Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
অভিনেত্রীর সঙ্গ (#০৩)

নভেম্বরে দিন ছোট তাই তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসে মহানগরের বুকে। দানা ঠিক করে, নিজের কালী পাড়ার বস্তির গুমটিতেই থাকবে। দরকার পড়লে রাতে বেড়াতে কেষ্টর ট্যাক্সি নিয়ে না হয় সোনারডাঙ্গা আসা যাবে। কিছু পরে কাজের মেয়েটা দানাকে ছোট ঘরে বসতে অনুরোধ করে। ছোট ঘরটায় ঢুকে দেখল দুটো খাট পাতা, এক কোনায় একটা ছোট টিভি আছে। ঘরের অবস্থা দেখে সহজেই বোঝা যায় এটা কাজের লোকেদের জন্য। মেয়েটা ওকে টিভি চালিয়ে আর এক কাপ চা দিয়ে চলে যায়। চা খেতে খেতে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করে। কিছুপরে কাজের মেয়ে এসে ওকে জানিয়ে যায়, নয়না আবার রাত ন'টা নাগাদ বের হবে। দানা মাথা নাড়ায়, অবশ্য সেটা আগেই ওই গাড়িতে বসে টের পেয়ে গেছিল যে নয়না রাতে বের হবে। নিশ্চয় ওই হোটেলের এক সুসজ্জিত কামরায় কোন এক ধনী বিদেশী পুরুষের সাথে রাত কাটাবে। নামকরা অভিনেত্রী হলে হবে কি যতদিন যৌবন এদের দেহে লেগে থাকে ততদিন এরা দুই হাতে টাকা কামিয়ে নেয়।

রাত ন'টা পর্যন্ত কি আর টিভি দেখে বসে থাকা যায়। কতক্ষণ বাংলা আর হিন্দি চ্যানেলের প্যানপ্যানানি মার্কা সিরিয়াল দেখা যায় ওই ভাবে বসে। ছোট ঘর থেকে বসার ঘর বেশ পরিস্কার দেখা যায়। স্নান সেরে পোশাক বদলে ডিভানে শুয়ে টিভি দেখতে ব্যাস্ত নয়না। গায়ে ছোট মেয়েদের টেপ জামার মতন একটা ফিনফিনে গোলাপি রঙের পাতলা জামা, আর একটা ঢিলে প্যান্ট পরা। কাঁধের কাছ থেকে জামাটা একটু সরে গিয়ে ভেতরের লাল ব্রার স্ট্রাপ স্পষ্ট দেখা যায়, উন্নত নিটোল স্তন জোড়া জামার ভেতর থেকে সামনের দিকে উঁচিয়ে হাতছানি দিয়ে আহবান করে। বসার ঘরের টিভিতে মনে হয় কোন ইংরেজি সিনেমা চলছে, নয়না একটা আপেল খেতে খেতে সেটা দেখতে ব্যাস্ত। এমন সময়ে ওর ভাই বসার ঘরে আসে।

আধো আধো কণ্ঠে দিদিকে নালিশ জানায়, "দিদ্দি দিদ্দি, দুদু কাবো।"

দানার মনে সন্দেহ জাগে, কি ব্যাপার ছেলেটার, এতবার কি একটা ছেলে দুধ খায় নাকি? নয়না আদর করে বুবাইকে বলে, "কেন সোনা, নিতা আজকে দুধ দেয়নি?"

বুবাই দিদির পাশে বসে, টেপ জামার খুট ধরে নাড়াতে নাড়াতে মাথা দুলিয়ে বলে, "আরো চাই আরো চাই আরো চাই আরো চাই।"

নয়নার চোয়াল ক্ষণিকের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে, দুই চোখে যেন রক্ত ঝরে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে আবার নরম হয়ে বুবাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, "ঠিক আছে সোনা আমি নিতাকে বলে দিচ্ছি।" বলেই নিতা নামক কাজের মেয়েটাকে ডাক দেয়।

ত্রস্ত পায়ে নিতা ঘরে ঢুকে, ডিভানের অদুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নয়নাকে বলে, "দিদি সকাল থেকে এই নিয়ে চারবার। এইবারে আমার বোঁটা দুটো ছিঁড়ে যাবে।"

নয়না সঙ্গে সঙ্গে নিতার দিকে বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে ওঠে, "শালী, যত বার চাইবে ততবার দিবি। তোকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা শুধু ওকে দেখার জন্য দেই। কাজে লাগার আগে সব জানিয়ে দিয়েছিলাম আর এখন ছেনালি মারছিস? বোঁটাতে একটু বোরোলিন লাগিয়ে নে তারপরে আবার মাই খুলে দুধ ঢেলে ওকে খাওয়া। এরপরে বুবাই যদি কেঁদেছে, তাহলে খানকী, হান্টার মেরে তোর পিঠের ছাল চামড়া নামিয়ে দেব। এইখানে দুধ নিয়ে আয় আর ব্রা'টা খুলে রেখেই আয়।"

প্রথমে দানা ঠিক ধরতে পারল না কি বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। একটু পরে ব্যাপারটা ওর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। নিতা এক গেলাস দুধ নিয়ে এলো, কামিজ তুলে দুধের গেলাস স্তনের ওপরে ধরল। শ্যাম বর্ণের কচি নিটোল স্তন ঠিকরে বুবাইয়ের দিকে উঁচিয়ে গেল। নিতা উপরিবক্ষে দুধের গেলাস নিয়ে ধীরে ধীরে ঢালতে শুরু করল আর বুবাই, নিতার স্তন মুখের মধ্যে পুরে স্তনের বোঁটার সাথে সাথে দুধ টুকু চুকচুক করে গিলতে শুরু করে দিল। এমন এক কামুক উত্তেজনাময় দৃশ্য দেখে দানার শরীর টানটান হয়ে গেল। নিতা দেখতে সুন্দরী না হলেও দেহের গঠন বেশ ডাগর, স্তনের আকার বেশ ভালো। নয়না মনে হয় দেখেই কাজে বহাল করেছে। নয়নার সামনেই ওর ভাই বুবাই, কাজের মেয়ে নিতার স্তন টিপতে টিপতে, স্তনের বোঁটা চুষতে চুষতে দুধ খেয়ে চলে। নয়না, বুবাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। মাঝে মাঝেই বুবাইয়ের হাত, নিতার খোলা পেটের ওপরে, খোলা পিঠের ওপরে বিচরন করে, মাঝে মাঝে অন্য স্তন একটু খানি ধরে টিপে দেয়। এটা কি বুবাইয়ের কামুক বাসনা না মন্দ বুদ্ধির ফল, সেটা ঠিক বোঝা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ দুধ খেয়ে, দিদিকে জড়িয়ে ধরে ডিভানের ওপরে ঘুমিয়ে পড়ল বুবাই। দানা দেখতে পেল যে নয়নার দুই চোখ ছলছল করছে। কুড়ি বছরের কচি ভাইকে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে, আদর করে ওর উস্কখুস্ক চুলের মধ্যে বিলি কেটে আদর করে দেয় নয়না।

দানা টানটান হয়ে একটা বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ে। মনের মধ্যে প্রশ্ন ভিড় করে আসে, এই ভাই বোনের বাবা মা কোথায়? কতক্ষণ চিন্তার জালে আটকে ছিল জানে না, হঠাৎ নিতার ডাকে সম্বিত ফিরে আসে দানার। ন'টা বেজে গেছে, ম্যাডাম নয়না তৈরি। সঙ্গে সঙ্গে ধরমরিয়ে উঠে বসে দানা, নিতার পেছন থেকে একবার উঁকি মেরে বসার ঘরে দেখে নেয়। বুবাই ডিভানের ওপরে জুবুথুবু হয়ে বসে কোন একটা ইংরেজি গানের চ্যানেল দেখছে। নিতা, দানাকে গাড়ি বের করতে বলে চলে যায়। শ্যাম বর্ণের হলে কি হবে, মেয়েটার অঙ্গে বেশ মাদকতা মাখনো আছে। হাঁটতে চলতে পাছার দুলুনি দেখে যে কারুর মন দুলকি চালে নড়ে উঠবে। দানা মিচকি হেসে গাড়ির চাবি নিয়ে নিচে নেমে যায়।

কিছু পরে পেছনের দরজা খুলে নয়না এসে বসে। গাড়ির মধ্যে নয়না ঢুকতেই একটা মাদকতাময় সুবাসে গাড়ি ভরে ওঠে। দানা আয়নার প্রতিফলনে একবার নয়নাকে আপাদ মস্তক দেখে নেয়। উর্বশীর মতন লাস্যময়ী সাজ সেজে নয়না বসে। পরনে কাঁধ বিহীন টকটকে লাল রঙের একটা পার্টি পোশাক, স্তনের অর্ধেক ঢাকা আর অঙ্গের সাথে চেপে বসা। দুই মসৃণ ঊরুর মাঝে এসে পোশাক শেষ হয়ে গেছে। পায়ের ওপরে পা তুলে বসার ফলে পোশাক নিচের দিক থেকে বেশ খানিকটা উপরের দিকে উঠে যায় আর পুরুষ্টু গোল পাছার বেশ খানিকটা পোশাকের তলা থেকে বেড়িয়ে পরে। চোখের কোনে কাজল, ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক, সারা অঙ্গে তীব্র যৌন মাদকতা মাখামাখি। দরজা বন্ধ করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে দানাকে হোটেল কাজিরঙ্গা ইন্টারন্যাশনালে যেতে বলে। হাতের ছোট ক্লাচ ব্যাগ থেকে একটা ফোন বের করে কারুর সাথে বাক্য বিনিময় করে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। ওই চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই যে বাড়িতে একজন মন্দ বুদ্ধি ভাই আছে। নয়নাকে দেখে যে কেউ বলবে একজন উচ্ছনে যাওয়া নায়িকা, যে টাকার জন্য যে কোন লোকের শয্যা সঙ্গিনী হতে প্রস্তুত।

দানা ওই আনমনা চেহারা দেখে নয়নাকে প্রশ্ন করে, "ম্যাডাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি আপনাকে?"

নয়না দানার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে হিমশীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, "কি?"

ওই ঠাণ্ডা কণ্ঠ স্বর শুনে, দানা কি প্রশ্ন করবে সেটা ভুলে গেল। আমতা আমতা করে প্রশ্ন পাল্টে ফেলে জিজ্ঞেস করে, "মানে কতক্ষণ লাগবে ডিনার করতে সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম।"

ক্ষণিকের জন্য নয়নার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, দাঁতে চিবিয়ে উত্তর দেয়, "জানি না, কতক্ষণ লাগবে। তুমি পারকিংয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা কর। একটা দুটো হতে পারে, আবার সকাল ছ'টাও হতে পারে।"

বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় দানা, এই পেশার ব্যাপারে দানা অজানা নয়। এক সময়ে ইন্দ্রাণী এই পেশার সাথেই যুক্ত ছিল। বহু রাতে ইন্দ্রাণীকে কোন বাড়ির সামনে থেকে, কোন হোটেলের সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। নয়না কি দ্বিতীয় ইন্দ্রাণী, এমন নিশ্চয় প্রচুর ধনী বেশ্যা মহানগরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। কেউ পয়সার জন্য, কেউ উপরের ওঠার সিঁড়ির জন্য নিজের দেহ কাজে লাগায়। ইন্দ্রাণী টাকা আয় করার জন্য আর শারীরিক খিধে মেটানর জন্য বারাঙ্গনা হয়েছিল, নয়না ঠিক কিসের জন্য বারাঙ্গনা? নায়িকারা অনেক টাকা রোজগার করে বলেই জেনে এসেছে, তাহলে এর টাকার কি দরকার?

হোটেল কাজিরঙ্গা ইন্টারন্যাশনাল এসে গেলে, নয়না গাড়ি থেকে নেমে যায়। চোখে একটা বড় কালো সানগ্লাস, হাতে একটা ছোট ক্লাচ ব্যাগ আর গলায় একটা স্কার্ফ বেঁধে নেয়। দুই পায়ে হাই হিল জুতো পরে গাড়ি থেকে নেমে মত্ত চলনে এদিক ওদিক তাকিয়ে হোটেলের দিকে এগোয়। ওকে দেখেতে পেয়েই বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে খাতা নিয়ে দৌড়ে আসে, ম্যাডাম একটা অটোগ্রাফ ম্যাডাম একটা অটোগ্রাফ। নয়না আড় চোখে দানাকে কাছে ডাকে। দানা গাড়ি বন্ধ করে নয়নার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওকে আগলে ধরে। দেখতে দেখতে লোকের ভিড় জমে ওঠে, একটু ঠেলাঠেলি লেগে যায়, দানা দুই হাতে নয়নাকে আগলে রেখে ভেতরে নিয়ে যায়। আগলে রাখার ফলে বারেবারে নয়নার কোমল শরীর দানার পেশি বহুল বাহু মাঝে চেপে যায়। নয়না মাঝেমাঝে দানাকে আড় চোখে দেখে আলতো মাথা দুলিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে কফি শপে ঢুকে পড়ে।

দানা হোটেলের বাইরে এসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অপেক্ষা করে। নয়না কখন ওই বিদেশী, মিস্টার ব্রুস হিডেলস্টোনের কামক্ষুধা নিবারন করে ফিরবে। দশটা থেকে এগারোটা, থেকে মধ্য রাত্রি পেরিয়ে যায়। নয়নার দেখা নেই, গাড়িতে বসে গান শোনা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ড্রাইভারের সিট পেছন দিকে এলিয়ে দিয়ে একপ্রকার শুয়ে পড়ে দানা। রাত প্রায় চারটে নাগাদ নয়নার ফোন আসে দানার কাছে। গাড়ি বের করতে নির্দেশ দেয় নয়না। গাড়ি নিয়ে হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ায় দানা। বেশ কিছুপরে নয়না গাড়িতে উঠে বসে। চেহারার রঙ উড়ে গেছে অনেক আগেই, ঠোঁটের লিপস্টিক মনে হয় ওই বিদেশীর পেটে, ঘাড়ের কাছে দাঁতের দাগ দেখতে পেল মনে হল। গাড়িতে ঢুকতেই সন্ধ্যের মাদকতা সুবাসের সাথে সাথে, মদের গন্ধে গাড়ি ভরে ওঠে। এতক্ষণ সোজা হয়েই হাঁটছিল নয়না, কিন্তু গাড়িতে বসতেই ওর শরীর ছেড়ে দেয়। কাঁপা হাতে কোনরকমে একটা সিগারেট জ্বালাতে চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই সিগারেট জ্বালাতে পারে না। শেষ পর্যন্ত রেগে মেগে সিগারেট লাইটারটা গাড়ির মেঝের ওপরে ছুঁড়ে মারে আর সিগারেটটাকে দুমড়ে মুচড়ে জানালার বাইরে ফেলে দেয়।

নয়নার ওই চেহারা দেখে দানা নড়ে ওঠে। কিন্তু কেন নড়ে ওঠে? এই চেহারা এর আগেও দানা দেখেছে তাই দানা নড়ে ওঠে। পেছনের সিটের এক কোনায় বসে দানাকে গাড়ি চালাতে আদেশ করে নয়না। দানা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে হোটেল থেকে। রাত চারটে বাজে, এত রাতে রাস্তায় সুধু মাত্র কুকুর ছাড়া আর কোন প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় না। বেশ কিছুদুর এগিয়ে দানা গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখে, নয়না সিটের ওপরে পা গুটিয়ে চুপচাপ বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

দানাকে গাড়ি থামাতে দেখে নয়না ক্লান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "কি হল এইখানে গাড়ি থামালে কেন?"

দানা পেছন ঘুরে নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, "আপনি সিগারেট খাবেন তাই থামালাম। দিন আমি সিগারেট জ্বালিয়ে দেই আপনাকে।"

নয়নার চোখ জোড়া হঠাৎ কেমন যেন ছলকে ওঠে, ম্লান এক হাসি হেসে ওর দিকে সিগারেট প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে, "নদীর দিকে একটু নিয়ে চল।"

দানা সিগারেট প্যাকেট হাতে নিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীর তীরে এসে যায় ওদের গাড়ি। অন্ধকার আকাশে সহস্র তারার ঝিকিমিকি, নদীর পাশের অন্ধকারে দাঁড়ানো গাছ গুলো মনে হয় যেন প্রেতাত্মা, দূরে নদীর অন্যপাড়ে বেশ বড় একটা রেল স্টেশান আলোয় আলোকিত। একপাশে একটা পুরাতন ব্রিটিশ আমলের ব্রিজ, শত শত বিজলী বাতিতে আলোকিত হয়ে দাঁড়িয়ে দুই পাড়ের মাঝে সন্ধি তৈরি করে। অন্যপাশে নতুন একটা সেতু, দুই বিশাল তোরণের সাথে অসংখ্য লোহার দড়ি দিয়ে বাঁধা। এই সেতুই এই মহানগরের আসল পরিচয়, ওই পুরাতন সেতুর মতন নয়। নতুন সেতু উশৃংখল মেরুদন্ডহীন, দড়ি দিয়ে বাঁধা না থাকলে এই সেতু নদীর ওপর থেকে পালিয়ে যেত। যেমন এই বর্তমান মহানগরের অবস্থা, চাবুক না পড়লে সোজা রাস্তায় চলতে নারাজ।

নদীর তীরের পাশেই একটা বড় বাস স্টান্ড, দূরে এক কোনায় বাসের ছাদে বেশ কয়েক জন জুবুথুবু হয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে রয়েছে। চারপাশে অন্ধকার বাসের ভিড়, এক কোনায় বেশ কয়েকটা কুকুর কুঁকড়ে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে। দূরে কোথাও কুকুরের ডাক শোনা যায়। একটু দুরেই একটা পুলিসের জিপ দাঁড়িয়ে। ওদের গাড়ি দাঁড়াতেই একটা পুলিস ওদের দিকে এগিয়ে আসে। নয়না বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের চেহারা ঠিক করে নেয়। দানা একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নয়নার হাতে ধরিয়ে দেয়। পুলিসটা ওদের গাড়ির কাছে এসে দানাকে গাড়ির কাঁচ নামাতে বলে। পেছন থেকে নয়না গাড়ির দরজা খুলে নেমে যায়। অভিনেত্রী নয়নাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই পুলিসের ব্যাবহার পাল্টে যায়।

নয়না, সিগারেটে একটা ছোট টান দিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে পুলিসকে বলে, "রাতে ঠিক ঘুম হচ্ছিল না তাই একটু নদীর হাওয়া খেতে আসলাম।"

পুলিস এত সামনে থেকে অভিনেত্রী নয়নাকে দেখতে পাবে সেটা হয়ত আশা করেনি। তাই সঙ্গে সঙ্গে অমায়িক তাবেদারি কণ্ঠে বলে, "ঠিক আছে ম্যাডাম, একদম ঠিক আছে। আমরা এখানেই আছি, আপনার কোন অসুবিধে হবে না।" পুলিসটা দানাকে, গাড়িটা একটু তফাতে পার্ক করতে অনুরোধ করে চলে যায়।

দানা পকেট থেকে নিজের সিগারেট প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট জ্বালায় আর নয়নাকে দেখে। নয়না, হিল তোলা জুতো খুলে খালি পায়ে এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে নদীর দিকে চলে যায়। নদীর দিক থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া নয়নাকে যেন আরও উত্তপ্ত করে তোলে। বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষিপ্ত ভাবে হেঁটে, গাড়ির বনেটের ওপরে পা গুটিয়ে বসে পরে। পা গুটিয়ে বসতেই চাপা পোশাক ঊরু ছাড়িয়ে প্রায় ঊরুসন্ধির কাছে চলে আসে। নিটোল দুই পাছা সম্পূর্ণ অনাবৃত হয়ে যায়, পোশাকের দিকে নয়নার খেয়াল থাকে না একদম। দুই পাছার খাঁজের মাঝে গভীর অন্ধকার, দেখে বোঝার উপায় নেই ঊরুসন্ধি অনাবৃত না ক্ষুদ্র কোন কৌপীনে ঢাকা। নয়না সিগারেট শেষ করে অনেকক্ষণ গাড়ির বনেটের ওপরে বসে দুর নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর ভাসা চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল যে দুর কোথায় হারিয়ে গেছে মেয়েটা।

ইতিমধ্যে দানা তিনখানা সিগারেট শেষ করে দিয়েছে। দূরে দাঁড়িয়ে পুলিসের জিপ ওদের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। মাঝে মাঝে দুই তিনটে পুলিস, জিপ থেকে বেড়িয়ে এপাশ ওপাশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষের দিকে ঝুঁকে দেখে আবার জিপের দিকে চলে যায়।

বেশ কিছু পরে একটা পুলিস দানার কাছে এসে কানেকানে বলে, "আর কতক্ষণ ম্যাডাম এখানে থাকবেন?"

দানা ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে জানায়, "ঠিক জানি না দাদা।"

পুলিস গলা খাঁকড়ে নিজের অস্তিতের কথা জানান দিতেই নয়নার সম্বিত ফিরে আসে। ওই পুলিসের দিকে অপরাধবোধ মুলক এক হাসি দিয়ে বলে, "দুঃখিত দাদা এই যাচ্ছি।"

পুলিস সঙ্গে সঙ্গে হাত কচলাতে কচালাতে তাবেদারি মেশানো কণ্ঠে বলে, "না মানে আমাদের এইবারে একটা রাউন্ডে যেতে হবে তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। এখন বিশেষ কোথায় যাওয়ার নেই, মানে আপনি চাইলে আপনার বাড়ি পর্যন্ত এসকর্ট করে দিয়ে আসব।"

নয়না হেসে ওদের বলে, "না না, এত কষ্ট করতে হবে না আপনাদের। এই যে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।"

পুলিসটা হেসে বলে, "কি যে বলেন ম্যাডাম, আমাদের কাজ হচ্ছে জন সাধারণের সাহায্য করা।"

নয়না গাড়িতে উঠে দানাকে বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করে। সোনার ডাঙ্গা পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল ছ'টা বেজে যায়। পুব আকাশে নবীন ঊষার রঙ লেগে গেছে, সারা রাত নয়না জেগে, সেই সাথে দানাও জেগে।

ফ্ল্যাটে ঢোকার আগে নয়না দানাকে বলে, "প্লিস, ঘন্টা খানেক গাড়িতে ঘুমিয়ে নাও, দুপুরের পরে স্টুডিও যেতে হবে।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 14-08-2020, 09:04 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)