কোথায়?তোমার কিছু করার থাকলে করবে।
স্তম্ভিত দৃষ্টি মেলে শাশুড়িমাকে লক্ষ্য করেন। মনে মনে ভাবে মিত্রাদি কি চাইছিল সেকথা শাশুড়িমাকে বলা গেলে ওর মতামত জানা যেত।
কলিং বেল বাজতে সুপ্রভা বলেন,ওই বাবু ফিরলেন।
মনামী বলল আপনি বসুন আমি দেখছি।
দরজা খুলতে শুকদেব ঢুকল।মনামী জিজ্ঞেস করে,এত দেরী হল?
--আমার তো জিপ নেই বাস ট্রাম ঠেঙিয়ে আসতে হয়।
--শুনলে কথা?সুপ্রভা বললেন।
--চা খাবে তো?মনামী জিজ্ঞেস করে।
--দিলে খাই।
চেঞ্জ করে বসার ঘরে বসল শুকদেব।মা এরকম ছিলনা মনামীকে পেয়ে মায়ের অনেক বদল হয়েছে।
সুপ্রভা টিভি চালিয়ে দিলেন।মনামী দু-কাপ চা নিয়ে বসার ঘরে চলে গেল।দেবকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নিজে ঘরের কোনে চেয়ার টেবিলে বই নিয়ে বসল।
--আজ এত দেরী হল?
--হ্যা।এখন ডিস্টার্ব কোরোনা।
শুকদেব চায়ের কাপ নিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসল।সুপ্রভা বললেন,কিরে তুই এখন টিভি দেখবি নাকি,পড়বি না?
বিরক্ত হয়ে শুকদেব বলল,চা-টা খাবো নাকি?
--বউমাকে তো বলতে হয়না তোকে এত বলতে হয় কেন?
--বউমা তো এইমাত্র পড়তে বসল।এতক্ষন তো আড্ডা দিচ্ছিল।
--ঐ মেয়েলোকটা আসল বলে দেরী হল।বউমা আড্ডা দেবার মানুষ নয়।
--কে এসেছিল?
--আমি কি করে বলব?বউমার পা জড়িয়ে ধরে কি কান্না।
চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে শুকদেব উঠে শোবার ঘরে চলে গেল।এ ঘরেই সে পড়ে।কে আবার এসেছিল কান্নাকাটি করছিল।ওর অফিসের কেউ হতে পারে। মনা হয়তো পরে বলবে। বই নিয়ে বসে এসসির কথা মনে পড়ল।সেপারেশনের পর উনি আর বিয়ে করেন নি।ম্যামকে খারাপ লাগেনা তবু তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।অবাক লাগে ছাড়াছাড়ি কেন হয়?ডিভোর্স ব্যাপারটা শিক্ষিতদের মধ্যেই বেশি।কারণ তাদের পরিশীলিত মন।স্বাধীনচেতা মনোভাব।নীচুতলার মানুষের মধ্যে দেখেছে মদ খেয়ে এসে বউকে পেটায় তবু তাদের ছাড়াছাড়ি হয়না।কারণ সম্ভবত অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব।স্বামীকে ছাড়লে খাবে কি?
সুপ্রভা টিভি দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে উঠে রান্নাঘরে যাচ্ছেন।তার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না,বুকের মধ্যে আইঢাই করে।বয়স হয়েছে।ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা ছিল এখন নিশ্চিন্ত ভাল মানুষের পাল্লায় পড়েছে।ভাত উপুড় দিয়ে আবার টিভির সামনে এসে বসেন।এই সিরিয়ালটা দেখে খেতে দেবেন রাত হয়েছে।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)